আমরা যারা মেসে থাকি তারা সাধারণত গ্রামে গেলে ঢাকা আসার সময় অনেক সুন্দর সুন্দর খাবারের জিনিস নিয়া আসে। কেউ মায়ের হাতের পিঠা আনে, কেউ গাছের আম-কাঁঠাল আনে, কেউ পুকুরের মাছ ভাইজা আনে। আর বাড়ি থেকে এগুলো আনার পর মেসের সবাই একসাথে মজা কইরা খায়। সেই ফিলিংস। যেন সব আপনা মায়ের পেটের ভাই।
তো, আমার মেসের সবাই বাড়ি গেলে আসার সময় মায়ের হাতের খাবার নিয়া আসে। কেবল মাত্র আমি একমাত্র বান্দা যে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই আনি নাই। না আনার কারণ হচ্ছে, আমি প্রচণ্ড রকমের আইলসা একটা মানুষ। আমি এমন ধাচের অলস, যে ভাত খাওয়ার সময় ২ টা লোকমা ভাত বেশি খাই না, খাইতে কষ্ট লাগে বইলা। তো বাসা থেকে আসার সময় আম্মা কখনোই আমারে দিয়া কোন জিনিস ঢাকা আনাইতে পারে নাই। এমনকি মাঝে মাঝে আম্মা লুকাইয়া যদি কোন পিঠা বা ফলমূল আমার ব্যাগের মধ্যে দেয়। সেক্ষেত্রেও আমি আসার আগে ব্যাগ চেক করে খাটের নিচে আম্মার জিনিস রাইখা আসি। এইগুলা নিয়া আম্মায় যে কত কান্নাকাটি করছে, তাতেও লাভ হয় নাই।
এইসব ব্যাপার গুলো নিয়া মেসের পোলাপাইন আমারে সেই খেপাইত। কিন্তু আমি কানে নিতাম না। তো, বছর খানেক আগে আমি বাসা থেকে ঢাকা আইসা শুনি মেসে বুয়া নাই। তখন চইলা গেলাম আজিমপুর মামার বাসায়। সেখানে ২ দিন থাকার পর যখন শুনলাম বুয়া আসছে তখন বাসায় আসছি। অন্যদিকে মেসের পোলাপাইন মনে করছে, আমি বাসা থেকে কিছু আনি নাই তাই মামার বাসায় যাইয়া পালাইছি। তো ওরা বলল, বাসায় যাওয়ার জন্য কেউ আর খেপাবে না। আমি কিছু বলি নাই, শুধু মুচকি হাঁসছি।
সন্ধায় আজিমপুর থেকে ধানমণ্ডি তে আসার সময় দেখি নীলক্ষেতে হরেক রকমের আচার বেচতাছে। সেই ঘ্রাণ। সেখান থেকে ৫ প্যাকেট আচার ৫০ টাকা দিয়া কিনলাম। বাসায় আইসা চুপিচুপি একটা বইয়ম এর মধ্যেে সেই আচার ঢুকাইলাম। পাশের রুমে যাইয়া দেখি পোলাপাইন আমার দিকে তাকাইয়া হাঁসতাছে, মনে হয় এখনই খেপানো শুরু করবে।
আমি ওদের দিকে আচারের বইয়ম দেখাইয়া বলাম, কখনও তোদের জন্য কিছু নাই তো। তাই আম্মায় নিজ হাতের আচার জোর কইরা ব্যাগে ঢুকাইয়া দিছে তোদের জন্য। ওরা এত জোরে হাঁসলো যেন কোন এলিয়েন দেখছে। তখন ওরা কইল, সত্যি কইরা ক, এই আচার কই থাইকা চুরি কইরা আনছস? তখন বললাম, সত্যি বললে তো বিশ্বাস করবি না। তাও বলি , মামার বাসায় যাইয়া দেখি মামানী আচার বানাইছে, অনেক মজা হইছে। পরে চিন্তা করলাম কখনও তোদের জন্য কিছু আনি নাই তো, তাই আজ এই আচার আনলাম। এরই মধ্যে, এক মটু আমার হাত থেকে আচারের বক্স টান মাইরা নিয়া গেল। হঠাৎ আমার ফোন আসলো। আমি অদের বললাম, আমার জন্য একটু রাখিস, আমি একটু পর আসতেছি।
১০ মিনিট পর রুমে ঢুকে দেখি বান্দারা আচার সব তো শেষ করছেই এখন বক্স চাইটা খাইতাছে, আর হাঁইসা হাঁইসা আমারে কইতাছে, জীবনে প্রথম কিছু আনছ তাও আবা ভাগ চাও? কত শখ? আমি আর কিছুই বলি নাই।
পরের দিন শুনি ৫ জনের মধ্যে ৩ জনের ই নাকি লাইন ডায়রেক্ট হইয়া গেছে। বাথরুমে যায় আর আসে। এই কথা শুনে ওদের রুমে যাওয়ার পর দেখি, সবগুলায় মিল্লা আমারে গালি দিতাছে। "আমার আচার খায়া নাকি এমন হইছে।
আমি তখন বলছি, আমার আচার আমারে ছাড়া খাইলে এমন ই হবে। তখন দেখলাম সবগুলা আমারে রুমের খালি বোতল মারতাছে। আমি হাঁসতে হাঁসতে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। আর ভাবতেছি "নীলক্ষেতের আচারের কি কারিশমা রে ভাই। ভাগ্যিস ওরা আমার জন্য রাখে নাই। না হইলে আমি এই অবেলায় কারে গাল দিতাম।"
মনে পড়লে এখনও হাঁসি পায়, অনেক হাঁসি পায়।
সেদিন অনেক মাঝা হইছিল, অনেক মাঝা !!!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯