পর্ব-১
প্যালেস্টাইন।ইসরাইলী আগ্রাসনে ধর্ষিত একটি রাষ্ট্রের নাম।
কিন্তু নির্মম সত্য হল পশ্চিমা সরকারগুলো প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্র হিসেবেও স্বীকৃতি দিতে নারাজ।তাই ২০০২ সালে নির্মিত ডিভাইন ইন্টারভেনশন নামের এই ব্ল্যাক কমেডিটি অংশ নিতে পারেনি সেবারের অস্কারে বেস্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম এর ক্যাটাগরিতে।যদিও এই ছবিটি কানাস ফিল্ম ফেস্টিভালের পালমে ডি ওর তথা সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।এবং মুভি প্রেমিক মাত্রই জানেন কানাস এর পালমে ডি ওর গুরুত্ব একাডেমী তথা অস্কার থেকে অনেক বেশী।কথায় আছে একাডেমী অলওয়েজ প্লেস সেইফ। মানে হল একাডেমী এওয়ার্ড সবসময় বৈচিত্রহীন এবং প্রেডিক্টেবল।কিন্তু সেদিক থেকে বিবেচনা করলে কানাস ফিল্ম ফেস্টিভাল প্রতিবারই প্রমোট করে আসছে নতুন নতুন ধারার ছবি এবং ধারণাকে।এবং সেই সাথে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং পলিটিকাল রংডুয়িং এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতেও কানাস ফিল্ম ফেস্টিভাল কখনো পিছপা হয় না।যাই হোক অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা হল।এবার ফিরে আসি ডিভাইন ইন্টারভেনশন নামের অসাধারণ এই ছবিটির আলোচনায়।
ব্ল্যাক কমেডি ধারণাটির জন্ম দেন ফ্রেঞ্চ কবি আন্দ্রে ব্রেটন।মৃত্যু বা সেই সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে হিউমার যা কিনা একই সাথে সিরিয়াসনেসের পাশাপাশি বিনোদনের খোরাকও যোগায় সেসব মুভিকেই সাধারণত বলা হয় ব্ল্যাক কমেডি।ব্ল্যাক কমেডির ঘটনাগুলো সাধারণত সামাজিকভাবে ট্যাবু বলে স্বীকৃত যেহেতু মৃত্যুকে নিয়েই এই কমেডিগুলো নির্মিত হয়।সেইদিক থেকে বিচার করলে বলতে হয় এলিয়া সুলাইমানের ডিভাইন ইন্টারভেনশন ছবিটি একটি টেক্সটবুক ব্ল্যাক কমেডি।ছবিটি প্রথম দেখায় কিছুটা এলোমেলো মনে হতে পারে।তারপরও আমি বলবো ছবিটি দেখুন এবং মেসেজটি বোঝার চেষ্টা করুন।
ছবিটির প্রথমেই দেখা যায় সান্টা ক্লস ছুরিকাহত হন একটি বাজে নেইবারহুডে যেখান প্রতিবেশীদের পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই বাজে। আরেকদিকে দেখা যায় একটি যুগলকে যাদের প্রেমে বাধা হয়ে দাড়ায় একটি ইসরায়েলী চেকপোস্ট।নায়ক ইএস এর প্রেমিকার আবার রয়েছে নিঞ্জার মত ক্ষিপ্ততা যা দিয়ে সে একটি চেকপোস্টটি শুটিং প্র্যাকটিস-রত ইসরায়েলী গার্ডদের সাথে মার্শাল আর্ট দিয়ে লড়ে।আবার দেখা যায় নায়কের উড়িয়ে দেওয়া ইয়াসির আরাফাতের চেহারা প্রিন্ট করা একটি বেলুন নিয়ে এক ইসরায়েলী সেন দ্বিধান্বিত ।বেলুনটিকে গুলি করে নামাবে কিনা এই নিয়ে সে হাই অথরিটির কাছে আদেশ চায়।এই সব ঘটনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে মুভিটি যা দেখে আপনি পেতে পারেন হাস্যরস এবং সেইসাথে খানিকটা হলেও জানতে পারবেন জেনারেশন বাই জেনারেশন ধরে নির্যাতিত হতে থাকা প্যালস্টাইনীদের মনসতত্ত্বকে।
টরেন্ট ডাউনলোড লিঙ্ক
প্যারাডাইস নাও : ২০০৫ সালে নির্মিত এই ছবিটি রিলিজের পর থেকে আজ অব্দি এই ছবি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।এই ছবিটি নিয়েও একাডেমী প্রকাশ করে তাদের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির চিত্র।যেহেতু অস্কারে ছবি পাঠাতে হয় সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের অনুমোদনের পর তাই প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকেই যেহেতু আমেরিকা স্বীকার করে না তাই ডিভাইন ইন্টারভেনশন এর মত এটিকে নিয়েও দেখা দেয় বিতর্ক।
অবশেষে পরিচালক হানি আবু আসাদ ছবিটি জমা দেওয়ার পর একাডেমী কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করে।কিন্তু নতুন করে আবার বিতর্কের শুরু হয় যখন অরিজিনেটেড কান্ট্রি এর স্থলে লেখা হয় প্যালেস্টাইনের পরিবর্তে প্যালস্টাইনী কর্তৃপক্ষ ।কর্তৃপক্ষ শব্দটি সাধারণত লেখা হয় হংকং তাইওয়ান ইত্যাদি দেশের ক্ষেত্রে।একাডেমীর এই ধরণের নগ্ন রাজনৈতিক আচরণকে ছবির পরিচালক উল্লেখ করেন প্যালস্টাইনী নাগরিকদের এবং তাদের জাতীয়তার উপর চড় হিসেবে।কিন্তু অবশেষে সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে অস্কার অনুষ্ঠানের সময় উইল স্মিথ একাডেমীর অবস্থান থেকে খানিকটা সরে এসে ছবিটিকে ঘোষণা করেন প্যাস্টাইনী অধিকৃত এলাকার ছবি হিসেবে এবং এর দ্বারা প্যারাডাইস নাউ ছবিটি প্রথম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্যাস্টাইনী মুভি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং গোল্ডেন গ্লোব জিতে নেয়।
ছবিটির কাহিনী সাঈদ এবং খালিদ নামে দুজন বাল্যবন্ধুকে নিয়ে যারা গ্লোরীর আশায় একটি প্যালস্টাইনী রেসিসটেন্স গ্রুপের দ্বারা সিলেক্টেড হয় তেলআবিবে আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য।সাঈদ প্রথম থেকেই এই ব্যাপারে দ্বিধান্বিত থাকে।এবং এরই মধ্যে সুহার সাথে তার প্রণয়ও শুরু হয়।খালিদ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আলী সুলাইমান যিনি এরপরে লেমন ট্রি ছবির জিয়াদ চরিত্রে অভিনয় করে অনেক দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন।অবশেষে অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তারা দু-জন সীমান্তে পৌঁছুলেও সবকিছু গড়বড় হয়ে যায় এবং সাঈদ এবং খালিদ আলাদা হয়ে পড়ে।পড়ে খালিদ সাঈদকে খুঁজে পায় তার বাবার কবরের কাছে।এরপর সাঈদের মন পরিবর্তন হয় এবং সাঈদ এবং খালিদ পুনরায় ইসরাইলে প্রবেশ করে।পরবর্তীতে খালিদ মন পরিবর্তন করলেও এরপর আমরা শেষ দৃশ্যে সাঈদকে দেখতে পায় ঈসরায়েলী সেনা এবং সিভিলিয়ান ভর্তি একটি বাসে সুইচ চেপে বসে থাকে।এবং এরপরই স্ক্রীন সাদা হয়ে যায়।সাঈদের আত্মঘাতী হামলার রহস্যটা ছেড়ে দেওয়া হয় দর্শকদের কাছে।অসম্ভব সুন্দর সাবলীলতায় ছবিটি এগিয়ে চলেছে একের পর এক রোমাঞ্চকর ঘটনার মধ্য দিয়ে।ভাল কিছুক্ষণ সময় কাটাতে চাইলে ছবিটি দেখতে ভুলবেন না যেন।
টরেন্ট ডাউনলোড লিঙ্ক