পূর্বের লেখা: আল্লাহ আমাদের বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করছেন
পূর্ব প্রকাশের পর:
হযরত আবূ হুরায়রা রা. বর্ণিত একটি হাদীসে কুদসীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন আল্লাহ চলেছেন,
من عادى لى وليا فقد اذنته بالحرب.
অর্থ: “যে কেউ আমার বন্ধুদের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।” (সহীহ আল-বুখারী, হাদীসে কুদসী অধ্যায়। সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৩৪৭।)
সুতরাং মনে রাখা দরকার যে মুসলিমরা আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নি, বরং স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন! আমেরিকা গোটা বিশ্বের মালিক মহান আল্লাহ তা‘আলার সাথে স্পর্ধামূলক যুদ্ধে লিপ্ত!
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنْكُمْ وَعَمِلُواْ الصَّـٰلِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى الاَْرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِى ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْناً يَعْبُدُونَنِى لاَ يُشْرِكُونَ بِى شَيْئاً وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ فَأُوْلَـٰئِكَ هُمُ الْفَـٰسِقُونَ.
অর্থ: “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছো এবং সৎকর্ম করেছো তাদের সাথে মহান আল্লাহ তাআলা ওয়াদা করছেন যে, তিনি তাদেরকে অবশ্যই আবারও খিলাফত দান করবেন, যেমনটি তিনি পূর্ববর্তীদেরকে দিয়েছিলেন। তিনি তোমাদের জন্য তাঁর পছন্দনীয় জীবন বিধানকে সুনিশ্চিত করে দিবেন এবং তোমাদের ভীতিকর পরিস্থিতিকে নিরাপত্তার দ্বারা বদলে দেবেন। (শর্ত হলো) তারা (জীবনের সকল ক্ষেত্রে) কেবল আমারই ইবাদত করবে, আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। তবে এরপরও যারা কুফরী করবে, তারা হলো ফাসিক।” (সূরা নূর, আয়াত ৫৫)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে খিলাফত তাদেরকেই দেয়া হবে যারা সত্যিকারভাবে ঈমান আনয়ন পূর্বক আমালে সালিহ বা সৎকর্ম করবে।
বর্তমান সময়ে গোটা মুসলিম উম্মাহ এক ভয়াবহ শংকা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে। আর এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি আমাদের নিরাপত্তা প্রদান করবেন। তিনি এই উম্মতকে খিলাফত ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; এবং এ দুনিয়াতে চূড়ান্তভাবে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করে দেয়ার ওয়াদা দিচ্ছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণীতে উম্মাহর কাল পরিক্রমা ও খিলাফাহর প্রত্যাবর্তন :
একটি হাদীস রয়েছে যে হাদীসটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে মুসলিম জাতির কাল পরিক্রমা কেমন হবে তার উপর বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। আমাদের প্রত্যেকের উচিত হাদীসটি সতর্কতা ও মনোযোগের সাথে পাঠ করা। হাদীসটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
تَكُونُ النُّبُوَّةَ فِيكُمْ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ تَكُونَ، ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا، ثُمَّ تَكُونُ خِلَافَةً عَلَى مِنْهَاجِ النُّبُوَّةِ، فَتَكُونُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ تَكُونَ، ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَرْفَعَهَا، ثُمَّ تَكُونُ مُلْكًا عَاضًّا، فَيَكُونُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَكُونَ، ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا، ثُمَّ تَكُونُ مُلْكًا جَبْرِيَّةً، فَتَكُونُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ تَكُونَ، ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا، ثُمَّ تَكُونُ خِلَافَةً عَلَى مِنْهَاجِ النُّبُوَّةِ، ثُمَّ سَكَتَ.
অর্থ: “তোমাদের মধ্যে নবুয়্যত থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন, অতঃপর তিনি তা তুলে নিবেন যখন তা তুলে নেবার ইচ্ছা করবেন। তারপর আসবে নবুয়্যতের আদলের খিলাফত। তা তোমাদের মধ্যে থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্ ইচ্ছা করবেন, অতঃপর আল্লাহ তা তুলে নিবেন যখন তা তুলে নেবার ইচ্ছা করবেন। তারপর আসবে বংশীয় শাসন, তা থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্ ইচ্ছা করবেন। অতঃপর তিনি তা তুলে নিবেন যখন তা তুলে নেবার ইচ্ছা করবেন। তারপর আসবে জুলুমের শাসন এবং তা তোমাদের ওপর থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্ ইচ্ছা করবেন। অতঃপর তিনি তা তুলে নিবেন যখন তা তুলে নেবার ইচ্ছা করবেন। তারপর ফিরে আসবে নবুয়্যতের আদলের খিলাফত।’ এরপর তিনি সা. নীরব থাকলেন। (মুসনাদে আহমদ)
আলোচ্য হাদীসে যে নবুওয়াতের ধারার কথা বলা হয়েছে তা আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকালের সাথে সাথে সমাপ্ত হয়ে গেছে। এরপর তিনি যে খুলাফায়ে রাশেদার কথা বলেছেন তা আরম্ভ হয়েছে হযরত আবূ বকর রা. এর মাধ্যমে আর তা সমাপ্ত হয়েছে হযরত আলি ইবনে আবি তালিব রা. এর খিলাফতের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে। এরপর তিনি বলেছেন ‘মুলকান’ যার অর্থ হলো রাজতান্ত্রিক শাসন। এর বাস্তবায়ন হয়ে গেছে বনু উমাইয়া, বনু আব্বাস ও উসমানী খিলাফতের মধ্য দিয়ে। এরপর তিনি যে জুলুমতন্ত্রের কথা বলেছেন তা হলো আমাদের বর্তমান সমসাময়িক কাল। এটাই হলো স্বৈরাচারী জুলুমতন্ত্র। এরপর আবার আসবে খিলাফাতে রাশেদা। এভাবে পৃথিবীর সমাপ্তি ঘটবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু শেষে মৌনতা অবলম্বন করেন, তা থেকেই এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে অভিযোগ না করা
কখনও আমরা সময়ের বা কালের অভিযোগ করে থাকি। (নিজের দায়িত্ব এড়ানোকে বৈধতা দেয়ার জন্য) আমরা বলে থাকি যে, আমরা সবচেয়ে খারাপ সময়ে বসবাস করছি, মুসলিম উম্মাহ্ আজ মারাত্মক দূর্বল, অসহায়, পরাজিত, বিচ্ছিন্ন, বিভক্ত। আহ! আমরা যদি সাহাবায়ে কিরামের যুগে জন্ম নিতাম! কিংবা ইসলামের স্বর্ণালী যুগে থাকতাম! তাহলে কতইনা ভালো হতো। কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই না আমরা পালন করতে পারতাম।
এমন অভিযোগ করা আমাদের জন্য কেনো মোটেই শোভনীয় নয়, কিছু যৌক্তিক কারণ নিচে তুলে ধরা হলো,
প্রথম কারণ:
জনৈক তাবেঈ একজন সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আপনাদের মাঝে ছিলেন, তাঁর সাথে আপনারা কী রূপ আচরণ করতেন? কিভাবে তার সমাদর করতেন?”
উত্তরে সাহাবী বললেন যে কিভাবে তারা রাসূলের সাথে উত্তম আচরণ করতেন এবং তিনি বললেন যে তারা আল্লাহর রাসূলের সমাদরের ব্যাপারে তাদের সামর্থের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করতেন।
সাহাবীর কথা শুনে তাবেঈ বললেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের জীবদ্দশায় পেলে তাঁকে কাঁধে তুলে রাখতাম।”
এখানে আমরা তাবেঈর কথা একটু বিশ্লেষণ করলেই বুঝতে পারবো। তিনি যেনো বলতে চাচ্ছেন যে, সাহাবায়ে কিরামগণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারেন নি এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সময়ে যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তারা সাহাবীদের চেয়েও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরো বেশি সমাদর করতেন ও মর্যাদা দিতে পারতেন।
তার কথার উত্তরে সাহাবী বললেন, সাহাবায়ে কিরামগণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কেমন মর্যাদা দিতেন, কেমন ভালোবাসতেন, তাঁরা দীনের জন্য কেমন আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন তা এমন কোনো ব্যক্তির পক্ষে যথাযথভাবে বোঝা সম্ভব নয় যে সেই সময় উপস্থিত ছিলো না। তিনি আরো বললেন “কেউ জানে না, সে সময় জীবিত থাকলে সে কী করত; আমাদেরকে নিজের জন্মদাতা পিতা ও আপন ভাইদের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে হয়েছে, যা কখনই সহজ কোন ব্যাপার ছিল না। আর এখন তোমাদের পিতা, মাতা, ভাই, পরিবার, পরিজন সবাই মুসলিম। আর তুমি কেবল ধারণা করছো যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের সময় বেঁচে থাকলে তোমরা তাঁকে আরো বেশি মর্যাদা দিতে। শোনো এমন কোনো কিছু (সম্মান বা দায়িত্ব) কামনা করো না, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য বরাদ্ধ করেন নি।
দ্বিতীয় কারণ :
আমাদের বর্তমান সময় নিয়ে অভিযোগ করা উচিত নয়; বরং আমাদেরকে যে আল্লাহ তা‘আলা এই সময়ে পাঠিয়েছেন সেজন্য আমাদের উচিত আল্লাহর প্রতি আরো বেশি কৃতজ্ঞ হওয়া। কেনো আমাদের আরো বেশি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত? আসুন ভেবে দেখি!
আমরা জানি যে, গোটা মুসলিম উম্মাহর মাঝে সাহাবীগণের মর্যাদা হলো সবার উপরে। নবীদের পরে মানুষের পক্ষে সম্ভব সর্বোচ্চ আসনে তাঁরা অধিষ্ঠিত। তাদের পর রয়েছেন তাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাবেঈগণ এবং রয়েছেন তাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাবে-তাবেঈগণ।
সাহাবায়ে কিরামগণের মর্যাদা এতো বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো তাঁরাই সুমহান ইসলামের ভিত্তিমূল রচনা করেছেন। ইসলাম নামক প্রাসাদটিকে শূন্য থেকে অস্তিত্বে এনেছেন। তাঁদের জান ও মালের কুরবানীর উপরই নির্মিত হয়েছে ইসলামের প্রাসাদ। তাঁরা যখন কাজ করেছেন তখন ইসলামের কিছুই প্রতিষ্ঠিত ছিলো না। তাঁরা এই দ্বীনের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। তাঁদের পর যারাই এসেছেন তাদের সবার সামনে দ্বীনের প্রাসাদ নির্মিতই ছিলো, তারা হয়তো এই ভিত্তির সাথে এখানে ওখানে এক দু'টো উপাদান যোগ করেছেন অথবা কালের আবর্তনে দ্বীনের আসল প্রাসাদের গায়ে বিদআত নামক আগাছা, পরগাছা গজালে বা শেওলা ধরলে তা হয়তো কেটে-কুটে, ঝেড়ে-মুছে পরিস্কার করেছেন। কিন্তু দ্বীনের মূল প্রাসাদ তো সাহাবায়ে কিরামদের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। অতএব সংস্কারক বা সৌন্দর্যবর্ধনকারী তো নিশ্চয়ই মূল প্রাসাদ নির্মাণকারীর সমান মর্যাদা পেতে পারে না।
মূল কথা হলো, সাহাবায়ে কিরাম রা. এর সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রাপ্তির কারণ হলো তাঁদের কাজটি ছিলো সবচেয়ে বেশি কঠিন কাজ এবং তাঁরা সেটি আঞ্জাম দেয়ার জন্য তাঁদের পক্ষে সম্ভব সর্বোচ্চ কুরবানী করেছেন।
পরিস্থিতির ব্যাপারে অভিযোগ না করে আমরা যদি সত্যিই কিছু করতে চাই তাহলে আমাদের উচিত সময়ের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা। সময়ের দাবী উপলব্ধি করে আমাদের দায়িত্বটি সঠিকভাবে পালন করা।
কারণ উম্মাহর পরিস্থিতি অনুযায়ী একেক সময়ে একেক ধরণের কাজ সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়ায়। আর একারণেই দেখা যায় যে, তাবেঈগণ হয়তো গুরুত্বারোপ করেছেন এক বিষয়ের উপর তো তাবে তাবেঈনগণ গুরুত্বারোপ করেছেন অন্য এক বিষয়ের উপর। বিষয়টি আরো ভালো করে বোঝার জন্য আমরা কিছু উপমার দিকে লক্ষ্য করতে পারি।
ইমাম বুখারী রহ. :
ইমাম বুখারী রহ. যদি একশ বছর পর এসে হাদীস সংঙ্কলনের সেই একই কাজ করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই উম্মাহর মাঝে তাঁর সেই অবস্থান ও মর্যাদা তৈরী হতো না যে মর্যাদা উম্মতের মাঝে এখন তাঁর রয়েছে।
ইমাম শাফেয়ী বা ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর আবির্ভাব যদি আরো এক শতাব্দী পর হতো এবং তাঁরা যদি ফিকহী বিষয়ে গবেষণার সেই একই কাজ করতেন তাহলেও আমাদের মাঝে বর্তমানে তাঁদের যে স্বতন্ত্র মর্যাদা রয়েছে তা কিন্তু থাকতো না। কারণ তাঁদের প্রত্যেকের সমকালীন প্রয়োজন ছিলো ভিন্ন ভিন্ন। আর এভাবে সময়ের ব্যবধানের কারণে যুগে যুগে প্রয়োজনের ভিন্নতা তৈরী হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আরেকটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন যে, ফিকাহ শাস্ত্রের চারজন ইমামেরই আবির্ভাব হয়েছে একই শতাব্দীতে এবং হাদীস শাস্ত্রের ছয়জন ইমাম তথা ছিহাহ সিত্তার ছয়জন স ংকলকের আবির্ভাবও একই শতাব্দির মধ্যে। এ থেকে বোঝা যায় যে, একটা সময় উম্মতের প্রয়োজন ছিলো ফিকহী মাসআলা-মাসায়েলের উপর গবেষণা তো আরেকটি যুগের প্রয়োজন ছিলো আল্লাহর রাসূলের হাদীসসমূহকে যাচাই বাছাই করে সংকলন ও সংরক্ষণের।
এ বিষয়ের উপর আমার এতো কথা বলার কারণ হলো, আমরা অনেক সময় আল্লাহর দীন ইসলামের বিজয়ের জন্য কাজ করতে চাই কিন্তু ইসলামের বিজয়ের জন্য আল্লাহ তা‘আলা কোন কাজটা করতে বলেছেন, কিভাবে করতে বলেছেন তা সঠিকভাবে জানা না থাকার কারণে আমরা আমাদের অর্থ, সময়, মেধা, শ্রম এমন কাজে ব্যয় করি, যা বাস্তব অর্থে দ্বীনের কোনো কাজেই আসে না। তাই আমরা যদি সত্যিই একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইখলাসের সাথে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে, বর্তমান সময়ের জন্য কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি জরুরী এবং আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কোন কাজ করতে বলেছেন এবং বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আল্লাহর নির্দেশিত সেই কাজ কিভাবে সর্বোত্তম পন্থায় আঞ্জাম দেয়া যাবে।
আমরা দেখতে পাই যে, আমাদের কতিপয় দ্বীনী ভাই শুধু দা‘ওয়াতী কাজের উপর গুরুত্বারোপ করেন। আবার অন্য কিছু ভাইয়েরা রয়েছেন, যারা শুধু ইলম অর্জনের পথে লেগে থাকতে বলেন। আমরা স্বীকার করি যে, দাওয়ার কাজ করা ও ইলম অর্জন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং শুধু এ দু'টো কাজই নয়, বরং ইসলাম আমাদের যতো কাজের আদেশ দিয়েছে স্ব স্ব স্থানে তার প্রত্যেকটিরই গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আমরা যদি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করি যে বর্তমান সময়ে আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোনটি? তাহলে দেখতে পাবো যে আমাদের বর্তমান সময়টির সবচেয়ে বেশী মিল রয়েছে সরাসরি সাহাবায়ে কিরামদের সাথে। কারণ বিগত চৌদ্দশ বছরে আমরা জাহেলিয়াতের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে গেছি। বর্তমান মুসলিম উম্মাহর অধঃপতন এতো প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে যা বিগত চৌদ্দশত বছরের ইতিহাসে আর হয় নি।
ইনশাআল্লাহ চলবে...