বিকেলে মামাতো ভাইয়ের আবদারে গেলাম ওদের পিচ্চিপাচ্চাদের ক্রিকেট খেলা দেখতে, যাবার সময় ক্যামেরাটা নিয়ে গিয়েছিলাম কিছু ছবি তোলার জন্য। বসে বসে অলস শট নিচ্ছি এদিক ওদিক, যেমন এক দোলনায় চারটে বাচ্চা, জোরসে ব্যাট হাঁকিয়ে ব্যাটের টানে মাটিতে পড়ে গাড়াগড়ি খাওয়া শিশু এসব। হঠাৎ ডাইনে তাকাতে দেখি একেবারে পোজ দিয়ে বসে আছে এক পিচকি মেয়ে, ভিউ ফাইন্ডার থেকে দেখলাম, আমি ক্যামেরা ঘোরাতেই হাত নেড়ে ডাকছে। ক্যামেরা নামিয়ে তাকাতেই আবদার, "একটা ছবি তুলেন ভাইয়া।"
"একটা ছবি তুলেন ভাইয়া।"
শট নিয়ে ডেকে দেখালাম, এবারে পরের আবদার, "দাড়ান আরেকজনকে ডাকি, দেখাবো" বলেই দে ছুট, মিনিট খানেক পরে দেখি ফিরে আসছে সাথে দুইজনকে নিয়ে।
"খুদে দর্শক"
ছবি দেখে এবারে তাদের একজনের আবদার, "আমারো ছবি তুলেন।" বলেই বেলুনটা নিয়ে বসে পড়লো সামনে এগিয়ে।
"আমারো ছবি তুলেন"
এবারে আমি বললাম, "তিনজনেই একসাথে গিয়ে বসো, ছবি তুলি।" ব্যাস, তিনজনেই তৈরী, নিজেদের মত করেই পোজ দিলো। কান্ড দেখে আমি অবাক!
"তিন মডেল"
ছবি দেখাও হলো, এবারে ভিডিও রেকর্ডিং শুরু করলাম, তিনজনা শেষ ছবির মতই একসাথে, একে অন্যকে ধরে দাঁড়ানো। তবে ব্যাটারি ডেড হয়ে গেল হঠাৎ করেই, তাই ভিডিও করাপ্ট হয়ে গেছে
যেহেতু ভিডিওটা নাই, তাই ওদের সাথে যেসব কথা হয়েছে সেগুলো ছোট কয়েকটা প্যারা করে দিচ্ছি।
প্রথম মেয়েটা ("একটা ছবি তুলেন ভাইয়া) ক্লাস থ্রিতে পড়ে, মা কাগজ টোকায়, সেগুলো বিক্রি করে সংসার চলে, বাবা আরেক বিয়ে করেছে, এদের খোঁজ খবর নেয় না, ছোট আরো দুটো ভাইবোন আছে।
পরের দুজন দুই বোন, ওদের আরো একভাই একবোন আছে, ভাই ভ্যান চালক, ওদের সাথে সম্পর্ক রাখেনি, বড় বোন ঢাকাতে এক বাসার গৃহকর্মী, মা এখানেই ঘরে ঘরে বাসনমাজা, ঝাড়ু-মোছা, রান্না করা এসব করে ওদের পেট চালায়, বাবা মৃত। ওরা দুইবোনই একই ক্লাসে পড়ে, ক্লাস ওয়ান।
তিনজনে বিকেলে পার্কে আসে, খেলে, দোলনা তিনজনেরই প্রিয়। মাঝে মাঝে চেয়ে চিন্তে কিছু টাকা পায় মাঠে আগতদের কাছ থেকে। স্কুলে কারোই বেতন লাগেনা তাই পড়ছে, নইলে কোথাও কাজের মেয়ে হতে হতো।
বড় হয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনজনেই চাকরী করতে চায়।
এই হলো সারমর্ম কথাবার্তার। কে জানে ওদের বড় হওয়া আর পড়াশোনা শেষ করে চাকরী করা হবে কি না!