"নারী " আল্লাহর এক অপার মহিমা। নারী এই পৃথিবীর এক অনবদ্য সৃষ্টি। যার ঘরে প্রথম কন্যা সন্তান হয় সে নাকি খুব ই ভাগ্যবান বলে বিবেচিত হয়। আসলেই নারীদেরকে আল্লাহ আলাদা কিছু গুণাবলি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। একজন নারী সমানভাবে ঘরে বাইরে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করে। তবুও আমার মনে হয় এই নারীরাই আবার সবথেকে বেশি অসহায়।
একটা মেয়ে সেই ছোটবেলা থেকেই গুছানো, পরিপাটিভাবে তিলে তিলে নিজেকে একটা নারীতে পূর্নরুপ দেয়। নিজের পরিবার থেকেই তাকে সবসময় একরকম কোণঠাসা অবস্থায় বড় হতে হয়। আবার সেই মেয়েকে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতেও একই অবস্থায় থাকতে হয়। বরং আরো বেশি কোণঠাসা হয়ে থাকতে হয়। একটা মেয়েকে সবার দিক খেয়াল রেখে, সবার মন জয় করে চলতে হয়। কেনো, মেয়েটার মন তো কেউ জয় করার চেষ্টা করে না! মেয়েটার ইচ্ছা, অনিচ্ছার মূল্য কতজন ই বা দেয়! তবুও দিনশেষে সেই নারীকেই আমরা নানারকম কটাক্ষ করি, যে নারী তার সারাটাদিন তার পরিবারের মনের মত হওয়ার বৃথা চেষ্টা করেছে।
নারী কথাটা একবার মনোযোগ দিয়ে ভাবুন তো! এই নারী আপনার মা, যে সেই জন্ম থেকে তার মৃত্যু পর্যন্ত শুধু তার সন্তানের কথা-ই ভাবে। সন্তান কি চায় বলার আগেই মা বুঝে যায়, কি অদ্ভুত এক টান এই সম্পর্কের। আপনার বোন, সে তো এক মজার সম্পর্ক। পৃথিবীর যত বোন আছে সবগুলোই মনে হয় এমন, ভাই তার চিন্তা করুক আর না করুক বোন ঠিক ই তার চিন্তা করে। ভাইবোনের খুনসুটি সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি মজাদার। আপনার প্রেমিকা, হুম সে তো আপনার জীবনের অর্ধেক অংশ হয়ে যায়। আপনাকে সে যেভাবে আগলে রাখে ভালোবাসা দিয়ে সেটার এক আলাদা রকম অনুভূতি আছে। যারা সত্যিকার অর্থেই কাউকে ভালোবাসে তাদের ক্ষেত্রে সম্পর্কটা খুব ই গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রেমিকা তার সবটুকু দিয়ে তার প্রেমিককে ভালো রাখার চেষ্টা করে। সুখে, দুঃখে তার পাশে থাকার চেষ্টা করে।
আপনার স্ত্রী, সে তো আপনার অর্ধাঙ্গীনি। সে সবরকম অবস্থায় আপনার পাশে থাকার চেষ্টা করে। নিজের কথা ভাবার আগে আপনার কথা ভাবে। আপনার পরিবারের কথা ভাবে। আপনার সন্তানের কথা ভাবে। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের কথাই ভুলে যায়। সে শুধু প্রত্যাশা করে আপনার, পরিবার, সন্তানের কাছ থেকে একটু ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসাটুকু দিতে আপনাদের কত কৃপণতা! আপনার কন্যা, সে তো রহমত স্বরূপ আপনার ঘরে আল্লাহ পাঠায়। তাকে অনেক যত্নে মানুষ করা দরকার। আপনার আজকের এই কন্যাই একদিন নারী রূপ ধারণ করবে। অথচ ছেলে সন্তান আর মেয়ে সন্তানের এখনও আমরা বৈষম্য করি।
আপনি যেভাবেই ভাবুন না কেন, একজন নারী আপনার জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কোন না কোন নারী আপনার প্রতিদিনের কাজেকর্মে, কথাবার্তায়, আনন্দে বিমোহিত করে। আপনার সারাদিনের কর্মক্ষমতা একজন নারী দ্বারাই পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত হয়। যদি আপনি অবিবাহিত হন তাহলে আপনার কর্মক্ষম হওয়ার পিছনে আপনার মায়ের সারাদিনের পরিশ্রম আছে। আর যদি আপনি বিবাহিত হন তাহলে আপনার স্ত্রীর পরিশ্রম।
আপনার জীবনে যখন দুঃসময় আসে তখনও আপনার কাঁধে একজন নারীর হাত ই আপনাকে সাহস জোগায় পরবর্তী লড়াইটা লড়ার। সেই লড়াইতে আপনি একসময় হয়তো জয়ী হন কিন্তু সেই নারীকে ভুলে যান। যে বলেছিল, "তুমি পারবে, একটু চেষ্টা করো। আমি আছি তোমার পাশে।" নারীরা সবসময় সহনশীল হয়। হাজারো সমস্যার মুখোমুখি হয়েও নিজেকে দৃঢ়তার সাথে অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করে। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে, নিজেকে স্বান্তনা দেয় আমি অনেক ভালো আছি, সবার কাছে নিজেকে একজন সুখী মানুষ হিসেবে পরিচয় দেয়। নিজের পরিবারকে অন্যের সামনে সম্মানিত স্থানে রাখে। এটাই নারীর গুণ।
তাই নারীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করার আগে নিজের মা, বোন, প্রেমিকা, স্ত্রী, কন্যার কথা একবার ভাবুন। তবে সব নারীরাই এমনটা হয়, তা নয় কিন্তু। কিছু কিছু নারী আছে শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবে। সেটা ব্যতিক্রম ঘটনা। আপনার ঘরের নারীটাকে ভালো রাখার দায়িত্ব আপনার। আপনি ই ভালো জানেন তাকে আপনি কিভাবে ভালো রাখবেন! তাই দেরি না করে আজ থেকেই সেই নারীকে ভালো রাখার মিশনে নেমে যান!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১১:২৭