somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের হুমায়ুন আহমেদ।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েকদিন থিকা মনটা অফ হয়ে আছে।কিছুই ভাল লাগে না,অনেক কাজ কিন্তু সব জমিয়ে রেখে হুমায়ুন আহমেদের বই পড়লাম কিছু।কৈশরের অনুভুতিগুলো কেমন যেন নাড়া দিয়ে দিয়ে গেল।যতটুকু না নির্মল আনন্দ পেলাম তার চেয়ে বেশী স্মৃতিকাতর হলাম।তাই ভাবলাম আমাদের প্রিয় লেখক কে নিয়েই কিছু লেখি।

হুমায়ুন আহমেদের অবদান নতুন করে বলার প্রয়োজন না থাকলেও বলা দরকার।এই লোকটা বাংলাদেশের তরুন মধ্যবিত্ত সমাজের মনস্তত্ত্ব গঠন করে দিয়েছে।টিভি,গান এবং গল্পে।বিভিন্ন চরিত্রের মাঝে দিয়ে।

কলকাতার লেখকদের লেখার মান আরো ভাল এবং অনেক গভীর হলেও আমাদের হুমায়ুন আহমেদের মত করে ঢাকাবাসী মধ্যবিত্তদের বুঝতে পারে নাই ওরা এবং পারার কথাও না।

একজন বাকের ভাই,বদি,মজনু বা মুনা আপা অথবা বড় চাচা একটু হালকা বা গাঢ় হয়ে আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই উপস্থিত আর হিমু তো প্রতিটা মানুষের ভেতরেই উপস্থিত।সমাজের ভেতরের কিছুটা অসামাজিক চরিত্রগুলো আমাদের প্রতি লাইনে লাইনে মুল্য এবং রসবোধের শিক্ষা দেয়।কৈশরে যারা হিমু পড়েছে তাদের মনটাও কি অল্পসময়ের জন্য হলেও হিমালয়ের মতই বিশাল হয়ে যায় নাই?


বর্তমানে টিভিতে যেই নতুন ধারার নাটক নির্মান এগুলোর পথপ্রদর্শক কে?
এখনো হুমায়ুন আহমেদের একটি নাটককে ভেঙ্গে ফারুকীরা ১০০ নাটক বানায়।কিন্তু একটিও মৌলিক নাটক বানাতে পারে না।

হুমায়ুন আহমেদ ব্যাক্তিগত জীবনে প্রবল আর্থিক সমস্যার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন মানুষ আবার একই সাথে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠা একজন।তাই তিনি মধ্যবিত্তের জীবনে'র টানাপোড়েনের সাথে জড়িত অর্থনৈতিক যোগাযোগ এবং উদ্ভুদ মনোবাসনা খুব ভাল করেই বুঝেন। বিভিন্ন সমস্যার ভেতর দিয়ে দিনযাপন করা মধ্যবিত্তের পরিবারের যে কঠিন বন্ধন সেটা ওনার মানসপটে প্রবল উপস্থিত তাই ওনার সকল সৃষ্ঠিতেই পরিবারের ভূমিকা অনেক বড়।

তিনি একজন মেধাবী শিক্ষার্থী এবং পরবর্তীতে সফল শিক্ষক তাই তিনি সুশীল সমাজের সাথে ভেতর থেকে পরিচিত কিন্তু তিনি খুবই সফলভাবে নিজেকে সুশীল বৃত্তের বাইরের একজন করেই মনে করেন তাই ওনার লেখায় সবসময় অসামাজিক ভাব প্রবল।যেই অসামাজিক সত্ত্বাটা সকল মেকি এবং নাক উঁচু নিয়মের বিরুদ্ধে।ওনার গল্পে ধনীরা গরীবের কাছ থেকে শিক্ষা পায়, মুর্খের কাছ থেকে প্রফেসর শিক্ষা পায়।সহজ সরল আবেগী মানুষদের জয়জয়কার ওনার লেখায় যা আমাদেরও কৈশরে একটি সত্য সুন্দর সমাজের কল্পনায় ডুবিয়ে রেখেছিল।

মুলত কৈশরেই মানুষের মনে অসামাজিক ভাব তৈরী হয় আর সেই সময়ই হুমায়ুন আহমেদের বই তাদের ব্যাক্তিগত দুঃখ,ক্ষোভ এবং স্বপ্নগুলোকে বিভিন্ন কালজয়ী চরিত্রের মাঝে খুজে পেয়ে নির্ভার বোধ করে হুমায়ুন আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।সব ছেলেই কল্পনায় রুপা,নীতু,পারুলের মত পবিত্র সুন্দরী মেধাবী এবং সরল প্রেমিকারা উপস্থিত হয়,যারা পৃথিবীবাসী কিন্তু পৃথিবীর সকল কলুষতামুক্ত ।

কিশোরীদের কল্পনায় ঢুকে যায় হিমু,শুভ্রের মত সৎ,সত্য ও অসাধারন সুন্দর চোখের অধিকারী প্রেমিক।

সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হলো যে, হুমায়ুন আহমেদের চরিত্ররা যদি ভুলও করে সেটার জন্য তারা মরমে মরে যায়।যদি অন্যায় করে তো নিজের কাছেই জবাব দিতে দিতে ছোট হয়ে যায়।

কিন্তু কিশোর-কিশোরীরা যতই বড় হয় ততই বুঝতে শিখে যে বাস্তব জগতে সেইসব চরিত্র অনুপুস্থিত।২-১ জনের দেখা পাওয়া গেলেও তারা সময়ের সাথে বদলে যায়।যার ফলে, যেই কারনে সন্তান প্রথম বিদ্রোহ করে নিজ পরিবারে তেমনই পাঠক একটু বড় হয়েই হুমায়ুন আহমেদের সমালোচনা শুরু করে।সন্তান যেমন বাবা-মা'র অমান্য হয়েই মুক্ত হয় তেমন পাঠকরাও হুমায়ুন আহমেদকের কঠোর সমালোচনা করেই নিজেদের বড় মনে করে।এটাই লেখকের সফলতা যে তিনি তার প্রায় প্রতিটি পাঠকেরই জীবনের অংশ আবার বোধহয় লেখকের কষ্টও যে সব পাঠকই ওনাকে তাচ্ছিল্য করে একসময়।


তারপরেও পাঠক কোনদিনই হুমায়ুন আহমেদকে ছুড়ে ফেলতে পারবে না কারন,হুমায়ুন আহমেদ তার লেখায় কখনোই খারাপ কে ভাল রুপ দেয়ার চেষ্টা করে নাই যেটা অন্যান্য লেখকরা করেছে।হুমায়ুন আহমেদ কোনদিনই অন্যায়কে কোন প্রকারের শব্দজট পাকিয়ে ন্যায় বলে স্বীকৃতি দেয় নাই।

ব্যাক্তিজীবনে তিনি কি করেছে সেটা নিয়ে বলার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।তবে লেখক হিসেবে তিনি বাংলাদেশের তরুন প্রজন্মকে যা দিয়েছেন সেটা যে একসময় ইতিহাসের গবেষনার অংশ হবে সেটা আমি অন্তত বড় গলায় বলবো।





এই দিন দিন নয় আরো দিন আছে এই দিনেরে নিয়া যাইবা সেই দিনেরই কাছে।

এই যে সাহস এটা আমাদের কে দিয়েছে?
৬৭টি মন্তব্য ৬৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×