(আজকে বাসাবো থেকে মালিবাগ (ফ্লাইওভারটা ছাড়া) সকাল সাড়ে সাতটায় বিশাল একটা ট্রাফিক জ্যাম খাইলাম। সেই দুঃখে পুরনো এই লেখাটার কথা মনে পড়লো। কিছুটা এডিটিত মানে সম্পাদিত)
*
আমার অফিস টাইমটা রমজান মাসে মজার- সকাল সাড়ে আটটা থেকে তিনটা অথবা সাড়ে নয়টা থেকে চারটা। এক সময় গেলেই হলো-- এমনকি সাড়ে আটটা বা সাড়ে নয়টার মাঝখানে কোনো এক সময় কিংবা একটু আগে বা পরে গেলেও সমস্যা নেই; নির্ধারিত সময়টুকু থাকলেই হয়। আমার যে স্বভাব, প্রতিবারই আগের রাতে ভাবি কাল থেকে সাড়ে আটটায় অফিস করবো; কিন্তু সকালবেলায় মন ঘুমন্ত থাকে! সেদিন, কোনো এক রমজান মাসের সকালেও সাড়ে আটটার অফিস ধরার কথা ছিল, কিন্তু সম্ভবত সকালের স্বপ্নে ‘শাবনূর’ এসে সঙ্গ দিচ্ছিল বলে বরাবরের মতোই উঠতে দেরি হল! শাবনূরের সাথে স্বপ্নে ইটিশ-পিটিশ করতে গিয়ে দেখি অলরেডি সাড়ে আটটা বাজে- এখন বেরুতে গেলেও সাড়ে নয়টার আগে পৌঁছানো যাবে না; তবুও কোনোমতে জামাটা গায়ে গলিয়ে দৌড়। ভাগ্য ভালো একটা সিএনজি পাওয়া গেল!
**
অফিস থেকে বেরুতে বেরুতে বিকেল সাড়ে চারটা। এমনিতেই দেরি করে এসেছিলাম, আবার একটু কাজও ছিল- বেরুতে অন্তত ১৫ মিনিট দেরি। এই সময়টায় ১৫ মিনিট দেরি মানেই বাসায় পৌঁছতে অন্তত এক ঘণ্টা লেট। তারপরও পাশের মার্কেটে সাজানো তরুণী কর্মী দেখতে দেখতে একটা ঠ্যাংছিরা, একটা তবন আর একটা সাতকড়ার আচার কেনার খায়েশে মার্কেটে কাটিয়ে দিলাম আরো অন্তত আধা ঘণ্টা। ততক্ষণে সোয়া পাঁচটা। নাহ্, বাসায় ইফতারের আগে পৌঁছতে হলে এবার দৌড়াতেই হবে।
***
নিয়মানুযায়ী কোনো সিএনজি যাবে না। নতুনবাজার থেকে বাসাবোর উদ্দেশ্যে ১৩ টাকার টিকিট কেটে রডে হাত ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পার হলাম বড়জোড় এক থেকে দেড় কিলোমিটার। এর মধ্যেই ঘড়ি ধরে ৫০ মিনিট পার। ভেতরের গেঞ্জিটা তো বটেই, বাইরের শার্ট পর্যন্ত ভিজে শেষ- প্রচণ্ড রোদ, তার চেয়ে বেশি গরম বাসের ভেতর। ওদিকে পাশের সিটে একটা পিচ্চি বমি করতে করতে যাচ্ছে, ডানপাশের যাত্রী মাঝেমাঝেই হেলে পড়ছেন। চোখমুখ তুলে বাইরে তাকানোর চেষ্টা করলাম- বৃথা! এর মধ্যে আবার বাসে উঠেই একেবারে পেছন দিকে চলে এসেছি যাতে অন্তত শান্তিমতে দাঁড়ানো যায়। কীসের কী! এই দুনিয়ায় শান্তি যা আছে তা তো ওই প্রাইভেটকারওয়ালাদের গাড়ির ভেতর!
****
গাড়ি আগাচ্ছেই না! ত্যক্তবিরক্ত হয়ে পেছন থেকে কোনোমতে ঠেলেঠুলে বেরিয়ে এলাম। সামনে পুরো রাস্তাটাই পড়ে আছে। এই বাসে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। বাস থেকে নামামাত্রই মনে হলো এসিরুমে ঢুকলাম। ৫০ টাকা দিয়ে মধ্য বাড্ডা থেকে বাসাবো পর্যন্ত রিকশা ঠিক করলাম। উদ্দেশ্য, রিকশা যদি ফাঁকফোকর দিয়ে যেতে পারে। আর যেতে না পারলেও অন্তত বাইরের বাতাসটা তো লাগবে! তো, রিকশা মোটামুটি এ গলি-ও গলি দিয়ে, একটু বড় রাস্তায় উঠে, আরেক রিকশাকে ধাক্কা দিয়ে, দু-চারটা গালিগালাজ করে বাসাবো চলে আসলো, এবং হ্যাঁ, বাসের আগেই।
*****
বাসাবোতে যখন নামলাম তখন ইফতার শেষ, সবাই চা-পান-বিড়ি খাচ্ছে। রাস্তার ধারের দোকান থেকে এক গ্লাস পানি মেরে চা-টা খেয়ে যখন বাসার দিকে হাঁটা শুরু করবো, তখন দেখি ১৩ টাকার টিকিট কাটা সেই সালসাবিল বাস বৌদ্ধমন্দির পার হচ্ছে। সামনে লাগানো একটা বিজ্ঞাপনের স্টিকার, বাইরের বডিতে লাগানো দুটো পোস্টার আর সামনের লুকিং গ্লাসের নিচের ডান্ডায় লেগে থাকা ছোট এক টুকরা সবুজ কাপড় দেখে চিনতে পারলাম- এই বাসেই উঠেছিলাম আমি নতুনবাজারে।
******
যে শহরে ঠেলা গাড়ির (রিকশা তো পা দিয়ে ঠেলেঠেলেই চালাতে হয়!) গতি ইঞ্জিন গাড়ির চেয়ে বেশি, সেই শহরে বাস করি আমি। এই আমার ঢাকা!