দুপুরবেলায় ডি এল ও সাহেব কানাইকে ডেকে বললেন,"টিফিন নিয়ে এসো। দই-বড়া আর গোটা কয়েক কাঁচাগোল্লা। ভাল দোকান থেকে আনবে।"
ক্যাশিয়ারবাবুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে কানাই তার সাইকেলে করে গেল দই-বড়া আর কাঁচাগোল্লা আনতে।
কানাই ডি এল ও সাহেবের অর্ডারলি। দিন সাতেক হল নতুন ডি এল ও সাহেব এসেছেন। ভয়ানক বদমেজাজি অফিসার। সবে প্রমোশন পেয়ে ডি এল ও হয়েছেন। আর হয়েই ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। মনে হচ্ছে সমস্ত স্টাফকে কড়মড় করে চিবিয়ে টুপ্ করে খেয়ে নেবেন। ধমকে-চমকে তর্জন-গর্জন করে অফিসের সবাইকে তটস্থ করে রেখেছেন। সবার প্রাণ ওষ্ঠাগত।
কানাইয়েরও অবস্থা খারাপ। একটু স্থির হয়ে বসতে পারছে না। ঘন ঘন বেল। আর কথায় কথায় কড়া বকুনি।
কুড়ি বছর চাকরি হয়ে গেল এমন খচরা অফিসার আগে কখনও দেখেনি। দিনে সাতেরো বার করে সাসপেন্ড আর ছত্রিশ বার করে ট্রান্সফার করে দিচ্ছে।
দই-বড়া আর কাঁচাগোল্লা দু প্লেটে সাজিয়ে,জল দিয়ে চেম্বারের বাইরে গেছে, অমনি আবার বেল।
ঢুকতেই অফিসার চিৎকার করে উঠলেন, "এতে চুল এল কেমন করে?"
খেয়েছে! দই-বড়ায় চুল! কিন্তু ভাল নামকরা দোকান থেকে এনেছে সে! তারপর কত যত্ন করে প্লেট ভাল করে ধুয়ে দিয়েছে। তারপরেও চুল কোথা থেকে এল!
বলল,"আমি জানি না স্যার।"
"কী? আমি জানি না? স্কাউনড্রেল?" বলতে বলতে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন সাহেব।
এরপর যা ঘটল তা দেখে অফিসার নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারলেন না! কানাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হিসি করছে! দামি কার্পেট ভেসে যাচ্ছে!
একজন প্রাপ্তবয়স্ক এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হিসি করে দিতে পারে তা ডি এল ও সাহেবের স্বপ্নের অতীত। চেঁচিয়ে উঠলেন,"অ্যাই অ্যাই কী হচ্ছে। দাঁড়াও দাঁড়াও। বন্ধ করো, বন্ধ করো।"
কানাই কাঁপতে কাঁপতে বলল, "ভয়ে হয়ে গেল স্যার। বন্ধ করতে পারছি না।"
ডি এল ও সাহেবের চিৎকারে সমস্ত স্টাফ চেম্বারে দৌড়ে এল।
ঘটনার আকস্মিকতায় ডি এল ও হতবাক হয়ে গেছেন।
কানাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইউনিয়নের নেতারা ডি এল ওকে বলল,"ইউরিনের ওপর দিয়ে গেছে, কিন্তু যদি ধরুন ওর ভয়ের চোটে হার্ট অ্যাটাক-ট্যাটাক হয়ে যেত?"
ডি এল ও সাহেব বাংলোতে চলে গেলেন। ওই কার্পেট তুলে নতুন কার্পেট পাততে হবে। সময় লাগবে। কোনও জরুরি ফাইল থাকলে বাংলোতেই পাঠিয়ে দিতে বললেন।
তার পরদিন থেকে তিনি অন্য মানুষ হয়ে গেলেন। ধমক-ধামক কমে গেল।
কানাই পরদিন ডি এল ওর চেম্বারের বাইরে টুলে বসে বিড়িতে টান দিতে দিতে ডি এল ওর বডিগার্ডকে চোখ মেরে বলল, "শালা নিজেকে শের ভাবছিল! কত্ত বাঘা বাঘা অফিসার পার করে দিলাম, এ নাদান এসেছে আমাকে চমকাতে! ছেড়ে দিলাম বরুণাস্ত্র ফুস্ করে... ব্যাস্ অগ্নি নিবে একদম কাদা হয়ে গেল.."
.
...(বরুন=হিন্দুদের ঝড় জল বৃষ্টির দেবতা।)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১৫