খানিকক্ষন আগে বটগাছের তলার বাঁধানো চাতালে বসেছিলাম। আজ জায়গাটা একেবারে ফাঁকা। অন্যদিন হলে তাও অনেকে বসে থাকে। আজ শুধু মাত্র একজন একটা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।
বসে এলোমেলো চিন্তা করছিলাম অনেকক্ষন ধরে। হটাৎ হাল্কা বৃস্টি শুরু হল, সাতে একটা কনকনে হাওয়াও।
কম্বল মুড়ি দিয়ে শোয়া চরিত্রটা বলে উঠল " কত্তা একটা বিড়ি হবে? আজ ঠান্ডাটা বেশী হবে, বৃস্টি হতে থাকলে।"
কি এক্টা ভাবছিলাম যেনো। চমকে উঠলাম ওর মিহি গলা শুনে।
সিগ্রেট আছে। বিড়ি নেই। একটা সিগ্রেট এগিয়ে দিলাম।
কম্বল সরিয়ে চরিত্রটা উঠে পড়ল, তারপর গাছের গায়ে হেলান দিয়ে আবার কম্বলটা পেঁচিয়ে আধশোয়া হয়ে সিগ্রেট ধরাল।
" সিগ্রেট পাব ভাবিনি। কেই বা ভবঘুরেকে সিগ্রেট দ্যায় বলেন কত্তা। "
" তা ভবঘুরে হলে কিভাবে" জিজ্ঞাস করলাম।
" বউএর জ্বালায়।" চরিত্রটা উত্তর দিল।
"সেকি?" ওর কথা শুনে আতঁকে উঠলাম।
" হ্যা কত্তা। বউ ছিল। এড়ে তক্কো করত খুব। পালায় গেলাম জ্বালায়। সেই থেকে ভবঘুরে। "
" মরেচে। তা তোমার খোঁজ করে নি কেউ? "
" করেছিল মনে হয়। কদ্দিনই বা করবে। বছরখানেক বাদে একবার চুপি চুপি গেসলাম। দেখি বউ আবার বিয়া করেছে। অবশেষে শান্তি মনে পুরোপুরি ভবঘুরে। "
বলে কি ব্যাটা।
" তা তোমার বউ আবার বিয়ে করল। দুঃখ্য পেলে না? "
" আজ্ঞে না। যে অবয়ব আমার কাছে পুরানো, সেইটা অন্যের কাছে নুতন লাগবে। এইভাবেই যতদিন যাবে,ভালবাসা ফিকে হয়ে যাবে। আবার এড়ে তক্কো হবে। কেউ সহ্য করলে থাকবে, আর না কত্তে পারলে পালাবে। "
" তুমি ত অনেক জানো দেখচি। তা আবার সংসার করতে পারতে তো। " আমিও একটা সিগারেট ধরালাম।
" কত্তা ভালবাসা ততোদিন, যতদিন শরীর। এই যেমন ধরেন আমি ভবঘুরে। কোনোদিন খাবার পাই, কোনোদিন পাই না। পেটে বড় খিদে। খিদের জ্বালায় শরীরের জ্বালা পালায় গেছে। শরীরের জ্বালা পালায় যাওয়ার সাতে সাতে ভালবাসার জ্বালাও পালায় গেছে। "
চিন্তা করে দেখলাম তাইত। হয়ত এটাই সত্যি। কতো মানুষের কাছ থেকে কতো কি শিখছি জীবনে। নিজেকে এখনো ছাত্র মনে হয়, বয়সকালে এসেও।
আমি আর আধশোয়া কম্বলমুড়ি দেওয়া চরিত্রটা চুপচাপ বসে রইলাম অনেকক্ষন। পাশের পুকুরে টিপ টিপ করে বৃস্টির জল পড়ছে। আস্তে আস্তে উঠে পড়লাম। বাড়ির দিকে ফিরছি। চরিত্রটা শুয়ে রইল বৃস্টিভেজা কম্বল জড়িয়ে।
(এটি আমার বন্ধু মুচিরাম গুরের এক অনন্য অভিজ্ঞতা অনুসারে লেখা।)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০১