বিকেল ৪ টা। ঝিম বৃষ্টি হচ্ছে। আজ দখলদার সুর্যের গরমে বাগড়া দিয়ে পুরাই মুষলধারে অবস্থা করে ফেলেছে মেঘমালা। সামান্য ১০ মিটার দূরে তাকালেও বৃষ্টির মিছিলের সাদা দুনিয়া ছাড়া কিছুই নাই। আমার মতো আর কোন কোন হতভাগা এই সময়ে বাসায় ফেরার জন্য বের হয়েছে কে জানে। কোনমতে রিকশা একটা হলেই হয় আমার জন্য।
বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে পেলাম আর মাত্র ৩ জন নাগরিক আমার সাথে এই বিড়ম্বনায় শরিক হয়েছেন। আমি ভাবছি এই সংখ্যাটা নির্দিষ্ট ১ হলেই ভাল হত। কারণ একটা ষোড়শী মেয়ে আর তার সাথে আছে সমবয়সি একটা ছেলে। সহপাঠী হয়তো, স্কুলব্যাগও আছে দুজনের পিঠে। অন্যজন নিতান্তই গোবেচারা।
মিনিট পাঁচেকের মাঝেই একটা প্রায় খালি মিনিবাস এসে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে থেমে গেল। গাড়ি থামলেও ড্রাইভার গাড়িতে বসে থাকার কথা অথচ বেটা বৃষ্টিতেই নিচে নেমে এসেছে।
আমার গায়ে পুরোদস্তুর কর্পোরেট পোশাক। এদিকে থার্ড ক্লাস ড্রাইভারের সাথে সুন্দরী মেয়েটি আলাপ জুড়ে দিয়েছে। টিনএজারদের এই একটা ব্যাপার বুঝতে বরাবরই আমি অপারগ। ব্যাপারটা হলো- আমার দিকে টিপটিপ করে তাকাবে অথচ কথা বলবে না। এখানেও সেম কেস।
আমার কাছে যতই দৃষ্টিকটু লাগুক, বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে। ড্রাইভারকে লক্ষ্য করে একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম, আপনি যাবেন? আমার এই প্রশ্নে লোকটা পুরাই চাড়ালের মতো কপাল কুঁচকে বলল, এই বৃষ্টির মধ্যে কোথাও যাবে না।
এর মধ্যে একটা রিক্সাওয়ালাও রিকশা থামিয়ে এসে পড়েছে। বাস ড্রাইভার রিক্সাওয়ালাকে ডেকে বলল- এই ভদ্রলোককে পৌঁছায়া দে বেটা। তোর তো পানিকাপড়(ওয়াটারপ্রুফ) আছে।
রিক্সাওয়ালা লোকটা আমার দিকে দেখল। আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি কোথায় যাবেন? এই রিক্সায় যেতে পারবেন। মেয়েটির ভাব সুবিধের মনে হলো না। সে জবাবে বলল "এই বৃষ্টির মধ্যে ভিজে যাবে। বৃষ্টি শেষ হোক, এরপর বাসায় হেঁটেই যাবে।
আমার আর দ্বিতীয়টি বলার সূযোগ নাই। অগত্যা আমি বৃষ্টির মধ্যেই বাসায় ফেরাতে আগ্রহী হয়ে পড়লাম।
রিকশায় যেতে যেতে ভাবছিলাম- আহাঃ ঐ মেয়েটি যদি আজ আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যেত। আমি হতাম আজকের সবচেয়ে সুখি মানুষ। মেয়েটি এলোও না, বৃষ্টিতেও ভেজা হলো না।
বাসায় রাতের খাবার খেয়ে টিভির রিমোট নিয়ে বসে পড়লাম। একটা খবরে আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো।- "মিনিবাসে কোচিং ফেরত মেয়েকে গণধর্ষণ"।
২)- মখা
বন্ধুর কাছে গেছি অনেক দিন পর দেখা করার জন্যে। ওর বাসা ৪ তলায়। স্যান্ডেল খুলে রুমে ঢুকলাম। আড্ডা দিলাম ঘন্টা খানেক সাথে দুই কাপ চাও খেলাম। বের হবার সময় বাইরে এসে দেখি কোন স্যান্ডেল নাই!! কি তাজ্জব ব্যাপার! নিজেকে নিয়ে খানিকটা অবিশ্বাস লাগলো। আমি স্যান্ডেল ছাড়া এত দূরে চলে এসেছি?
কিছুক্ষণ ভাবার পর মনে হলো চুরি হয়নি তো? বন্ধু আবার কি ভাবব তাই সৌজন্যতাবশত বললাম কিরে আমার স্যান্ডেল কই? সে বলল, ২-৫তলা পর্যন্ত খুজলে স্যান্ডেল পাওয়া যাবে!
রিক্স না নিয়া আমি উপরে গেলাম। গিয়ে দেখি এক বুড়ো মহিলা আমার স্যান্ডেল পরে হাঁটাহাঁটি করছেন। আমি সবিনয়ে আরজ করলাম। ম্যাম, এই স্যান্ডেলটা আমার!
বেচারি কোন কথা না বলে স্যান্ডেল দিয়া দিলো। আমি মখা বনে গেলাম!
৩)- সুশীল
আমরা সুশীল সভ্য ভদ্র হিসেবে সমাজে পরিচিত। যারা গালি দেয় তাদেরকে আমরা খারাপ হিসেবে মনে করি। প্রতিদিন ফেসবুক ওপেন করে মডেল ড়িফের পেজে গিয়ে একটু বিনুদিতও হই!
৪)- মশকরা
যতদিনই আমি ছাতা নিয়ে বেরুই ঐদিনই বৃষ্টি আর আসে না। আজ অফডে। ল্যাপটপ আনার কথা আজ। পাতলা ফিনফিনে টি শার্ট পরে বেরিয়েছি। পায়ে কনভার্স। উদ্দেশ্য বৃষ্টি আসা। তাই ছাতা ছাড়াই বেরিয়ে পড়লাম।
বাস থেকে নেমে কম্পিউটার শপে ঢুকবার আগে আকাশের দিকে একনজর তাকালাম। দেখলাম এক চোখ টিপে প্রকৃতি আকাশে বসে আমার সাথে তামাশা করছে। ২ ঘন্টা পরে কফি খেতে বেরিয়ে দেখি ঠাঠাপড়া রোদ!! মিনিট বিশেক পরে ল্যাপটপ হাতে বেরিয়ে দেখি মুষলধারায় বৃষ্টি এসে সব ভিজিয়ে দিয়েছে। সাথে ল্যাপটপটাও!
৫)- গার্লফ্রেন্ড ও বেস্ট ফ্রেন্ড
গার্লফ্রেন্ড জুটানোর জন্য অনেক পরিশ্রম করেছিলাম আমরা। আমার বন্ধুটি পারলেও কেন যেন পারিনি আমি। ৩ বছর আগের কথা এটা।
গত বছর ওর গফের জন্মদিনে বেস্টফ্রেন্ডকে দাওয়াত দিতে বলেছিল মেয়েটা নিজেই। বন্ধুর কাছ থেকে কথা প্রসংগে বেস্ট_ফ্রেন্ডের বদনামগুলো শুনতে শুনতে একসময় ওর জন্মদিনেই ওকে দেখতে চেয়েছিল মেয়েটি।
আমি এখন সেই মেয়েকে নিয়ে দোলনায় চড়ছি!
সতর্কীকরণ! এই গল্পে কিছু অশ্লিলতার ব্যাপার আছে। নিজ দ্বায়িত্বে পইড়েন!!
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
৬)- খারাপ রাতের গল্প!
আজ রাতে নিঝুমম বৃষ্টি হচ্ছে। এইসব রাতের মুহুর্তগুলো খুব খারাপ! বৃষ্টি থেমে গেলেও অনেক সময় ধরে এর রেশ রেখে যায়। গাছের পাতাগুলো থাকে ভেজা, চুপসে যাওয়া। সাদা সাদা পেইন্ট করা বাড়ির দেয়ালে কিছুক্ষণ আগের বৃষ্টির চিহ্ণ লেপ্টে থাকে অনেক্ষণ। তিন তলায় এক কিশোরীর জানালার গ্লাসে বৃষ্টির আবছা একটা ঝাপসা ছাপ এখনো রয়ে গেছে।
একটা বয়ফ্রেন্ড থাকলে এখন যেকোন একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলা যেত নিশ্চিত। তার মনে আফসোস, কোন ছেলেই ধারে কাছে এইসকল জৈবিক ব্যাপারের রসায়ন নিয়ে ভাবে না। তারা পদার্থে-ই আটকে যায়।
বয়স সবে ১৫। ক্লাস নাইনে পড়ুয়া ভীষণ মনোযোগী ছাত্রী। হলিউডি ফিল্ম দেখা এবং স্বভাবে বেশ ইমোশনাল হওয়ায় অনেক বড় বড় সেলিব্রেটির মোহ তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে রাতের ঘুমোবার আগের সময়ে। হ্যান্ডসাম লৌহের ন্যায় শক্ত পেটানো শরীরের পুরুষের সাথে অভিসারে যাবার চিন্তা করতে করতে কোলবালিশটা জড়িয়ে ধরে ঘুমোয় সে। মাঝে মধ্যেই গভীর রাতে পড়াশুনা শেষ করে বেডরুমে মাস্টারবেট করাটা একটা অভ্যাস হয়ে গেছে ওর কাছে। পর্নহাব থেকে শখানেক নীল ভিডিও ডাউনলোড করে রেখেছে এনক্রিপ্ট করা ফোল্ডারে।
স্টাডির ফাঁকে ফাঁকে বোরিং লাগলে সে কানে হেডফোন লাগিয়ে এইগুলো দেখে।
একদিন ঘনিষ্ট মুহুর্তের নীলছবি দেখছিল মেয়েটি। এমন সময় থাই গ্লাস ভেঙে কেউ লাফিয়ে পড়লো একেবারে বেডরুমে। কানে হেডফোন লাগানো অবস্থায়ও কাচ ভাঙার শব্দ পেলেও সেটা ভিডিওর-ই মনে করে ইগনোর করে ফেললো উত্তেজনার দিকে মনোযোগ বেশি থাকায়।
হঠাৎ করে সে টের পায় তার কক্ষের টিউব-লাইট নিভে গেছে। তখনই ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে জীবনের প্রথম অনভিপ্রেত অবস্থার মুখোমুখি হলো।
চার চারটি ছেলে দেয়াল বেয়ে থাই ভেঙে তার বেডরুমে হামলে পড়েছে। ওরা চোখ মুখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধেই এসেছে। এইটা যে ভয়ানক একটা সিগনাল সেটা আন্দাজ করতে সেকেন্ড সময় লাগলো না। তার চোখে ভেসে ওঠলো রক্তাক্ত একটি লাশ, পত্রিকার ভেতরের পাতায় খবর ছাপা হয়েছে। ফেসবুকের টাইমলাইনে ভেসে ওঠেছে এক রক্তাক্ত কিশোরীর ছবি, বড় বড় করে ক্যাপশন- চার বন্ধু মিলে পাড়ার মেয়েকে রাতভর ধর্ষণ করে খুন!!
নাহ! অতো সময় কোত্থেকে পাবে বেচারি। মুহুর্তের মধ্যেই লম্বা চওড়া ছেলেটা বললো আমরা মধূর খোঁজে এসেছি। জোর করতে হবে নাকি নিজেই দিয়ে দিবি এইটা ক। রাইতের বেলা তোর শীৎকার শুনে আমরা একা একা খেচি।
- আমি বুঝতে পেরেছি আপনারা রেপ করবেনই। তবে আমি ভার্জিন না।
- মাগি কয়টার লগে শুইছিস? ক ত
আমার কোন ছেলে/মেয়ের সাথে এখনো শুয়া হয়ে ওঠেনি। বেশ ঠান্ডা মাথায় বললো মেয়েটি। আমি এখন চিৎকার দিলে হয়তো আমাকে খুন করতে পারবেন বড়জোর বাট রেপ করতে পারবেন না। আর আমি এই মুহুর্তে কি করছিলাম সেটা দেখতেই পাচ্ছেন। লুকিয়ে কোন লাভ নেই। আমি একজনের বেশি কারো সাথে করতে রাজি নই। আপনাদের মুখোশ খুলে ফেলেন। আমি যাকে পছন্দ করব তাকেই শুতে হবে। বাকি চলে যেতে হবে। অন্য একদিন আসতে পারেন যদি আমি চাই। নইলে আমি চিৎকার করে বাবা মাকে ডাকব। পুলিশ কল হবে ঝামেলা হবে। এখুনি!
খুব নিঁখুতভাবে ঠান্ডা মাথায় কথাগুলো বললো মেয়েটা। চার ছেলে এ ওর দিকে চাওয়া-চাওয়ি করলো। পরে সবাই যার যার সিদ্ধান্ত নিল তারা রেপ করবে না। বাসা থেকে সেফলি চলে যাবে। কিন্তু সে দৃঢ়কন্ঠে বললো না, তা হবে না। আমাকে একজন অন্তত করুক। আমি এটাই চাই। এট লিস্ট একটা অপশন আমি দিচ্ছি। আপনাদের একজন হাত তুলেন। কে ইন্টারেস্টেড?
অবাক করে দিয়ে প্রত্যেক ছেলেই একই কাজ করলো। হাত তুলে নিজের পুরুষত্বের প্রমাণ কেউ-ই দিল না। তখন একটানে একজনের মুখের কালো কাপড় ধরে টান দিতেই বাকি তিনজন পালিয়ে গেল। লাফিয়ে পড়ার জন্য নিচে একটা নেট তারা প্লান করে রেখেই এসেছিল।
ছেলেটিও ওর হাত থেকে নিস্তার পেতে দৌড় দিয়েছিল। কিন্তু পেছন থেকে ওর টিশার্টে টান দিয়ে এবং পায়ে ল্যাঙ মেরে ফ্লোরেই আটকে দিতে সক্ষম হলো উন্মত্ত মেয়েটি। আঘাতপ্রাপ্ত হয় ছেলেটির বুকের হাড়। একটুর জন্য ভেঙ্গে যায়নি এই যাঃ। তীব্র ব্যাথায় সে কুকিয়ে ওঠলো।
ইউরোপ থেকে আনা পেইন কিলার ছিল তার ঘরেই। লাগানোর পর ছেলেটি অনেকটা সুস্থই হয়ে ওঠল বলা যায়।
এই রাতটা খুব খারাপ ছিল। একটানা সকাল পর্যন্ত বারবার পালা করে বৃষ্টি এসেছিলো!!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৩