ফার্স্টফুড শপ থেকে বেরিয়ে বিন্দু আপা ঊজ্জ্বলকে বললো, "মহাখালী মোড়ে গিয়ে দেখবি হোটেল আছে একটা। হোটেল মহাখালী। ওটাতে সাকিকে তুলে দিয়ে আয়।"
"সাকিকে তুলে দিয়ে আসবে মানে!" সাকি বাঁধা দেয়। "বড় ভাইয়াকেও আমার সাথে থাকতে হবে।" শুধু ভাইকে রাখতে চাচ্ছিস কেন আপাকেও থাকতে বলতে পারিস বলে বিন্দু আপা সরল ছেলেটাকে আটকে দিতে পারতেন। সারাদিন অফিস করার পর বিন্দু আপা বেশ ক্লান্ত ছিলেন। ঊজ্জলও ক্লান্ত। সাকিরই শুধু ক্লান্তি নেই। অথচ গতরাতে সারা রাত বাসে জার্নি করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসে আজ সারাদিন অফিস করেছে। তিনজন গল্প করতে করতে মহাখালী মোড় পেরিয়ে এলো। হোটেল মহাখালীর সামনে দাঁড়িয়ে বিন্দু আপা বললো, "আমি এখানে দাঁড়াচ্ছি। এত রাতে হোটেলে ঢুকবো না। তোরা গিয়ে রুম ঠিক করে আয়।"
ঊজ্জ্বল একটু চুপসে গেলো। সে এসব হোটেল টোটেল ঠিক করতে পারে না। রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন এসব জায়গায় সে জাস্ট চাবি নিয়ে হোটেল রুমে গিয়ে ঢুকেছে, রুম ভাড়া টাড়া করার দ্বায়িত্ব সব বন্ধুরাই করেছে। সে মিন মিন করে বিন্দু আপাকে বললো, "চলোনা। লোকাল গার্ডিয়ান হিসেবে না হয় গেলে।" বিন্দু আপা রাজি হয় না। রাজি না হওয়ার পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে এটা ঊজ্জ্বল বোঝে। অগত্যা সে সাকিকে সাথে নিয়ে ভিতরে যায়। মার্কেটের মধ্যে দিয়ে কিছুটা গেলেই দোতলা ওঠার সিড়ি। সিড়ি দিয়ে ওঠার পথেই বিশাল একটা আয়না লাগানো। বেশ বড় বিম্ব প্রতিফলিত হচ্ছে। এটা অবতল নাকি উত্তল দর্পন উজ্জ্বল মনে করার চেষ্টা করলো। ইন্টারমিডিয়েটে পড়া ফিজিক্স সব ভূলে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
ডেস্কে সুদর্শন একটি যুবক দাঁড়িয়ে। চেহারায় একটা মাধুর্য্য আছে। অনেক সময় দেখা যায় কর্কশ টাইপের কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সেক্ষেত্রে উজ্জ্বল কথা বলতে বিব্রত বোধ করে। উজ্জ্বল নিজেকে বেশ স্মার্ট ভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করলো। মুখের হাসি হাসি ভাবটাকে একটা কঠোর করে জিজ্ঞেস করলো "রুম আছে?''
অর্থহীন একটা প্রশ্ন। আরে হোটেলে রুম তো থাকবেই। খালি আছে কিনা সেটাই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন।
রুম খালী আছে। উজ্জ্বল দেখতে চাইলো। চিটাগাঙে নিউমার্কেটের সামনে হোটেল গেস্ট ইনে না দেখে রুম নেয়ায় উজ্জ্বল আর তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রেন্ড একবার মহা শিক্ষা পেয়েছে। একই ভূল সে বারবার করতে চায় না। ১২৪, ১২৫, ১২৭ নং রুম দেখে তারা ১২৫ নং রুম টাকে নিলো। মাঝারী রুম। দুটো সিঙ্গেল বেড, মাঝ খানে একটা ছোট টিপয় এবং চেয়ার। কাউন্টারে ফিরে এসে উজ্জ্বল কিছুটা বার্গেইন করে রুমভাড়া ৬০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় নামালো। রুম এটেন্ডেসকে বলে দিলো রুমে এয়ার ফ্রেশ্নার ছিটিয়ে নতুন বেড কাভার দিতে।
সাকিকে সাথে নিয়ে নিচে নামলো। বিন্দু আপা বললো, "কিরে এত টাইম লাগালি কেন তোরা?"
উজ্জ্বল বলে, আরে রুম ঠিক করা কি চাট্টিখানি কথা!
তিনজনে রিকশা করে জাহাঙ্গীর গেটের দিকে গেলো। বেরসিক ট্রাফিক সার্জেন্ট গেটের বেশ আগেই রিকশা থামাতে বাধ্য করলো। পায়ে হেটে ওভার ব্রিজ পার হলো তিনজন। বিন্দু আপা এখান থেকে রিকশা নিয়ে বাসায় যাবেন। বারবার বললেন তাদেরকে ছেড়ে যেতে তার একদম ইচ্ছে করছে না। ঊজ্জল বললো, "তাড়াতাড়ি যাও, না হলে দেখবে দুলাভাই অভিমান করে বসে আছে।"
আপা দুজনের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। উজ্জ্বল সাকিকে নিয়ে ফিরে আসছে। এই সময় চমৎকার বাতাস ছাড়লো। উজ্জ্বল বলল, "এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি।"