কাঁটা বিছানোর আগে ভাবুন,
ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর পথে কাঁটা বিছানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, তাঁরা এখনো ভাবুন। কোন কোন দিক নিয়ে ভাবতে হবে, তা-ই জানাচ্ছেন ,,,নানু,
কাঁটাপ্রাপ্তি সম্পর্কে
শাহবাগে ফুলের মার্কেট থাকলেও শুধু শাহবাগ কেন, দেশের কোথাও কাঁটার মার্কেট নেই। মার্কেট তো দূরের কথা, খুচরো বিক্রির জন্য একটা দোকানও নেই।
দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ করা হলেও এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে কাঁটার চাষ শুরু হয়নি। আসলে আগে কেউ এ ধরনের ঘোষণা দেয়নি তো।
কাঁটাবন নামটা শুনলে মনে হতেই পারে, ওখানে কাঁটা আছে। আসলে সব বোগাস। খোঁজ নিলে দেখবেন, ওখানেও ফুলের দোকানই।
অতএব কাঁটা যে দেবেন, এত কাঁটা পাবেন কোথায়, ভেবে নিন।
একমত প্রকাশ করা হয়ে যায় কি না
কাঁটা নিয়ে প্রথম কথা বলেছে সরকারি দলই। মাছের কাঁটা কিংবা ফুলের কাঁটা না হয়ে হোক সেটা ঘড়ির কাঁটা।
কাঁটা এগোনো-পেছানোকে ইস্যু করে সরকারি দলের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেছে পাবলিক। সঙ্গে সুরকার হিসেবে সুর মিলিয়েছে বিরোধী দল।
এখন বিরোধী দলও যদি কাঁটা নিয়েই কথা বলে, তাহলে সরকারি দলের সঙ্গে একটা জায়গায় একমত প্রকাশ হয়ে গেল না?
কোনো বিষয়ে যদি একমতই প্রকাশ করে ফেলা হলো, তাহলে বিরোধী দল হওয়ার সার্থকতা থাকল কোথায়!
আপনারা কতটা সেকেলে
আগেকার যুগে মানুষ জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধ বা অন্য কোনো বিরোধে একে অন্যের পথে কাঁটা দিত। এখন কি সেই যুগ আছে?
সরকারি দল দেশকে ডিজিটাল করার চেষ্টা করছে আর আপনারা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন আদিম যুগে। এই ইস্যু ধরে প্রধানমন্ত্রী যদি একটা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েই ফেলেন?
যদি সরাসরি বলেই ফেলেন, দেশ ডিজিটালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু আপনারা সেই পথে কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছেন বলে এই কাঁটার ভয়ে দেশ আর এগোতে পারছে না!
কাঁটা বিছানোর মতো সেকেলে বিষয়আশয় নিয়ে চিন্তা করার কারণে আপনাদের ক্ষেত্রে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ বিশেষণটা যোগ হয়ে যায় কি না ভেবে দেখুন।
হিতে বিপরীত হয় কি না
প্রধানমন্ত্রীর পায়ে না বিঁধলেও নরমাল পাবলিকের যেহেতু লোকাল বিমান নেই, এমনকি গাড়িও নেই, অতএব কাঁটাটা তাদের পায়ে বিঁধতেই পারে।
পায়ে না বিঁধুক, অন্তত জুতোটা ফুটো হতেই পারে। একজোড়া জুতোর বাজার দর নিতান্ত কম নয়।
পাবলিক কিন্তু কোনো কিছুই সহজে ভোলে না। হালকা-পাতলা ভুললেও নির্বাচনের সময় কীভাবে কীভাবে যেন মনে করে ফেলে।
অতএব যাদের বিছানো কাঁটায় তারা পায়ে ব্যথা পেয়েছিল কিংবা জুতো ফুটো হয়েছিল, তাদের কপালে ভোট জুটবে কি না ভেবে নেওয়া জরুরি।
উদ্দেশ্য হাসিল হবে কি হবে না
বিমানবন্দরের বাইরে নাকি কাঁটা বিছানো হবে। কিন্তু যার জন্য কাঁটা বিছানো হবে, তার কী ঠেকা পড়েছে ওই পথটুকু হেঁটে যাওয়ার?
তাঁর তো গাড়ি আছেই। গাড়ির টায়ার এতই শক্ত যে, উল্টো কাঁটারই ক্ষতি হবে। এমনও হতে পারে, তিনি রোলার দিয়ে পুরো রাস্তা এক দফা পিষেও নিতে পারেন।
কিছুতেই কিছু না হলে প্রয়োজনবোধে লোকাল বিমান দিয়ে একেবারে গিয়ে বাড়ির ছাদে নামবেন।
অতএব তিনি জানবেনই না যে কাঁটা বিছানো হয়েছিল। পরের দিন টিভি বা পত্রপত্রিকা মারফত জানবেন হয়তো।
গান-কবিতার সত্যতা প্রমাণ
‘কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে।’ সরকারি দল এই কথাবার্তাকে পুঁজি করে কোনো রকম ভয়ের ধারে-কাছে নাও যেতে পারে।
‘কাঁটার আঘাত দাও গো যারে, তারে ফুলের আঘাত সয় না।’ বিরোধী দলের ওপর এই গানের মতো করে সব অপবাদ পড়ে যায় কি না, গভীর মনোযোগের সঙ্গে ভাবতে হবে।
‘প্রেমের কাঁটা বিঁধল হায়রে আমার কলিজায়…।’ সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা যদি এই গান গেয়ে কাঁটা বিছানোকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে, তাহলে কিছু করার নেই।
বি:দ্র:
প্রিয় পাঠক এই লেখাটা নিরাপক্ষতা ভাবে দেয়া কোন রাজনীতী দল ভুক্ত নয়,যদি কারো ব্যাক্তিতের ঊপর আচর পড়ে যায় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:০৯