যখন অনেক ছোট ছিলাম, তখন ঈঁদটা ছিল অনেক কিছু। মনে হত সারাবছর ঈদের অপেক্ষায়ই ছিলাম। ঈঁদের কয়েকদিন আগ থেকে ঘুম কম হত, ভাবখানা এমন যেন ঘুমালেই মনে হয় ঈঁদ চলে যাবে।
(ছবিগুলো সংগ্রহ করা)
ঈদের কোলাকুলিঃ
মেহেদী মাখার খুব শঁখ ছিল। খুব বেশি মেহেদী লাগাতাম। একবার ঈঁদের আগের দিন মেহেদী পাওয়া গেলনা, আগে আমরা শুধু মেহেদীর পাতা বেটে হাতে লাগাতাম, পেষ্ট মেহেদী পাওয়া যেতনা। তো আমরা তিন বন্ধু মেহেদীর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম। খুজতে খুজতে গ্রামের পাশের মুঁচি বাড়ি থেকে পুরো মেহেদীর গাছ উপড়ে নিয়ে আসলাম। সেই সময় গুনাহ সম্পর্কে তেমন ধারনা ছিলনা। শুধু বুঝেছিলাম কাজটা ভালো করিনি। কিন্তু তার চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল মেহেদী মাখা। এখন অবশ্য অনেক অনুশোচনা হয়।
মেহদী রাঙ্গা হাতঃ
ঈঁদের খুঁশীর আরেকটি কারন ছিল নতুন জামা। মনে করতাম ঈঁদ মানেই নতুন জামা। নতুন জামা নেই মানে ঈঁদ নেই। বাবা ছিলেন প্রাইমারী স্কুলের হেড মাষ্টার, সকল ঈঁদে হয়তো নতুন কাপড় কিনে দিতে পারতেন না। তখন মন খারাপ করে বসে থাকতাম। এক ঈঁদে নতুন কাপড় ছিলনা, সেই ঈঁদে এতই মন খারাপ ছিল যে বারবার ডুকরে কান্না আসছিল। সেই দিন নিয়মিত রুটিনে যা হয় তার কিছুই করলাম না। সকাল বেলা লুঙ্গি পরে, উদোম শরীরে বারান্দায় মুখ হাড়ি করে বসে থাকলাম। আমার মন খারাপ দেখে ঘরের সবার মন খারাপ হয়ে গেল। পরে আব্বু চাচাত ভাইকে দিয়ে বাজারে পাঠিয়ে নগদে ঈদের শার্ট বানিয়ে আনালেন। নতুন শার্ট পেয়ে খুশীতে আবারও কেদেছিলাম।
ঈদের নতুন জামাঃ
ঈঁদের দিনের রুটিনের প্রথমেই ছিল , ফজরের আযানের সময় উঠে পড়তাম। সেদিন আর আব্বুর সাথে মসজিদে যেতামনা, আম্মুর পাশে দাড়িয়ে নামায আদায় করে নিতাম। এর পর ঘর থেকে বের হয়ে সব বন্ধুদের ডেকে ডেকে বের করতাম। মিছিল দিয়ে একসাথে যেতাম গাঙ্গে (সুরমা নদীতে) গোসল করার জন্য। সাথে থাকত ম্যাচ। নদীর পাশে হিন্দুদের নৌকা বানানোর ঘর ছিল। সাথে খড়ের গাদা। গোসল শেষে হিন্দুদের খড়ের গাদা থেকে খড় চুরি করে নিয়ে আসতাম আগুন পোহাবার জন্য।
আগুন পোহানোঃ
পরে আবার মিছিল সহকারে সবাই বাড়িতে চলে আসতাম।
ঈদের গোসলঃ
ঈঁদের দিন অনেক দুষ্টুমি করলেও কেউ কিছু বলতনা। তাই যা ইচ্ছা তা-ই করতাম। তখন কি আর ভাবছিলাম যে একদিন বড় হয়ে যাব। এই সব রঙ-তামাশা আর করতে পারবনা। তখন কস্মিনকালেও মনে হয়নি ঈঁদের আনন্দগুলো জীবন থেকে ধীরে ধীরে নেই হয়ে যাচ্ছে। তখন মনে হত, প্রতিদিন যদি ঈঁদ হত, কতইনা ভাল হত। তখন কি ভেবেছিলাম মধ্য বয়সে এসে এই ঈঁদ হৃদয়ের একটি কণাও স্পর্শ করতে পারবেনা। তখনকার ভাবনা গুলো ছিল এলোমেলো, সব কিছুতেই কেমন যেন আনন্দ খুজে পেতাম। অনুভব করতে পারতাম পরিবারের সবার হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসা। বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমি করাও হয়ে উঠেছিল নেশার মত। কেউ ধমক দিলেও বুঝতাম এইটা এক ধরনের মায়া। ছোটবেলার এই আদর-সোহাগ, মায়া-মহব্বত, ভালোবাসা ছিন্ন করে কবে যে বড় হয়ে গেছি নিজেও টের পাইনি। মনকে শুধু সান্তনা দেই, ‘‘হেই দিন কি আছে, দিন বদলাইয়া গেছেনা’’। এখন কি আর ১ টাকায় ৪ টা চকোলেট পাওয়া যাবে?
ঈদের চাঁদঃ