(অনেকেই এমন আছেন যারা মহান আল্লাহকেই বিশ্বাস করেন না। আবার অনেক অমুসলিম ভাই-বোন এমনও আছেন যারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।)
এক সময় আমাদের দেশে নাস্তিক বা মহান আল্লাহকে বিশ্বাস করে না এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম ছিলো। কিন্তু ইদানিং বেড়েছে। এর পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে ইসলামের সঠিক জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় নাস্তিক্যবাদের বিস্তার লাভ। আমাদের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে খুবই কৌশলে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা ঢুকিয়ে দেয়ার কারণে এখন বড় বড় কলেজ গুলোর সিলেবাসে ডারউইন, মার্কস আল লেনিনদের থিউরী অন্তভুক্ত করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ইসলামের ইতিহাসের নামে পড়ানো হচ্ছে অমুসলিমদের লেখা বিকৃত ইসলাম আর ভুল ব্যাখ্যাসমূহ। তাই এই ধারাবাহিক প্রবন্ধে পর্যায়ক্রমে এ সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহর সৃষ্টির মাঝেই তার পরিচয় লুকিয়ে আছে। এজন্য পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
অর্থ: “"যারা আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে, (তারা বলে) হে আমাদের রব তুমি কিছুই অহেতুক সৃষ্টি করো নি। আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করো।”" (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯১)।
তাই যে সকল জ্ঞানীরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করে দেখবেন তারা অবশেষে কুরআনের সামনে নত হয়ে আসেন। বহু বিজ্ঞানীদের মত আছে স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে। এজন্যই বলা হয় যে বিজ্ঞানীরা নাস্তিক হয় না। এমনিও দুনিয়াতে নাস্তিকদের সংখ্যা অতি নগন্য।
এই বিশাল আসমান-যমীন, পশু-পাখি, গাছ-গাছালি, গ্রহ-নক্ষত্র সব কিছুর পেছনেই একজন আছেন। অমুসলিম বিজ্ঞানীরা যাকে একটি এক মহাশক্তি বলেন আর মুসলিমরা বলেন বলেন মহান আল্লাহ। যিনি এই মহা বিশ্ব ও তার সকল প্রাণী ও বস্তু সমূহকে সৃষ্টি করেছেণ এবং তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়াবলীর সুষম প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছেন তিনিই হলেন সেই মহান আল্লাহ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শুধু মানুষের জন্যই নয়। বরং সকল মাখলুকাতের জন্যই ব্যবস্থা করছেন। ডিম থেকে হাস, মুরগী, কুমীর, কচ্ছপ, সাপসহ অনেক প্রাণীর বাচ্চা হয়ে থাকে। আপনার দেখবেন ডিমের ভেতর দু’টি অংশ থাকে। একটি হলো সাদা, অপরটি হলুদ বা লাল। বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে ডিমের সাদা অংশ দিয়ে বাচ্চা তৈরী হয়। ডিমের ভেতরে তো আর তার মায়ের নাভির সাথে সম্পর্ক দেয়া সম্ভব নয়, এখানে তার খাবারের ব্যবস্থা হবে কিভাবে? মহান আল্লাহ এখানে তার খাবারের ব্যবস্থা করলেন ডিমের অবশিষ্ট্য হলুদ অংশ দ্বারা। এভাবে যখন ডিমের ভেতর বাচ্চা বড় হয়ে গেলো, ডিমের ভেতরের হলুদ খাবার শেষ হয়ে গেলো তখন আল্লাহ তাকে জ্ঞান দিলেন এবার তুমি দুনিয়াতে আসতে পারে। দুনিয়াতে আসার জন্য তুমি তোমার ঠোট দ্বারা তোমার চারপাশের প্রাচীরে আঘাত করো। এটা কোন চীনের মহাপ্রাচীর নয়। তুমি আঘাত করলে তা ভেঙ্গে যাবে। বাচ্চা তখন ডিমের ভেতর বসে সমানভাবে চারপাশে আঘাত করতে থাকে। একটা পর্যায়ে যখন চতুর্পাশ্ব দূর্বল হয়ে যায় তখন সে মাথা দিয়ে উপর দিকে ধাক্কা দেয়। উপরের ছাদ সরে যায়, সে দুনিয়াতে বেড়িয়ে আসে।
দুনিয়াতে আসার পর মনে হয় সে কি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। মুরগীর বাচ্চা যখন চিল দেখে তখন তার মা একটি আওয়াজ করলে সে দৌড়ে এসে তার মায়ের আচলের নিচে আশ্রয় নেয়। মুরগীর বাচ্চা আর হাসের বাচ্চা একই সাথে বড় হলেও আপনারা দেখবেন যে, হাসের বাচ্চা যখন পানি দেখে তখন সে আনন্দে নেচে ওঠে। সাঁতার কাটতে শুরু করে। তার মনে কোন ভয় নেই। সে মনে করে যে পানি মনে হয় তার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। পক্ষান্তরে মুরগীর বাচ্চা পানির কাছে নিয়ে যান, পানিতে নামবে? মরতে রাজি কিন্তু পানিতে নামতে সে রাজি হবে না। কে তাকে শিক্ষা দিলো যে, পানি তার জন্য উপযুক্ত নয়? কে তাকে বোঝালো যে, তুমি পানিতে নামবে না। পানিতে নামলে তোমার ক্ষতি হবে। যিনি তাকে এই শিক্ষা দিয়েছেন তিনিই হলেন সেই রব।
শীতকালে শীতপ্রধান দেশগুলোতে যখন অধিক ঠান্ডার কারণে পানি বরফ হয়ে যায়, অতিথী পাখীদের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করা এবং সেখানে থাকা যখন কষ্টকর হয়ে যায় তখন তারা সেখান থেকে হিজরত করে। বাংলাদেশের হাওড়-বাওর খাল-বিলে চলে আসে। আনন্দে নেচে-গেয়ে একেবারে মাতিয়ে তোলে। তাদের জন্য সরকারও নিরাপত্তা দিয়েছে। কেউ এই সকল পাখি শিকার করলে তার জন্য শাস্তি আছে। এরপর যখন শীত চলে যায় তখন কি এরা এখানে বসে থাকে? না। তারা আবার তাদের আগের স্থানে চলে যায়। কে তাদেরকে এই জ্ঞান দান করেছেন? -তিনিই সেই রব।
একটি বাবুই পাখি যখন তালগাছে বাসা বাঁধে তখন কি সুন্দর করে তারা বাসা বানায়। বাসা বানানোর পর যাতে করে স্ত্রীর মুখ দেখা যায় সেজন্য কাঁদা দিয়ে তা রং করে। এরপর জোনাকি পোকা দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করে। কারণ সেখানে তো আর বিদুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বিদুৎ সাপ্লাই দেয়া হবে না।
এইভাবে আপনারা দেখবেন যে প্রত্যেকটা প্রাণী যার যা প্রয়োজন মহান আল্লাহ তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমনকি আমাদের দেশের কুকুর গুলোর গায়ে পশম কম। বিদেশের কুকুরগুলির গায়ে পশম বেশী থাকে। কেন? কারণ সেখানে শীত বেশি। শীতের সময় মানুষ যখন কম্বল গায়ে দিয়ে শীত নিবারণ করে কুকুর গুলোর গায়ে কম্বল পড়াবে কে? সুবহানাল্লাহ মহান আল্লাহ তাদের শরীরে পশম বাড়িয়ে দিয়ে তাদের জন্য স্থায়ী কম্বলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমাদের দেশের কুকুরদেরও যদি এরকম বেশী পশম থাকতো তাহলে গরমের দিন মহিষ যেমন পানিতে সাঁতরায় তেমনি কুকুর গুলোকেও পানিতে সাঁতরাতে হতো।
হায়াতুল হায়াওয়ান বইতে দেখলাম, ঘোড়ার ঘাড়ে যে পশম কেন এই পশম? এই পশম গুলো দিয়ে সে গরম নেয়। একইভাবে ইঁদুরের যে লম্বা লেজ এই লেজ দিয়ে সে তার শরীরের এয়ার কন্ডিশনের ব্যবস্থা করে। যখন তাপ বেড়ে যায় তখন সে এই লেজ দিয়ে তার শরীরের অতিরিক্ত তাপ বাহির করে দেয় আবার যখন তাপ কমে যায় তখন সে এই লেজ দিয়ে তার শরীরে তাপ বাড়ায়। কি সুন্দর ব্যবস্থা মহান আল্লাহ করে দিয়েছেন। এজন্যই বলা হয়েছে।
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ.
অর্থ: “সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি জগত সমূহের রব।”
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১:৫১