somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যালেসিয়া বিভ্রম (গল্প)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(সবগুলো পর্বই দেয়া হলো এবার একসাথে)

লিওডেনাস ও রাণী থিওসী
মহীয়সী নারী থিওসী অ্যারিপাস। রাজপরিবারের মেয়ে তিনি। অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহার, বুদ্ধিমত্তা ও দৃঢ় মনোভাবের জন্য তিনি বিঃখ্যাত হয়েছেন গত কয়েক বৎসর যাবত। মহামান্য রাজা যেই সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যর্থতার আশংকা করেছিলেন এবং ভাল নির্বাহী কর্মকর্তার খরায় ভুগছিলেন সেগুলোর অর্ধেক তিনি রাণীকে দিয়ে দিয়েছেন। নাগরিক-তন্ত্রের জন্য যেসব প্রজা আন্দোলন করা শুরু করেছিল সেটা থিওসীর শান্ত মষ্তিষ্কের বুদ্ধি না থা থাকলে স্পার্টা, এথেন্সের ন্যায় কিং থিওডক্সাসের রাজ্যেও নগর রাজ্য প্রতিষ্টিত হয়ে যেত।

কয়েক ঘন্টা পরেই সূর্যদেব ওঠবেন, এবং ৩'রা মার্চের দিন শুরু হবে। থিওসীর স্বামী কিং থিওডক্সাস সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন ঠিক ৩ বছর আগের এই তেসরা মার্চে। রাতভোর সময়। ঝলমলে চাঁদ পশ্চিমাকাশে নিজেকে খুইয়ে ফেলেছে মধ্যরাতের আগেই তাই একেবারেই ঘুটঘুট অন্ধকার এখনো। হপলাইট(সৈন্য/দেহরক্ষী) লিউওডেনাস হঠাৎ অস্ফুট ধ্বনি শুনল। সে নিঃশ্চিত এটা মহীয়সী থিওসী'র কন্ঠ। নিশ্চয়ই কোন গোলমাল হয়েছে। প্রাতঃবেলায়ই তুর্যধ্বনি শোনার কথা। আর রাণীর কিছু হলে অবস্থা শেষ।

সাধারণত রাণীর অনুমতি ছাড়া লিওডেনাস বাসকক্ষে প্রবেশ করে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এ বিপদজনক মুহুর্তে তাকে যেতেই হবে। তাই সে সংকোচবোধ রেখেও তৈলবাতি হাতে দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেল।
ততক্ষণে প্রায় নগ্ন থিওসী ফুলশয্যায় উঠে বসেছেন। পরিচর্যাকারীণীগণও কেউ জেগে নেই। রাণী তাঁদের কাউকেও ডাকছেন না। তাঁর বক্ষযুগলও সম্ভবত উন্মুক্ত কারণ পেছন দিকটা পুরোপুরি খালি এবং তিনি ঘেমে গেছেন। তৈলবাতির শিখায় গৌর পিঠদেশে ঘামের বেশ বড় বড় বিন্দুগুলো লাল আলো প্রতিফলন করছে। মহামান্য রাণীকে এ অবস্থায় দেখে প্রৌঢ় লিউওডেনাস মাথা নিচু করে ফেলল। সে অবনত মস্তকে জিজ্ঞেস করলো
☞ আদেশ শিরোধার্য। মহারাণী আমার মস্তক আপনার পদতলে অর্পিত।

মহামান্য থিওসী কিছু বললেন না। স্ব বক্ষদেশ চিলতনের(জামা) একটা অংশ দিয়ে আপাত আবৃত করে পানি পানের ইংগিত করলেন।লিওডেনাস মনে মনে চিন্তা করছে তাঁর স্ত্রী এলিসার সমবয়সী হবেন মহীয়সী এ নারী। উজ্জল গৌরবর্ণের রাণী এ রাজ্যের সবচেয়ে জ্ঞানী অথচ দুর্বল বাহু সম্পন্ন নিষ্টুর একজন নারী। রাজ্যে কোনসময় বিদ্রোহ দেখা দিলে সে রাণীকে নিয়ে কোথাও পালিয়ে যাবে। প্রয়োজনে মেসিডোনিয়ার* গ্রামে গিয়ে স্থায়ী বাসস্থাপন করে ফেলবে।

লিও যখন এইসব ভাবছে ততক্ষণে রাণী থিওসি এক মটকা পানি গোগ্রাসে গিলে ফেললেন যেটা লিওডেনাসের কাছে বেশ অস্বাভাবিক মনে হলো। সে গর্দভের মতো তখনও দাঁড়িয়ে থাকল। রাণী তাঁকেও যেতে বলছেন না। পানি পান করে তিনি অবশের মতো চুপটি করে বসে থাকলেন। তাঁর অজান্তেই বক্ষদেশ থেকে চিলতনের অংশটুকু পড়ে গেল। লিও বেশ খানিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তিনি উঠে দাঁড়ালেন। বিশ্বস্ত লিওডেনাস তখনও মাথা নিচু করে আছে।
রাণী নিঃসংকোচে পাশে রাখা স্ট্যান্ড থেকে স্ট্রফিন পরে নিতে চাইলেন। তিনি সম্পুরণ অনাবৃত হয়ে এক মুহুর্ত আড়চোখে খেয়াল করলেন লিও তাঁর দিকে তাকাচ্ছে কি-না। যথারীতি সে তাকায় নি দেখে আশ্বস্ত হলেন।

লিওডেনাস নিজেকে ধৈর্য্যবান হিসেবে দেখার শপথ নিয়েছে। সে চায় না রাণীর সাথে সংগমে লিপ্ত হয়ে তাঁর মাথাটি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হোক। কিন্তু অন্যান্য দিনের মতো আজও নিষ্টুর থিওসী তাঁকে যন্ত্রণা দেয়ার মতলবে নিজের দেহাংশবিশেষ কৌশলে দেখিয়ে ছাড়লেন। সে আড়চোখে এখনো দেখছে থিওসী তার দিকে চেয়ে মৃদু হাসছেন। সে ভেতরে ভেতরে ক্রোধে জ্বলছে আর রাণী সেটা বুঝেই হাসছেন। এই বালিকার বয়স বড়জোর ২৫-২৬ হবে। অথচ কি নিষ্টুরতা এই রাণীর মনে। স্কিইরোস রাজ্যের সবাই জানে রাণী মহীয়সী। অথচ আমি জানি রাণী থিওসী অ্যারিপাস কতটা নিষ্টুর।

☞ যাও। আমি আজ আর ঘুমাবো না। কিং থিও কি করছেন আমাকে জানাও।
☞ যথা আজ্ঞা, মহারাণী।
যাবার সময় লিও উভয় কানে শুনল নিষ্টুর রাণীর অট্রহাসি। এই হাসির কারণ সে জানে। সে রাণীকে ১০১ বার অভিশাপ দিতে দিতে কিং থিওডোরের একান্ত সচিব ও দেহরক্ষী অলিপের কাছে গেল। অলিপ তাকে জানাল কিং এখনো ঘুমে আছেন।
থিওসীর কক্ষে আবার যখন সে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করল, ততক্ষণে রাণীর সহচারীণী দলের প্রধাণ আর্কেনিক্সা পথ আগলে বললেন-

☞ রাণী আমাকে জানানোর জন্য বলেছেন। মহামান্য কিং কি করছেন?
☞ মহামান্য কিং এখনো ঘুমন্ত।
☞ যাও দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাক। আর তোমার সময় শেষ হলে গ্রেগজি আসবে তাই না?
☞ ও তো স্বপ্নের তাবির বলতে পারবে তাই না?
☞ হ্যাঁ মহান আর্কেনি।
☞ ঠিক আছে। তুমি এখন যাও।

গ্রেগজি
লিওডেনাস চলে গেছে। গ্রেগজি এসে পৌছার পরপরই তাঁকে রাণীর সুসজ্জিত অন্তঃ দরবার কক্ষে ডাকার কথা। এই লোকটি একই সাথে একজন সৈন্য, দর্শন বিষয়ক জ্ঞানী ও জ্যৌতির্বিদ।
শাশ্রুমন্ডিত গ্রেগ এই প্রথম রাণীর অন্দরমহলের দরবার কক্ষের অভ্যন্তরের দেয়াল দেখার সূযোগ পাচ্ছেন। তিনি রাণীর সামনে দন্ডায়মান হয়ে খানিকটা উদ্বেগ অনুভব করলেন। অবশ্য পাশের আর যারা পরিচারিকা ও সহচর আছেন সবাইকে বিদায় করে দিতে চাইলেন। রাণী প্রথমে অসম্মত হলেও পরে বিশেষ বিবেচনায় সহমত হলেন।

রাণী তাঁকে বললেন যে, তিনি স্বপ্নে দেখেছেন তাঁর কাছে দুই টুকরো পাথর। একটি স্বর্ণের আর অন্যটি রৌপ্যের। ঠিক মনে পড়ছে না কোন হাতে কোনটি ছিল। দুটোই তাঁর কাছে মনে হয়েছিল লোভনীয় সুন্দর। এখনো কল্পনার চোখে চিকচিক করে ঠিকরে বেরুচ্ছে সৌন্দর্য।

অভিজ্ঞ গ্রেগ'কে অনেকটা চিন্তিত দেখা গেল। তাঁর উজ্ঝল গৌরবর্ণের কপালে ক্ষণিকের ভাঁজ স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। রাণী তাঁকে হটকারিতামূলক চিকন ধমক দিয়ে বললেন কি এর ব্যাখ্যা? বলছেন না কেন?
গ্রেগ বিনয়ী ও ভারী কন্ঠে রাণীকে জানালেন, কয়েক বছরের মধ্যেই উনার ২টি সন্তান আসবে। এরা হবে যমজ। একটা সন্তান রাজ্যের শাসনের জন্য উপকারী আর অন্য সন্তানটি রাজ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। তাঁরা দুজন যুদ্ধ করবে এবং চুড়ান্ত একটা সময়ে যেকোন একজন অপরজনের হাতে মারা যাবে।

রাণী ভেতরে ভেতরে অনেক খুশি হলেও সমস্যায় পড়ে গেলেন। তিনি দেরি না করে রাজার কাছে খবর পাঠালেন একজন রাজকর্মচারী দিয়ে সাথে গ্রেগকেও পাঠিয়ে দিলেন।

কিং থিওডক্সাস তখন রাজ সিংহাসনে অধিষ্টিত হয়ে সভাষদগণের সাথে একটা বিষয় নিয়ে দরকষাকষিতে ব্যস্ত ছিলেন। রাণীর অন্যতম প্রধান রাজ কর্মচারী ও এক সৈনিক'কে দেখে তিনি খানিকটা গম্ভীর হয়ে গেলেন। সভাসদগণও নিজেরা নিজেরা মৃদু আলোচনায় থেকে অবশেষে নিরব হয়ে গেলেন।
☞ মহান কিং থিওডক্সাস। রাণী এই জ্ঞানী লোকের সাথে আপনার কথোপকথন চান। তিনি একটি গোপন চিঠিও দিয়েছেন আপনার সৌজন্যে।
☞ সম্মানিত সভাসদগণ!! আপনারা আমার দিকে মনোযোগ দিন। ইনি হলেন গ্রেগজি। আজ থেকে উনি নতুন রাজ জৌতিষী হিসেবে আমাদের প্যালেস এ থাকবেন। সম্মানিত গ্রেগজি, দয়া করে বিষয়টা খুলে বলুন।
গ্রেগজি, আনন্দের অতিশয্যে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। তিনি কোনমতে অবশ্য নিজেকে সামলে নিতেও সক্ষম হলেন এবং কয়েক মুহুর্ত দম নিয়ে বিনয়ের সহিত সবকিছু খুলে বললেন।
রাজা ততক্ষণে মনে মনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কারণ আগের বুড়ো জৌতিষী উনাকে বলেছিল থিওডক্সাস বাবা হবার সম্ভাবনা অনেক কম। আশা করা উচিত নয়। অবশ্য ঐ জৌতিষীর ঘাড়ে মষ্তকটা তিনি আর থাকতে দেন নি। ঐ মুহুর্তে পুরো রাজসভায় তিমির নেমে এসেছিল। আর তিনি সবাইকে নিয়ে অপবিত্রতার মাদক উল্লাসে সবকিছু ছাপিয়ে যেতেও পেরেছিলেন। রাজা অনেক আশাপ্রদ হলেন যে, উনার বন্ধ্যাত্ব ঘুচবেই এবার।

দ্বীপরাজ্যের বালিকারা
স্কিইরোস দ্বীপরাজ্যের চতুর্দিকে সলিলে ঘিরে রাখা অ্যাজিয়েনের নীল স্রোত বয়ে চলে। সে কারো ধার ধারে না। সাগরের শেষ প্রান্তে প্রান্তে পানির স্রোত ভেদ করে মাথা উঁচু করে থাকা পাথুরে শীলাময় ধুসর ও কালো পাহাড়গুলো যেন স্কিরোস এর মধ্য দিয়ে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল।
ঐ সময়ে রাজজৌতিষী পদে নিয়োগ পাওয়া বিজ্ঞ গ্রেগজির কথামত আড়াই বছর পরে ঠিকঠিকই রাণীর কোলে ফুটফুটে দুটি সন্তান আসলো। রাণীর আনন্দ কে দেখে। তিনি যারপরনাই উৎফুল্ল। সন্তানের মুখ দেখামাত্রই তাঁর শিশু প্রস্রবকালীন ক্ষণসমুহের যাবতীয় দুঃখ ও নিদারুণ যন্ত্রণাগুলো ভুলে গেলেন।
ভারী খুশি হলেও রাজরাণী মহাচিন্তিত হলেন যখন গ্রেগ জানালেন এর একটাকে মেরে ফেলতে হবে। একটি সন্তান এ রাজ্যের জনগণ ও রাজ্যের জন্য বিপদ ও ক্ষতিকর হবে। অপর সন্তান রাজ্যের জন্য ভাল হবে। এখন কল্যাণের সন্তান ও অকল্যাণের সন্তান নির্ধারণ করতে হবে। এই কাজটি করা কিভাবে?
কোনভাবেই তিনি সনাক্ত করতে পারলেন না কোনটি সু আর কোনটি অসুর।
পদারোহণ করা রাজজৌতিষীকে কিং থিওডক্সাস জিজ্ঞেস করলেন-
☞ কি জৌতিষী? তুমি কিছু বলছো না কেন?
☞ আমার সব জ্ঞানার্জন আপনার পদতলে অর্পিত। মহামান্য থিওডোর। আমি সঠিক ও বাস্তবিক কোন পরিক্ষণের উপায় পাচ্ছি না। তবে দেবতা অ্যাপলো'র সম্মানে ৭ কুমারী বলি দিতে হবে। তাঁদেরকে অ্যাজিয়েন সাগরের তীরে নীল পানিতে বলি দিতে হবে। এরপর ইশ্বর কর্তৃক কোন নির্দেশিকা আসার সম্ভাবনা আছে।

মহামান্য কিং থিওডক্সাস অনেকক্ষণ থ হয়ে বসে রইলেন। এরপর রাণীর অন্দরমহলে চলে গেলেন। রাণীর সাথে পরামর্শ করে আসলেন। তিনি নির্দেশ দিলেন রাজ্যের যত সুন্দর কুমারী আছে সবাইকে যেন রাজপ্রসাদে আনা হয়।
রাজ্যের প্রশাসনিক যত নিরাপত্তা কর্মী রয়েছেন তারা রাজার হুকুম পালন করতে সাথে সাথে লেগে গেলেন। ২ দিনের মাথায় তারা বেছে বেছে ১০০০ এরও অধিক তরুণী জোগাড় করে ফেললেন। এখন অপেক্ষার পালা পূর্ণিমার।
যথারীতি পূর্ণিমাও এলো। কিন্তু সিলেক্টেড কোন কন্যাই রাজী হলেন না। রাজা ও রাণী দেখে দেখে কিছুক্ষণ পর উভয়েই মেজাজ খারাপ করে ফেললেন।
সাত বলিষ্টদেহী সৈনিক সাত মেয়েকে পিছমোরা করে বেঁধে ফেললো। পরিচর্যাকারীনী ১৪ জন প্রৌড় ও রুঢ় মহিলাগণ জোর করে তাদের বলির পোশাক পড়িয়ে দিলেন। হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রতীরে দাঁড়িয়ে আছে। তারা সবাই একটি ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে। একটি ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছে। বেশ কয়েক যুবককে অপ্রস্তুত, বিষন্নও দেখা যাচ্ছে। তারা মেনে নিতে পারছে না এই বলিদানকে। কিছুক্ষণ আগেও অনেক মা ও বাবাকে মাথা কুটতে দেখা গিয়েছিল তারা এখন নিথর পাথরের মতো দাঁড়িয়ে স্বর্গগামী অপ্সরাদের দেখছে।
লাল জামায় তাদের লালপরী'র মতো লাগছিলো। অ্যাজিয়েন সমুদ্র তীরের বাতাসে তাদের জামার পেছন দিকটি এমনভাবে উড়ছিল। তাঁরা সবাই এখন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। অনন্ত অসীম একটি জগতে ঢুকতে চলেছে তাঁরা।

----------------------------------------------------------২য় পর্ব-----------------------------------------------------------
বলি অনুষ্টান ও রাণীর ভাষণ
ভর পুর্ণিমায় নিরবতার হাট বসেছে অ্যাজিয়েনের তীরে। ধূপের গন্ধে বিভোর হয়ে আছে যেন পুরো রাজ্য। গোলাকৃতির সাতটি পাথরের ওপর সাত কন্যাকে বলি দেয়ার প্রস্তুতি পর্ব শেষ। এমন সময় জনগণের একটি অংশ নিষিদ্ধ সীমানা ভেদ করে চলে আসতে থাকল রাজা ও রাণীর নিকট। তাদের অাচরণে মনে হচ্ছে ক্ষুদ্ধ ও বলির বিপক্ষে। ধীরে ধীরে অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনা যাচ্ছে।
রাণী থিওসীর দিকে চোখ ঘুরালেন কিং থিওডক্সাস। রাণীও বুঝে ফেললেন অবস্থা সুবিধার না। থিওসী পরিস্থিতি শান্ত করার দ্বায়িত্ব নিয়ে রাজাকে প্রাসাদে ফেরত পাঠালেন।
রাণী গ্রেগজীকে বলি অনুষ্টান স্থগিত রেখে ঘোষণা করতে বললেন যে, রাণী বলি অনুষ্টান স্থগিত করেছেন। তিনি জনগণের মতামত শুনতে চান।
ঘোষণা দিতে ও তার প্রভাব পড়তে যে সময় লাগল ততক্ষণের রক্তারক্তিতে ৬-৭ জন মানুষের জীবন শেষ। আরো ২ জনের অবস্থা আশংকাজনক। হাত, চোখ, পা হারিয়েছেন ৫ জন।
রাণী পাহাড়ের চুড়োয় দাঁড়িয়ে জনগণের সামনে কথা বলতে লাগলেন।

"ওহে প্রজাগণ!
আমি তোমাদের ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি। তোমরা রাজ্যনীতিতে সন্তুষ্ট নও। তোমাদের কাছে এথেন্স স্পার্টার নগরতন্ত্রের রুপটা ভীষণ আকৃষ্ট করেছে। তার ওপর এই বালিকাদের বলিদান নিয়ে তোমরা যারপরনাই অসন্তুষ্ট।
ঠিক আছে,
দেবতা অ্যাপোলো যদি রেগে যান ও জ্ঞানচর্চার ওপর উনার সাহায্যসমুহ বন্ধ করে দেন তখন? তখন কি হবে? তোমরা যে যে নতুন আবিস্কার ও বিশেষ করে জীববিদ্যায়, পদার্থবিদ্যায় নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলে সেটার কি হবে ভেবে দেখেছ?
আমি জানি তোমরা এথেন্সের কথা বলবে। এথেন্স এগিয়ে গেছে, ঠিক আছে। কিন্তু তাদের জনগণের অবস্থা দেখেছ? খোঁজ নিয়ে দেখ, ওদের গরীব লোকদের সাথে ধনী লোকদের ব্যবধান আমাদের এখানের চেয়ে অনেক বেশি। তাহলে?
তাহলে কি লাভ হলো? বলো?
একটা জিনিস তোমরা মনে রেখো। যে রাজ্যের জনগণ নিজের রাজাকে কষ্ট দেয় তারা কখনোই সুখে থাকতে পারে না। রাজার ওপর সুপ্রিম ইশ্বর জিউসের আর্শিবাদ থাকে।
জিউসের আর্শিবাদ না থাকলে তিনি রাজা হতেন না। প্রজাই থাকতেন।"


গন্ডগোল
মহীয়সী রাণী থিওসীর ভাষণ শেষ হতে না দিয়ে তুমুল গন্ডগোল শুরু হয়ে গেল। জনগণের বেশিরভাগই রাণীর বক্তব্যের তুমুল প্রতিবাদ করতে লাগলেন। তাঁদের গোলামদেরকে দিয়ে রাণীকে আক্রমণ করতে শুরু করলেন। সুচতুর থিওসী তা আঁচ করতে পেরে নিরাপদ রাস্তা ধরলেন, এখানে জনগণকে সামাল দেয়ার জন্য উপ সব সৈন্যকে রেখে তিনি সবার অগোচরে সহচারিণী মিলিয়াক ও দেহরক্ষী লিওডেনাসকে নিয়ে পালিয়ে গেলেন।
ঢিল, পাটকেল, পাথর আর লাঠি। তুমুল ঝগড়াঝাটি চলছে। মহিলাগণ নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে দূরে দূরে দাঁড়িয়ে তাঁদের স্বামী, পুত্র কিংবা ভাইদের লড়াই দেখতে লাগলেন উদ্বিগ্ন চোখে। অনেকেই পাথরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে চিৎকার করছে। কারো কারো মাথা, পেশি, পিঠ, বুক থেকে রক্ত পড়া শুরু হল।
সাধারণ প্রজারা ও গোলামরা যখন জানতে পারলো রাণী সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে অনেকক্ষণ আগেই চলে গেছেন ঠিক তখনই তারা ক্ষান্ত দিল। রাজার সাথে দুই জমজ আগেই প্রাসাদে নিরাপদ দুরত্বে চলে গেছে। জনগণ আপাত নিরাশ হয়ে গেলেও তাঁরা নগরতন্ত্রের জন্য ভাল রাস্তা খুঁজে পেয়েছে। কেবল সৈন্যদের রাজার থেকে আলাদা করতে পারলেই হল।

বেঈমান লিওডেনাস
বিশ্বস্ত দেহরক্ষী লিওডেনাস, রাণী থিওসী, মিলিয়াক ঘোড়া হাঁকিয়ে পাথুরে জংগলময় জায়গা দিয়ে পুর্ণিমার আলোকে পথ চলছেন। এদিকে কোন জনমানবের চিহ্ণই নেই। খুব দ্রুতই ছুটে চলছেন তাঁরা।
লিওডেনাস আনমনে পেছনে পেছনে যাচ্ছে। তার ঘোড়াটিও যেন সওয়ারীর মতো আনমনে হেঁটে চলছে। এভাবে সে অনেকটা পেছনে পড়ে গেছে। রাণী ও মিলিয়াক হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখেন লিওডেনাস আনমনে পেছনে আসছে। পাগলের মতো হৃস্ব স্বরে গোঙাচ্ছে। সাথে ঘোড়াটাও যেন এইরকম শব্দ করে ওর সাথে কথা বলছে।
রাণী অবাক হলেন। তিনি ঘোড়া থামিয়ে দাঁড়ালেন, সাথে সহচারী মিলিয়াককেও থামাতে আদেশ করলেন। লিওডেনাস কাছে আসার পর জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে তোর? লিওডেনাস?
লিওডেনাসকে থর থর করে কাঁপছে। যেন তার সারা দেহে কোন একটা শক্তির প্রকম্পন শুরু হয়েছে। বিস্ময়ে রাণী থিওসীর মষ্তিষ্কে অংক না মেলার হিসেবের একটা উজানের কলকল স্রোত বয়ে চলল। মিলিয়াকও বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে আছে। সেও কিছু বুঝতে পারছে না। অবাক।
নতুন বিপদ হিসেবে সম্মুখ পথে একটা নেকড়ের আভির্ভাব হলো।
বেশ দূরে ঐ নেকড়ে তিনজন মানুষ ও তিনটি ঘোড়া দেখে লক্ষ্য স্থির করে ধীরে ধীরে আসছে। সাথে বিচিত্র ধ্বনি। এমনও মনে হচ্ছে তার দলের অন্যান্য সদস্যকে ডাকছে।
রাণীর দিকে দৃষ্টি ঐ নেকড়েটার। তাঁর চোখ থেকে চাঁদের আলো বিকিরিত হয়ে যেভাবে ঠিকরে বেরুচ্ছে তাতে ভয়ংকর সুন্দর কীরণের সৃষ্টি করছে। এখানে চারটি প্রাণী, তিনটি মানুষ। মনে হচ্ছে কেউই কারো বন্ধু নয়। নেকড়েটি এসে আক্রমণের আগে কয়েক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে থেকে স্বভাবসূলভ পিলে চমকানো যতসব ভয়ংকর আওয়াজ করা যায় তা করতে থাকল।
নীল আগুনের গোলার মতো দুটি চোখের দিকে এক মুহুর্ত তাকানোও ভয়ানক একটি ব্যাপার। একমাত্র সবল ব্যক্তিটি লিওডেনাস। কিন্তু তাঁকে এ প্রয়োজনীয় সময়ে যেন মৃগী রোগে পেয়ে গেছে। সে ঐ ভয়ংকর দানবটির দিকে কাঁপতে কাঁপতে গোঁ গোঁ করছে।
মনে হচ্ছে কাকে আক্রমণ করবে তা ঠিক করতে পারছে না এই নেকড়েটি। আপাতত লিওডেনাসের সাথেই দেনদরবার মিটানোই ওর কাজ।
লিওডেনাস কাঁপতে কাঁপতে যেন ঐ নেকড়েকে কিছু বলল মনে হল। রাণী আশ্চর্যাম্বিত হলেন এই সৈন্যের আচরণ দেখে। এর আধ্যাতিক ক্ষমতা আছে সেটা তো কেউই বলে নি।
লিওডেনাসের উভয় বাহুর পেশি ফুলতে থাকল। রাণী এই ফুলে যাওয়া দেখে ভয়ে আরো একাকার হয়ে গেলেন। ডান বাম দুইদিকে পাথরের পাহাড় সম্মুখে নেকড়ে পেছনে দেহরক্ষী লিওডেনাস। সেও যেন আস্ত একটা গন্ডার।
কিন্তু হঠাৎ করেই লিও স্বাভাবিক হয়ে গেল। প্রবল ঝড়ের আগে যেভাবে প্রকৃতি একবার ঝিম মেরে যায় তেমনি। পেশি ফুলিয়ে সে যেন মৃগীরোগ থেকে বেঁচে গিয়েছে। তবে রাণী আশ্বস্ত হলেন। তিনি লিওডেনাসকে হুকুম দিলেন- এই নেকড়েকে মেরে ফেল।
লিওডেনাস হাঃ হাঃ করে বিকটভাবে বিদ্রুপ করে বলল- কেন থিওসী?
এ কথা শেষ না করেই নিজের ঘোড়া থেকে লাফ দিয়ে রাণীর ঘোড়ায় চেপে বসলো সে। রাণীর কনস্টুম(জামা) হাতড়িয়ে ছোরা আর তরবারি দূরে দূরে নিক্ষেপ করতে থাকলো। উন্মত্ত হওয়ার আগে সে নেকড়েকে বশ করেছিল। তাই আক্রমণটা যুগপৎই হল। মিলিয়াক'কে নেকড়ে এক লাফে ঘোড়ার উপরে উঠে কামড় বসিয়ে দিল।

রাণী থিওসী সাহায্যের আশায় মিলিয়াকের দিকে তাকাতেই মাথাটা প্রচন্ড ঘুরে গেল। ফিনকি দিয়ে গলার শিরা দিয়ে রক্ত ছুটছে। মরণের কাছাকাছি মিলিয়াক ছটফট করছে আর নেকড়েটি অপেক্ষা করছে রক্ত ঝড়া শেষ হবার। একেবারে গ্রিবায় তার মাংসাশী দাঁত বসিয়েছে।
থিওসী তখন এক মানুষরুপী জানোয়ারের দৃঢ় পেশিতে ছটফট করছেন। তিনি অস্ত্রশস্ত্রহীন ও অবসন্ন। এদিকে লিওডেনাস তার শক্ত হাতে জামাকাপড় ছুটানোর চেষ্টা করছে। না পারলে ছিঁড়ার চেষ্টা করছে ও ছিড়ে ফেলছেও।
একেবারে বনের জানোয়ার থেকে কম না সে।
রাণী থিওসী তখন মোলায়েম ও মনোহর একটি হাসি হেসে বললেন- সেটা তো আগে বলবে, তুমি ভারী দুষ্টু।
জাদুমন্ত্রের মতো কাজ হলো যেন। তব্দা গেলে হঠাৎ করে কেউ হাত থেকে কোনকিছু ফেলে দিলে যেমন হয় ঠিক তেমনি রাণী থিওসীকে ছেড়ে হাত দুটি দুপাশে নিয়ে ফেলল লিওডেনাস।
রাণী নিজে থেকেই এবার সবকিছু খুলতে থাকলেন। বিমুগ্ধ হয়ে রাণীর দিকে তাকিয়ে আছে বেঈমান লিওডেনাস। কেন যেন সে নিজেকে এখন অপরাধী ভাবছে। এমন সময় সে টের পেল কানের পাশ থেকে উজ্জল আলোক বিকিরিত হচ্ছে চাঁদ থেকে। পাশ দিয়ে তাকিয়ে দেখে উদ্ধত তরবারি হাতে হ্যারিপাস। রাণীর আরেক বিশ্বস্ত দেহরক্ষী।

শেষ সাক্ষাৎ
স্ত্রী এলিসা, ৭বছরের মেয়ে সিওরেস, ১২ বছরের ছেলে মেনিওনেস রাজপ্রাসাদের দরবারকক্ষে দাঁড়িয়ে আছে। ঝলমলে পোষাকে রাণীকে দুরে ব্যস্তপায়ে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে।
রাণীর মুখে এক চিলতে হাসি দেখছে লিওডেনাস। তাঁর সারা দেহে চাবুকের ক্ষতচিহ্ণ। চাবুকের চিহ্ণ যতটা বোঝা যাচ্ছে তার চেয়ে ঢের বোঝা যাচ্ছে তার মনের ভেতরের অপমানবোধটা। যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গর্দান উড়ালেই সে বাঁচে।
জল্লাদ তরবারি হাতে উদ্ধত। শেষ ইষ্টবাক্য পাঠ করতে বলল।
লিওডেনাস ক্ষীণ কন্ঠে বলতে লাগলো, নিষ্টুর রাণীর প্রতি অভিশাপ।স্কিইরোস হতে নিপীড়নের শাসন অবসান হোক। জিউস আমার ইশ্বর।
এলিসার দু চোখ হতে ঝরঝর করে পানি পড়তে থাকল। সিওরেস দু হাতে চোখ বন্ধ করে ফেলল ও মেনিওনেস বাবার মৃত্যুর দৃশ্যের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকল। তাঁর দু চোখের মণি লাল হয়ে গেল।
বেশি কিছু হলো না, জল্লাদের তরবারিতে একদিকে লিওডেনাসের মষ্তক আরেকদিকে তার দেহ ছটফট করতে থাকল। আরেকটি জীবনের ভবলীলা সাঙ হলো।


অশুভ শক্তির বিনাশ
পরপর তিনটি সাইক্লোন হয়ে গেল। ২১ দিনের মধ্যে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এথেন্স ও স্পার্টা এছাড়া অ্যাটোলিয়াও। স্পার্টায় একটি বড় দূর্গের পতন হয়েছে। প্রাচীর ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে মিশে গেছে মাটির সাথে। উঁচু পাহাড়ের পাথুরে পর্বত না থাকলে স্কিইরোসের কি হতো সেটা কেবল গড প্যসেইডন(সমুদ্রদেবতা) জানেন।
এই ভয়ংকর দূর্যোগের কারণ জিউসের আর্শিবাদপুষ্ট রাজা থিওডক্সাসের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন, স্পার্টা-এথেন্স-অ্যাটোলিয়ায় নগরতন্ত্র প্রতিষ্টা।
গড জিউসকে শান্ত না করলে আরো কয়েকদিনের মধ্যে আরো বড় রকমের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হুশিয়ারি করে দিলেন প্রিস্টগণ। জনসাধারণেরা যারা নাস্তিক্যবাদ নীতিতে এগিয়ে গিয়েছিলেন তাদের অনেকেই এখন পুনরায় স্বধর্মে ফিরে যাচ্ছেন। কেবল কয়েকজন নাস্তিক আগের মতো জনগণকে গোপনে গোপনে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত ধরে রাখতে থাকলেন।
১২'ই সেপ্টেম্বর। আজ দ্বাদশী। আজ ট্রাইবুনালে হাজির করা হচ্ছে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ১৪ জন নাস্তিককে। এই ১৪ জন নাস্তিকের কারণেই কিং থিওডক্সাসের(ওরফে থিওডোর) এর বিরুদ্ধে জনগণ বিভাজিত হয়। এদের শাস্তি না দিলে গড জিউসের ক্রোধ কমানো সম্ভব না।
লাল মশালের আলোতে উপস্থিত ভুক্তভোগী জনগণ প্রিস্টের বক্তব্যকে স্বাগত জানালেন।
উপস্থিত ১৪ স্কলারকে ফাঁসির দড়িতে একসাথে ঝুলিয়ে বিচারকার্য সম্পন্ন করা হলো। অভিশাপ ও ক্রোধমুক্ত হলো স্কিইরোস। শান্তি ফিরে এলো সবার মধ্যে।


দুই জমজ ও এক বৃদ্ধ
ইজিপ্টের রাজকীয় জারসানা বিদ্যাপীঠে প্রকৃতিবিদ্যার সাথে সাথে সমরবিদ্যাও শিখছে দুই ভাই একসাথে। তাদের উভয়ের বয়স ১২ হতে চলল। তাদের মা থিওসী রাজ্যশাসনে মনোযোগ দেয়াতে একটানা অনেক বছর বাচ্চাদের সাথে সময় দেন কম। তিনি খবর পাঠিয়ে দিলেন দুত মারফত, ১ সপ্তাহের জন্য যেন বিদ্যাপীঠ থেকে তাদের ছুটি দেয়া হয়।
ছেলেরা যথারীতি আসেও। মা তাদের ফিরে পেয়ে খুশিতে বাঁধনহারা হয়ে গেলেন। তাদের যদিও সব জানা আছে তবুও কেন যেন কিশোর বয়সের ছেলেদের নিজ হাতে গোসল করিয়ে খাইয়ে দাইয়ে দিতে লাগলেন।
এক্সিডাস মায়ের এত আদর যত্নের সাথে কেমন যেন মানিয়ে নিতে পারছে না। মায়ের যৌবনবয়সটা নিয়ে সে অনেক কল্পকথা শুনেছে। মা অনেক রূপবতী সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। সে নিজেকে কেন যেন মায়ের সাথে মানিয়ে নিতে পারছে না। মা অপেক্ষা বাবার কাছে সে স্বাচ্ছন্দবোধ করতে থাকল।
রাজপ্রসাদে একটা মধুর ঝগড়া চলছে। একটি ছেলে বাবার কাছে আরেকটি ছেলে মায়ের কাছে থেকে বাবা ও মাকে মধুর সময় উপহার দিতে লাগলো।
একদিন মায়ের সাথে জক্সিডাস রাজ্য ভ্রমণে বের হলো। অপর জমজ ভাই এক্সিডাস বের হলো বাবার সাথে সমুদ্র ভ্রমণে।
ভর দুপুর বেলা মাথার ওপরে সুর্যদেব উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। জক্সিডাস সুর্যদেবকে একটি সেজদা করল। ওর মা অবশ্য তা দেখে আশ্বস্ত হলেন। যে এই ছেলেটি ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট। রাজ্যশাসনে একেই দেয়া উচিত।
হঠাৎ একটি ঢিল কোত্থেকে এসে রাণীর কপালে পড়ল। সাথে সাথে একটা ফোঁড়াও দেখা দিল। ঢিল কে ছুঁড়ল তা দেখার জন্য জক্সিডাস ও ২ সৈন্য নেমে পড়ল।
বেশ দূরে এক বুড়োকে শায়িত ও কাতরাতে দেখে তরবারি খুলে এগিয়ে গেল সবাই। কাছে যাবার পরে বৃদ্ধটি খুক খুক করে কেশে ওঠলেন।
এত বেশি কাশতে লাগলেন যে মুখ দিয়ে অজস্র রক্ত বেরুতে লাগল। তিনি উঠে বসে পড়লেন এবং তাদের দিকে দূর্বল চোখে তাকালেন। নাক ও মুখের অবস্থা ভয়াবহ। সর্দি কাশি পুঁজ রক্তে একাকার হয়ে আছে। লোকটি ক্ষীণ কন্ঠে বলল- আমাকে আর মারার কি বাকি আছে? তোমরা তলোয়ার হাতে এসেছ? আমি তো এমনিতেই মরে যাব, তবে যাবার আগে রাণীর কাছে একটি বার্তা পৌছে দিতে হবে। কেবল রাণীকেই বলব আমি। রাজ্যের রাজত্ব নিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা।
জক্সিডাস যথেষ্ট দ্বায়িত্ববানের মতো আচরণ করে বলল, রাণীমা অসুস্থ, যা বলার আমাকেই বলতে হবে।
লোকটা আরো কয়েকবার কাশতে থাকল, এবং হঠাৎ করে টান মেরে জক্সিডাসের হাতের তালু দেখল। বাকি সৈনিকদের বলল- তোমরা চলে যাও, এর সাথে গোপন আলাপ আছে।
লোকটা সময়ের সাথে যেন সুস্থতা পাচ্ছে। সে কানে কানে জক্সিডাসকে বললোঃ
এক্সিডাস তোমার ভাই। সে ভবিষ্যতে রাজশাহী প্রথা বন্ধ করে নগরতন্ত্র চালু করবে। তোমার বংশের কাউকে সে জীবিত রাখবে না। এমনকি তুমিও না।
তোমাদের বয়স ২৫ হওয়ার পরে তোমরা সম্মুখ সমরে বা বিজাতীয়দের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারার সম্ভাবনা আছে। সেই যুদ্ধে বা আরো পরে সে তোমাকে হত্যা করতে বাধ্য হবে। তবে যদি তুমি তাকে মেরে ফেলতে পার, তাহলে এথেন্স, অ্যাটোলিয়া থেকে শুরু করে মেসিডোনিয়া থেকে লিডিয়ার অধিপতি হতে পারবে তুমি। তুমি ওর বংশধর সবাইকেই মেরে ফেলবে। তোমার পূর্বপুরুষ হতে পৃথিবীতে কেবল তোমার বংশই থাকবে।

দুই যুবরাজ
তীর-ধনুর টার্গেট, বল্লম নিক্ষেপ, তরবারি চালনায় জমজ দুই যুবরাজের কাছে সবাই-ই হেরে যায় দেখে রাজা থিওডক্সাস ও স্কিইরোস রাণী থিওসী'র সব দুর্ভাবনা চলে গেল।
রাজ্য শাসন নিয়ে পড়াশুনা করে আসছেন উভয় যুবরাজ সুদূর মিশরের মেমফিস থেকে। পরিক্ষামূলক ভাবে এখন উভয়কে কাজে লাগানোর পালা।
কিং থিওডক্সাস এক্সিডাসকে প্রজার কাছ থেকে কর আদায়ের ব্যাপারে নিযুক্ত করলেন। আর জক্সিডাসকে নিযুক্ত করলেন প্রশাসনিক ও সৈন্যবাহীনী'র দেখাশুনায়।
জক্সিডাস খুব কঠোরভাবে সৈন্যদের কাজে লাগাতে থাকলেন। সেনাপতিকে সবসময় দৌড়ে রাখায় বাজে চিন্তা করার সূযোগ ছিল না। অভিজ্ঞ সভাসদবৃন্দ এতে যারপরনাই খুশি হলেন।
আশা করা হচ্ছিল রাজার সাথে সঙ দিয়ে দুই জমজ যুবরাজ খুব ভালভাবে রাজ্য পরিচালনা করবেন। কিন্তু মাস কয়েক যেতে না যেতেই একটা দূর্ঘটনা ঘটে যায় রাজ পরিবারে।
যুবরাজ এক্সিডাস ডুমুর ফল ভালবাসেন। সকালবেলা যখন ডুমুর ফল খাবেন ঠিক তখনই তাঁর প্রিয় বেড়ালটি লাফ দিয়ে হাত থেকে কেড়ে নিয়ে এই ফলটি নিজে খেয়ে ফেলে। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে গড়াগড়ি দিয়ে মারা যায় বেড়ালটি।
এক্সিডাস প্রিয় বেড়ালটিকে হারিয়ে ভয়ানক রেগে যান। তিনি সব প্রহরী, কর্মচারী, ও বৈশ্যাদের ধরে ধরে চাবুক দিয়ে বেধম মারদোর করেন। মারের চোটে একসময় এক গোলাম স্বীকার করে সে দেখেছে সকালবেলা রাণী থিওসী নিজে এসে ডুমুর ফলের ওখানে কয়েকটি ডুমুর ফল সরিয়ে নতুন কিছু ডুমুর রেখেছিলেন।
প্রমাণস্বরুপ সে রাণী থিওসীর আজ সকালের কনস্টিউমের(রাজপোশাক) কয়েকটি সুতো পতিত থাকতে দেখালো। তখন অন্য সব চাকর-কর্মচারীরা যারা উপস্থিত ছিল স্বীকার করলো।
যথারীতি রাজা থিও'র কানে গেল এই ঘটনা। রাণী থিওসী প্রথমে অস্বীকার করবেন মনস্থির করলেও রাজার সামনে সত্যিটাই বলে ফেলেন।
রাজাকে এও জানিয়ে দেন যে, এক্সিডাস রাজ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এটার কারণেই সে বিষমাখানো ডুমুর খাইয়েছিল। রাজা নির্লিপ্তভাবে রাণীকে বলেন যে, তিনি এখনো উভয় যুবরাজকে পর্যবেক্ষণ করছেন। কার দ্বারা ক্ষতিটা হতে পারে সেটা তিনি নিশ্চিত হতে চান।
তখন এগিয়ে আসলেন রাজজৌতিষীষী গ্রেগজী। বৃদ্ধ গ্রেগজি অবনত মস্তকে রাজাকে বললেন-
জক্সিডাস আপনার রাজ্যকে রাজবংশের সাহায্যে শাসন করবে, এক্সিডাস করবে নাগরিক ব্যবস্থার সাহায্যে। রায় দিলেন মহারাজ। রাজার রায় শুনে পুরো দরবার স্তম্ভিত হয়ে গেল। খবরটা জানার পর পুরো রাজ্যবাসীই স্তম্ভিত হয়ে গেল।

কিং থিওডক্সাসের মৃত্যুঃ
প্রিয় এক্সিকে হারিয়ে রাজা থিওডক্সাস নিদারুণ অপরাধবোধে ভুগতে থাকলেন। থেকে থেকে কেঁদে ওঠেন রাতের বেলায়। ধীরে ধীরে জমা হলো দুঃখবোধ সংক্রান্ত একটা প্রাচীন রোগ। এই ঘটনার মাত্র ৮ মাসের মাথায় বেদনাতুর রাজা শেষমেষ পাগল অবস্থায় মারা গেলেন।
মারা যাবার আগে কেবল বুক চাপড়িয়ে বলতেন-

প্রিয় এক্সিডাস, পুত্র আমার ক্ষমা করো আমাকে, অবিচারের শাস্তি তুমি নিজ হাতে দিও আমাকে।
আমি অন্যায় করেছিলাম, রাজ্যের লোভে, তোমার মাও একই ভুল করেছিল।
ওহে, পুত্র আমার, বেহেশতে বসে তুমি আমার অপেক্ষা করছো?
আসছি, আমি আসছি, এখুনি আসবো আমি।
আর অপেক্ষা নয়। আমি আসবো।
আমি আসবে পুত্র আমার।
তোমার কাছে।


গুপ্ত সংসদ
প্রচন্ড শীতে যখন সমুদ্রের পানিও বরফের সমান ঠান্ডা অর্জন করেছে তখন স্কিইরোসের মধ্যে রাজ্যশাসন নিয়ে চলছে রাণী থিওসীর আর্শিবাদপুষ্ট জক্সিডাস ও জনগণের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই।
জনগণ ৩০ বছর আগের জায়গায় ফেরত যেতে চায়। কুইন থিওসী'র বুদ্ধির খেলায় জনরোষকে থামিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল ঐ সময়। কিন্তু এখনকার প্রতিবাদীরা অধিকাংশই যুবক। এদের কোনভাবেই বুঝানো যাচ্ছে না একজন রাণীর অধীনে প্রজারা বাস করলে তাদের মান সম্মান, অধিকারের কোনই ক্ষতি হয় না।
প্রকৃতপক্ষে গড জিউসের আর্শিবাদপুষ্টদের সম্মান ও মর্যাদা মানুষের মধ্যে সর্বাধিক। এটা তারা মানতেই চায় না। এরা প্রভু জিউসকে পর্যন্ত অস্বীকার করে ফেলে। এদের কাছে ধর্মীয় বিধিবিধান আবর্জনা বৈ কিছু নয়।
ভয়ংকর ব্যপার এই যে, এরা নিজেদের পরিচয় আড়ালে লুকিয়ে রাখে। প্রকাশ করে না। ভন্ডামি করে সাধারণ জনসাধারণের সাথে মিশে থাকে। ধীরে ধীরে তারা শক্তি সঞ্চয় করছে। মৃত্যু এদের কাছে একটি গন্তব্য বৈ কিছু নয়।
খোদ রাণীর আন্তঃরাজ্যবিধায়কদের কেউ কেউ এই ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত হয়ে গেছে মষ্তিষ্ক ধৌতকরণ প্রক্রিয়ায়। এরা নিজেদের সঠিক পথপ্রাপ্ত হিসেবে পরিচয় দেয়। এঁরা নিজেদের আলোচনার জন্য আলাদা একটি সংসদ স্থাপন করে ফেলেছে। এটা কোথায় কেউ জানে না। কেবল সংসদ সদস্যরাই জানেন।

গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এইসব ভয়ংকর সংবাদ পেয়ে রাণী অস্থির হয়ে গেলেন। সবাইকে গুপ্তহত্যার নির্দেশ দিলেও কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল এরা এতই সাবধান যে, ১০০ জনকে টার্গেট করে মাত্র দুজনকে হত্যা করা গেছে। আপ্রাণ চেষ্টা করেও এদের গুপ্ত সংসদের জায়গাটি বের করতে পারলো না কোনই গোয়েন্দা।

একদিন শীতের বিকেলে রাণী থিওসী পায়চারী করছেন এমন সময় এক গ্রাম্য লোককে ধরে নিয়ে আসলো গোয়েন্দা প্রধান সুইলিওরেল।
সুইলি'র অভিনব বুদ্ধিমত্তায় জানা গেল রাজ্যশাসন বিধ্বংশী গুপ্ত সংসদের ঠিকানা। এও জানা গেল কে চালায় এই সংসদ। রাণী থিওসী মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন যখন জানতে পারলেন কে এই গুপ্ত সংসদের স্পিকার।


ষড়যন্ত্র
জক্সিডাসের সামনে জল্লাদ ক্রিওটা ও কারাপ্রধান থিসিও। উপস্থিত রাণী থিওসীর চোখ ঠিকরে আগুনের গোলা বেরুচ্ছে। উপস্থিত সভাসদের সবাই ভয়ে, বিস্ময়ে বিমুঢ়।
এক্সিডাসকে হত্যা করা হয়নি। জনগণের গুপ্ত সংসদ তাকে অপহরণ করে আরেক সৈন্যকে হত্যা করেছিল। এরপর ওকেই জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল যুবরাজের পোশাক পরিয়ে। মৃত যুবরাজকে রাজা ও রানীর কাছে আনা হয়েছিল যখন তখন আসলেই মৃতের ভান করা যুবরাজ এক্সিডাসকে আনা হয়েছিল। আর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল অন্য এক সৈন্যকে।
বেঈমান হিসেবে অভিযুক্ত করে ক্রিওটা ও থিসিও'কে গর্দান কর্তন করেন জক্সিডাস নিজ হাতে। সেই রাতেই নতুন ফন্দি আঁটেন রাণী থিওসী। তিনি বিঃশ্বস্ত দুইজন সহচারীণী নিয়ে এক্সিডাসের গুপ্ত বাসভবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন।

অ্যালেসিয়া একটি বিশেষ ছুরি। এটির গুণাগুণ এতই বেশি যে, এটির সাহায্যে নিমেষেই যে কাউকে খুন করা যায়। একমুহুর্তে প্রাণ সংহারে এর মতো ভয়ানক অস্ত্র কমই আছে। উনি এই বিশেষ ছুরি হাতে রেখেছেন নিরাপত্তার স্বার্থে। উনার এখনো রুপলাবণ্য কমে যে যায়নি তা বলাই যায়।

এখন ভোরবেলা। গোয়েন্দার নির্দেশনা মোতাবেক তিনি মুখ ঢেকে একেবারে দোরগোড়ায় পৌছে গেছেন। রাজপ্রসাদে অপেক্ষা করছে প্রিয় সন্তান জক্সিডাস। ওকে গিয়ে জানাতে হবে গুপ্ত সংসদের মুল হোতা ওর ভাই এক্সিডাসকে মেরে ফেলা হয়েছে।

খুনঃ
এক্সিওডাস ঘুমে আছে। ওর আশেপাশে কেউ নেই। এটাই সূযোগ।
কুইন থিওসী ধীরপায়ে একা একা হেঁটে হেঁটে ওর শিওরে পৌঁছে গেলেন। বেশ কয়েক মুহুর্ত নিজের অপ্রিয় সন্তানটিকে শেষবারের মতো জীবিত দেখে নিলেন তিনি।
রাজপ্রসাদের বাইরের খাবার খেয়ে ছেলেটার মুখ শুকিয়ে গেলেও সেই মায়াময় রুপটি কমেনি। এখন ঘুমের মধ্যে বোধহয় বেড়ে গেছে মায়ের কাছে চিত্তাকর্ষী এই চেহারাটি। তাঁর মমতাময়ী মায়ের প্রাণ হুহু করে কেঁদে ওঠলো।
তিনি যখন দেখলেন যে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন সন্তানের মায়ায় তখন কোমর থেকে বের করলেন সেই ভয়ানক ছুরি। কিন্তু একি?
কি এক অদ্ভুত বিকর্ষণ? এক্সিডাসকে মারতে চাইছে না নাকি এ ছুরি?
কতোবার যে তিনি চেষ্টা করলেন, তবু পারলেন না। পারলেন না নিজের সন্তানকে মারতে। এসময় এক সহচারীণী দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল। সে আর সহ্য করতে পারছিল না।
রাণীর হাত থেকে ঝাপটি মেরে ঐ বিষের ছুরি নিয়ে হৃৎপিন্ড বরাবর ভয়াল নিষ্টুরতার সাথে কয়েক ঘা বসিয়ে দিল।
কাত হয়ে বিছানার সাথে বেঘুরে ঘুমাতে থাকা যুবরাজ কুঁকিয়ে ওঠলেন। মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে একনজর প্রিয় মাকে দেখে প্রথম পলকে আশ্চর্য দ্বিতীয় পলকে ঘৃণায় ও কষ্টে কয়েক মুহুর্তেই জীবনের যবনিকাপাত টেনে ওপারে চলে গেলেন তিনি।

অবশেষেঃ
রাণী থিওসী রাজপ্রসাদে ফিরে গেলেন, এক পৃথিবী বেদনা নিয়ে। উনার চক্ষুদ্বয় কান্নার ও এক পরাজয়ের গ্লানিতে লাল হয়ে গেছে। তিনি শেষবারের মতো সন্তানের কাছে পরাজিত হলেন। নিজের জীবন দিয়ে এক্সিডাস আজ মায়ের নিকট বিজয়ী। মায়ের কোন মর্যাদা তিনি পেতে পারেন না। সব মায়েদের নিকট তিনি থাকবেন এক কলংকিত নারী হয়ে। হায়ঃ ক্ষমতার রাজ্যে জীবন বিষাদময়।

কিন্তু একি, রাজপ্রাসাদে ফিরে দেখেন প্রজাদের সবাই এসে বাইরে বিজয় নিশান উড়াচ্ছে। রাণীকে দেখা মাত্রই কয়েকজন সান্ত্রী তাঁকে বল্লম ও তলোয়ার সহযোগে বন্দি করে ফেলল। বাসভবনে নিয়ে বন্দী করে রাখা হলো উনাকে।
রাণীর হৃৎপিন্ডে গোলমাল দেখা দিল যখন শুনলেন এক্সিডাসের গুপ্ত সংসদের চৌকস দল যুবরাজ জক্সিডাসকে অপহরণ করে এক্সিডাসের শয্যায় ঘুমের বড়ি খাইয়ে রেখেছিল। আর রাণীর সহচারী বা তিনি নিজে খুন করেছেন অ্যালেসিয়া দিয়ে।
রাণীর জন্য হিতে বিপরীত হয়ে গেছে এই ঘটনাটি। উনার চোখের সামনে রাজপুত্র এক্সিডাস একজন নাগরিক হিসেবে নাম লেখালো স্কিইরোস নগররাজ্যে।
কেউ আর প্রজা নয়। হয় নাগরিক নয়তো গোলাম। নাগরিকদের ক্ষমতার উর্ধে কেউ নেই কারো অপেক্ষা। গোলামদের ব্যাপারটা নিয়ে কোন পরিবর্তন এলো না অবশ্য। সম্মানজনকভাবে রাণীকে বাসভবনে নজরবন্দী করে রাখা হলো, এক্সিডাসকে ক্ষমতামুক্ত সম্মানজনক রাজ্যপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হলো। প্যাপিরাসে সুলিখিত একটি নির্দিষ্ট সংবিধানে চলতে থাকল স্বপ্নের স্কিইরোস নগররাজ্য। [সমাপ্ত]

☆ পাদটিকাঃ
☉ অ্যালেসিয়াঃ
অ্যালেসিয়া রোমান প্রজান্ত্রের একটি ব্যাটল যেটি খ্রিস্টপূর্ব ৫২ অব্দে পরিচালিত হয়েছিল। আমি সেই অ্যালেসিয়াকে এখানে ব্যবহার করিনি। সম্পুর্ণ নিজের মষ্তিষ্ক উদ্ভুত একটি ব্যাপার বোঝাতে চেয়েছি।
অ্যালেসিয়া হচ্ছে নিজের পরিকল্পনা মোতাবেক কিছু করতে গিয়ে সম্পুর্ণ অপ্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া। এটাই এ গল্পের মুলকথা।
☉ স্কিইরোস
অ্যাজিয়েন সাগরের দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি দ্বীপ। এটি একটি গ্রিস দ্বীপ। এর সমুদ্রতীরের জন্য এটি বিঃখ্যাত। তট অনেক এবড়োথেবড়ো এবং অনেক বনাঞ্চলও দেখা যায়।
☉ হপলাইট
প্রাচীন গ্রিসের সৈন্যবিশেষ। নগর রাজ্যের বিশেষ সৈন্য যাদের হেলমেট ও বর্শা অধিকতর উন্নত ছিল।
☉ মেসিডোনিয়া
গ্রিসের সবচেয়ে বৃহৎ ও ২য় জনবহুল রাজ্য। এটি এখনো আছে।
☉ অ্যাটোলিয়া
প্রাচীন গ্রিসের অন্যতম জনবহুল রাজ্য। অ্যাটোলিয়ান লিগের কারণে এটি আরো পরিচিত।
☉ স্পার্টা
স্পার্টা হচ্ছে গ্রিসের বহুল আলোচিত অন্যতম প্রাচীন রাজ্য।
☉ মেমফিস
প্রাচীন মিশরের বহুল পরিচিত একটি নগরী। নীলনদ থেকে ১০ মাইল দূরে এটি তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে অগ্রজ মানবসভ্যতার একটি শহর।
☉ প্যসেইডন (Poseidon)
পসেইডন (গ্রিক: Ποσειδῶν, লাতিন: Neptūnus) ছিলেন গ্রিক পুরাণের সমুদ্র, ঝড় ও ভূমিকম্পের দেবতা। এট্রুস্ক্যান পুরাণের সমুদ্রদেব নেথুনস ও তাঁর রোমান পুরাণের সমুদ্রদেবতা নেপচুন (নেপচুনের নামকরণ হয়েছে নেথুনসের নামানুসারে) – উভয়েই পসেইডনের সমতুল্য।
☉ জিউস (Poseidon)
গ্রিক পুরাণে জিউস (ইংরেজি উচ্চারণ: /ˈzuːs/ প্রাচীন গ্রিক: Ζεύς,আধুনিক গ্রিক: Δίας, Dias) হলেন "দেবগণ ও মানবজাতির পিতা"। সুপ্রিম গড।
☉ চিলতন
প্রাচীন রোমান ও গ্রীসের রাজরাজরাদের পোষাক। অবশ্য অভিজাত অনেকেই ব্যবহার করতে পারতেন।

☆ সারকথাঃ
চরিত্রগুলো সবটিই কাল্পনিক। গ্রিক মিথ থেকে ধার করা হয়েছে একটি প্রেক্ষাপট। সেটির অবলম্বন করে এই ফাও গল্পটি আপনাদের কাছে নিয়ে আসা। ফিডব্যাকটি নির্ধারণ করবে গল্পের বুননে কেমনটি করা উচিত।
☆ সতর্কতাঃ
উপরের লেখা সম্পুর্ণতই আমার মষ্তিষ্ক উদ্ভুত। অনুমতি ব্যতিরেকে অন্য কোনও অনলাইন পেজ বা অফলাইন যেকোন কিছুতে প্রকাশ করা যে সিদ্ধ নয় তা কড়াভাবে বলা হলো।
☆ পূর্বে প্রকাশিত ব্যক্তিগত ব্লগেঃ ♋ অ্যালেসিয়া বিভ্রম (পুরোটা)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৮
৭০টি মন্তব্য ৭৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×