somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধী ও তাদের বিচার: একটি পর্যালোচনা (ষষ্ঠ অংশ)

১২ ই অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টাঙ্গাইলের মানুষ আজো ভুলেনি

জামায়াত নেতা প্রফেসর খালেক (খুনি খালেইক্কা)একাত্তরের সেই রাজাকার আব্দুল খালেক ওরফে খালেক প্রফেসর এখন ঢাকায় জামায়াত নেতা। টাঙ্গাইলে রাজাকার প্রধান খালেক প্রফেসার শত শত মুক্তিপাগল, নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের খুনে হাত রাঙিয়ে ছিলো। বহু মা বোনকে সে তুলে দিয়েছে পাকিস্তানি হানাদারের হাতে। কিন্তু এতো বছরেও তার কোনো বিচার হয়নি, এমনরকি অভিযোগ পর্যন্ত দাখিল হয়নি। স্বাধীনতার পর খালেক কিছু সময়ের জন্য গা-ঢাকা দিয়েছিলো। এরপর বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমা (এই বিষয়ে বিস্তারিত থাকছে পরের অংশগুলোতে। অতএব জামাত-শিবির-রাজাকাররা বিষয়টি নিয়ে ক্যাও ক্যাও করবেন না) প্রদর্শন করার পর খালেক লোকসম্মুখে ফিরে আসে। ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর এই খালেক সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকের তালিকায় নাম লেখায়। বলাই বাহুল্য যে জিয়াউর রহমানের ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে বৈধকরণ এবং দালাল আইন প্রত্যাহারের কারণে তার এই সুবিধাটি হয়েছিলো। খালেক তখন ডিসি, এসপি থেকে শুরু করে সরকারের উর্ধ্বতন মহল পর্যন্ত যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। জানা যায় একাধিকবার সে জিয়াউর রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ করে।
ফলে জেগে উঠে খুনি খালেক। স্বাধীনতাকালীন সময়ে সে নিজেই তার অপরাধের কথা গর্বের সঙ্গে বলে বেড়াতে থাকে। বর্তমানে জামায়াতে ইসলামের রাজনীতির নেতৃত্ব পর্যায়ে রয়েছে এই খালেক।
সরজমিনে আমরা খবর নিতে গিয়েছিলাম টাঙ্গাইলের এই রাজাকার সম্বন্ধে। সেখানেই আমরা খুঁজে পাই শহিদ শান্তি রায় সাহার সন্তান বাদল সাহাকে। তিনি জানান একাত্তর সালে খুনি খালেইক্কার কার্যাবলী সম্বন্ধে। তিনি বলেন,

‘১৯৭১ সালের ২০ জুলাই রাত সোয়া এগারোটার দিকে খালেকের নেতৃত্বে একদল রাজাকার প্রথমে খালেকের সহকর্মী প্রফেসর নিত্যানন্দ পালের বাড়ি যায়। এখান থেকে প্রফেসর নিত্যানন্দ পালকে ধরে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। আমার বাবা শান্তি রায় সাহাকে ধরে নিয়ে যায়। পথ থেকে প্রমথ পাল ও বলহরি দাসকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে আসে। আমি তখন নবম শ্রেণির ছাত্র। রাজাকার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালায়। তারপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে”।

আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এ রাজাকার এখনো বহাল তবিয়্যতে রাজনীতি করে যাচ্ছে। প্রভাব প্রতিপত্তিও কম নয়। তার সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সময় তার ভাতিজা পরিচয়ে এক লোক আমাদের শাসিয়েছিলো। বিষয়টি নেয় ধানমন্ডি থানায় একটি জিডিও করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের ক্যাপ্টেন বাছেত এখন জামায়াতে ইসলামের চিন্তাবিদ
একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার ছিলো সে, ছিলো শান্তি কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য, টাঙ্গাইলের রাজাকার, আল-শামস, আল-বদরে লোক নিয়োগের প্রধান ডাক্তার ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল বাছেত এখন ঢাকার রামপুরায় চারতলা বাড়ির মালিক। সে ঢাকার জামায়াতে ইসলামীর নেতাও। ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে মাঝে মধ্যেই তাকে অংশ নিতে দেখা যায় টেলিভিশনে। আবার কিচু বিশেষ পত্রিকায় ইসলামী ভাবধারার লেখাও প্রকাশিত হয়। পাকিস্তানিদের পক্ষে এই বাছেত জঘন্য ভূমিকা পালন করে। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতীর বল্লায়। এছাড়া টাঙ্গাইল শহরের থানাপাড়ায় ছিলো তার আরো একটি পৈতৃক নিবাস। টাঙ্গাইল এসে সে প্রথমেই দখল করে আদালতপাড়ার লতি ঘোষের বাড়ি। সেখানেই রাজাকারের ক্যাম্প বসানো হয়। এরপর আদালত পাড়ার নিকুঞ্জ বাবুর বাড়ি দখল করে এবং সেখানেও ক্যাম্প স্থাপন করে। এরপর বাছেত দখল করে সাবালিয়ার যুগল পদসাহার বাড়ি। এর মধ্যে সে অনেক হিন্দু নারীদের এনে ধর্ষণ করে। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন বিষয়ে বাছেতের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখতো পাকিস্তানি বাহিনী। একাত্তরের পরে সে পালিয়ে যায় সৌদী আরবে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আবার ফিরে আসে বাঙলাদেশে। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ পদের এ নেতার বর্তমান নিবাস রামপুরা টিভি ভবনের গলি দিয়ে ঢুকে চারতলা ক্রাউন রঙের বাড়ি।

রাজাকার শহীদুল্লাহ এখনো আওয়ামী লীগ নেতা
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকির রচিত একটি গ্রন্থের কথা উল্লেখ করতে হয়। গ্রন্থটির নাম ‘স্বাধীনতা’ ৭১’। এ গ্রন্থে শহীদুল্লাহ ও তার পিতা ফয়জুল্লাহর নাম রাজাকার হিসেবে উল্লেখ করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সে ছিলো আওয়ামী লীগের নেতা। এখনো সে বলে বেড়ায়- সে আওয়ামী লীগ করে। কিন্তু ২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠে তার যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি উল্লেখ করা হলে, তাকে বহিস্কার করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। একাত্তর সালে পাকিস্তান শুয়োর সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য তার বাবার নামে রাস্তার নামকরণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে চাইলে সে টেলিফোন ধরে না। একাত্তরে সে বহু লুটতরাজ করেছে। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বনে যায়। জেলা সদর বালিকা বিদ্যালয়ের মৌলভী শিক্ষক এই কুখ্যাত রাজাকার এখনো দাপটের সঙ্গে বলে বেড়ায়, সে আওয়ামী লীগের নেতা।

ওয়াছেদ রাজাকার এখন মানবাধিকার সংস্থার সভাপতি
‘রাজাকার শিরোমণি’ খেতাব ছিলো তার। এডভোকেট আবদুল্লাহ-হেল-ওয়াছেক একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেও এখন মানবাধিকার সংস্থার চেয়্যারম্যান হয়েছে। একাত্তরে সে ছিলো জেলা মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি। সে ছিলো পিস কমিটির অন্যতম নেতা। রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এর নানা কর্মকান্ড টাঙ্গাইল অঞ্চলে মূলত সে-ই নিয়ন্ত্রণ করতো। একাত্তর সালে জিন্নাহ টুপি পড়ে রাস্তায় বেরিয়ে সে নানা জনকে প্রশ্ন করতো- কেমন দেখাচ্ছে। যারা বরতো না, তাদের তুলে দিতো পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। সে এখন মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার প্রধান হিসেবে নানা দাপট দেখায়।

(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×