স্যালুট সাকিব আল হাসান!!!
বাংলাদেশী হয়ে আন্তর্জাতিক মানের কথা বলার জন্য আপনাকে স্যালুট!। নো ভনিতা, নো ভংচং! একেবারে পরিষ্কার জবাব!
সাকিবের সাক্ষাৎকারের নিচে দেখলাম বিরাট সমালোচনা! আমি যার সরাসরি বিপক্ষে। যা সত্য সাকিব তাই বলেছে। জনগণ চায় একজন 'গড' খুঁজে বের করে পুজা করে নিজের ব্যাক্তিজীবনের ব্যার্থতা-হতাশা ঘুচাতে।
কিন্তু সাকিব তাদের মনোবাসনা পুরনে কাল্পনিক চরিত্র না হয়ে পরিষ্কার ভাষায় বলেছে, "আমি অমন বোলার না যে ৫ উইকেট নিয়ে প্রতিদিন ম্যাচ জিতিয়ে দেব। কোনো দিনই ওই বোলার ছিলাম না, এখনো নই, হবও না। আমি সাঈদ আজমলও না, সুনীল নারাইনও না, যে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারব। হ্যাঁ, আমি এমন বোলার যে, দলের জন্য একটা ভালো ওভার দরকার, ওটা করে দিতে পারব। উইকেট নিব, সেই গ্যারান্টি দিতে পারব না। শেষ ওভারে ১০-১২ রান লাগবে, তখন যদি আমাকে বোলিং দেয় আমার আত্মবিশ্বাস আছে যে, আমি জিতিয়ে দিতে পারব।"
আর যেসব বাংলাদেশী খালেদা জিয়া-শেখ হাসিনার কাছ থেকে দিলে চোট পেয়ে সাকিব-তামিম-মাশরাফিদের কাঁধে দেশ ও জাতি'র সকল প্রত্যাশার বোঝা উঠায়ে দেন তারা যে আসলেই কোন লেভেলের দেশপ্রেমিক সেটাও সাকিব বলে দিছে এভাবে,
"আর যদি দেশপ্রেমের কথা বলি, বাংলাদেশের অনেক মানুষের মধ্যেই সেটা নেই। অনেকেই মুখে অনেক কথা বলতে পারে। কিন্তু যদি তাকে একটা চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দেন, যখন আপনি প্রমাণ করতে বলবেন দেশপ্রেম আছে কি নেই, তখন দেখবেন ৯০ শতাংশ লোক সরে গেছে। "
সাকিবের সাক্ষাৎকারের যেই বিষয়টা ভাল লাগছে তা হলো, ও ঠিক তাই বলছে যা একজন মানুষ সততা'র সাথে বলতে পারে। দেশ কি দিল আর দেশরে খেলোয়াড়েরা কি দিল তার জবাবে সে বলছে, "দেশ আমাকে যা দিয়েছে...সবচেয়ে বড় কথা এই নামটা যে দিয়েছে, এই নাম কোনো দিন কেউ আমাকে দিতে পারত না। এখানেই কথা শেষ।"
আসলেই কিন্তু কথা শেষ! অযথা আবেগের প্লাস্টিকে চেতনার ফুঁ দেয় নাই সাকিব আল হাসান!
আর সাক্ষাৎকারের মূল সুর, যেটা ছিল, প্রত্যাশার সীমাটা বোঝা উচিত। আমি তার সাথে শতভাগ সহমত!
বাঙালী জাতটার বড় সমস্যা হলো কোন এ্যাচিভমেন্ট না পাইতে পাইতে এমন হয়ে গেছে যে একটা ছুতা পাইলেই ওটা ধরে মহাকাশ বিজয়ীর ভাব ধরে। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম আন্তর্জাতিক লেভেলে'র অন্যতম খারাপ দল, এই সত্যটার উপর আবেগের সুগার কোট পড়ায়ে বাংলাদেশের চেয়ে ভাল ভাল টিমের সাথে জিতে জাতি'কে গর্বিত করার যেই চাপ আমরা দেই সেটা শুধু অন্যায়ই না বরং লজ্জাজনকও বটে!
তবে, সাক্ষাৎকারটা একটু এ্যারোগেন্ট লাগতে পারে অনেকের কাছে। কারন আমাদের সংস্কৃতি হইলো শামীম ওসমানও পাবলিকলি কথা বললে বিনয়ের অবতার সেজে মিঠা বানী দেয়। আমরা একটা মিথ্যা বিনয়ের সংস্কৃতির ভেতর থাকি বলেই খেলোয়ার সাকিব আল হাসানের মুখ থেকে সত্য ভাষন শুনলে টের পাই ছেলে বেয়াদব!
আমি বলি, এটারই দরকার। আজকের বিশ্বে মিথ্যা বিনয়ের বিঁষ না বরং সত্যের কুঠারাঘাতই দরকার বাংলাদেশকে উন্নত করার জন্য।
সবশেষে বলবো, সাংবাদিক তারেক মাসুদ প্রায়ই খেলোয়ারদের তথাকথিত বিব্রতকর সাক্ষাৎকার ছাপে। আমি নিশ্চিত না যে সেকি অন দ্যা রেকর্ড/ অফ দ্যা রেকর্ডের বিষয়গুলো আসলেই বিবচেনা করে নাকি আনএথিকালি সব ছেপে দেয়। এই সাংবাদিকটার উপর নজর রাখা দরকার।
তবে, সাকিবের সত্য ভাষন আমার খুবই ভাল লাগছে। অত্যন্ত খাঁটি কথা বলছে যা কল্পনার ফানুসে উড়তে থাকা ক্রিকেট প্রেমীদের মাটিতে নামানোর জন্য দরকার ছিল, তাই সবকিছু'র জন্য তারে একাধিকবার স্যালুট!!!
আর আমি আরো যা কিছু বলতে পারলাম না, সেই কথাগুলো সাকিবের ব্যাট থেকে এতক্ষনে নিশ্চয়ই শুনে ফেলছেন প্রিয় ক্রিকেটদর্শকস