বিন্দু আপুকে নামিয়ে দিয়ে দুজনে হোটেলে ফিরে এলো। রুম সার্ভিস নতুন বিছানার চাদর বিছিয়ে গেছে। উজ্জ্বলের ইচ্ছে করছিলো চার হাত পা চার দিকে ছড়িয়ে শুয়ে থাকতে। চার হাত পা চারদিকে ছড়িয়ে কি জীবিত অবস্থায় কোন মানুষের পক্ষে ঘুমানো সম্ভব!
একে একে দুজনে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লো। মহাখালীতে যাওয়ার কোন জায়গা তাদের দুজনেরই জানা নেই। উজ্জ্বল এখনো হাতিরঝিল লেক দেখেনি। যাওয়া গেলে মন্দ হতো না। কিন্তু এত রাতে যাওয়ার এনার্জি পেলো না। রাস্তায় এখনো অনেক জ্যাম। সাকি ঠান্ডা কিছু খেতে চায়। ধারে কাছে একটা একটা ভাতের হোটেল ছাড়া কিছুই খুঁজে পেলো না। এখন আবার ক্যাপ্টেইনসে যেতে ইচ্ছে করছে না।
এক দোকানে বসে ঠান্ডা কয়েক গ্লাস পানি খেলো উজ্জ্বল। সাকি একটা ফ্রুটো নিয়ে খেতে লাগলো। উজ্জ্বলকেও সাধলো খাওয়ার জন্য। কিন্তু অমানবিক তথা বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে উজ্জ্বল ভালো করেই জানে আমের জ্যুসগুলো কত ভাগ আম থাকে! সে পারতপক্ষে এগুলোকে এভোয়েড করে। সে এক কাপ চা খেতে চাইলো। দোকানিকে জিজ্ঞেস করলো, মামা চাপাতি গরম তো?
কেটলির কালো নল দিয়ে ধোঁয়া উড়ছে। দোকানি বিরক্ত হলো। "দ্যাকছে ধোয়া উড়ছে। চায়ের পানি ঠান্ডা হয় কিভাবে?"
"ভেজালের এই যুগে সবই সম্ভব মামু। ধোয়া উড়ছে কিন্তু দেখা যাবে পানি তত গরম না।'' উজ্জ্বল জবাব দেয়।
''জীবনে এই প্রথম শুনলাম ধোয়া উড়লেও পানি ঠান্ডা থাকে।" দোকানী গজগজ করে।
"জীবনে আরো কত কি দেখার বাকি আছে মামা।" উজ্জ্বল শীতল গলায় উত্তর করে।
চায়ে চুমুক দিয়েছে এই সময় একটা মহিলা এসে করুন গলায় জিজ্ঞেস করলো, "স্যার দুটো টাকা দেন। বাচ্চাটাকে ভাত খাওয়াবো।"
বেশ সুস্থ সবল মোটাগোটা মহিলা। সাথে কোন বাচ্চা দেখতে পেলো না উজ্জ্বল। অন্য সময় হলে জিজ্ঞেস করতো বাচ্চা কই? কিন্তু আজ জিজ্ঞেস করার রুচি নেই। রুচি ডাল ভাজা খাওয়া দরকার মনে হচ্ছে। সে চুপচাপ বসে থাকলো। প্রথম প্রথম সে ঢাকা এসে এরকম করুন গলায় কেউ সাহায্য চাইলে কিছু না কিছু দান করতো। যদিও তখন মানিব্যাগ অনেক বেশী চ্যাপ্টা থাকতো।
মহিলা দুটো সরে গিয়ে খোশ মেজাজে গল্পো করতে করতে চলে যাচ্ছে। মুখের করুন ভাব মুহূর্তে উধাও। সব ব্যবসা। এদের জন্যই দেখা যাবে সত্যিকারের ক্ষুধার্ত ব্যক্তি খিদের জ্বালা মেটাতে দুটো টাকা কোথাও পাচ্ছে না।
রাতের খাওয়া দরকার। কিন্তু সাকি জানালো সে রাতে কিছুই খাবে না। ঢাকার খাবার সে খেতে পারছে না। উজ্জলেরও মনে হলো নুডুলস খাওয়ার পরেও মনে হচ্ছিলো ক্ষুধা রয়ে গেছে কিন্তু এখন সেটা অনুভব করছে না। রাস্তার পাশ থেকে দুটো হাঁসের সিদ্ধ ডিম কিনে নিলো। খেতে খেতে দুজনে হাঁটতে লাগলো। সাকি নাকি জীবনে এই প্রথম রাস্তা থেকে ডিম কিনে হাঁটতে হাঁটতে খাচ্ছে। সে খুশীতে টগবগ টগবগ করছে। উজ্জলের জন্য এ নতুন কিছু না। সে অন্তত হাজার খানেক বার রাস্তা থেকে ডিম কিনে খেয়েছে। গত শীতের দিকে লিভারে চর্বি জমায় সিদ্ধ ডিম খাওয়া কিছুদিনের জন্য বাদ দিয়েছিলো। এখন সেই চর্বি দূর হওয়ায় সে আবার ইচ্ছেমত খাওয়া শুরু করেছে।
হোটেলে ফিরে এসে দুজন শুয়ে পড়লো। দুজন দুই বিছানায়। সাকি বকবক করে নানা গল্প করছে। উজ্জ্বলের বেশ ঘুম পেয়েছে। তার ঘুমের ঝিমুনি চলে আসছে। পাশের বিছানা থেকে সাকি ডাকছে, "ভাইয়া, ও ভাইয়া, ঘুমালেন নাকি?"