"ঘরে বসে Spoken English" বেস্টসেলার হওয়া পরবর্তী পাবলিক আউটরেজ স্বাভাবিক হলেও বইটা বেস্টসেলার হবার যথেষ্ট কারন রয়েছে বলে আমি মনে করি। না, বইটার রিভিউ দিচ্ছি না। শুধুমাত্র কিছু ইন্ডিকেটর নিয়ে স্বল্প আলাপ দিচ্ছি। প্রথমত দেশের একটা বিশাল জনসংখ্যা বিসিএস নামের একটা ড্রাগে আসক্ত। শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যাটাও নেহাত কম না। চাকরির বাজারে টিকতে হলে হাইলি এফিশিয়েন্ট হতে হবে বলে কর্পোরেট ইনফ্লুয়েন্সাররা অলরেডি পরিষ্কার করে দিয়েছে। আর হাই এফিশিয়েন্ট হতে গেলে একজনকে বেশ কিছু দক্ষতা জানতে হয় যেটার মধ্যে ইংরেজি বলতে পারাও একটা। তাই এই টাইপের বইয়ের ডিমান্ড কখনই কম ছিলো না। আমার নিজের বাসায়ও র্যাপিডেক্সের একটা হলুদ রঙের স্পোকেন ইংলিশের বই ছিলো। তবে এই বইগুলার ট্রিটমেন্ট কখনই বইমেলায় বেস্টসেলার হবার মত ছিলো না।
অনেকেই বলে এখন আর হুমায়ুন আহমেদের মত সুপারমার্কেট রাইটার বাজারে নাই তাই মানুষ ফিকশন বা অন্যান্য মৌলিক সাহিত্য কিনতে চান না। কিন্তু সত্যি বলতে কান বন্ধ করলেও সাদাত হোসেন, মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন.... ইভেন আরিফ আজাদের মতো অনেকেরই বেশ নাম ডাক শুনা যায়। প্রবলেমটা আসলে লেখক না থাকা নয়, প্রবলেমটা মুলত মৌলিক সাহিত্যে সাধারণের অনিহা। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা গাইড বই গিলে নেয় ঠিকই কিন্তু একাডেমিক বাদে অন্য বই পড়তে কেউ তাদের উৎসাহ দেয় না। তার উপর "বড় হয়ে লেখক হতে চাই" আসলে কোন ক্যারিয়ার প্ল্যান না। এছাড়া "লেখকরা না খেয়ে মরে" টাইপ কথাগুলা কিন্তু প্রচন্ড মেইনস্ট্রিম।
বইমেলার বেস্টসেলারগুলো আগে মানুষ বিনোদনের জন্যই পড়তো। বিনোদনের মিডিয়াম এখন চেঞ্জ হয়েছে। ডিজিটাল কন্টেন্ট এর দিকে সবাই ঝুঁকেছে। প্রচারে প্রসারের নীতি আগেই ছিলো। এছাড়া আগের দিনের মত শিক্ষকগণের জনপ্রিয়তার মানদন্ড জনসাধারণ শুধুমাত্র সোশ্যাল রিফর্ম কিংবা গবেষণার কন্টেক্সটে রাখতে চান না, বর্তমানে তাদেরকে বিশাল মাত্রার সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্যাটাসও মেনটেইন করতে হয়। পড়ালেখার ডিজিটাল কনটেন্ট হওয়া হয়তো সময়ের দাবি, কিন্তু এই মিডিয়ামটার মনিটাইজেশন বা আর্থিক বিস্তারের বিবর্তন নিঃসন্দেহে অবাক করার মতোই।
নেটফ্লিক্সের একটা ডকুমেন্টারি আছে, নাম হচ্ছে "দ্য সোশ্যাল ডিলেমা"। এই ফিল্মে একখানা ডায়ালগ আছে যা অনেকটা এমন, " যখন আপনি কিছু বিনামুল্যে পান তখন বুঝে নিবেন যে পণ্যটা আসলে আপনি নিজে৷" সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষাকে আপনি ফ্রি কনটেন্ট হিসেবে বিনামূল্যে পান, যেখানে সেম জিনিস শিখতে আপনাকে টিউশন নিতে হতে পারে। ফ্রি কন্টেন্ট নেবার পর একসময় দেখবেন একই শিক্ষক তার কিছু মার্চেন্ডাইজ বাজারে ছাড়ে৷ মার্চেন্ডাইজ হিসেবে বিভিন্ন পেইড অনলাইন কোর্স আর বিভিন্ন বইও বাজারজাত করতে দেখা যায়।
তাহলে এবার একটু চিন্তা করা যাক। আপনি একজন শিক্ষিত বেকার, আপনার শিক্ষা ব্যবস্থা আপনাকে ইংরেজি বলতে পারার মত একটা বেসিক দক্ষতা শিক্ষা দিতে পারে নাই। মৌলিক সাহিত্য কে আপনি টাইম ওয়েস্ট হিসেবে দেখসেন কারন সবাই বলে লেখকরা না খেয়ে মরে। আজকে সকালে দেখলেন আপনার অনলাইন আইডল বিখ্যাত মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শরিফ স্যার তার দশ লাখ ফলোয়ারের জন্য একটা বিশেষ স্পোকেন ইংলিশের বই বের করসেন যেটা নাকি চাকরি পেতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে বলে শরিফ স্যার গ্যারেন্টি দিয়েছেন।
কি? কিনবেন না বইটা? নাকি মৌলিক সাহিত্য কিনবেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৫৩