বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার ক্ষেত্রে এই দেশে জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং ক্ষমতায় থাকার কোন বিকল্প নেই। (//আমি অরণ্য)
১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাস। সদ্য নির্বাচনে জিতে আসা বিএনপি সরকার ক্ষমতায়। হঠাৎ করেই কক্সবাজার-টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী নাসাকা বাহিনী বিনা উষ্কানিতে গুলি চালানো শুরু করে। পালটা জবাব দেয় বিডিআর। এরই মধ্যে উখিয়া বিডিয়ার ফাঁড়িতে রাতের আঁধারে অতর্কিত হামলা চালিয়ে দুই বিডিআর সদস্যকে হত্যা করে চোরের মত পালিয়ে যায় নাসাকা। সাথে সাথে ঢাকা থেকে রেড এলার্ট জারি করা হয়। সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধাবস্থা্র প্রস্তুতি নেয় বিডিআর। নাসাকা পিছু হটে যায়। এর কয়েকদিন পরেই সীমান্ত এলাকায় বিপুল সেনা সমাবেশ ঘটায় মিয়ানমার। সাথে সকল প্রকার ভারী যুদ্ধাস্ত্র। সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশের দিকে মার্চ শুরু করে অনেকগুলো ব্যাটেলিয়ান। গণতন্ত্রের পথে সদ্য যাত্রা শুরু করা একটা দেশের ক্ষমতাসীনদের তখন দিশেহারা যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তা না হয়ে উলটো ঢাকা থেকে সর্বাত্বক পালটা জবাবের নির্দেশ দেয়া হয়। কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটি থেকে আকাশে উড়াল দেয় এফ সিরিজের বাংলাদেশের যুদ্ধবিমানগুলো। আর্মি তখনো দৃশ্যপটে আসেনি। কারণ বিডিয়ারের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, মিয়ামনারকে ঠেকাতে তারাই যথেষ্ট। কক্সবাজার-টেকনাফ-উখিয়াতে মানুষের আতঙ্ক। কিন্তু নিশ্চল, দৃঢ়, অটল ভঙ্গিতে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে বিডিয়ারের সদস্যরা। সাধারণ মানুষ হাতের দা থেকে শুরু করে পাথর-লাঠি নিয়ে প্রস্তুত। নাফ নদীর উপর পৌঁছে গেলো বাংলাদেশের যুদ্ধবিমান। সাথে সাথেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মার্চ থেমে যায়। মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশৃঙ্খল ভাবে উলটো দিকে চলে যেতে শুরু করে তারা। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের মতেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সেই আতঙ্ক ছিলো দেখার মত দৃশ্য! এভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশের উপর প্রথম প্রত্যক্ষ সামরিক আক্রমণ অসাধারণভাবে মোকাবেলা করে সদ্য ক্ষমতায় আসা বিএনপি সরকার।
'৭৭-'৮১, '৯১-'৯৬, '০১-'০৬ প্রতিবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ব্যাপকহারে বাংলাদেশের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো হয়। ভৌগোলিকভাবে এমন এক অঞ্চলে বাংলাদেশ বাস করে যেখানে যথাযথ সামরিক সক্ষমতার কোন বিকল্প বাংলাদেশের সামনে নেই। সামরিক সক্ষমতার বাইরে সামরিক কূটনীতিতেও অসাধারণ সাফল্য দেখায় বিএনপি। যার প্রমাণ হচ্ছে '৯১ পরবর্তী সময়ে চীনের সাথে দক্ষ কূটনীতির কারণে মিয়ানমার বনাম বাংলাদেশের উত্তেজনা প্রশমন। আর বিপরীতে ভারতীয় অনুগত শক্তি যখন ক্ষমতায় আসে তখন কি হয় তা জানার জন্য কি খুব বেশি দূরে যাওয়া লাগবে? ভারতীয় দালালরা যখন ক্ষমতায় আসে তখন পিলখানায় ঠান্ডা মাথায় ৫৭ জন আর্মি অফিসার হত্যা করে বাংলাদেশ আর্মির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া হয়। সীমান্তে অপ্রতিদ্বন্দী বিডিয়ার পরিণত হয় বিজিবি নামক লাঠি বাহিনীতে। গতকাল মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবির এক নায়েককে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে এবং আজ তারা আক্রমণ করে উখিয়া সীমান্তে। যে মিয়ানমার '৯১ এর পর থেকে আর কোনদিন গুলি ছোঁড়ার সাহস দেখাতে পারেনি সীমান্তে, আজ তারা আমাদের সীমান্তরক্ষি বাহিনীর কর্মকর্তাকে তুলে নিয়ে হত্যা করে, সীমান্ত আক্রমণ করে। অবৈধ, জারজ, দালাল সরকারের ফল এটা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার ক্ষেত্রে এই দেশে জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং ক্ষমতায় থাকার কোন বিকল্প নেই।