প্রথমেই দুঃখিত পরবর্তী পর্ব দিতে এত দেরী হওয়ার জন্য। নানাবিধ ঝামেলার কারণে আর লেখা হয়ে ওঠেনি সিরিজ এর পরবর্তী পর্বগুলো।যারা প্রথম পর্বটি দেখেননি তারা ঢুঁ মারতে পারেন নীচের লিঙ্কে।
পর্ব-১
মিলিওন ডলার বেবী(Million Dollar Baby)
মাস্টারপিস,পিউর এবং সিম্পল। দা মিলিয়ন ডলার বেবী নামের ছবিটিকে এই বিশেষণগুলো দিয়েছিলেন প্রথম মুভি ক্রিটিক হিসেবে পুলিৎজার বিজয়ী রজার এলবার্ট ।আরেক চলচ্চিত্র ক্রিটিক কোল স্মীথে লেখেন
"Million Dollar Baby" is a tragic film about an innately paternal man's desperate need to overcome his own emotional traps and the loyal girl who facilitates his growth by her steely will and stubborn drive.
অসাধারণ এই ছবিটি যদি না দেখে থাকেন তবে আপনি হয়তো অনুভবই করতে পারবেন না অনেক সময় এমন কিছু সৌন্দর্য থাকে যার কাছে মানুষের পরিচিত সবচেয়ে ভাল বিশেষণগুলোও মলিন হয়ে পড়ে।মিলিয়ন ডলার বেবী হল এমনি একটি ছবি যা আপনার ডিপ্রেশনকে হয়তো বা নিয়ে যাবে অন্য কোন লেভেলে।
ক্লিন্ট ইস্টউড কে পরিচালনায় এবং অভিনয়ে; সেই সাথে মরগ্যান ফ্রীম্যান এবং হিলারী সোয়্যাঙ্ককে দেখবেন এই ছবির প্রধান চরিত্রগুলোতে।এই নামগুলোই যারা মুভিপ্রেমীক আছেন তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে আগ্রহের সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট।
ছবিটির কাহিনী ত্রিশোর্ধ নারী ম্যাগিকে নিয়ে।জীবনের শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও সে স্বপ্ন দেখে বক্সার হওয়ার। ওয়েট্রেস হিসাবে কাজ করে অনেক কষ্টের জমানো টাকা নিয়ে ম্যাগি ভর্তি হতে আসে ফ্র্যাঙ্কি(ক্লিন্ট ইস্টউড) এর জিমে বক্সিং ট্রেনিং এর জন্য।যদিও প্রথমে আপত্তি সত্ত্বেও পরে বাধ্য হয়ে তাকে ট্রেনিং দিতে রাজি হন ফ্রাঙ্কি।এই মুভিতে মরগ্যান ফ্রীম্যান অভিনয় করেন এডি চরিত্রে ফ্রাঙ্কি এর জীম এর কর্মচারী এবং মুভিটির ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনাকারী হিসেবে।
নিজ কন্যার সাথে সম্পর্কচ্ছেদের পর টাফ গাই ফ্রাঙ্কি কাউকে তার কাছে আসতে দিতে নারাজ এবং সেই সাথে পচিশ বছর আগের নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্তের জন্য যে সবসময় দূরে সরিয়ে রাখেন নিজেকে সবার কাছ থেকে। কিন্তু ম্যাগিকে ট্রেনিং দেওয়া শুরুর পর ম্যাগির মত ফ্রাঙ্কিও একসময় স্বপ্ন দেখতে থাকে ম্যাগির বিশ্বজয়ের। কিন্তু সবকিছু যখন ঠিকভাবেই এগুচ্ছিল তখন একসময় দুর্ঘটনার বলি হতে হয় ম্যাগিকে।ভেঙ্গে যায় তাদের স্বপ্ন। ছবিটি দেখার পর ম্যাগির জন্য হয়ত আপনার মনটিও একটু কেপে উঠবে। জীবনে সে শুধুমাত্র একটি স্বপ্নই দেখতো।তা হল বক্সিং রিং এ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।স্বপ্নকে নিজের বাস্তবতার রূপান্তরে যে শুধুমাত্র কঠোর অধ্যবসায়কেই পুঁজি করেই নেমে পড়ে যৌবনের শেষ সময়ে। অথচ স্বপ্ন সত্যির এত কাছে আসার পরো ভাগ্য তাকে পুনরায় নিরাশ করে।
অভিনেতা,অভিনেত্রীদের অসাধারণ অভিনয় এবং ইস্টউডের নৈপুণ্যে ছবিটি পরিণত হয়েছে আসলেই এক মাস্টারপিসে।২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি মুক্তির পরপরই সাড়া জাগায় বক্স অফিসে এবং অস্কারে জিতে নেয় সেরা মুভি সহ আরো চারটি ক্যাটগরীতে পুরস্কার।ছবিটি সময় করে দেখার জন্য অনুরোধ রইলো সবার প্রতি।
টরেন্ট ডাউনলোড লিঙ্ক।
সিক্রেট এন্ড লাইস(Secret & Lies)
সিক্রেট এন্ড লাইস(Secret & Lies) হল খ্যাতিমান ব্রিটিশ পরিচালক মাইক লেই এর পরিচালিত সেরা ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। মার্ক লেই সিনেমা জগতে পরিচিত তার কিচেন সিঙ্ক রিয়ালিজম এর জন্য।কিচেন সিঙ্ক রিয়ালিজম হল ৬০ এবং ৭০ এর দশকে সাহিত্যে,চলচ্চিত্রে জন্ম নেওয়া একটি ধারণা।এর আগে চলচিত্রের নায়ক বলতেই ছিল সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর স্টাইলিশ,ড্যাশিং এক তাগড়া যুবকের প্রতিমূর্তি।কিন্তু সেই ধারণা পুরোপুরিই বদলে যায় ৬০ এর দশকে এসে।নিম্নশ্রেণীর মাতাল,কর্মঠ পুরুষ থেকে শুরু করে নয়টা পাঁচটার ছাপোষা কেরানীরাও হয়ে উঠতে থাকেন সাহিত্যিক,চিত্রপরিচালক এবং আর্টিস্টদের ভাবনার খোরাক তথা তাদের সৃষ্টির প্রধান চরিত্র।মার্ক লেইও যথারীতি তার মুভিগুলোতে তুলে ধরেন সমাজের ওয়ার্কিং ক্লাসের গতানুগতিক জীবনযাত্রাকে।তার ছবিগুলোর মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য হল নেকেড এবং ভেরা ড্রেক । মজার ব্যাপার হল মার্ক লেই আমাদের সত্যজিৎ রায়কে তার সবসময়ের মধ্যে প্রিয় চিত্রপরিচালকের তালিকার মধ্যে রেখেছেন এবং তার কাজের মধ্যে সত্যজিৎ এর কাজের কিছুটা ছোঁয়াও পাওয়া যায়।
সিক্রেট এন্ড লাইস এর মূল কাহিনী হল পারস্পরিক সম্পর্কের সুতোয় বাধা কিছু মানুষকে নিয়ে। পুরোপুরি সংলাপ এবং মনসত্ত্ব নির্ভর একটি ছবি এটি। কাহিনীর শুরু হয় যখন এক কৃষ্ণাঙ্গ নারী হর্টেন্স তার মার মৃত্যুর পর জানতে পারে সে আসলে এডাপ্টেড চাইল্ড।তারপরই আমরা দেখতে পাই তার আইডেন্টিটি ক্রাইসিস এবং নিজের বায়োলজিক্যাল মাকে খোজার প্রচেষ্টা।অন্যদিকে সিন্থিয়া এবং রক্সানা নামে দু’জন ওয়ার্কিং ক্লাস মা মেয়েকে আমরা দেখতে পায় যাদের পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই নাজুক।রক্সানা এবং সিন্থিয়া যখন পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যস্ত তখন সিন্থিয়ার নিঃসন্তান ভাই মরিস এবং তার স্ত্রীর মধ্যে চলছে শীতল সম্পর্ক। অন্যদিকে হর্টেন্স খুঁজে চলে তার আসল মাকে।এভাবেই এগিয়ে যায় কাহিনী।এবং অবশেষে হর্টেন্স খুঁজে পায় সিন্থিয়াকে তার মা হিসেবে।কিন্তু এক সময় অতি বেপরোয়াভাবে জীবনযাপনে অভ্যস্ত সিন্থিয়ার একজন ব্ল্যাক নারীকে তার নিজের সন্তান হিসেবে মেনে নিতে প্রচণ্ড শকের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অবশেষে নানা পরিক্রমা পেরিয়ে সিন্থিয়া হর্টন্সকে তার নিজের সন্তান হিসেবে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
এই ছবিতে সিন্থিয়া,রক্সেন এবং হর্টেন্স এই তিনটি নারী চরিত্র তিন ধরনের।রক্সেন যেমন একদিকে কঠোরতা এবং রাফনেসের প্রতীক অন্যদিকে হর্টেন্স হলো মমতাময়ী,সরল এবং খানিকটা স্বাধীনচেতা নারীর প্রতিকৃতি।আবার সিন্থিয়া চরিত্রটি হল এখানে ভাল খারাপ মিলিয়ে নিম্নশ্রেণীর সাধারণ এক নারীর অবয়ব। ছবিটির এক এক দৃশ্যে আমরা সিন্থিয়াকে দেখি এক এক রূপে।কখনো দেখি একজন স্বার্থপর নারী হিসেবে যে নিজের সন্তানকে দূরে ঠেলে দেয় জন্মের পরে।আবার আরেকদিকে আমরা তার মমতাময়ীতার রূপ দেখতে পায় হর্টেন্সকে ভালবেসে কাছে টেনে নেওয়ার মাধ্যমে।এই ছবিটি আসলে খুব মনোযোগ দিয়ে ভাল করে দেখ বুঝবার একটি ছবি। বিভিন্ন ডিনামিক্স থেকে তুলে ধরা ভিন্ন ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের এই তিন নারী চরিত্রকে বুঝতে হলে আপনার অবশ্যই দেখতে হবে এই ছবিটি।
Secret & Lies ছবিটি ১৯৯৬ সালে কানাসে পাল্মে ডি ওর (কানাস ফিল্ম ফেস্টিভালের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কার)এবং সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার(সিন্থিয়া চরিত্রে ব্রেন্ডা ব্লেথেন) জিতে নেয়। যারা এই ধরণের ছবি দেখতে খুব একটা অভ্যস্ত নন তাদের কাছে মুভিটি বোরিং লাগতে পারে।তবে মুভিপ্রেমীকরা এই ড্রামেডিটা দেখলে কিন্তু আশাহত হবেন না। ব্লগের আপুরা কিন্তু মিস করবেন না একেবারেই।
টরেন্ট ডাউনলোড লিঙ্ক।
সবাইকে ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্যে।দেখে মন্তব্যে করতে ভুলবেন না যেন।