somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনার হাঁস আর লোভী বউ

২৫ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






অনেক অনেকদিন আগে বানারসীতে একজন ভোলাভালা ভাল লোক ছিলেন, তার ছিল এক বউ আর তিন মেয়ে।
মেয়ে তিনজন খুবই রূপবতী ছিল দেখতে!
নন্দা, নন্দবতী আর সুন্দরীনন্দা নামের এই তিন কন্যার রূপ আর গুনের কথা সারা বানারসীর লোকজনের মুখে মুখে ফিরতো।

কিন্তু কপালের ফেরে এদের বিয়ে দেবার আগেই তাদের বাবা হঠাৎ একদিন মারা গেলেন। তাদের তেমন কোন সহায় সম্পত্তিও ছিল না, সুতরাং কোন উপায়ন্তর না দেখে তাদের মা তিন কণ্যাকে সাথে নিয়ে প্রতিবেশীদের ঘরে গৃহভৃত্যের কাজ শুরু করলো।

ওদিকে সেই লোক পৃথিবীর মায়া না কাটাতে পারছিল না, স্বর্গে তার মন নেই! সব দেখে শুনে সৃষ্টিকর্তা তাকে পূর্ণজন্ম দান করলেন, তবে মাঝে আবার একটা ফ্যাকরা বানিয়ে দিলেন!
তার জন্ম হলো সোনার হাঁসের রুপে, মানুষ না।

তো সেই হাঁস একদিন ডিম ফুটে বের হলো, ধীরে ধীরে বড়ও হলো! সমগ্র হাঁস কুলের তার সোনালী পালক দেখে হিংসা চোখ টনটন করে আর সোনার হাঁস গর্ব ঘাড় বাকিয়ে বুক ফুলিয়ে, মাটিতে পা না ফেলে হেটে বেড়ায় আর সুযোগ পেলেই পুকুরের পানিতে নিজের চেহারা দেখে!

এমন দেখতে দেখতে এক তার মনে গভীর ভাবের উদয় হলো, সে ভাবলো 'আচ্ছা আমি পূর্ব্বজন্মে কি ছিলাম"! ভাবতে ভাবতে এক সময়ে তার নিজের বউ আর তিন মেয়ের কথা মনে পরে গেলো।
পরিমরি করে সে তখন ছুটলো বউ মেয়েদর খোঁজে, গিয়ে যা দেখলো তাতে তার হৃদয় ভেঙ্গে ছয়খানা হয়ে গেলো!
তার আদেরর মেয়েরা কিনা দাসীবৃ্ত্তি করে!

সে তখন ভাবলো 'আমার গায়ের পালক গুলোত সব সোনার। আমি যদি ওদের একটা করে পালক দেই, তাহলে আর কোন কষ্ট থাকবে না।' এই ভেবে একদিন সেই বিশাল সোনার হাঁস উড়ে গিয়ে বসলো তাদের কুড়ে ঘরের মাঝের আড়ার উপর!
এত বড় সোনার হাঁস দেখে তো মেয়েদের চোখ ছানাবড়া! তারা 'মা মা দেখে যাও' বলে হাউকাউ, চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিল!
সেই চেচানীতে অতিষ্ট হয়ে হাঁস বলে উঠলো; 'থামো তোমরা! আমি তোমাদের বাবা, হাঁস হয়ে পূর্ণজন্ম লাভ করেছি। আমি তোমাদের দেখতে এসেছি। এখন থেকে তোমাদের একটা করে পালক দেবো, সেটা বিক্রী করে ভালই টাকা পাবে, আর তোমাদের পরের বাড়িতে কাজ করতে হবে না"!
এই বলে সে একটা সোনার পালক ফেলে দিয়ে উড়ে চলে গেলো আবার।

এমনকরে মাঝে মাঝেই সে আসতো আর সোনার পালক দিয়ে যেতো। সেই পালক বিক্রী করে তার বউয়ের হাতে প্রচুর টাকা আসলো, তাদের আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় না। ঘরে বসে পায়ের উপর পা তুলে খায় আর ঘুমায়!
টাকাপয়সার সাথে সাথে অবশ্য আরও একটা জিনিসও ফ্রি ফ্রি চলে আসলো তার কাছে, সেটা হলো আরও টাকার লোভ।
সুতরাং এক সকালে সে তার মেয়েদের বললো ' এই সব পশুপাখির চরিত্র বোঝা যায় না! এই হাঁস যদি তোমাদের বাবা হতেন, তাহলে তো আমাদের সাথেই থাকতেন, তাই না? আর যদি সে তোমাদের বাবাও হন, তাহলেও পাখি হয়ে গেছেন, কবে যে আসা বন্ধ করে দেন! যদি আর না আসে তাহলে আমাদের কি হবে?"

মেয়েরা ভাবলো আসলেই তো, 'সোনার হাঁস যদি আসা বন্ধ করে দেয় তাহলে কি হবে!"

মা তখন বললো " শোন মেয়েরা, এরপরে যেই না হাঁস আসবে আম্নি আমরা ওর সব পালক ছিড়ে নেবো!'

কিন্তু মেয়েরা বাবার কষ্ট হবে বলে এই প্রস্তাবে রাজি হলো না। তখন হাঁসের বউ বললো আচ্ছা যা করার আমি নিজেই করবো!

এরপর একদিন হাঁস আসলো, সেদিন হাঁসের বউ আবার স্পেশাল সাজগোজ করে বসেছিল।
হাঁস এসে আবার ঘরের আড়ার উপরে বসলে, বউ চোখে বিল্লোল কটাক্ষ হেনে বললো 'প্রিয়তম একবার আমার কাছে এসে বসো'!
আহলাদে গদগদ হয়ে যেই না হাঁস বউরে কাছে গিয়ে বসছে, ওম্নি বউ তাকে দুই হাত দিয়ে জাপটে ধরে সব পালক এক এক করে উপরে ফেললো!
হতভম্ব হাঁস শুধু ফ্যালফ্যাল করে দেখতে লাগলো!
ওদিকে হাঁসে বউ পালক নিয়ে এক দৌড়ে অন্য ঘরে গিয়ে দেখে 'হায় হায়, কই সোনার পালক! সব তো সাদা বকের পালকের মতো হয়ে গেছে!'

রাগে গজ গজ করতে করতে সে তখন হাঁসটাকে ধরে একটা বড় জালার মধ্যে আটকে রেখে দিল! মাঝে মাঝে বেড় করতো জালার বাইরে, কিন্তু গায়ে কোন পালক না থাকায় হাঁস আর উড়তে পারতো না!
এভাবে আটক থাকতে থাকতে এক সময়ে তার গায়ে আবার পালক উঠলো, কিন্তু সেগুলো হলো সব সাদা!
ওদিকে সোনার পালক সব হারিয়ে হাঁস বউ আর তার মেয়েদের আবার পুরানো কাজে ফিরে যেতে হলো!




আমার গল্পটি ফুরলো
নটে গাছটি মুড়লো!
কেনরে নটে মুড়লি কেন?

আমার ইচ্ছা তাই
তোর তাতে কিরে ব্যাটা?:|



...................................................................................................গল্পটা 'জাতকের' সুবর্ণহংস অবলম্বনে লেখা।
এমন সোনার হাঁসের গল্প আমরা ঈষপের গল্প, লা ফন্টেনের গল্পেও দেখি। ধারনা করা হয় এই 'সুবর্নজাতকই' এই সব গল্পদ্বরয়ের উৎস!
১৮টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×