আমরা প্রথম যখন এই বাসায় উঠি, তখন আশেপাশে তেমন কোন বিল্ডিং ছিলোনা বললেই চলে। বলে রাখছি এই এলাকা পুর্বে বিশাল ঝিল ছিল, ড্রেজিংয়ের সাহায্যে ভরাট করে গৃহায়ন করা হয়েছে। তাছাড়া ডেভলোপার কোম্পানির কাছে অনুরোধ করে পুরো বাড়ি নির্মান শেষ না হতেই আমারা আমাদের ফ্লাটে উঠে পড়ি। বরাবরই সাহসী আমি এখানে এসে খাঁচা ছাড়া পাখি হয়ে গেলাম, বহুতল পুরোটা বাড়ি একদম নিজের মনে হত। তিন জনের পরিবারের অন্য সদস্যরা ব্যস্ত তাদের নিজেদের নিয়ে। আমি আমার মত রাত নাই দিন নাই ছাঁদে, পুরো বাড়িতে ঘুরে বেড়াই।
নির্জনতা ও অন্ধকার আমার সবসময়ই প্রিয় ছিলো। আমার ধারনা ছিল, দিনে আলো থাকবে আর রাত হলো অন্ধকারের জন্য। আমার ছাঁদে যাওয়ার প্রিয় সময় রাত বারোটার পর, এবং ছাঁদে গিয়ে সবচেয়ে উঁচু যায়গা রেলিং ছাড়া পানির ট্যাঙ্কের কোনায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকা। সে রাত ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার সাথে প্রচন্ড বাতাস। পড়নে ছিলো কালো সালোয়ার কামিজ। আমি চুল বেঁধে থাকতে পারিনা বলে বরাবরের মত ছিলো খোলা চুল। বলে বোঝাতে পারবো না, কেমন অপার্থিব একটা আনন্দ হচ্ছিলো মনে। দুই গজ দুরের কিছুও ঠিকমত দেখা যাচ্ছিলো না। গুনগুন করে গান গাইছিলাম, “আকাশের ঐ মিটিমিটি তারার সাথে কইবো কথা”।
অসম্ভব ভালোলাগার একটা মুহুর্ত কাটাচ্ছিলাম। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক। একটু একটু ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। হঠাৎ কনকনে শীতল বাতাস বয়ে গেল। আমি কেঁপে উঠে পা ঝুলিয়ে বসা থেকে উপরে উঠে আসতে চাইলাম। কিন্তু তা আর করা সম্ভব হলো না। কারন কে যেন আমার দু-কাঁধে প্রচন্ড ঠান্ডা হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে আছে! আমার স্পষ্ট মনে আছে, ছাঁদের গেট বাইরে থেকে লাগিয়ে এসেছি। কয়েক মুহুর্তের জন্য নিশ্বাস নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। এরপর আস্তে করে মাথা ঘুরিয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না! মধ্যবয়েসী একজন দাঁড়িওয়ালা মানুষ, যার চোখে আগুন জ্বলছে! তার মুখ থেকে শীতল নিশ্বাস আমার গায়ে এসে পড়ছে আর আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি। আমি কথা বলে উঠলাম, এমন এক কণ্ঠে যা আমার নিজের কাছেই অচেনা লাগলো। ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করলাম,
“কে! আপনি কে?!”
লোকটির কথা মনে হল কত দূর থেকে ভেসে আসছে। আস্তে তবে দৃঢ় কন্ঠে বললো
“তোকে আমার হয়ে কাজ করতে হবে, নাহলে এই মুহুর্তে আমি ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিব!” কথাটি বলেই আমকে ঠেলা দিয়ে প্রায় ফেলে দিতে ধরলো।
আমি মৃত্যুভয় টের পেলাম। চোখে পানি ঝরছে অঝরে। বললাম
“আপনি যা বলবেন তাই হবে, প্লিজ আমাকে মেরে ফেলবেন না”
তারপর সে তার কথা বলতে শুরু করলো- তার ভাষায়-
আমরা পুর্ব পুরুষ থেকেই এই এলাকায় থাকি। আমাদের বাড়ি ছিল এই যায়গা থেকে একটু দূরে। আর এই যায়গায় ছিলো চারদিকে পানি বেষ্টিত প্রকান্ড একটা বট গাছ। আমি মাদ্রাসা লাইনে কামিল পাস করে জিন সাধনা করতাম, ধীরে ধীরে বেশ ক্ষমতা অর্জন করে ফেললাম। লোকজন আমার কাছে আসে। এবং তাদের সমস্যারও সমাধান করে ফেলি। তবে এমন কিছু সমস্যা ছিলো, যেগুলোর সমাধান দেওয়া আমার সাধ্যি ছিলোনা।
আমি মরিয়া হয়ে গেলাম সব সমস্যার সমাধান বের করার জন্য। আগেও বই পড়তাম তবে এর পর দেশি বিদেশি আরো অনেক বই পড়া শুরু করলাম।পড়তে পড়তে আমার মনে এটা গেঁথে গেল যে, জীন সাধনায় নয় বরং শয়তানের সাধনায় চরম ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব। আমি বাড়ি ছেড়ে বটগাছের নিচে সাধনা করা শুরু করলাম। আর শয়তানের সাধনা মানেই সব অসৎ আর কুকর্ম। যায়গাটা নির্জন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সেখানে কেউ যেত না। আমি আমার শয়তানি কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে লাগলাম সাধনার নামে। যেখানে আগে সম্পুর্ন ইসলামিক জীবনযাপন করতাম সব বাদ দিয়ে সেখানে আমি শয়তানের দলে নাম লেখালাম। এদিকে লোকজন আমার কাছে সাহায্য চাইতে এসে ফিরে যেত, এবং আমার বটগাছের নিচে সাধনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতো। দুই মাস সাধনার পর আমাকে শয়তান দেখা দিলো, তবে কঠিন এক দাবি নিয়ে। যদি আমি সর্বময় ক্ষমতা চাই তাহলে তার নামে এক কুমার যুবক বলি দিতে দিতে হবে! আমি ইতস্তত করলে শয়তান বললো, একবারই সুযোগ দেওয়া হবে, আর আমার চাহিদা পুর্ণ না করতে পারলে তোকেও মরতে হবে।
গ্রামের অভাবী পরিবারের এক ছেলেকে চিনতাম, বয়স পঁচিশ ছাব্বিশ হবে। খুব ধার্মিক, আর তাছাড়া ছোটবেলা থেলেই তাকে আমি চিনি। হঠাৎ করেই তার কথা মাথায় চলে এলো। আমি মনে মনে সেই ছেলে্কে বলি দিব বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। তার সাথে মিশতে শুরু করলাম। অভাবী পরিবারটাকে নানা ভাবে সাহায্য করতে লাগলাম। ছেলেটি আসবাবপত্রের ব্যবসা ধরেছে নতুন নতুন। আমি তাকে মুলধন দিয়ে সাহায্য করলাম। একদিন সে আমার ধ্যানের যায়গায় কিছু আসবাবপত্র দিয়ে আসতে চাইলো। আমি এই সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। বললাম, “সারাদিন কাজ করো, কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে তারপর আস্তে ধীরে যেয়ো, রাতে আমার ওখানে দাওয়াত”। ছেলে তাই শুনলো। এদিকে আমি আমার আস্তানায় ফিরে রাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। ফিরার সময় দেখলাম গ্রামের বেশ কিছু লোক জটলা করছে। এরকম গ্রাম্য সালিশ প্রায়ই হয় তাই খেয়াল করলাম না, তাছাড়া আমি আমার শিকার পাওয়ার আনন্দে মশগুল ছিলাম। প্রস্তুতি হিসেবে সুস্বাদু খাবার আনালাম বাজার থেকে, আর যোগাড় করলাম কিছু বড় বেল কাঁটা, লম্বা শক্ত রুমাল, কেরোসিন তেল, শক্ত দড়ি, লোহার রড, ধারালো ছুরি, ইত্যাদি।
ছেলেটি আসার পর যত্ন করে রাতের খাবার খাওয়ালাম। খাওয়া শেষে কিছুক্ষন গল্প করার পর শরবতের নামে একধরনের নেশা খাওয়ালাম। অনভ্যস্ত বলে তার অল্পেই নেশা ধরে গেল। আমি শয়তানকে ডেকে আনার জন্য চক্র বানানোর বস্তু ছেলেটার শরীর থেকে সংগ্রহ করতে লাগলাম। প্রথমে তার মুখ রুমাল আর শরীর রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধলাম, তারপর চিমটা দিয়ে হাত পায়ের নখ উপড়াতে লাগলাম। ছেলেটা ব্যথায় যত মোচড়াতে লাগলো আমার মধ্যে তত পৈশাচিক আনন্দ ভর করলো! ক্ষমতা পাওয়ার দোরগোড়ায় আমি! সর্বময় ক্ষমতা! হা হা করে হাসতে লাগলাম! এরপর ছেলেটার মাথার চুল চামড়া সহ উপড়ে ফেললাম, টেনে টেনে ও ব্লেডের সাহায্যে! সে যত কষ্ট পায় আমি তত আনন্দ পাই! শেষ বস্তু হলো তার দুই চোখ! যা বেলের কাঁটা দিয়ে উপড়াতে হবে! আমি তাও করলাম তাকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে আর আমি অভুতপুর্ব আনন্দ পেয়ে! এরপর বাকী আনুসাংগিক বস্তু সংগ্রহ করে চক্র বানালাম শিকারকে মাঝে রেখে।
এখন কাজ চক্রের পাশে বসে মন্ত্র পড়া আর রড দিয়ে শিকারকে খোঁচানো ও পিটানো! এমনভাবে নির্যাতন করলাম যাতে মরে না যায়, কারন ওটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, আগুনে জ্যান্ত পোড়ানোর জন্য! আমি তখন শয়তান এসেছে কি না এসেছে তা নিয়ে ভাবলাম না! নিজেকেই অনেক ক্ষমতাধর মনে হলো! এভাবে মিনিট পাঁচেক চলার পর বাইরে কেমন একটা গুঞ্জন শুনতে পেলাম! কিছু ঠিকমত বুঝে উঠার আগেই চারদিক থেকে গ্রামের লোকজন আমাকে ঘিরে ফেলে তাদের আনা রশি দিয়ে বেঁধে ফেললো! তাদের চোখে দেখলাম হিংস্র পশুর ক্রোধ! আমি পালানোর সুযোগ পর্যন্ত পেলাম না! এরপর তারা আমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে দিলো! আমার চিৎকারে আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে গেল, কিন্তু কেউ ছিলোনা আমার মত পিশাচকে সাহায্য করার!
আমার কিছু শক্তি ইতিমধ্যে চলে এসেছিলো বলে মনে হলো, কারন এতো নির্যাতনের মাঝেও আমি জ্ঞান হারালাম না। এরপর ছেলেটাকে পুতার জন্য যে যায়গা খুড়েছিলাম সেখানে তারা আমাকে তারা জ্যান্ত পুতে ফেললো। আর আমার আত্মা সেখানেই আটকে গেলো। তখন সময় ছিলো রাত সাড়ে বারো!
এখন লোকটি আমার সাথে কথা বলা শুরু করলো। বললো, “ঠিক এই সময় আমি ছাড়া পাই। তুই কুমারী মেয়ে এবং এই মুহুর্তে আমার কবরের যায়গায় বসে আছিস, তাই তোর সাথে আমি যোগাযোগ করতে পারলাম। এখন তোর আমার আত্মা মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে!”
“আমি আজ থেকে তোর মাঝেই থাকবো। তোকে আর একটা কুমার ছেলে যোগাড় করে দিতে হবে। ছলে বলে কৌশলে সেই ছেলেকে ছাঁদে এনে এই যায়গায় এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে সেই আত্মার বিনিময়ে শয়তান আমার আত্মাকে মুক্তি দিবে! আমার কথার অন্যথা হলে তোর জীবন আমি নরক বানিয়ে ছাড়বো! জীবনে তোর বিয়ে হতে দিবোনা”।
প্রিয় পাঠক এরপর থেকে আমি কুমার ছেলের সন্ধানে আছি। এর আগে ইয়াহু মেসেঞ্জারের চ্যাট রুমে খুঁজেছি। সেটা বন্ধ হলে ব্লগে খুঁজতে আসি। আমি আসলে কিছু লিখতে পারিনা। এইসব ছড়া টরা সেই আত্মা আমাকে লিখায়, ছেলেদের ইম্প্রেস করার জন্য। এটা আমি নিজে অনেক কষ্ট করে লিখলাম। সেই আত্মা সারাক্ষন আমার মাঝে কথা বলে! অসম্ভব শারীরিক নির্যাতন করে। আমি জানিনা কবে তার আত্মাকে মুক্তি দিতে পারবো। কবে আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করবো।