⇲ বিশাল একটি বটবৃক্ষ
গ্রামের নাম বটিজার গাঁ। নামকরণের কারণ অনেক হাস্যকর তবে এতটুকু বিশ্বাসযোগ্য এখনো। বিশ্বাসযোগ্য হবার কারণ হলো বিশাল বটগাছটি। এটি এখনো স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কত'শ বছর ধরে যে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে তা সাধারণ কোন মানুষ ধারণাই করতে পারে না।
কেউ কেউ বলে যে এটা শায়েস্তা খাঁর আমলের, এমনকি কেউ বুকে হাত দিয়ে বলে যে এটা বখতিয়ার খিলজিরও আগের সময়ের বটগাছ।
যাইহোক, নামকরণের কারণ হলো, অনেক কাল আগে এই গ্রাম উজার হয়ে গিয়েছিল। বটগাছ থেকে একটি মানবশিশুর কল্লা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু গ্রামের কেউই দিতে রাজি হয়নি। এরপর শুরু হয় ভয়ংকর কিছু ব্যাপার। রাতে কেউ ঘর থেকে বের হলে আর ফিরে আসত না। সকালবেলা বটগাছের নিচে একদিকে তার কল্লা(মাথা) আরেক দিকে তার দেহ পাওয়া যেত। ভীত মানুষরা তারপরও কোন কল্লা দিতে রাজি হয়নাই। অবশ্য এক বুড়ী রাজি হয়েছিল তাঁর কল্লা দিতে। তাঁর কল্লা কেটেও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বটগাছের ঐ অদৃশ্য শক্তি বুড়ীর কল্লা দেয়াতে আরো রেগে যায়। সে আরো বেশি মানুষের কল্লা নিতে থাকে। তবে শিশুদের ছাড়া।
তারপর থেকে মানুষ ভয়ে গ্রামের জমিজমা নুন্যতম দরে বিক্রয় করে দিয়ে ভাগত।
এইভাবে সবাই চলে গেল। কেউ থাকলো না। ধীরে ধীরে পুরো গ্রামটিই উজার হয়ে গিয়েছিল। দক্ষিনে আছাদোল্লা গ্রাম আর উত্তরে ভবানীগাও থাকায় কেবল দিনের বেলা বটিজারগাঁও এ লোকেরা আসত যেত।
কত যে বছর গেছে আর কেউ সাহস করেনি এই গাঁয়ে বসত করতে। ব্রিটিশ আমলের ১০০ বছর গেছে। এরপরও কেউ সাহস করেনাই এ গ্রামে ঘর করতে। জমির মালিকরা মাঝেমধ্যে এ ওর কাছে বিক্রি করেছে। লর্ড বাউনের সময়ে একবার এখানে নীলচাষের জন্য জমি বাছাই করা হয়েছিল। কিন্তু যেদিন থেকে জমিতে কাজ শুরু করা হলো, ঐদিনই লর্ড বাউন নীলের ঠিকাদার ও কুঠির মালিক বিভিন্নভাবে মারা যায়। লোকেরা উচিত শিক্ষা হয়েছিল বলে এখনো স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। নীলকুঠির মালিক লোকটা পায়খানায় পা পিছলে এত জোরে আঘাত পেয়েছিল যে তাতে জ্বর ওঠে। আর ঐ জ্বরেই ২ দিনের মধ্যে সে মারা যায়।
ত্রিমাত্রিকা যখন তাঁর দাদীর কাছ থেকে ঐ বটগাছটির কথা শুনে সেদিন ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তবে এখন আর সে ভয় পায় না। সে সময়টি ছিল ওর বয়সঃসন্ধিকালের সময়। দিনের বেলায়ও বটগাছটির পাশ দিয়ে যেতে তাঁর গা ছমছম করত। আর এখন তাঁর বয়স ২৩। এই বয়সে সে রাত ২-৩টার সময়ও গাছের নিচে অবলীলায় বসে থাকতে পারে।
⇲ যোসেফ
আজ পুর্ণিমা রাত হলে জোসেফের জন্য ভাল হতো। সে সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশের মানুষদের সরল জীবন যাপনে সে মুগ্ধ। ছায়াকুঠির নামে একটা রেস্ট হাউস আছে। ওখানে বাংলাদেশের মেয়েকে নিয়ে রাত কাটানো যাবে। মিঃ যোসেফ নিজের দেশের ও ফ্রান্স, জার্মানি, লন্ডনের দেহপসারীনীর দেহ উপভোগ করেছে। ওঁর সখ হলো বিশ্বের নানান জাতির মেয়েদের উপভোগ করা। আগামি সপ্তাহে কলকাতা যাবে সে। তবে এর আগে একেবারে বাংলার গ্রামের কোনও মেয়েকে চান তিনি।
জোসেফের গাইড সবুজ নামের তরুণ ছেলেটি বেশ করিৎকর্মা। যথারীতি একজন মেয়েও যোগাড় করে ফেলেছে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো সেই অবিবাহিত মেয়ে নিজেই বিদেশি সুদর্শন ছেলের সাথে বিছানায় যেতে আগ্রহী। সবুজের কেন যেন মনে হলো, এই মেয়েটির কোনও সমস্যা আছে। তাই সে জিজ্ঞেস করেই বসল একবার। কেন, আপনি এ কাজ করতে চান? মেয়েটি বলল আত্মবিশ্বাসই তাকে এ পথে এনেছে।
কিসের আত্মবিশ্বাস সেটা জেনে সবুজ চোখ মুখ উল্টিয়ে ফেলেছিল প্রায়। এইরকম কিছু শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না ছেলেটি।
মেয়েটার নাম লিটা। প্রকৃত নাম লায়লা। লায়লা থেকে লিটা। তার আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা হলো বিচিত্র রকমের যৌনসুখ দিতে পারার সক্ষমতা।
লিটা মনে করে, সে যেহেতু অনেকে পর্ন দেখেছে। সেহেতু সে যৌন সুখের নিত্য নতুন কয়েকটা উপায় বের করে ফেলেছে। আর বিদেশী কোন নাগরিক হলে তো কথাই নেই। ঐ সুখ দিয়েই বেটাকে বাগে এনে ফেলবে। আর ইউরোপে মাইগ্রেশন কনফার্ম।
লিটা ঠিক রাত ৯.০০ ঘটিকার সময় ছায়াকুঠি'রে পৌঁছাল। যোসেফ ঘরেই ছিল। সে নিজে এসে রিসিভ করলো। এই অজপাঁড়াগাঁয়ে এইরকম ভাল ইংরেজি কেউ বলতে পারবে সেটা দেখে ডঃ যোসেফ (পিএইচডি) অবাকই হলো।
সবুজ বাড়ি থেকে আসতে আসতে সকাল ৯.১০ বেজে গেল। সে ছায়াকুঠি'রে এসে যা আশা করেছিল ঠিক তা-ই পেল। মেয়েটির আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে যোসেফ সন্তুষ্ট।
তবে সমস্যার কথাটা হলো, সবুজের জন্য অপেক্ষা করছে। সবুজ নিজে যোসেফ'কে যেন লিটা'র উদ্দ্যেশ্যের কথাটা কায়দা করে বলে। এমনও বলেছে যে, প্রয়োজনে খ্রিস্টান হতেও রাজি আছে সে।
যথারীতি বিকেলবেলা পুর্বদিঘী'র পাড় ধরে হাটার সময় যোসেফের কাছে গুছিয়ে বললও সবুজ। উত্তর শুনে আরেকবার চোখ কপালে ওঠল তার। যোসেফ জীবনে প্রথম এত বৈচিত্রময় যৌনতা উপভোগ করেছে। আর এ কারণে লিটা'কে বিয়ে করার কথাও সে ভেবেছে।
কিন্তু ওর স্বার্থ ছিল সেটা জানলে এই সুখ উপভোগ করার দরকার ছিল না। লিটার যত টাকা লাগে সে দিতে রাজি আছে কিন্তু তার দেশে ওকে নিতে রাজি নয়।
বেচারি লিটা শেষমেষ ১ লাখ টাকা উদ্ধার করে ছাড়ল যোসেফের কাছ থেকে। তবে যোসেফকে এতে অসন্তুষ্টও দেখা গেল না।
⇲ আবির্ভাব
রাত দেড়টা। বাংলা মদের স্বাদ নিতে ভুলানাথের ঘর থেকে বেরিয়ে বটিজার গাঁয়ের দিকে ফিরছে যোসেফ। এটা তাঁর দ্বিতীয় দিন এই গ্রামে।
বিখ্যাত ঐ বটগাছের নিচে এসে সে যতটা অবাক হয়েছে তার পরিমাপ করলে সেটা অতীতের সব বিস্ময়কে ছাড়িয়ে যাবে। মদ খাওয়ার কারণে সে কোনদিনও মাতালগিরি করেনি। হ্যালুসিনেশনও হয়নি। কিন্তু আজ যে-টা দেখছে সেটা কি হ্যালুসিনেশন নয়?
সম্পুর্ণ নগ্ন একটি মেয়ে। চুল অনেক দীর্ঘ। মাটিতে পড়ে যায় যায় এমন। চাকচিক্যময় যৌবন। ঠায় ১০ মিনিট দাঁড়ানোর পর তার জ্ঞান কাজ করল।
আরে, পাশেই তো সবুজ আছে। ওকে জিজ্ঞেস করলেই তো হয়? সে যা দেখছে সবুজও কি তা দেখছে?
কিন্তু পেছনে চেয়ে দেখে সবুজ ওখানে নেই। তাহলে কি ঘটলো? আমি কি স্বপ্ন দেখছি? গায়ে চিমটি কেটেও বুঝে নিল বেচারা যোসেফ যে এটা স্বপ্ন নয়। এটা বাস্তব।
মেয়েটির দিকে আরো তাকিয়ে থাকতে যোসেফের মন চাইল। মেয়েটার পেছনদিক দেখা যাচ্ছে। সে মেয়েটার দিকে এগিয়ে যেতে চাইল আর তখনই সহচর সবুজের নিতম্বে হোঁচট খেয়ে ওকে আবিস্কার করলো।
সবুজ অজ্ঞান হয়ে গেছে। টর্চ দিয়ে দেখল মুখে ফেনা। এ নির্ঘাত ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। কিন্তু যোসেফের কাছে সবুজের চেয়েও বড় ইস্যু হলো ঐ রহস্যময়ী নারীর কাছে যাওয়া।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৭