আমি কামলা মানুষ। দেশে জায়গা পাইনাই, মানে কেউ কাম দেয়নাই, বিদেশে বহু কষ্ট কইরা আইসা পড়ছি, কামলা দিয়া খাই। দিনে কামলা দিই, রাইতে কামলা দিই। পুরো দিন লাগাইয়া ক্রিকেট দেখমু , সে দিন আর নাইরে পাগল, ফালাইয়া আসছি সোনার বাংলায়। আহারে কি দিন আছিল!! মনে আছে, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যেদিন চান্স পাইছিলো, যেমন কইরা চান্স পাইছিলো। রেডিও নিয়া বইসা আছি, কয় ১ রান লাগব ১ বল থেইকা। দম বন্ধ হইয়া আসতেছিলো। দম বন্ধ কইরাই বইসা ছিলাম। ব্যাট হাতে আকরাম খান। বল ব্যাটে লাগেনাই , শরীর দিয়া ঠেকাইয়া মামা আমার দিছে দৌড়। সেই দৌড় খান দেখছিলাম টিভিতে। আহারে! পতাকা হাতে লইয়া আকরাক খানের সেই দৌড়। পতাকাখান পত পত কইরা উড়ছে আর ১৪ কোটি ( তখন মনে হয় ১৪ কোটি কইত) মানুষ যেন হের লগে ডানা মেলাইয়া উড়ছে। আকাশ খান যেন হাতের সামনে।
প্যাচাল বাড়ামুনা। আরেক দিনের কথা কইয়া মূল কথাখান কইয়া ফালামু। পাকিস্থানরে যেদিন হারাইছে বিশ্ব্কাপে। ওয়াসিম আকরামের দলরে পুরা বেকুব বানায়ে দিছে। দেখি কাঁদতেই আছি, আমার বড় ভাই কাঁদে, আমি কাঁদি, ছোটভাই কাঁদে, পিচ্চি ভাইগ্না - লগে হেও কাঁদে। বিশ্বাস হইতে চায়না। আহারে! আহারে!
তারপর কত জল গড়াইয়া গেল। সেই আকরামরা গেল, বুলবুল রা গেল, কত কত বাঘা বাঘা খেলোয়াড় আইলো, গেল, আসতাছে, যাইতাছে। কত দলের সাথে জিতছে, হারছে, হারাইছে । যখন থেইকা কামলা হইয়া চইলা আসছি, আর বেশি দেখতে পারিনাই, খোঁজ রাখতে পারিনাই সারাদিনের এই খেলার ।
আমাগো খেলায়াড়ের বিশ্বরেকর্ড আছে, রেংকিং আছে, কত স্পন্সর, কত ছোট বড় মাঝারী মন্ত্রনাঘর, মন্ত্রনালয়, বোর্ড, কমিটি। দেশী বিদেশী কোটি টাকা দামের কোচিং গ্রুপ।
কেন কইতে গেলাম এইসব কথা? কই। আমার দেশে বিশ্বকাপ। আমি কই। কামলা দিই, আর সামুতে আইসা লোকজনের কথা পড়ি। আমার ঘরে টিভি নাই। টিভি থাকলেও দেখতে পারতামনা। সময় আর চ্যানেলের অভাবে। কিন্তু বাংলাদেশের ঘরে বাংলাদেশের সব'চে ব্যালেন্স দলের খেলা যাগো অভিজ্ঞতা আছে সব বড় দলরেই হারানো, হেগো সামনে এবার সুযোগ। মাইনসে কয়। খেলা দেখনই লাগবো্। তাই সই। কম্পু একটা আছে। ইন্টারনেটে দেখমু। সময়? ম্যানেজ করলাম। এই কলিগের লগে কাম পাল্টায়া, আরেকদিন ছুটি লইয়া, আরেক দিন সিক কল মাইরা , আছি গো মামা, তোমাগো লগে আছি। দেশে নাই , মাঠে নাই তো কি হইছে, আমি বাঙালী, দুনিয়ার যেখানে থাকি, ১৬ কোটির বুক যখন কাঁপে, আমারও কাঁপে। হইলাম না হয় কামলা। ভারতের লগে হারছে, কি কমু। লড়াইটা তো দেখতে হইবো। ঠিক আছে মামা। চালাইয়া যাও। আয়ারল্যান্ডের লগে জিতব। জিতছে। মাশাল্লাহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিন ভোরে আসছি কাম থেইকা। কম্পু খুইলা দেখি , ওমা ৫ জন নাই। কিরে খেলা কি শুরু হইছে না আগের হাইলাইট দেহায়! নাই তো নাই, ৬ যায়, ৭ যায়, যাইতেই আচে। যাইতেই আচে, ৫৮ তে শেষ। আবারও কান্দন আহে। কাঁদলাম সেই ঢাকা কোনদিকে মনে কইরা। ইংল্যান্ডের লগে জিতবাতো? কি খেইল দেখাইলো মামুরা। হেই দিন ও রাতের কাম থেইকা সকালের আইসা কম্পু খুইলা হতবাক। আরে জিততাছি তো্ । কয় কি এ্যা। কিন্তু কি হইতে লাগল। দেখি ঝরা শুরু। আমি দেখা শুরুর পর থেইকাই এই অবস্থা। তবে আমি কুফা। ঝাইড়া মেজাজ খারাপ। যদিও এইসব কুফা ঝাড় ফুক বিশ্বাস করিনা, তবুও দিলাম অফ কইরা। উইঠা মেজাজ খারাপ কইরা ঘর দুয়ার ঝাট দেয়া মপ করা শুরু করলাম্। কতক্ষন পরে ভয়ে ভয়ে আইসা সামু খুইলা দেখি কয় জিতা গেছি। আমি অস্থির হয়ে চিৎকার দেয়া শুরু করলাম। আমার পাশের বাসার ইংরেজ বুড়ি আইসা কয়, কিরে কি অইচে। পাইচি বুড়িরে। কইলাম তুমার দেশরে হারায়া দিছি। কয়, কেমনে? আমি কই , ক্রিকেট খেইলা। কয়, কিয়ের ক্রিকেট। আমি কই, বিশ্বকাপ। কয়, কবে শুরু অইছে। বুঝতাছেন তো ভাই-বোনেরা। বুঝাইয়া কইলাম বেবাক কিছু, বুঝানোর পর বুড়িও আমার লগে নাচে। ওরে রে রে, রমানের ( রহমান) দল জিতছে। রমানের দল জিতছে্ । আমার চোখে জল। হে আমারে জিগায়, কান্দ ক্যান। খাঁটি বাংলায় কইলাম, দাদিরে, যদি জানতি ক্যান যে কাঁদি, কিয়ের লাগি কান্দন আহে। বুড়ি কি বুঝছে কি জানি। কয়, ওহ সো স্যাড, সো স্যাড। আমারে টিসু আইনা দেয়। বইলা মনে হইল, আমি নিজেও কি জানি ক্যান চোখ ভইরা জল আসে।
যাহোক, হল্যান্ডের লগে খেলার দিন পড়চে কাম। কিন্তু মন যে আকুঁ পাঁকু করে। ব্রেক লইয়া স্টাফ রুমের টিভির সামনে সেই যে বইসা পড়লাম, ২ ঘন্টার ব্রেক। লওনের কথা ৩০ মিনিট। দল জিতাইয়া তবে কামে ফিরলাম। ম্যানেজারে কয় ( ইন্ডিয়ান), কিরে? আমি কইলাম জিতা গেছি। হের মুখ শুকনা।
আর আইজকা পুরা অফ ডে। রাতের তিনটার সময় উইঠা চা বানাইয়া বইলাম। দে মামা, আইজকা আবার কান্দায়া দে। পুরা বোলিং দেখলাম। ব্যাটিং শুরু হইল। তামিম নাই। তবে যে কইছিল শতরানে পার্টনারশীপ দেখমু আজকে্ আমি তো পুরা বিশ্বাস লইয়া আছি। কায়েস নাই। আমি আজকে আবার কুফা নাতো। দেখুমনা। দেশ জিতুক। আমি না দেখলে যদি জিতে , তবে তাই সই। বন্ধ কইরা দিলাম। মাঝে মাঝে সামু দেখি। ওমা শুধু যায় , শুধু নাই হয়ে যায় আশা। দিলাম সামুও বন্ধ কইরা। কখন যে ঘুমায়া পড়লাম। ঘুমের মধ্যেও বুঝতে পারি বুকের ভিতর চাপ ব্যাথা। একসময় জেগে সামু খুলে দেখি, জ্বলজ্বল করে জলছে ২০৬ রানের হার। হতাশা ক্ষোভ আর্তনাদ কান্না ---- এইসব কঠিন কঠিন শব্দেরে মিশায়া এককথায় কোন শব্দ আছে? ---সেরকম লাগতে লাগল। মাথা ধইরা গেল। সামুর ব্লগারদের পোষ্ট পইড়া কষ্ট যেন ভাগা ভাগি করতে লাগলাম।
ঘটনা মানে এই পো্ষ্ট লেখনের ঘটনা ঘটল তাজুল ইসলাম মুন্নার পোস্ট পড়ে। উনি কি জানেন, কি সত্য কথা উনি লিখে ফেলেছেন।উনি লিখেছিলেন, যদি এত সমর্থন থাকতো আর দেশ গুলোর , ওরা কাপ জিতে নিতো আমি কামলা মানুষ। পত্রিকা মানে ফ্রি যেগুলো দেয় সেগুলো পড়ি। এরা রাস্তায় ফালায়া রাখে মেট্রো পত্রিকা। এমন একটা বিশ্বকাপ যায়, তাগো দেশওতো বিশ্বকাপের দাবীদার। আপনে পত্রিকার কোথায়ও একটা নিস্তেজ স্কোর পর্যন্ত পাবেননা যেদিননা ইংল্যান্ড খেলে। আমার চোখ এড়িয়ে গেলে দুঃখিত। বিবিসি নিউজে খেলার সেকশান আলাদা। ফুটবল সাইক্লিং রাগবি বক্সিং সব আছে। বিশ্বকাপের নিউজ নাই। যেন এমন কিছু হইতেছেনা দুনিয়ার বুকে। আমার লগে এত ইংলিশ লোকজন, কাউরে দুইটা কথা কইতে দেখিনাই খেলা লইয়া। বেশির ভাগই আমার পাশের বাড়ির বুড়ির মত । আরেকখান ফ্রি পেপার ইভিনিং স্টেন্ডার্ড। যেদিন হেরা নিজেরা খেলে হেইদিন ছাড়া অন্যদিন কিছু নাই। আর আমগো দেশের পিচ্চি পিচ্চি পোলাপাইনের মুখস্থ কোন দেশের কোন খেলোয়াড়ের কয় রান , কয় উইকেট। কামের জায়গায় আছে এক অস্ট্রিলিয়ান। হে জানেইনা এ বছর বিশ্বকাপ হইতাচে নাকি। বললে বিশ্বাস করবেননা, তিন ইন্ডিয়ান আচে। বোধহয় তেলেগু। এত গল্প হয়, ক্রিকেট লইয়া একটা কথা কয়না। কিন্তু আমি তো জানি হেরাও আমাগের মত ক্রিকেটের পাগল। কথা বাড়ায়া লাভ নাই, আমার বিদ্যা অতি সামান্য। তবু এ অল্প বিদ্যা লইয়া কই, আমাগো মত এত আবেগ নিয়া, এত দরদ নিয়া, এত ভালবাসা নিয়া আর কেউ তাদের দলকে এত সার্পোট করেনা, সংখ্যায় তারা বেশি হতে পারে , কিন্তু আমাদের ১৬ কোটি মানে ১০০% লোকের ভালবাসা বুকে নিয়ে সাকিবরা মাঠে নামে।
কেউ কেউ বলবেন, এরা এসব জিনিসের এত মূল্য দেয়না। এত সময় কই। তাইলে জিগাই ফুটবলে এত সময় পায় কেমনে্ । আমি তো দেহি হেরা হারাদিন ফুটবল লইয়াই কথা কয়, বেটিং করে, হারলে মদ খাইয়া মাতলামি করে, জিতলেও করে। দলের পতাকা লইয়া গেন্জি গায়ে দিয়া চিল্লাতে থাকে।
আমগো ১১ জন খেলেনা, খেলে ১৬ কোটি, দুনিয়ার যেখানে থাকে বাংগালী, দেশে বিদেশে , প্রিয় সাকিব, আপনারা কি জানেন আজ আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে ক্রিকেটের আকাশ কালো করে ফেলবো?
পুনশ্চ: সা. আফ্রিকার সাথে ইন্ডিয়া হেরে গেলে ম্যানেজার ব্যাটার সামনে যেমন কইরা ইংল্যান্ড হারানোর গর্ব দেখাইচিলাম, হের আমারে কইছে, আচ্ছা সা. আফ্রিকার সাথে খেলার পরে আমার লগে কথা কইও। সাকিব, কাল কাজের যাবার সময় আমার খুব খারাপ লাগবে।