আপনি কি জানেন? আমরা যেসব সায়েন্স ফিকশন দেখি তার অনেক ফিকশনেরই অনেকাংশ বাস্তবে রুপায়নের কাজ চলছে? আজ আমি কিছু মুভির কথা বলব যেগুলো জাগতিক গবেষণাকর্মে আইডিয়া নিতে ও বাস্তবায়নে যৎকিঞ্চিত হলেও সহায়তা করেছে। এ কল্পে অবশ্যই স্পারো সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা উচিত হবে আপনার।
✠ স্পারো (Sparrho)
বেশি দিন আগের কথা নয়, ২০১৩ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি. চান বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে পিএইচডি করার সময় সর্বশেষ গবেষণালদ্ব তথ্যের একটা যোগসুত্র তথা জানার মতো কোন উপায় রাখার চিন্তা করেন। ভিভিয়ান চান এর সাথে ছিলেন নিলু নামে আরেকজন সহযোগী।
এটা নিয়ে সংক্ষেপে বললে- স্পারো এমন একটি সংস্থা যা বিজ্ঞান গবেষণাকর্মে বিষয় নির্বাচন থেকে শুরু করে সর্বশেষ গবেষণার তথ্য জানতে দেয়।
বর্তমানে এই প্রতিষ্টানে একদিনে ২১০০'র বেশি জার্নাল চেখে দেখা হচ্ছে এবং তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে কোন প্রকার বিনিময় ছাড়াই। স্পারোর ওয়েবসাইটে আপনি সাইন আপ করলে অনেকটা ফেসবুকের মতো জার্নাল ও গবেষণা তথ্য পেতে পারেন।
স্পারো একটি সার্চ এঞ্জিন ডেভেলপ করে ফেলেছে যেটি মেশিন লার্নিং এলগরিদম ব্যবহার করছে। এর ফলে যেটা হচ্ছে সেটা হলো, স্পারো ব্যবহারকারীর নিকট জিজ্ঞাসিত কোয়েরির যথাসম্ভব সন্তোষজনক তথ্য দান করতে পারছে।
আরেকটি দারুণ খবর হলো, ব্রিটিশ ন্যাশনাল লাইব্রেরি'র সাথে তাঁরা একটি ডাটাবেজ একসেস পেয়ে গেছে, এ কারণে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থিদের জন্য খুব কাজের একটা ব্যাপার এটা। ফলে ১৮৯০ সাল থেকে ব্রিটিশ ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে যতো জার্নাল আছে তাতে হাত দেয়া সম্ভব হচ্ছে এই সংস্থার কারণে।
তো, স্পারো'র অবতারণার কারণটা বলে নিই। আপনি যদি স্পারো ব্যবহার করে থাকেন- তাহলে সায়েন্স সংক্রান্ত জার্নাল নাড়াচাড়া করার সময় বেশকিছু কাজ পাবেন, যেগুলো সায়েন্স ফিকশনে আছে বাস্তবে নেই। যেমন ধরুণ রোবট সংক্রান্ত নানান শক্তিশালী ও নিখুঁত আচার আচরণাবলী।
Katja Bego, স্পারোর জনৈক তথ্য-বিজ্ঞানী। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, তাদের সার্চ এঞ্জিনের র্যাংকিংয়ে ১০০'র মধ্যে আছে এমন কতিপয় প্রজেক্ট দেখাচ্ছে যেগুলো সায়েন্স ফিকশন থেকে লদ্ধ!
যেই ভাবা সেই কাজ, এরপর তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করলেন অন্তত ৪০টি সাই-ফাই ফিল্ম থেকে শতশত আইডিয়া নিয়ে গবেষণার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি ব্রিটিশ লাইব্রেরির ডাটাবেজেও হাত চালালেন এবং দেখলেন কিছু কিছু ফিল্মের সাথে ম্যাচ করে এমন রেজাল্ট খুবই বেশি। এর মধ্যে “The Matrix,” “Terminator” এবং “Alien” মুভি থেকে আসছে খুবই বেশি।
যাইহোক, আসুন আমরা সবে ৮ টি মুভি নিয়ে হালকার উপরে ঝাপসা আলোচনা করি। (যেহেতু আমার কথাগুলো বেশ রুঢ়ভাবে লেখা হয়।)
✤ The Matrix (২ টি রিসার্চ পেপার)
একজন হ্যাকারকে নিয়ে কল্পকাহিনী। এই চলচ্চিত্র ১৯৯৯ সালে রিলিজ হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে মানুষের আগ্রহ শতগুণে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় এই ছবি। এটি নিয়ে অন্তত ২টি গবেষণাপত্র স্পারো'র সার্চ রেজাল্টে পাওয়া গেছে যেগুলেতে আইডিয়া নেয়া হয়েছে।
✤ Back to the Future (৩ টি রিসার্চ পেপার)
এক কিশোর ও তার বন্ধু বিজ্ঞানী বিশেষ গাড়িতে(DeLorean) টাইম ট্রাভেল করতে সমর্থ হয়। ১৯৮৫ সালে রিলিজ হওয়া এই বিঃখ্যাত ছবি থেকে গাড়ির ফুয়েলিং করতে ভিন্নধর্মী ধারণা নিতে সাহায্য করেছে।
✤ Minority Report (৪ টি রিসার্চ পেপার)
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক এজেন্ট ভবিষ্যতে ক্রাইম করার সম্ভাবনা রয়েছে এমন একটি ইউনিটে কাজ করে। কোন দল/ব্যক্তি ক্রাইম করার সম্ভাবনা নিশ্চিত হলেও সে তাদের গ্রেফতার করত না। কিন্তু বেশ কদিন পরে সে নিজের ভুল বুঝতে পারে। স্টিভেন স্পিলবার্গ ২০০২ সালে এই চলচ্চিত্র নির্মান করেন যেটি থেকে আইডিয়া নেয়া হয়েছে অন্তত ৪টি রিসার্চ পেপারে।
✤ Blade Runner (৮ টি রিসার্চ পেপার)
মানুষের ন্যায় রোবট যাদের অ্যানড্রয়ড বলা হয়, তাদের মধ্যে ৪টি মহাশুন্য থেকে পৃথিবীতে চলে আসে। এ-রকম একটি প্লট নিয়ে ১৯৮২ সালে এই মুভিটি রিলিজ হয়। এই মুভি থেকে অত্যাধুনিক নগর রাষ্ট্র ও নাগরিক নিয়ে আইডিয়া নেয়া হয়েছে। বায়োইঞ্জিনিয়ারদের নিয়েও চমকপ্রদ রিসার্চ পেপার পাওয়া গেছে স্পারো'র সার্চ রেজাল্টে।
✤ 2001: A Space Odyssey (৯ টি রিসার্চ পেপার)
বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপায় এলিয়েন তৎপরতা নিয়ে তদন্ত করতে একটি মহাকাশযান দায়িত্ব পায়। কিন্তু মনুষ্যনির্মিত ঐ মহাকাশযানে স্থাপিত আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স অদ্ভুত আচরণ শুরু করে। এমন প্রেক্ষাপট নিয়ে ১৯৬৮ সালে এই চলচ্চিত্রে এখন পর্যন্ত ৯টি রিসার্চ পেপার পাওয়া গেছে যেগুলোতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নির্মানে আইডিয়া যোগ করার সম্ভাবনা পাওয়া গেছে।
✤ Jurassic Park (১১ টি রিসার্চ পেপার)
এক বিলিয়নিয়ার পৃথিবীর মেধাবী জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার/গবেষকদের জড়ো করে বিলুপ্ত দৈত্যাকার প্রাণী ডাইনোসোর ও অন্যান্য নানা প্রজাতির দানবীয় প্রাণীর পুনঃত্থান করতে বিনিয়োগ করলেন। একটি বিশাল দ্বীপে এ কাজ করা হলো, আর এই পুরো প্রজেক্টের নাম দেয়া হলো জুরাসিক পার্ক।
১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া এই চলচ্চিত্র থেকে ম্যাম, ডোডস নিয়ে গবেষণার আইডিয়া নেয়া হয়েছে অন্তত ১১টি।
✤ Star Wars (১৮ টি রিসার্চ পেপার)
মহাশুন্য নিয়ে কাল্পকথা। এক বিদ্রোহী দল যারা শয়তানী সম্রাজ্যের বিরোধিতা করে থাকে। এই কল্পরোমাঞ্চে আছে দারুণ শক্তিশালী রোবট, মহাকাশীয় যুদ্ধজাহাজ, লেজার অস্ত্র, মারাত্মক আলোকীয় তরবারী যা চরম শক্তি নিঃসরণ করতে পারে।
১৯৭০-৮০ থেকে শুরু এই সাইফাই ট্রিওলজির। এর R2-D2 ও C-3PO রোবট নিয়ে বাস্তবিক রুপায়নে কাজ করছেন ১৮ ব্যক্তি/দল।
✠ তথ্যসুত্রঃ
১। ইউটিউব
২। স্পারো
৩। ডিসকোভারি ম্যাগাজিন
৪। নেচার
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:১৪