বাঙ্গালীর মত শর্টকার্টে পারদর্শী বুদ্ধিমান জাতি সম্ভবত পৃথিবীতে আর নেই। রোড ডিভাইডার লোহার রেলিং দিয়ে দেয়া হলেও বাঙ্গালী সেটার উপর দিয়েই রাস্তা পার হবে। যখন মোবাইলে ৩০০ টাকায় ৬ মাস আর ৬০০ টাকায় ১ বছর মেয়াদ দেয়ার অফার ছিল তখন দেখলাম রাতারাতি সব মোবাইলে দোকানগুলোতে "৩০ টাকায় ৬ মাস আর ৬০ টাকায় ১ বছর মেয়াদ করা হয়" নোটিশ ঝোলা শুরু হয়েছে ছোটবেলায় ক্রিকেট খেলতাম "নাম-ব্যাটিং" পদ্ধতিতে (সঠিক শব্দটা সম্ভবত নাম্বারিং)। যে কয়জন খেলোয়াড় আছে তত পর্যন্ত নাম্বার উল্টাপাল্টা করে লিখে প্রতিটা নাম্বারের পাশে একটা করে লম্বা দাগ দেয়া হত। তারপর নাম্বারগুলো ব্যাট দিয়ে ঢেকে দিয়ে সবাই একটা করে দাগ ধরত। যার ভাগ্যে যত নাম্বার সিরিয়াল পড়বে সে তত নাম্বারে ব্যাটিং করবে। বাঁকি সবাই ফিল্ডিং আর বোলিং।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট টেস্ট থেকে করে হল ওয়ান ডে, সেখান থেকে হল টুয়েন্টি-টুয়েন্টি। যেহেতু শর্টকার্ট জিনিসটা বাঙ্গালীর কপিরাইট করা তাই তারা যে আরও শর্টকার্ট বের করবে তাতে আর আশ্চর্য্য কি!
এরকম একটা শর্টকার্ট ক্রিকেট টূর্নামেন্ট দেখলাম দিনাজপুরের বড়মাঠে। রীতিমত জেলা পর্যায়ের খেলা। পুরো জেলা থেকে আসা টিম অংশ নিচ্ছে এতে। নাম "ডাবল-ডাবল ক্রিকেট টূর্নামেন্ট"। খেলার নিয়মটা এরকম,
প্রতি "টিমে" খেলোয়াড় থাকবে দুইজন দুইজনই অলরাউন্ডার হতে হবে। এই দুইজন বাদে বাঁকী ৯ জন খেলোয়াড় দুই দলেই কমন। এবং এরা খেলা কমিটির লোক। খেলাটা ৪ ওভার করে। মাঠের একজন আমাকে বললো লিগ পর্যায়ের ম্যাচগুলো নাকি ২ ওভারের ছিল!!! দুইজন ব্যাটিং করবে আর প্রতিপক্ষ দলের দুইজন পালাক্রমে বোলিং করবে। চমক এখানেই শেষ না। এ পর্যন্ত হলে তো ঠিকই ছিল
এই খেলায় কোন ব্যাটসম্যান আউট হলে তাকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় না (রিপ্লেসমেন্ট নেই তো, মোট খোলোয়াড়ই তো দুইজন ) কেউ আউট হলে তার দলের মোট রান থেকে ৫ রান বাদ!!! এটা খুব মনে হলেও ৪ ওভারের ম্যাচে কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার। আরও নিয়ম আছে সকল প্রকার অতিরিক্ত রান দুই করে ধরা হয়, ওয়াইড বল, নো বল সব। ফিল্ডাররা যেহেতু কমিটির লোক তাই তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ফিল্ডার পরিবর্তনের ব্যবস্থা আছে। একটা ক্যাচ মিস করায় আমার সামনেই একজনকে তুলে নেয়া হল। আমি যে ম্যাচটা দেখেছিলাম সেটা ছিল টূর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ। প্রথম দল ২৫ রান করলে দ্বিতীয় দল ৩ রান করতে গিয়েই এক উইকেট হারিয়ে ফেলল। ফলে তাদের দলীয় রান হল -২। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৮ রান। প্রথম বলে ৪ মারায় হল ৫ বলে ৪ রান। তারপর পরপর ৪টা বল ডট। শেষ বল ৬ মেরে জিতে গেল দ্বিতীয় দল। দারুণ উত্তেজনাকর ম্যাচ। ১৫ মিনিটে খেলা শেষ অন্য খেলার মত এটাতেও লাখলাখ টাকার বাজী চলে। মাত্র ২ জনের দল বলে দল রেজিষ্ট্রেশনও হয় অনেক এবং রেজিষ্ট্রেশন ফীও খুবই কম। দ্রুত খেলা শেষ হয় বলে দর্শকও প্রচুর হয়। প্রচুর দর্শক মানেই প্রচুর বাজী!!! আর, বাজী শর্টকার্ট হলেও টাকা তো "শর্ট" না