মা' দিবস, অথচ আমার বেশি করে মনে পড়ছে বাবার কথা!
এর কারন এই না যে মার চেয়ে বাবার অবদান বা প্রভাব আমার জীবনে বেশি। এর কারন ৮ বছর হলো বাবা নেই।
৮৭--৮৮ সালের কথা। ষ্টিলের আলমারিতে গুছিয়ে রাখা বাবা'র বইয়ের সংগ্রহশালায় প্রথম হানা দিই। নেয়ামূল কোরান থেকে শুরু করে, শংকর, মাসুদ রানা,কিছুই বাদ নেই সেই তালিকায়।সম্ভবত: ভারতনাট্যমটাই বেছে নিই। সেই শুরু। তাঁর মতো পড়ুয়া মানুষ, খুব কমই দেখেছি। সেই তুলনায় সংগ্রহ খুব সামান্যই। কখনো ভাড়া করে, কখনো ধার করে বই পড়তেন। কিছুদিন বাদেই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে যখন বইপড়া কার্যক্রমে যুক্ত হলাম, সবচেয়ে খুশি হলো বাবা। ফি-সপ্তাহে এখন নতুন নতুন বই। শুরুতে দেখা গেলো, কমন পড়ে যাচ্ছে তার, তবুও আবার পড়েন। আর আমি একে একে তার সংগ্রহশালা পড়ে শেষ করছি। ছোটখাটো বইয়ের পোকা-হয়ে গেলাম আমিও। নেশায় পেলো সেবা'র বই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহ দেখে টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে বই কিনতে শুরু করি আমি। বেশিরভাগই রানা। কোনো কোনোটাতে খোলাখুলি বর্ণনা পড়ে মনে মনে কিছুটা লজ্জা লাগতো, যে হায় হায় বাপ-ব্যাটা মিলে এইই-পড়ছি!?
ঢাকায় চলে আসার পর অনেকগুলো দিন দুরত্ত্বের কারনে, বাপ-ব্যাটার দ্বৈরথ বন্ধ থাকে। ছুটিতে তার জন্যে ব্যাগ ভরে বই নিয়ে যেতাম। ২০০১-এ লম্বা ছুটিতে বাছাই করা , না-পড়া কিছু রানা আর আরো কিছু বই নিয়ে বাড়ি গেলাম। সেবার স্মলপক্স হলো আমার। ভয়াবহ অবস্থা। পাশাপাশি দুই খাট। একটায় মশারীর ভেতর আমি, আরেকটায় বাবা। সারারাত জেগে আমার কখন কি লাগে, জ্বর বাড়ে কি-না, ইত্যাদি খোজ খবর রাখেন। মাসখানেক এভাবে গত হওয়ার পর, লক্ষ্য করলাম বইয়ের ভান্ডার আরো আগেই শেষ। রাতের মাঝামাঝিতে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি।
আমার ব্যাগে তখনও একটা বই বাকি। আমি সেড়ে উঠতে থকলাম। বইটা তাকে দিলাম বের করে একদিন। বইটা তার হাতে দেয়ার ৩/৪দিনের মাথায় তার ক্যান্সার ধরা পড়লো। ওটাই ছিলো বাবার পড়া শেষ রানা। কাকতালীয় ভাবে বইটার নাম "'বিদায় রানা"।