পুঁজিবাদ/ধনতন্ত্র তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়,গরীবের ঘোড়া রোগ ভালো না ।
বাজার ব্যবস্থা কৃষক বা সরকারের নিয়ন্ত্রণে না রেখে মধ্যসত্ত্বভোগীদের হাতে রাখলে বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধি বা দূর্যোগ ছাড়াই অর্থনীতিতে বিশৃংখলার সৃষ্টি হয় । কোন কোন দেশে আবার সরকার পতন ঘটে ।
খুব সম্ভবত ২০০৬ সালের দিকে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্ব গতির জন্য দেশে নিয়মিত মিটিং-মিছিল হত ।খালেদা জিয়া সেই আগুনে ঘি ঢেলে দেয় দ্রব্য মূল্যের দাম বৃদ্ধি মিডিয়ার সৃষ্টি উল্লেখ করে ।
খালেদা সরকারের পতনের অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ ছিল এই মূল্য বৃদ্ধি ।তার দলের কর্মিরাও দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল ।
যমুনা সেতু হলে দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে,দারিদ্রতা কমবে বলে আমরা বয়ান শুনতাম ।প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ।এটা সত্য ।দারিদ্রতা কমার বদলে ঋণের দুষ্ট চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে উত্তরের জনগণ ।এর অন্যতম বড় কারণ বাজার ব্যবস্থার বেহায়াপনা ।
অবকাঠামো উন্নয়ন যেমনঃরাস্তাঘাট-স্কুল-কলেজ তৈরি করে দেশজ প্রবৃদ্ধি বাড়ে জনগণের তাতে সমস্যা আরো প্রকট হয় ।
উত্তরাঞ্চলে যে পরিমাণ ফসল উতপাদিত হয় তা দিয়ে প্রায় সারা দেশ চলে ।অথচ,উত্তরের কৃষকরা হাহাকার করে ।
দুই সপ্তাহ আগে বগুড়া শহর থেকে ফুলকপি কিনেছিলাম কেজিতে ৩০ টাকা ।গ্রামে বোধকরি কেজিতে ১০ টাকা হবে ।ঢাকায় প্রতি পিস ফুল কপি ৪০-৫০ টাকা ।
শহরতলীতে অবস্থিত পাইকারি বাজারে বা হাটে গেলে দূর্দশার চিত্রটা বুঝতে পারবেন ।ট্রাক-ট্রাক সবজি লোড হচ্ছে ।পাইকাররা ঢাকা থেকে গিয়ে যে দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে,সেই দামেই বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক ।এই বাজার ব্যবস্থা অর্থনৈতিক দাসত্ব করতে শিখিয়েছে ।এই বাজার ব্যবস্থা পুঁজিবাদের ভন্ডামি ছাড়া কিছু নয় ।সেজন্যই সরকার কৃষকের জন্য উদার না হয়ে ব্যবসায়ীদের জন্য উদার হয় ।
ঐ ফসল ফলাতে কৃষকের যে খরচ হয়,তা সরকার দেয় না ।নয়া কাবুলিওয়ালাখ্যাত ক্ষুদ্র ঋণের এনজিও গুলো দেয় । উপযুক্ত দাম নির্ধারণ করতে না পারায় কৃষক বছরের পর বছর সুদ টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে যায় ।
উত্তরের মানুষ তাই মানসিকভাবেও দাসত্ব করতে শেখে ।আপনি উত্তরাঞ্চলের যে কোন শহর বা গ্রামে গিয়ে দরিদ্র মানুষের সাথে অন্যায় করে দেখেন, তারা বলবে "ভাই আমরা গরীব মানুষ আমাদের ঠকায়েন না ।কিংবা অবিচার করবেন না ।"কিন্তু,প্রতিবাদ করার সাহস পাবে না ।কারণ, তারা গরীব মানুষ ।
মিডিয়ায় প্রায়ই দেখি,উত্তরের মঙ্গা আর নেই।মানুষ এখন না খেয়ে মরে না ।ধান কাটার সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না ।এগুলো সত্য ।
এর পেছনে যে নির্মম বাস্তবতা আছে ,তা কি আমরা জানি?
জানলেও জাত যাওয়ার ভয়ে সত্য আড়াল করি ।
খিলখিল করে হেসে মিডিয়ায় নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করি ।
শুভঙ্করের ফাঁকি হচ্ছে,অটো-ব্যাটারি রিকশা আসার পর অধিক সুদে ঋণ নিয়েছে দরিদ্র জনগণ ।আর এই ঋণ দিয়েছে এন জিও গুলো ।কিস্তির টাকাও কোন দিন শেষ হয় না ,আসল তো বাদই ।যা ইনকাম হয় তা দিয়েই নিত্যকার বাজার-সদাই ।সেজন্য কেউ আর না খেয়ে মরে না ।কিন্তু,ঋণের দুষ্টচক্র বা দাসত্বের কোন সমাধান হয় নি ।
দেশের প্রবৃদ্ধি যত বাড়বে ধনী-গরীবের বৈষম্যও তত বাড়বে ।প্রবৃদ্ধির টাকা ব্যবসায়ীদের পকেটে যায় ,সরকারের ফান্ডে যায় ।সেখান থেকে সরকার সেবা মূলক কাজ করে আর খিলখিল হাসি দেয় ।
পেয়াজ নিয়ে যা হচ্ছে তা সোজা কথায় পুঁজিবাদের বেহায়াপনা ।মিশর থেকে পেয়াজ আমদানি করেও দাম না কমে বেড়েছে ।তার কারণ হচ্ছে,আমদানিকারকরা স্টক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অধিক মুনাফা আদায় করবে এই দূর্যোগের সুযোগে ।স্টকাররা পাইকারদের কাছ থেকে আর পাইকাররা জনগণের কাছ থেকে । সহজ হিসেব ।
আমার গোডাউনে ১০০ টন আগের পেয়াজ আছে ।নতুন করে মিশর থেকে আনলাম ১০০ টন । আগের ১০০ টনের দাম ছিল ধরেন ১০০ টাকা ।পরের ১০০ টনের দাম ৫০ টাকা ।আমার মোট ২০০ টন পেয়াজ কত করে বিক্রি করলে মোটের উপর শতভাগ লাভ হবে?
এটা সহজ ধারণা ।
বদ্ধ ধারণা হচ্ছে, সরকারের সাথে মাথাওয়ালাদের কোন একটা বিষয়ে নেগোসিয়েশন হচ্ছে না । অবৈধ সুবিধা নিতে বা দিতে হয়ত ইচ্ছে করেই সরকার-মাথাওয়ালারা জোট বেঁধেছে ।্মিডিয়াতে সরকারের মন্ত্রিদের কথা শুনলে সে রকমই মনে হয় ।
এগুলো নতুন কিছু না । যুগে যুগে ছিল ।বিএনপি'র যুগে ডান্ডি ডাইং এর মত প্রতিষ্ঠান ছিল । ছিল আরো অনেক ।
এ যুগে শেয়ারবাজারের দুই মাথার একজন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা , আরেকজন অর্থমন্ত্রী ।
ডাকাতদের উচ্চ পদায়ন হলে,চোর-ছ্যাছড়ারা নির্বিগ্নে চুরি করার সাহস পায় ।
খোলা বাজারে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে গিয়ে জরিমানা করা চরম অন্যায় ,লোক দেখানো,অপশাসন,অত্যাচার ও ঢপবাজি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫২