ছোটবেলায় বুকশেল্ফের এক কোনা থেকে পড়া শুরু করতাম৷ মাস না যেতে দেখতাম শেষ হয়ে যেতো বই রিভাইস দেওয়া। পরে আব্বু সপ্তাহে একটা বই সিস্টেম চালু করলেন। শর্ত ছিলো একটা বই শেষ করা ছাড়া অন্য বই কেনা যাবে না। এছাড়া বড় কোন অকেশনে আম্মুর থেকে গাদা গাদা বই কেনানো তো ছিলোও বটে। মুলতো এই সিচুয়েশনের ক্রেডিট বলতে গেলে প্রায় পুরোটুকুই আমার বড় ভাই। আমরা দুইজন লিটারেলি হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল, সত্যজিৎ রায় পড়েই বড় হয়েছি। তখন কে ভালো লিখে, কে কপি লিখে ওইসব বালাই ছিলো না। বই আসতো, আমাদের টার্গেট শেষ করা। এই অভ্যাসটা আমার স্কুল শেষ হওয়া অব্দি বেশ ভালোই ছিলো। কিন্তু এরপর আমি আসলে বইপত্র ঘাটাঘাটি বন্ধ করে দেই। জানি না কেন। মেইবি অন্য দিকটা বেশি লোভনীয় ছিলো।
এরপর যেদিন সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে যোগ দিলাম ভার্সিটিতে, সেদিন খুব উৎসাহের সাথে নতুন বই পড়বো বলে ক্লাসে ঢুকেছিলাম। যখন বুঝলাম আমার দ্বারা সাহিত্যের ডাইসেকশন সম্ভব না... তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আমি বই পড়ার মজা ভুলে গিয়েছি... অভ্যাসটুকু পুরোপুরি মরে গেল দেখলাম। সাহিত্যের শিক্ষার্থীদের যে স্ট্যান্ডার্ড স্টেরিওটাইপ সেটার মধ্যেও আমি পড়ি না। আমার মুখে শেক্সপিয়ার বা রবীন্দ্রনাথ আসে না.. থিওরী বলতে বিগ ব্যাং থিওরী (সিট-কম) বুঝতাম।
এই লকডাউনে অনেকেই অনেক কিছু এচিভ করেছে। আমার এচিভমেন্ট যদি কিছু থেকে থাকে তা হলো এই লকডাউনে আমি আবার বই পড়ার অভ্যাসটা রিভাইভ করতে পেরেছি। আমি জানি এইটা ব্র্যাগিং করার মতো কিছু না। কিন্তু আমার পজিশনে থাকলে আপনি ঠিকই বুঝতে পারতেন। বড় আকারের যেকোন বই আমি এক বসায় শেষ করতাম, অথচ একটা সময়ে এসে দুই চার পেজ পড়ে আর কনসেনট্রেশান ধরে রাখতে পারতাম না।
গত বছর লকডাউন শুরু হলে বেশ কিছু প্রজেক্টে কাজ করে আমার একটা ভালো ডিজপোজেবল ইনকাম হয়। বাসায় আটকে থাকায় সেটা খরচ করতে পারি নাই৷ পরে রকমারি থেকে র্যান্ডমলি বই কেনা শুরু করি কারন নতুন টাইম পাস দরকার ছিলো। প্রথম দিকে খুব উৎসাহ থাকলেও পরে নিজের ভুল বুঝতে পারি। হুট করে এক জায়গায় ম্যাসিভ কনসেনট্রেশান ধরে রাখা যে এক রাতের কাজ নয় সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাই। তবে ধীরে ধীরে এই সাত আট মাসে নিজের এই অভ্যাসটাকে অবশেষে রিভাইভ করতে পারলাম। অল থ্যাংক্স টু মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন আর এডগার এল্যান পো।
যারা বলে সুপার-মার্কেট রাইটারদের বই পড়ে খুব বেশি কিছু হয় না, তাদের জন্য পাশ্চাত্যের অভিনেতা স্যামুয়েল এল জ্যাকসন একটা কথা বলেছিলেন, "I dare you! I double dare you!"।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২১ রাত ১০:২৩