বাংলাদেশের হেরে যাওয়াতে গোটা দেশ আজ যেন স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেকের চোখেই কান্না। এমনকি আমি নিজেও মুড অফ করে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ।
ফেসবুকের একদল বুদ্ধিজীবী সগর্বে প্রচারণা চালিয়ে গেলেন, গেছেন ও যাচ্ছেন যে, কলকাতাবাসী পাকিদের অন্তত সাপোর্ট করবে না। তবে বিহারি'রা অবশ্যই পাকিদের সমর্থন করবে যেমনটি করে থাকে বাংলাদেশেও। আমি চোখ বুজে বললাম, আচ্ছা খেলা তো হোক, তখন নাহয় দেখা যাবে।
কলকাতা বাসীরা দেখিয়ে দিল তাদের ভেতরটা। তবে শক খাই নাই অন্তত। এমনটি হতে পারে ভেবেছিলাম। কারণ তারা আমাদের মতো নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে আবেগ দেখানোর মত মানসিকতা রাখেন না। তারা বরাবরই প্রফেশনাল।
বাঙালি বাঙালি করে জিগির তুলে কতিপয় মিডিয়া তাদেরকে আপন ভাবতে সাহস খুব বেশিই বাড়িয়ে দিয়েছিল। আর আমরাও তালে তালে তাদের সাথে তালি দিচ্ছিলাম। আজ মাঠে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হল যে, আমরা বড্ডই বোকা।
যাকগে, তাদের নিয়ে বলা হচ্ছিল ১১ বাঙালি একসাথে কলকাতার মাঠে খেলছেন ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে সব বাঙালিদের জন্য আবেগের ও খুশির ব্যাপার।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ব্রিটিশ আমল থেকেই পশ্চিমের লোকেরা এদিকে যে দৃষ্টিভঙ্গি রাখতেন ৭১ এর পরে তার রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে যে ভ্রমে আমরা বাস করছি সেটা তো আকাশে ডিম্বের কুসুমের সমতুল্য। স্পষ্টতই তাদের নিউজ/টিভি মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া সমুহে চোখ বুলালে সেটা পরিস্কার হয়ে যাবে। আমরা তাদের আপন ভাই ভেবে হাত বাড়িয়ে দেই আর তারা কাঙাল বলে দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয় সেটা কি ভুলে গেছেন আপনি?
তবে সবাই নন। অনেকে আছেন যারা আজ বাংলাদেশের পরাজয়ে মনোক্ষুন্ন ও সমব্যথী। আমি তাঁদেরকে শ্রদ্ধা জানাই।
যাকগে, এখন আসি বাংলাদেশি কিছু সমর্থকদের নিয়ে। এরা বরাবরই দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য ধ্বংসকামী ইঁদুরের মতোই ঘরের মুল্যবান জিনিস কেটে নষ্ট করে চলেছেন।
আমি অবশ্যই তাদের কথা বলছি যারা বাংলাদেশকে নিয়ে পাকি/ভারতী পেজসমুহে অশ্লীলভাবে গালি দেন যা তাদের সীমা ছাড়িয়ে যায়। আরও বড় কথা উনারা এমন একটা পার্ট নেন যেন মনে হয়, অস্ট্রেলিয়াও আজ আমাদের কাছে পিপীলীকা। আর আমরা হাতি।
পাকি/ভারতীদের সাথে ঝগড়া করে তারা মুলত বাংলাদেশের মেজরিটি ফ্যানের ব্যাপারে বাজে মেসেজ দেন। আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে তিনারা সবসময়ই অহংকারী ও বাজে ব্যবহারকারি হয়ে ওদের *গাজম সুখ দেন।
এই ব্যাপারটা আমার চোখে প্রচন্ড দৃষ্টিকটু। আবেগ ও বাংলাদেশের খেলোয়ারদের সাম্প্রতিক সাফল্য নিঃসন্দেহে ভালো লক্ষণ কিন্তু ওভার কনফিডেন্স/অহংকার মোটেও কাম্য নয়। এটা বোঝা উচিত। আর আমাদের বিরুদ্ধে ভারত পাকিস্তান ভাই ভাই এর মুলে কিন্তু ঐসব উগ্র বেয়াদবরাই দায়ী।
কারণটা হলো, ভারত পাকিস্তান খেলায় অতিমাত্রায় সক্রিয়তা। ভারতের পরাজয়ে সুখ পাওয়া এবং পাকিদেরও। এদের মধ্যে জানোয়ার স্বভাবটাই মুখ্য।
হ্যাঁ এটা অবশ্যই ঠিক ভারতীরা বাটপারি করেছে। তাই বলে খেলায় সেটার অতিমাত্রায় প্রকাশ নিঃসন্দেহে বাজে কাজের মধ্যে একটি।
আজকের খেলা নিয়ে আমার কথাঃ
ম্যাশ কে আমি সেই ২০০২ সাল থেকে চিনি। পত্রিকা মারফত ওর নামটা পড়েই আমি আগ্রহী হই। ওর বোলিং স্পিড সেরা জেনে আরো আকর্ষিত হয়ে যাই। তবে ইনজুরি গুলো একসময় বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
কিন্তু জাতির প্রতি তাঁর অসাধারণ একটি দৃষ্টিভঙ্গি ওকে দেবতার আসনে বসাতে বাধ্য করেছে। এইরকম মানুষ বাংলাদেশে নিশ্চয়ই হাতেগোনা কয়েকজন।
সেই ম্যাশের ক্যাপ্টেন্সি আজ আমার ভালো লাগে নাই। মাহমুদুল্লাহ ও রিয়াদকে অন্তত দুই ওভার দিলে ভাল ছিল। এদিকে রুবেলের ইনজুরির ব্যাপারে কি হলো সেটাও আর আপডেট জানি না। ওকে ফিরিয়ে আনা যায় কি-না সেটা ভাবা উচিত। লিটন, বিজয়, রনি এদের কি ঠিকঠাক যত্ন করা হচ্ছে? সেখবরও জানি না। আর নাসিরকে বসিয়ে রেখে মিঠুনকে অতো সুযোগ দেওয়াটা আমার কাছে প্রচন্ড বিরক্তিকর।
এটা পরিক্ষা নিরিক্ষার জায়গা নাকি? এখানেও যদি পরিক্ষা নিরীক্ষা করার দরকার হয় তাহলে আর কি বলবো?
ইডেনে পাকিস্তান সব সময়ই ভাল করে আর আজ বোলিং ও ফিল্ডিং ছিল একদম অসহ্যকর। অথচ এই আলআমিন কত ভাল বোলিং করেছিল, তাসকিন? কতো ভালো পারফর্ম করেছিল। কিন্তু আজ?
আজ সবই কেমন যেন লাগলো। আফটার অল বাংলাদেশের জন্য দিনটি বাজে ছিল। ক্রিকেটে এমনটিই হয়। ২০০৭ এর ভারতের জন্য যেমনটি হয়েছিল।
সম্ভবত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি অথবা গলদ ছিল। সৌম্য, মুশি, মাহমুদুল্লাহ, রুম্মানদের টিকে থাকাটা খুবই জরুরী ছিল একটি উইনিং সিচুয়েশনের জন্য। যদিও বোলাররা আগেই বেদম মার খেয়ে ব্যাটসম্যানদের জন্য পথটা পাহাড় করে দিয়েছিল। ১৫০'র ভেতরে রাখতে পারলে অনায়েসে জেতা সম্ভব ছিল।
চাপ ছিল সেটা বুঝাই গিয়েছিল ফিল্ডে তাদের দেখে। চাপ সামলানোটা সবসময়ই যে হয়ে ওঠবে তাও না। সত্যি কথা বলতে কি আজকের বডি ল্যাংগুয়েজটা বলেই দিচ্ছিল যে ওরা জিতবে।
ম্যাশের মতে- "গ্রুপে চারটি দলই আছে, যারা সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনাল খেলবে। আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশাই করছি। আমাদের যে খেলাটা খেলার কথা ছিল, দুর্ভাগ্য সেটার কিছুই করতে পারিনি আজ। আমাদের জন্য কঠিন ও ভিন্ন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে সামনে।"
সৌম্যের ক্যাচটা এই টুর্নামেন্টের সেরা একটি মুহুর্ত সন্দেহ নাই।
তবে আমি হতাশ নইঃ
টাইগারদের নিয়ে মোটেও হতাশ নই। ম্যাশ যেখানে আছে সেখানে হতাশ কিসের? যেখানে আত্ম-নিবেদিত মুশি, মাহমুদুল্লাহ আছে, যেখানে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আছে, যেখানে টি-২০ সেরা জুটি সৌম্য-তামিম আছে, যেখানে কাটার মাস্টার আছে, আছে দ্রুতগামী ও ভয়ংকর বোলার তাসকিন, স্পিনে আরাফাত সানি। আছে আল আমিন সেখানে আমি আশাহত হতে পারি না।
ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট টসেই আমরা ৫০% হেরে গিয়েছিলাম। আর ২০০ হওয়ার পরে তো সিউর ছিলাম। তবে সেমি'র আশা আছে ভালভাবেই। বুকভরা ভালবাসার ম্যাশের নেতৃত্বাধীন টাইগাররা আমাদর হতাশ করবে না।
২১শে মার্চ চিন্নাওয়াস্বামী স্টেডিয়ামে টাইগাররা লড়বে অজিদের সাথে। সে ম্যাচের জন্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার গর্জে ওঠবেই।
আসুন, আস্থা রাখি আমাদের পাগলা ম্যাশের ওপর। টাইগারদের ওপর।
টাইগাররা খালি হাতে ফেরাবে না ওহে বন্ধু।
এই দিনই শেষ নয়, আরো দিন আছে
আগামির দিনকে নিয়ে যাবো সেই দিনের কাছে।।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২৮