টিনা কাঁচা মেয়ে না। মনে মনে প্ৰস্তুত। বেগতিক দেখলেই পুলিশের কাছে তাঁর বিপদের খবর পৌঁছে যাবে। ফোন হাতেই আছে। জাস্ট একটা টাচের অপেক্ষা। টিনা জানে। চারিদিকে যা ঘটছে। অনেক কিছু হতে পারে। সারারাতের ব্যাপার। সেইজন্য আগে থেকেই খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য রেডি হয়ে এসেছে। সেই খারাপ মুহূর্ত ক্রমশ কাছে এগিয়ে আসছে। টিনাও প্ৰস্তুত।
টিনা প্রতিবার মা বাবার সঙ্গে পুজো দেখতে বের হয়। কিন্তু এবার হল না। মায়ের হাঁটুর ব্যাথাটা বেড়েছে। ফলে মা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবার পুজো ঘরে বসেই কাটাবে। টেলিভিশনের পর্দায় দেখবে দুর্গা পুজো। আর বাবা ? বাবার নতুন নাটকের শো চলছে। পুজোর কটাদিন দিনে দুটো করে শো। ফলে বাবার এখন দম ফেলার সময় নেই। মা বাবাকে যখন পাওয়া গেল না। তখন টিনা ভাবল কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে পুজো দেখতে যাবে। কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয় আর কি। সবাই যাবে জোড়াই জোড়াই। টিনা তো আর কাবাব-মে হাড্ডি হতে পারে না। তাই সে পথও ত্যাগ করতে হল। প্রেমিক নেই বলে টিনার কখনও খারাপ লাগেনি। কিন্তু উনিশ বছরের জীবনে এই প্রথমবারের জন্য খারাপ লাগল। মনে হল--বন্ধুদের মত আমারও যদি বয়ফ্রেন্ড থাকত। তারপর শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিল একাই দেখব পুজো। মেয়েরা কতকিছু করছে। আমি পুজো দেখার মত সহজ একটা ব্যাপার একা একা সামলাতে পারব না ? অবশ্যই পারব। যেমন ভাবা তেমন কাজ। শুধু বের হওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে নিল।সারারাতের ব্যাপার। টুকিটাকি কিছু জিনিসতো সঙ্গে নিতেই হবে।
ভোর হয়ে আসছে। সারারাতে মোট ছাব্বিশটা ঠাকুর দেখেছে টিনা। সবকটাই বিখ্যাত পুজো। প্যান্ডেলও দারুণ দারুণ। এক একটা পুজো কমিটি এক এক ধরনের থিমের ওপর মন্ডপ সাজিয়েছে। কিন্তু টিনার এবারের পুজো দেখার সময়টুকু পুরোপুরি সহজভাবে কাটেনি। একটা ছেলে। দেখতে শুনতে বেশ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কলেজ পেরিয়ে ইউনিভার্সিটিতে পা দিয়েছে। নেভি ব্লু জিন্স, আর গোলাপি টি শার্টে বেশ মানিয়েছে। চোখে চশমা। সারারাত ধরে টিনাকে ফলো করেছে। টিনা যখন যে প্যান্ডেলে গেছে, ছেলেটিও তখন সেই প্যান্ডেলে হাজির। টিনা যখন রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে। গোলাপি টি শার্ট তখন ঠিক তাঁর পাশের টেবিলে। মানুষের বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই। এই সুন্দর ছেলেটি যে খারাপ মানুষ না তার কি গ্যারান্টি আছে ? মানুষের সুন্দর মুখোশের আড়ালে কুৎসিত মুখ লুকিয়ে থাকে। টিনা এবার চলে যাবে। ছেলেটি টিনার দিকে এগিয়ে আসছে। টিনাও প্ৰস্তুত। পুলিশের স্পেশাল নম্বরে হাত দিয়ে রেখেছে। উল্টোপাল্টা কিছু হলেই নম্বরটা প্রেস করে দেবে। ব্যাস। পুলিশের কাছে চলে যাবে টিনার বিপদ সঙ্কেত। পুলিশ লোকেশন ট্র্যাক করে চলে আসবে। টিনাকে আর কিছুই করতে হবে না। আর তার আগেই টিনা নিজস্ব শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করবে ছেলেটির। টিনার নিজের ওপর ভরসা আছে। সে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। গত চার বছর ধরে। শুধুমাত্র নিরাপত্তার জন্য। পথেঘাটে যাতে নিজের সুরক্ষার জন্য অন্যের ওপর ভরসা করতে না হয়। ছেলেটি এগিয়ে আসছে। একদম কাছাকাছি এসে পড়েছে। টিনা দম বন্ধ করে অপেক্ষা করছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।
মানুষের ধারণা সবসময় ঠিক হয় না। বরঞ্চ মাঝে মধ্যে আমাদের আইডিয়ার উল্টো ঘটনাও ঘটে। তখন চমকে যাওয়া ছাড়া অন্য পথ থাকে না। এক্ষেত্রেও তাই হল। টিনার হাতে একগুচ্ছ গোলাপ তুলে দিয়ে ছেলেটি চলে গেল। যাওয়ার আগে মুগ্ধ চোখে টিনাকে দেখে গেল।
টিনা পুরো থ। সাদা বাংলায় যাকে বলে হতভম্ব। ছেলেটি চলে যাওয়ারও বেশ কিছু সময় পরে টিনা ধাতস্থ হল। ফুলের তোড়ার দিকে তাকিয়ে দেখল। শুধু ফুল নেই। ফুলের মাঝে উঁকি দিচ্ছে ছোট্ট এক টুকরো কাগজ। টিনা দ্রুত কাগজটা খুলে দেখল--ফোন নম্বর।
সেই ঘটনার পর প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে। টিনা ছেলেটিকে ফোন করেনি। ফোন করবে কিনা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। তবে একটা কথা সত্য। এই কদিন টিনা শুধু সেই ছেলেটির কথায় ভেবেছে। আর ফোন নম্বর লেখা কাগজটা দেখেছে। বারবার। ফলে একটা কাজ হয়েছে। ফোন নম্বরটা টিনার মুখস্থ হয়ে গেছে। টিনা এটুকু বুঝেছে। কোনদিন যদি ছেলেটিকে ফোন নাও করে। তবুও ভুলতে পারবে না। এই ফোন নম্বর। টিনার হৃদয়ের গভীরে লেখা হয়ে গেছে 993312.....
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৮