কয়েকটা কথা বলে নেই ....
গত বছর নাট্যকার পরিচালক মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী লন্ডনে এসেছিলেন। একদিনের(!) মুভি কর্মশালার আয়োজন করেছিলো লন্ডনের একটা প্রতিষ্ঠান। মূলত প্রশ্ন উত্তর ভিত্তিক কর্মশালা রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিলো ফারুকীর সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে। ছোট্ট তবে গোছালো প্রোগামটিতে যোগ দেবার সুযোগে এবং প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে জানতে চেয়েছিলাম, আচ্ছা, একজন ফিল্ম মেকার তার ক্যামেরা আর বাস্তবতার মাঝের লেন্সের পুরুত্ব কতটুকু ঘোচাতে চান, কিংবা সীমারেখাটি কি বলে আপনি মনে করেন? ফারুকী উত্তর দিয়েছিলেন, একজন ফিল্ম মেকারের স্বপ্নই থাকে ক্যামেরা আর বাস্তবতার মাঝে লেন্স-এর পুরুত্ব পুরোপুরি ঘুচিয়ে দেয়া। বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু উত্তরটি পছন্দ হয়ে ছিলো। কথায় কথায় জানা গেল, তিনি ইরানী ছবি দ্বারা খুব প্রভাবিত । নিজেই স্বীকার করলেন মাজিদ মাজিদি, আব্বাস কিরস্তামীদের ক্যামেরার ভাষা তার আরাধ্য। ফারুকী বা তার সমসাময়িকীদের কাজে ক্যামেরা ধরার যে এংগেল কিংবা দৃশ্য নির্মানে যে বাহুল্য বর্জন কিছুটা হলেও চোখে পড়বে, তার মূল হয়তো এ কথাটিতে পাবেন। মাজিদ মাজিদির ছবি তার নাম জেনে বা না জেনে আমার ধারনা অনেকেই দেখে ফেলেছেন । যতদূর মনে পড়ে বিটিভিতে Children of Heaven দেখিয়েছিলো অনেক দিন আগে। মাজিদ মাজিদির নাম দেখে ছবি দেখতে হবেনা, কিন্তু ছবি দেখে যে পরে কার সিনেমা জানতে চাইবেন, এ ব্যাপারে গ্যারান্টি দিতে পারি। যাক গে, এ পোষ্টের জন্য এ কথা গুলো কোন দরকার ছিলোনা, কিন্তু লিখতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো বলে হালকা হলাম। মূল কথায় ( এতক্ষন বাদে! ) ফিরে যাই।
ছবির নাম: The Song of Sparrows
পরিচালক: মাজিদ মাজিদি
সময়সীমা : ১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট
অভিনয়ে : Reza Naji, Maryam Akbari, Kamran Dehgan, Hamed Aghazi
রিলিজ ডেইট: 1 October 2008 (Iran)
আই এম বিডি রেটিং: ৭.৭
চিত্রনাট্য:Mehran Kashani এবং Majid Majidi
Awards:6 wins & 2 nominations (এর মধ্যে আছে অভিনেতা রেজা নাজির এশিয়ান পেসিফিক স্ক্রীন এওয়ার্ড, সিলভার বার্লিন বিয়ার পুরস্কার)
সাদা চোখে সেলুলয়েডের গল্পটি:
তেহরান থেকে অদূরে পাহাড়ী গ্রাম। সে গ্রামের উটপাখীর খামারে কাজ করে করিম। তার দু'মেয়ে এক ছেলে। অভাবের সংসার, নিম্নমধ্যবিত্তের আনন্দের সংসার। কিন্তু দু'টো ঘটনায় মোড় ঘুরে যায় গল্পের জীবন। খামার হতে পালিয়ে যায় একটা উটপাখী। করিমের চাকুরী চলে যায়। অন্যদিকে তার কালা মেয়েটি তার hearing aid টি কুয়োর মধ্যে হারিয়ে ফেলে। খুঁজতে গিয়ে করিমের ছেলে হোসেন আর বন্ধুরা আবিষ্কার করে, কুয়োটিতে মাছ চাষ করেতো মিলিয়ন টাকা কামানো যায়! hearing aid টি পাওয়া যায় ঠিকই তবে নষ্ট হয়ে যায়। করিম তেহরান যায় hearing aidটি ঠিক করার জন্য। ঘটনাচক্রে সে বনে যায় মোটরচাইকেল ট্যাক্সি ড্রাইভার। খুঁজে পায় নতুন জীবিকার সন্ধান। কিন্তু সৎ মানুষ করিম এ কাজ করতে গিয়ে সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে গিয়ে মুখোমুখি হয়ে পড়ে উপার্জনসম্ভব ভিন্ন এক কঠিন বাস্তবতার। ছোট্ট ছোট্ট নিম্নবিত্ত সংসারের ঘটনায় এগুতে থাকে সেলুলয়েডের ফিতা। হঠাৎ করেই অঘটন। পুরনো জিনিস পত্র ঠিকঠাক করতে গিয়ে করিম এক্সিডেন্ট করে। সাময়িক পঙ্গু হয়ে পড়ে। ঘটনা চক্রে তার ছেলেটি (এবং তার বন্ধুরা) কাজ শুরু করে গ্রাম সম্পর্কের এক চাচার গাড়ীতে, যার কাজ বিভিন্ন জিনিস শহরে সাপ্লাই করা। এত কিছুর মাঝেও হোসেন এবং তার বন্ধুদের মাছ চাষের ইচ্ছে জীইয়ে থাকে, পচা ডোবাটিকে পরিষ্কার পানিতে ভরিয়ে তোলে, টাকা জমিয়ে মাছ কিনবে বলে। কয়েকটা গোল্ডফিস উপহার হিসেব পায় নিজেদের কাজের পুরস্কার হিসেবে কিন্তু তাও হারিয়ে ফেলে ঘটনার ফেরে। অবশেষে একটা উদ্ধার করতে পারে আর সেটাই ডোবাতে ছেড়ে দেয় একদিন মিলিওনিয়ার হয়ে যাবে এ স্বপ্ন দেখতে দেখতে। করিম খবর পায় , হারিয়ে যাওয়া উটপাখীটি ফিরে এসেছে, তার কাজটি আবার ফেরত পাওয়া যাবে। ভাঙা পা নিয়ে উটপাখীটি দেখতে যায় করিম, প্রবল ডানা ঝাপটানো রাজকীয় উটপাখীর ডানায় স্বপ্ন দেখতে থাকে করিম তার নতুন জীবনের...
ইউটিউব ট্রেলার এখানে:
কি দেখবেন:
এই রকম অতি সাদাসিধে এক কাহিনীকে কি মুন্সিয়ানায় যে পর্দায় দেখানো যায়, তা দেখে বুঝতে হবে কেন মাজিদ মাজিদি ফিল্মমেকারদের ফিল্মমেকার। চাইলেই যেন গল্পটিকে মোচড় দেয়া যেত, এই বুঝি মাজিদি কাঁদিয়ে দিলেন আরেকবার ( কয়েক বারই আপনাকে কাঁদতে হবে এবং আতংকিত হয়ে থাকতে হবে)। কিন্তু সে দিকে না গিয়ে মাজিদি দেখালেন প্রতিদিনের যে ম্যোরালের মধ্যে পড়ে একজন ইরানী নিম্নমধ্যবিত্ত, প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক, ভিন্ন বাস্তবতায় তার সততা আর জীবিকার পরীক্ষা, প্রাকৃতিক দৃশ্যের মোহনীয় ভাষা আর সংসারের গল্প। আশা নিরাশায় স্বপ্ন আর স্বপ্ন ভঙ্গের কাহিনী দেখে উঠবেন চোখ মুছতে মুছতে। ও হ্যাঁ, কাঁদানো নয়, মাঝে মাঝে এমন সব সংসারের খুনসুঁটি দেখাবে আপনাকে চোখ জল নিয়ে দেখবেন কখন যেন হাসছেন।
টরেন্ট ডাউনলোড লিংক: down load from pirate bay
সরাসরি দেখতে চাইলে:
ওয়াচ মুভি.নেট থেকে
দেখে ফেলুন। সাবটাইটেল সহ দেখতে হবে। এই কষ্টটুকু স্বীকার না করে তো উপায় নেই, কিন্তু দেখে ফেলার পর নিশ্চিত মাজিদির আরেকটি ছবি খুঁজবেন। ( একজন আনাড়ি দর্শকের প্রথম মুভি রিভিউ, পছন্দ হলে মাজিদির আরেকটা মুভির সংবাদ দিমুনে, এখন বলেন পছন্দ হলো কিনা???)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১০ রাত ১২:৪৮