ঢাকার কিংবা বাংলাদেশের যেকোন শহরের/মফস্বলের ২০ বছরের তুলনা করলে আশান্বিত হতে হবে, কারণ ২০ বছরে বেশিরভাগ এলাকারই রাস্তাঘাট কাঁচা-কর্দমাক্ত/সাঁকো/চাটাইসেতু থেকে উন্নত হয়ে এখন পাকা রাস্তা পাকা সেতুতে পরিবর্তন করা হয়েছে। আগে বাঁশের/মাটির/কাঠের ঘর ছিল অজস্র সেখানে আজ নেই বললেও চলে। আগে তিনবেলা ভাত খেতে পারতো না এমন মানুষের সংখ্যা কমেছে। ৮০/৯০ দশকের ছবি আর আজকের মানুষদের ছবির দিকে তাকালেই বুঝা যাবে আসলেই আমারদের স্বাস্থ্যগত উন্নতিও ঢের ভাল হয়েছে।
এত জায়গায় উন্নতি হয়েছে বলে খুবই গুরুত্বপুর্ণ অনেক কিছুই ঢাকা পড়ে আছে আজও। তেমনই একটা অবনতির জায়গা হলো মানসিকতা তথা দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি।
"কণ্ঠশিল্পী মৌসুমী আক্তার সালমা ও সাংসদ শিবলী সাদিকের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেছে। গত ২০ নভেম্বর রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় দুই পরিবারের উপস্থিতিতে তালাকের কার্য সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। একমাত্র কন্যা স্নেহা। ধানমণ্ডিতে সালমা ও শিবলী বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি সালমার পারিবারিক দ্বন্দ্ব চরমে উঠলে সালমাই সাদিককে ডিভোর্সের উদ্যোগ নেন।”
এই খবরের প্রতিক্রিয়া দেখুন নিচে-
সালমা ও এমপি সাদিকের সেপারেশন নিয়ে মন্তব্য এইগুলো। খোলা প্লাটফর্মে উনাদের এইসব মন্তব্য শুধু উনাদের একার মতামত হলে ব্যাপারটা তেমন গুরুত্বপুর্ণ কিছু ছিল না। কিন্তু উনার আশপাশে আরো অনেকেই(সিংহভাগের) মতামতই হলো ফকিন্নির মাইয়া পটিয়ে ফেলেছিল রাজার কুমারকে!
জনতার জন্য সমস্যা হলো এমপি সাহেব উদ্যোগ নেন নি, উদ্যোগটা সালমা নিয়েছে। সালমার জাত ছোট হয়ে গেছে কারণ সে নিম্ন-মধ্যবিত্ত থেকে উঠে এসেছে। সালমাকে একজন শিল্পী হিসেবে সবাই জ্ঞান করেছিল একসময়, সময়ের পরিবর্তনে আজ তাকে মাটিতে নামিয়ে আনতে দেরি করেনি।
সবচেয়ে বড় কথা একজন মানুষের পারসোনাল লাইফ নিয়ে থার্ড পারসনের মন্তব্য করাই হলো নিম্নশ্রেনির মানসিকতা। মানুষের ক্লাস নির্ধারিত হয় তার আচরণে, তার ভেতরের দৃষ্টিভংগি নির্বাচনে, বিবেকবোধ থেকে, রুচিবোধ থেকে।
এটা পড়ার সময়ও হয়তো আপনিও তাদের মতো করেই ভাবছেন। আমার অভিজ্ঞতানুসারে বাংলাদেশের অন্তত ৮০% মানুষ এইরকম জাত-শ্রেণি-বংশ-অর্থ ভিত্তিক শ্রেণিকরণ করে থাকেন। সুর্যোদয়/অস্তের মতো এইভাবে বিশ্বাসও করে থাকেন বংশের মধ্যেই মর্যাদা নিহিত!
আদিম যুগ থেকে যে আমরা বেরিয়ে আসতে পারছি না এর অন্যতম স্থুল উদাহরণ হলো এইরকম নির্লজ্জ বর্ণবাদী মনোভাব! প্রগতির আলো না আসা পর্যন্ত এরা অন্ধকারেই বাস করতে থাকবে। এরা জানবে না মানুষের মর্যাদা তার নিজের কাছে। সে কতটুকু সৎ ও উচ্চ মানসিকতার তাতেই তার মর্যাদা প্রতিষ্টিত হয়।
এইসব অন্ধকারী জীবেরা জানতেই পারবে না তার মর্যাদা নিহিত থাকে তার চারপাশের মানুষদের সাথে চলাফেরায়, বক্তব্যের স্পষ্টতায়, আচার আচরণে ও লেনদেনে।
একটা লোক উচ্চ বংশের হয়েও যদি ভন্ডামি করে মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা ঠকায়, অন্যায় করে তাতেও এদের কাছে বিশ্বাস থাকবে লোকটা উচ্চ বংশের, সেই উচ্চশ্রেণি! অথচ মানবতার জয়গান লালন গেয়েছেন বহুত আগেই-
জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না….
আসবার কালে কি জাত ছিলে
এসে তুমি কি জাত নিলে
কি জাত হবে যাবার কালে
সে কথা ভেবে বলো না…
ব্রাহ্মণ চন্ডাল চামার মুচি
একি জলেই সব হয় গো সুচি
দেখে শুনে হয় না রুচি
যমে তো কাউকে ছাড়বে না…
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৫