বিক্রমসংবৎ ছিল আমাদের উপমহাদেশের প্রথম সৌরপঞ্জিকা যার সূচনাসাল ৫৬ অব্দে। সেটা ৫৯৩ অব্দে শশাঙ্কের সময় পরিমার্জিত করা হয়; আবার ১৫৫৬ অব্দে আকবরের সময়েও পরিমার্জিত করা হয়। আর অধিবর্ষের এক দিন যোগ করার প্রচলন করেছিলেন ১৯৬৬ সালে ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ। সবাইকে কম বেশি ক্রেডিট দেয়া লাগে।
বিক্রমসংবৎতে এক বছর ছিল ৩৫৪ দিনের। সেটা সম্ভবত শশাঙ্কের সময় ৩৬৫ দিনে রূপ নেয়। শূন্যবর্ষও পরিবর্তন করা হয়। ইসলামিক শাসনামলে মূলত খাজনা আদায়ের জন্যে সেটা রিপ্লেস করে হিজরি পঞ্জিকা ব্যবহার করা হত; যেটা উপমহাদেশের ঋতুচক্রের সাথে কোন মিল ছিল না। যার কারনে কৃষিনির্ভর ভারতবর্ষে খাজনা নিতে সমস্যা যেত। কিন্তু কৃষকরা প্রাচীন পঞ্জিকা ধরেই ফলন করত। সম্রাট আকবর এটা উপলব্দি করে পঞ্জিকা স্ট্যান্ডার্ডাইজ করেন ও পরিমার্জন করে। অর্থবছর ও হালখাতার প্রচলন উনি শুরু করেন। একজন মোঘল শাসক হিসেবে এমন পরিবর্তন করার মেন্টালিটি রাখাটা যথেষ্ট পজেটিভ ও র্যাডিকাল ছিল। সেটার জন্যে সে প্রশংসার দাবিদার। আকবরের ক্যালেন্ডারের শূন্যবর্ষ ১৫৫৬ সালে, উনার সিংহাসন-আরোহণের বছর থেকে। কিন্তু ২০২৩ আর ১৪৩০ মাইনাস করলে আসে ৫৯৩। যেটা শশাঙ্কের ক্যালেন্ডারকে সাজেস্ট করে। কিন্তু শশাঙ্ক ও বিক্রমাদিত্যের ক্যালেন্ডারেও অনেক মাসের নাম বর্তমান পঞ্জিকাতে নাই। আবার আকবরের ক্যালেন্ডারের মাসগুলোর নামও ছিল একেবারেই ভিন্ন।
কেন ও কিভাবে বাংলা পঞ্জিকা এখনকার অবস্থায় এসেছে এটা নিয়ে ইতিহাসবিদরা এখনো কিছু কিছু জায়গায় ডিসাইসিভ থিউরি দিতে পারে নাই। তবে হ্যা, যতদূর আমরা জানি আর এই পথে যাদের কন্ট্রিবিউশন ছিল তাদের সবার স্বীকৃতি দেয়া উচিত ও হাজার বছর ধরে বিবর্তিত এই ক্যালেন্ডারকে এপ্রিসিয়েট করা উচিত।
সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।