কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়ল রঞ্জনা। ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। ছাতা আছে। সমস্যা হচ্ছে হাওয়া নিয়ে। উল্টোপাল্টা হাওয়া বইছে। হাঁটতে হাঁটতে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে রঞ্জনা। অন্যদিন কত রিকশা চোখে পড়ে। আজ একটাও নেই। যা দু-একটা দেখা যাচ্ছে। সেগুলো ফাঁকা নেই। বৃষ্টি হলেই এরকম হয়। রিকশা পাওয়া যায় না। রঞ্জনা হেঁটেই যাতায়াত করে। বাড়ি থেকে কলেজ। মিনিট কুড়ির হাঁটা পথ। বাবা বারবার বলে--"রঞ্জনা। মা। হাঁটার দরকার নেই। কলেজে যাবে রিকশায়। আসবেও রিকশায়।" রঞ্জনা কিছু বলে না। শুধু হাসে। বাবা যে তাঁকে কতখানি ভালবাসে। রঞ্জনা সেকথা জানে। হাঁটছে একটু জোরেই। "রঞ্জনা... আ... আ... আ। একটু আস্তে হাঁট।"--পিছন দিক থেকে জোরালো গলা ভেসে এলো। রঞ্জনা না তাকিয়েই বুঝতে পারল। বিজয় ডাকছে। এই গলা তাঁর পরিচিত। ঈশ্। বিজয়টা কি করে না!! মাঝেমাঝে লজ্জ্বায় পড়ে যেতে হয়। রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে। কলেজে বিজয়ের বিপুল জনপ্রিয়তা। পড়াশুনা ছাড়াও বিজয়ের অনেক গুণ। সুন্দর ছবি আঁকে। খুব ভাল গানের গলা। সামনে ফাইনাল। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হবে। এই তিন বছরে বিজয় কলেজে সবার মন জয় করে নিয়েছে। কলেজে বিজয়ের হাজারো বন্ধু। তবু রঞ্জনাকেই ডাকবে। সব ব্যাপারে। সবার আগে। রঞ্জনা মাঝে মধ্যে অস্বস্তিতে পড়ে যায়। যদি রঞ্জনার কখনো দেরী হয়। বিজয় তখন চিৎকার করে ডাকে। কলেজে না পেলে ফোনে হইচই বাঁধিয়ে দেয়। রঞ্জনা জানে। কলেজের সবাই ভাবে। বিজয়-রঞ্জনা গভীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। নিরুত্তর থাকে রঞ্জনা। বিজয়তো মুখ ফুটে কখনো কিছু বলেনি। না। রঞ্জনা এই কথা আগে বলবে না। মেয়ে বলে প্রপোজ করবে না। ছেলেরাই আগে বলবে। রঞ্জনার এরকম কোন ব্যাপার নেই। মেয়েরা বলতেই পারে। শুধু সে বলবে না। বিজয় দৌঁড়ে রঞ্জনার পাশে এলো। "কিরে কতবার ডাকছি। শুনতে পাসনি। বাড়ি কোন রাজকার্য করবি শুনি।"--বিজয় বকবক করেই চলেছে। রঞ্জনা কিছু বলছে না। শুধু একটুখানি হাসল। বিজয়ের মত সারাক্ষণ মুখ চলে না রঞ্জনার। বিজয়ের সঙ্গে থাকলে বেশিরভাগ সময়ই রঞ্জনার ভূমিকা থাকে শ্রোতার। রঞ্জনা নীরবে হাঁটছে। দুজনে পাশাপাশি। রঞ্জনার ডান পায়ের চটিটা হঠাৎ ছিঁড়ে গেল। ঈশ্!! কেলেঙ্কারি কান্ড। এতো লোকের মাঝে যাচ্ছেতাই অবস্থা। কাছাকাছি চটি সারানোর দোকানও নেই। লজ্জার সঙ্গে ভীষণ অসুবিধার মধ্যে পড়ল রঞ্জনা। বিজয় আচমকা একটা কান্ড বাঁধিয়ে বসল। বিজয়ের কান্ড দেখে হেসে ফেলল রঞ্জনা। বিজয় নিজের চটি খুলে হাতে নিল। এখন আর লজ্জা করছে না রঞ্জনার। দুজনের চটিই হাতে।
দারুণ দৃশ্য। অসম্ভব সুন্দর। কালো আর গোলাপী রঙের ছাতা মাথায় দুই তরুণ-তরুণী হেঁটে চলেছে। তাঁদের পায়ে চটি নেই। চটি হাতে। দুজনেই হাঁটছে। খালি পায়ে। হাঁটার ভঙ্গি খুব স্বাভাবিক। যেন চটি হাতে নিয়েই হাঁটতে হয়। বোকারাই চটি পায়ে দিয়ে হাঁটে। রঞ্জনা অপেক্ষা করছিল। বিজয় কবে তাঁকে বলবে। ভালবাসার কথা। আজ বিজয় মুখে কিছু বলেনি। রঞ্জনা তবু উত্তর পেয়ে গেছে। সব। সব প্রশ্নের।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২১