মাত্র ১১ বছর বয়সে বিদ্যালয় জীবন ও সমকালীন পরিস্থিতি নিয়ে ডায়রি লেখা শুরু করে মালালা। সোয়াত উপত্যকায় নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে সে সময় মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তালেবানরা। সোয়াতে তালেবানদের উত্থানের সময় বিবিসি উর্দু সার্ভিসে তার দিনলিপিটি প্রকাশ হতে থাকে। তার লিখিত দিনলিপি ‘লাইফ আন্ডার দি তালিবান’ প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই ব্যাপক পরিচিতি পায় সে। জঙ্গিদের প্রতিহিংসা থেকে রক্ষা পেতে এ সময় গুল মাকাই ছদ্মনামে প্রকাশ হতো তার দিনলিপি। তালেবানরা সোয়াত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর প্রথম প্রকাশ্যে আসে মালালা।
আলফ্রেড নোবেল এর উইল অনুযায়ী এই "নোবেল পিস পুরস্কার পাবেন এমন কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন, যিনি বা যারা বিবাদ নিরসন বা যুদ্ধমান দল ও দেশগুলির মধ্যে শান্তি আনবেন বা এমন কাজ করবেন যা দীর্ঘমেয়াদী শান্তি আনতে অবদান রাখবেন"।
কি এমন কাজ করলেন যার জন্য মালালা নোবেল পেল?
১. সে ২০০৮ থেকে ব্লগ লেখে, নিজের উৎসাহে স্বপ্রণোদিত হয়ে নয়, বাবার নির্দেশে, এবং বিবিসির পরিকল্পনায়।
২. ২০১২ তে নিজের নিরাপত্তার প্রতি মনোযোগী না হয়ে, ছদ্মনাম থেকে আত্মপ্রকাশ করার ফলে এবং মিডিয়াতে প্রচারণার কারনে তার পরিচয় প্রকাশিত হয়ে যায়, তাকে গুলিবিদ্ধ হতে হয়। তালেবানরা তাকে গুলি করে।
৩. ২০১৩ থেকে ২০১৪ এর ফেব্রুয়ারির মধ্যে সে মালালা ফান্ড নামে একটি তহবিল খোলে। সে, তার বাবা, এক পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত নারী সাংবাদিক সিজা শহিদ এর যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা। মালালার বাবা কিন্তু বার্মিংহামে পাকিস্তান কনসুলেটের শিক্ষা অ্যাটাচি। এর সিইও হলেন ক্লিনটনের গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ও বোনোর ওয়ান ক্যাম্পেইনের সাথে জড়িত সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা মেহান স্টোন। যার মূল কাজ বিপনণ। আর আছেন উপদেষ্টা হিসেবে সিএনএন এর সাবেক সাংবাদিক এসন জর্ডান ও আরেক জাতিসংঘ কর্মচারী পি জে কাজিক। এই মালালা তহবিল কাজ করে কেনিয়া, জর্ডান, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়াতে।
মালালা তহবিল খোলা হয়েছিল ২০১২ সালের অক্টোবরের ১১ তারিখে, সে গুলিবিদ্ধ হবার মাত্র দু্ইদিন পরে। মেহান স্মিথ একসময় গুগলে কাজ করতেন। এসএমএস করে ১০ ডলার পাঠানোর আবেদন করে এর কাজ শুরু হয়েছিল। বলা হয়েছিল এটা নাকি মালালার শেষ ইচ্ছা। কেমন একটা রহস্যময় ব্যাপার নয় কি? যার নামে ফান্ড সে তখনও কোমায়, বাঁচে বা মরে ঠিক নাই। তার মানে মালালার নিজের এই তহবিল খোলার বিষয়ে সামান্যই অবদান। কেবল শেষ ইচ্ছা প্রকাশ ছাড়া। ইচ্ছা কিন্তু ছিল মালালা ফাউন্ডেশন করার। হয়ে গেল ফান্ড।
৪. সে একটা বই লিখে ফেলে আই অ্যাম মালালা নামে, যার কো রাইটার ক্রিস্টিনা ল্যাম্ব নামে একজন বৃটিশ সাংবাদিক। তার সব লেখাতেই কেন জানি সাথে আরেকজন থাকে। ব্লগ লিখত হাতে। টাইপ করত বিবিসির সাংবাদিক। বইটাও সঙ্গে লিখলেন ক্রিস্টিনা। প্রকাশিত হয় ৮ অক্টোবর ২০১৩ সালে। এই বইটিতে পাকিস্তান ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য আছে বলে অভিযোগ করে পাকিস্তানের প্রাইভেট স্কুল অ্যাসোসিয়েশন তাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত স্কুলগুলিতে এটি নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে।
৫. সে বড় বড় রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দেখা করতে থাকে এবং জাতিসংঘে বক্তৃতা দেয় ১২ জুলাই ২০১৩।
৬. সে নাইজেরিয়াতে বোকো হারামের বিরুদ্ধে কথা বলে।
৭. সে সিরিয়া সীমান্তে গিয়ে ক্যামেরার সামনে একটি রিফিউজি শিশুকে কোলে করে সীমান্ত পার করিয়ে দেয়। যদিও গাজাতে অবরুদ্ধ ও নিহত শিশুদের বিষয়ে নিরব থাকে।
৮. সে বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানে নারী শিক্ষার বিষয়ে বক্তব্য দেয়।
৯. এরই মধ্যে সে সিতারা এ জুরাক, ন্যাশনাল ইয়ুথ প্রাইজ, মাদার তেরেসা পদক, রোম পুরস্কার , সিমন দ্য বুভোয়া পদক, ডোটি স্ট্রিট অ্যাডভোকেসি পদক, ফ্রেড ও অ্যানি জারভিস পদক, গ্লোবাল লিডারশিপ পদক, ক্লিন্টন পদক, ডক্টরেট, হার্ভার্ড ফাউন্ডেশন পদক, ওপেক উন্নয়ন পদক , শাখারভ পদক সহ ছোট বড় ২৮ টি পদক, ডিগ্রি ও সম্মাননা পায়। এটা কি একটু অস্বাভাবিক নয় যে পৃথিবীর প্রায় সব পদক দেওয়ার সংস্থাগুলি গত এক বছরে মালালা ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পায়নি সারা পৃথিবীতে যাদের পদকের ক্ষেত্রগুলিতে যথেষ্ট অবদান আছে? পৃথিবীর ইতিহাসে মালালা ছাড়া আর কারও এক বছরে এত পুরস্কার পাবার কৃতিত্ব নেই। এজন্য তার নাম গিনেস বুকেও যেতে পারতো।