'কনস্পিরেসি থিওরি' শব্দগুলো দারুণ। সামনেপিছে বলার মতো যুতসই কোনো প্রমাণ না থাকলে কিংবা যুক্তিতে কোথাও আটকে গেলে এই শব্দগুলো দিয়ে মনের মাধুরি মেশানো থিওরি দিয়ে পছন্দমত বক্তব্য উপস্থাপন করা যায়। আজকে বিকেলে মতিঝিল ভলভো বাস কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে বাদাম চিবুনোর সময় এই কনস্পিরেসি থিওরির কথা মনে হলো।
ভলভো বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি মোটামুটি মিনিট বিশেক ধরে। কাউন্টারের লোকটাকে জিজ্ঞেস করে যেটা জানা গেলো- বাস এখনও আসতে পারে, আবার আধা ঘণ্টাও লাগতে পারে। কেমন যেন খটকা লাগলো কারণ তাদের তো ওয়াকিটকিওলা লোকজন আছে। তারা তো সহজেই খবর নিয়ে জানতে পারে বাস এখন কোথায় আছে।
মোটামুটি এই সূত্র ধরে ভলভো সার্ভিসের একজন কর্মচারির সাথে আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেলো যে-
১. ওয়াকিটকিওলারা মোটামুটি তাদের ইচ্ছেমতো ডিউটি পালন করছেন। বাসের কী হলো বা না হলো তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।
২. মোট ভলভোর সংখ্যা ৫০টি হলেও এই মুহূর্তে চলমান আছে মাত্র ২৭টি। বাকি ২৩টি ওয়ার্কশপে পড়ে আছে অনেক দিন ধরে।
৩. বাস সংকটের কারণে মতিঝিল-উত্তরা রুটে ভলভো সার্ভিস বন্ধ আছে বেশ অনেক দিন ধরেই।
৪. মিরপুর রুটে ভলভো প্রতিদিন যে আয় করে, তাতে খরচ বাদ দিয়ে একদিনের টাকা দিয়ে ছয়-সাতটি ভলভো গাড়ি ঠিক করে ফেলা যায়। তাতে মোট চার দিনের টাকা দিয়ে ২৩টি গাড়ি ঠিক করে ফেলা যায়। কিন্তু ঠিক করার ব্যাপারে কারো কোনো উৎসাহ নেই।
৫. মিরপুর রুটে প্রথমে ৫ মিনিট পরপর, তারপর ১০ মিনিট পরপর ছাড়া হতো। আর এখন মোটামুটি ১৫-২০ মিনিট পরপর বাস ছাড়া হচ্ছে। অনেক সময় ডিপোতে বাস দাঁড়িয়ে থাকলেও ছাড়া হয় না। বিকল্প, সিটি সিল্ক বা অন্য বাস ছাড়ার পর ছাড়া হয়।
সব কিছু শোনার পর ভাবলাম কনস্পিরেসি থিওরির আদলে একটা কিছু উপসংহার দাড় করানো যায় কিনা। কী হতে পারে সেটা? বেসরকারি বাস সার্ভিসকে সুবিধা দিতে গিয়ে সরকারি এই ভলভো সার্ভিসকে কি পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে?
কনস্পিরেসি যেহেতু, আপনারাও ইচ্ছে করলে এখানে এরকম কিছু থিওরি দাড় করাতে পারেন। সেগুলো ঠিক না হওয়ার সম্ভাবনা হয়তো বেশি, কিন্তু চোখের সামনে দিয়ে আস্তে আস্তে ঢাকা শহরের সবচেয়ে সফিসটিকেটেড বাস সার্ভিসটি যে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বা ধ্বংস করা হচ্ছে, এই সত্যে কোনো কনস্পিরেসির ঠাই নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০০৯ রাত ৯:২৪