একটা সময় ছিলো যখন গ্রেটা থানবার্গ বা তার ফ্রাইডেজ ফর ফিউচারকে আমি খুব ভালো চোখে দেখি নাই। বিগত বছরগুলাতে আমার মানুষের প্রতি পার্সেপশন চেঞ্জ হয়েছে অনেক বাজে ভাবে। আমরা বিশ্বাসঘাতকতা দেখতে এখন আর অবাক হই না হয়তো একারনেই। গ্রেটার ব্যাপারে কনসার্নড না হবার একটা বড় কারন ছিলো সে "আশা" জাগাচ্ছিলো সমগ্র পৃথিবী জুড়ে। "আশা" ওয়ার্ডটাকে আমি অনেকটা নেগেটিভ ভাবেই দেখি। আমরা অনেককেই দেখি আশা দেখিয়ে হারিয়ে যেতে। "আশাভঙ্গ" হলে কেমন লাগে তা আসলে বলে বুঝানো যাবে না। তাই আমি রীতিমতো তার কর্মকাণ্ড বা নিউজগুলো এড়িয়ে চলতাম। সে তার কাজ করুক। সব ধরনের কাজের দরকার আছে। কিন্তু আমি তার ছায়াতে পা মাড়াতে রাজি ছিলাম না।
তবে বেশ লম্বা সময় ধরে আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম। নিউজফিডে গ্রেটা একটা ভালো প্রভাবই বিস্তার করে। এবং তা এভোয়েড করার উপায় নেই। সেগুলো ফলো করলেই দেখা যায় সে প্রায়শই তার ফেম বা একভিজিম কমার ভয়ে কখনো তার মত পরিবর্তন করেনি। জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও মৌলিক অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক সো কল্ড সেলিব্রিটিরা যেখানে ব্র্যান্ড হারানোর ভয় করে কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ হতে ভয় পায়, ঠিক সেখানে গ্রেটা তার মেরুদণ্ড শক্ত রেখে মতামত রাখে। এখন পর্যন্ত দমে যেতে দেখি নাই তাকে। ট্রাম্পের মতো ফ্যাসিস্ট যখন একটা বাচ্চা মেয়েকে তার হিংসার টার্গেট বানাতে চায় তাতেই বুঝা যায় গ্রেটা তার অবস্থানে কতটুকু অনড়।
হয়তো অনেকে বলবে, "এইগুলা নিয়ে মাথা ঘামায়ে লাভ কি? এলিট দেশদের কাজ কারবারে আমাদের কি? প্যারিস চুক্তি নিয়ে আমরা কেন লাফাবো?"। আমি অন্যদের ব্যাপারে আসলে জানি না। আমার অনেক কারন আছে। আমার জন্মস্থান উপকুলে। এখানটায় দুর্যোগ আসা লাগে না, জোয়ার ভাটা আর নদী ভাঙ্গনে পীড়িত হয় লাখো মানুষ। আর প্রতিবছরে ধেয়ে আসা দুর্যোগ গুলা তো আছেই। কিন্তু আমাদের কথা আসলে শোনা যায় না।শুনতে চাওয়া হয় না।
তাই ক্লাইমেট জাস্টিস নিয়ে আমাদের কথা মেইনস্ট্রিমে শোনাবার জন্য অবশ্যই এলিট দেশের সেলিব্রিটি স্পোকসপার্সন খুব বেশি কার্যকর। সেটা যদি একজন স্কুল পড়ুয়া ক্ষ্যাপাটে টিনএজার হয় তাতে আমার-আপনার কোন আপত্তি থাকার কথা না। ভবিষ্যতে কি হবে জানি না। কিন্তু এখন এই সময়ে গ্রেটা যেই রোলটা প্লে করছে সেটার ইম্প্যাক্ট অনেক ম্যাসিভ। এবং এর সাথে আশা খ্যাতিটা সে পুরোপুরি ডিজার্ভ করে। আমি কোনভাবেই তার কর্মকান্ডকে পাবলিসিটি স্টান্ট হিসেবে দেখি না। সেটা ভারতের কৃষক আন্দোলনে সমর্থন হোক, কিংবা ট্রাম্পের সাথে টুইটারে খুনসুটি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:১৮