আন্ডার ওয়ার্ল্ড নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই কোন সমাজে । হলিউড বলিউড কাপানো অনেক ছবি করা হয় তাদের উত্থান-পতন- প্রেম নিয়ে । আসুন দেখি বাস্তবে দুনিয়া কাঁপানো কিছু মাফিয়া দল যারা সম্প্রতি পৃথিবীর বড় বড় গোয়েন্দা সংস্থাকে মধ্য আঙ্গুল দেখিয়ে শীর্ষ দশ টি স্থান দখল করে নিয়েছে ।
10. Hell's Angels
উত্তর আমেরিকায় তাদের সবচেয়ে স্টাইলিশ মাফিয়া দল বলা হয় । স্টাইলিশ জ্যাকেট বাইক , ট্যাটু আর নারীর প্রতি ঝোঁকটা তাদের একটু বেশিই বটে ।এক কঙ্কালের মাথা ওয়ালা ট্যাটু তাদের অঙ্গের শোভা বর্ধন করে । এই ট্যাটু কানাডায় এতো জনপ্রিয় যে কানাডার একটি কোম্পানী তাদের লোগো হিসাবে ব্যবহার শুরু করে । এক পর্যায়ে দলটি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে । হেলস এঞ্জেল নিজেদের একটি শৌখিন বাইক দল হিসাবে দাবি করলেও বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংগঠনগুলো তা মানতে নারাজ । তাদের মতে উত্তর আমেরিকার বিখ্যাত সব ডাকাতি , মানব পাচার , মাদক ব্যবসা , হত্যা প্রস্টিটিউশন এর সাথে এই গ্রুপটি জড়িত ।
9. United Bamboo
তাইওয়ানের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রনকারী গ্রুপ । দলটি হর হামেশা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে । তাদের দমন করার জন্য তাইওয়ান পুলিশ সর্ব শক্তি নিয়োগ করে ও ব্যর্থ হয়েছে ।
8. Tai hue chai
চীনের সবচেয়ে বড় গ্যাং ট্রায়াড । কিন্তু ট্রায়াড একক কোন গ্রুপ নয় বরং অনেক গুলো গ্রুপের সমন্বয়ে গড়ে উঠা একটি জোট যার সবচয়ে বিপদজনক সদস্য গ্রুপ তাই হুয়ে চাই । গনচীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর দলটি হংকং পালিয়ে যায় । হংকং থেকে তারা তাদের প্রস্টিটিওশন , চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসায় ইত্যাদি অবৈধ কাজ পরিচালনা করে ।
7.M s 13
লস এঞ্জালেসের রাস্তায় হিস্পানিক গ্রুপটির হিংসাত্নক উপস্থিতি প্রায়্ই মিডিয়ায় আলোচিত হয় । লস এঞ্জেলেস ছড়াও কানাডা মেক্সিকো সহ সমগ্র উত্তর আমেরিকায় তাদের উপস্থিতি । রক্তে মজ্জায় হিংসাত্নক এই দলটির কাছে রক্ত মানে উল্লাস ।২০০৪ সালে তারা হন্ডুরাসের একটি বাসে স্প্রে করে আগুন জ্বালিয়ে দেয় । বাসটিতে প্রায় ২৮ জন নিরপরাধ নারী ও শিশু জীবন্ত পুড়ে মারা যায় । এই অপরাধ সংগঠনের কারন মৃত্যু দন্ড আইন পুনপ্রবর্তন । আমাদের কোন পরিচিত রাজনৈতিক দলের সাথে মিলে কিনা ভেবে দেখুন ।
6. Camorra
অন্যান্য মাফিয়া দলগুলোর মতো এ দলটির একক নেতৃত্ব নেই । তাই বলা হয় তারা পৃথিবীর সবচেয়ে আনপ্রেডিক্টেবল মাফিয়া গোষ্ঠি । ছদ্মবেশে থাকতেও তাদের জুড়ি নেই । আসলে তারা সকল অপরাধ মূলক কাজগুলো করে বৈধ ব্যবসার আড়ালে । দুথ , কফি বেকারী ব্যবসার পেছনে তারা নিজেদের আসল চেহারা লুকিয়ে রাখে । ইতালির বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রায় আড়াই হাজারের মতো বেকারি আছে । রাজনীতিকদের তারা পয়সা দিয়ে হালি দরে কিনে রাখে ।তাদের পথে যারাই আসে প্রথমে তাদের সাথে অর্থ দিয়ে নেগশিয়েট করা হয় রাজি না হলে খুন । বাস্তবতা ফিল্মের চেয়ে ফিল্মি বৈকি ।
5. D-company
ঘরের কাছে আসি এবার । আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ।যারা বুদ্ধিমান তারা হয়তো ইতিমধ্যে ধরে ফেলেছেন হ্যা ,বলিউডের সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র দাউদ ইব্রাহিমের কথা বলছি । যারা company , once upon a time in Mumbai , black Friday র মতো ছবি গুলো দেখে ফেলেছেন তাদের নতুন করে বলার মতো কোন তথ্য আমার কাছে থাকলেও তা দিবনা । দাউদ এর ডি কোম্পানী র কর্মকান্ডের পরিধি নির্ধারন অসম্ভব । মাদক , অস্ত্র , মানব পাচার , কন্ট্যাক্ট কিলিং সহ এমন কোন অপরাধ নাই যা সে করে নাই । লাদেনের সাথে তার সখ্য স্বয়ং আমেরিকাকে তার নামে ওয়ারেন্ট বের করতে বাধ্য করেছে ।
4. Yamaguchi – gumi
এই দলটির স্লোগান হতে পারে গৌরবের ৯৭ বছর । দলটি ২০১৫ সালে তাদের শতবর্ষ পূরন করতে যাচ্ছে । ৯৭ বছরে দলটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার । দলটির প্রভাব নম্র ভদ্র জাপানি সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরে । রঙবেরঙের ট্যাটু করা দলের সদস্যদের প্রভাব এতো বেশি যে তাদের ঘাটাতে সাহস হয়না স্বয়ং পুলিশ বাহিনীর ।জুতা পালিশ থেকে চন্ডি পাঠ যে কোন কাজ করার জন্য নিজের জান পর্যন্ত কোরবান করে দিতে পারে দলের সদস্যরা । খুন ,চাঁদাবাজি , মাদক ব্যবসা, রিয়েল এস্টেট ,শেয়ার কারসাজি , পর্ণ ব্যবসা যেখানে টাকা সরি যেখানে ইয়েন সেখানে ইয়ামাগুচির সফল পদচারনা।
3. Solntsvskaya Brata
মস্কোভিত্তিক রাশিয়ার সবচেয়ে বনেদী গুন্ডা দল যার নেতা মিখাইল সাহেব নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করেন । এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারন ও আছে । তিনি দলের মাদক আদম পাচার পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি ব্যবসা থেকে অর্জিত অর্থ ১০০ টির ও বেশি বৈধ ব্যবসায় বিনিয়োগ করে থাকেন । নিউইয়র্ক , মিয়ামি . শিকাগোর রাস্তায় বিচরন দলটিকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা (?)এনে দিয়েছে ।
2. Sinaloa cartel Mexico
ঐতিহ্যবাহী এই সন্ত্রাসী সংগঠনটির ক্ষমতার গুণগাণ করা হয়েছে স্বয়ং ফোর্বস ম্যগাজিনে । ম্যাগাজিন ওয়ালাদের মতে এই গ্রুপের প্রধান গুজমান উরফে এল চাপো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন । কারন সে বিশ্ব ড্রাগ মাফিয়াদের গডফাদার । এই দলটির সাথে সখ্য স্বযং পুলিশ মিলিটারী গোয়েন্দা বাহিনীর । ধারনা করা হয় পুলিশ আর সিনাউলা দের যৌথ দল জুয়ারেজ ভ্যালি সংঘর্ষে একজোট হয়ে অংশগ্রহন করে । তাছাড়া মেক্সিকোর অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীদের দমনে এই দলটিকে ব্যবহার করা হয় । যাই হোক কাটা দিয়ে কাটা তোলার এই পদ্ধতির মূল লক্ষ Los zetas কে দমন যারা মাদক ব্যবসার অর্থের ভাগ পুলিশ, রাজনীতিক দের তো দেয়না বরং তাদের তোয়াক্কাও করেনা ।
1.Los Zetas
১৫/২০ বছর ধরে মেক্সিকোতে খুঁটি গেড়ে বসেছে কিছু শক্তিশালী মাদক ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েকটি সংগঠিত দল । তাদের মধ্যকার ক্ষমতার হিংসাত্নক দ্বন্দের কারনের প্রায় পঞ্চাশ ষাট হাজারের মতো হত্যাকান্ড হয়েছে । গ্যাংগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি দল Los Zetas আর Sinaloa cartel । এই দু দলের সম্পর্ক বুশ সাদ্দাম সম্পর্কের মতো মধুর ।হাজার কোটি টাকার ড্রাগ ব্যবসার নিয়ন্ত্রন নিয়ে তাদের এই যুদ্ধ কখনো কখনো মেক্সিকোর সীমান্ত ছাড়িয়ে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে । আমেরিকার এফ. বি আই. এর মতে লস জিটাস পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে । তাদের পথে যে আসে তাদের কে জাস্ট পিঁপঁড়ার মতো মেরে ফেলা হয় ।রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক,পুলিশ এমনকি সেনা সদস্য , গোয়েন্দা বাহিনী ও তাদের ভয়ে তটস্থ থাকে ।
২০১২ সালে মেক্সিকান মেরিন সেনাদের হাতে তাদের বস হেরিবার্তো লাজাকেনো নিহত হয় । মেক্সিকোর সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্যে ও তার লাশ ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা দিনে দুপুরে বাংলা ছবির এফ ডি. সি স্টাইলে । শক্তি প্রদর্শনের কোন সুযোগ ই তারা হাতছাড়া করেনা । উল্লেখ্য বাংলাদেশের জামাত শিবির তাদের কাছে ফিডারপোষ্য বাচ্চা কাচ্চা মাত্র । তারা দিনেদুপুরে অপরাধ করে বুক ফুলিয়ে অস্ত্র উচিয়ে ঘুরে বেড়ায় ।
তথ্যসূত্র :
১।উইকিপিডিয়া
২।নিউইয়র্ক টাইমস
৩।ওয়েবসাইট ।