আমি যখন স্কুলে ছিলাম তখন টিফিন টাইমে আমরা টিফিন বক্সের খাবার শেয়ার করতাম। শেয়ার বলতে আসলে কাড়াকাড়ি করতাম কার বাসা থেকে কি আসছে দেখার জন্য। কোচিং এ দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেলে লাঞ্চ করার কথা উঠলে শুনতে পেতাম, "আম্মা বরবটি ভাজি করসে মাছের ডিম দিয়া... আজকে তো বাইরে খামুই না।" আমার বাসায় আমরা ওয়েট করতাম শুক্রবার হবার জন্য। ওদিন ফিস্ট চলতো আমাদের বাসায়। এক গাদা হোমশেফদের মাঝেই বলতে গেলে বড় হয়েছে আমাদের এই জেনারেশনটা।
যারা আমার আম্মু কে কাছে থেকে চিনেন এবং রান্না টেস্ট করেছেন তারা জানেন আমার আম্মুর রান্নার করার শখ সম্পর্কে। আমার আম্মু প্রায়ই বলতেন, "তোরা সেটেল হলে একটা খাবারের রেস্টুরেন্ট দিবো, দেখিস আমার রান্না খেলে সব রেস্টুরেন্ট মার্কেট আউট হবে।" এই কনফিডেন্সটা আমাদের মায়েদের বেশ ভালোই ছিলো। বিজনেস না, মুলতো খাইয়ে আত্মতৃপ্তি পেতেন ওনারা।
আমার আম্মু সিদ্দিকা কবীরের বিশাল ফ্যান ছিলেন। ২০০০ এর শুরুর দিকে আমাদের মা খালাদের সিদ্দিকা কবীর দিয়েছিলেন স্বপ্ন দেখার গেটওয়ে দিয়েছিলেন আর ব্যাচেলরদের দিয়েছিলেন কিচেনের আলটিমেট বাইবেল, "রান্না খাদ্য পুষ্টি"। এরপর সিদ্দিকা কবীর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এই ফিল্ডে তেমন ইনফ্লুয়েনশাল মোটিভেটর আমি খুব বেশী দেখি নাই। কেকা ফেরদৌসীরা সেলিব্রিটি শেফ হলেও সে জায়গাটা পুরণ হয় নাই।
আমি প্রচন্ডভাবে বিশ্বাস করি কিশোয়ারের সেই স্পার্ক টা আছে যেটা একটা জেনারেশন কে তাদের স্কিল কিচেন এরিয়ার বাইরেও ছড়াতে স্বপ্ন দেখাবে। এটা আমার ভেতরের জাতীয়তাবাদের অপটিমিজম না। এটা ফ্যাক্ট। অনেকে এটাকে কলোনিয়ান হ্যাংওভার বলে ঠাট্টা করলেও এটা ফ্যাক্ট। নতুন জেনারেশনে দেশীয় কালনারিকে আর্ট হিসেবে ডাইফন করার প্রত্যেকটা প্যারামিটারকেই উনি খুব সহজে টেক্কা দিতে পারবেন যদি চান।
হার-জিত, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ, বাঙ্গালী-বাংলাদেশীর মতো স্বস্তা ডিবেট গুলো থেকে বের হতে পারলে দেখবেন কিশোয়ার এই কম্পিটিশনে যা করার অলরেডি করে ফেলেছেন। মুল চ্যালেঞ্জটা আসবে এর পরে। উনি কি এই জেনারেশনের হোমশেফদের মেন্টর হবেন... না তার সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রিটি স্ট্যাটাস নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট থাকবেন... এই নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:২৪