গতকাল পর্যন্ত সমীরের জীবনটা ছিল অন্যরকম। চূড়ান্ত ব্যস্ত মানুষ সমীর। পড়াশুনা কমপ্লিট করেই নিজের ব্যবসা শুরু করল। কপাল ভাল। বিজনেস ক্লিক করে গেল। সবার কপালে নাকি ব্যবসা সুট করে না। সমীরের হয়েছে। একটু বেশিই হয়েছে। বছরদুয়েক যাওয়ার পর থেকেই টাকা আসতে শুরু করল। জলের মত। না, সবসময় জলের মত না। মাঝে মাঝে হড়কা বানের মত টাকা আসছে। সমীর ঢুকে পড়ল ছুটোছুটির জীবনে। যত দিন যেতে লাগল। পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল ছুটোছুটি। সকাল-সকাল বেরোতে হয়। বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। বেশ রাত। বয়স্ক মা বাবা থেকে শুরু করে ছয় বছরের তুতুন, কারও সঙ্গে দেখা হয় না। দেখা হবে কি করে ? সমীর তো শুধু ঘুমোনোর সময় বাড়িতে থাকে। তুতুনের মুখ থেকে কতদিন বাবা ডাক শোনেনি। আর সোনালী ? এই দশ বছরে সোনালী বোধহয় অভিমানে বহুদূর চলে গেছে। অথচ সমীর সোনালী দুজন দুজনকে ভালবেসেই বিয়ে করেছে। শুধুমাত্র যত্নের অভাবে আজ সম্পর্কের এই অবস্থা। বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গেও বহুদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বিয়ে কিংবা জন্মদিনের নিমন্ত্রণে বাধ্য হয়েই মাঝে মধ্যে সমীরকে যেতে হয়। কিন্তু আন্তরিক যোগাযোগ ? না, নেই। সমীরের জীবনে আছে শুধুই সামনের দিকে ছোটা। বেশ কিছুদিন ধরে শরীরটা গড়বড় করছে। কিন্তু সমীর ব্যস্ততার কারণে ডাক্তারের কাছে পর্যন্ত যেতে পারেনি। অবশ্য এসবই গতকাল পর্যন্ত। আজ সে অন্য সমীর। সম্পূর্ণ নতুন। সমীরের মনে হচ্ছে। হাতের রিপোর্টটা ভয়ংকর কোন কিছু না। এটা যেন তাঁর বার্থ সার্টিফিকেট। এযেন সমীরের নতুন জন্ম। যে জন্মের আয়ু বছরদুয়েক। তাও টেনেটুনে। এতোদিন সমীর যে জীবন যাপন করেছিল। আজ থেকে পুরো উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করল। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এক্ষুণি। এখন থেকেই। সময় সীমিত। ডাক্তারবাবুর কথা এখনও কানে বাজছে।
প্ৰথমে সমীরের কাছে রিপোর্ট দিতে চায়নি। পেশেন্টের সঙ্গে আর কেউ এসেছে কিনা খোঁজ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ নেই। সমীর নিজেও ডাক্তারবাবুকে অনুরোধ করেছে। যতই খারাপ হোক না কেন। রিপোর্ট তাকেই নিতে হবে। কারণ সমীরকে জানতে হবে সবকিছু। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই সমীরের হাতে রিপোর্ট দিয়েছে।
রিপোর্ট দেওয়ার সময় ডাক্তারবাবু সমীরের কাঁধে হাত রেখে বলল--"ক্যান্সার। লাস্ট স্টেজ। সমীরবাবু, আমরা সবাই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আপনার সময়টা আপনি জানেন। আর আমরা জানিনা। এটুকুই মাত্র পার্থক্য। এই সামান্য পার্থক্য আমাদের বেঁচে থাকাকে বদলে দেয়। যেমন আগামীকাল থেকে আপনি অন্য মানুষ হয়ে যাবেন। বদলে যাবে আপনার বেঁচে থাকা। বদল আসবে আপনার জীবনে।"
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৩