ক্রিং ক্রিং...ক্রিং ক্রিং..
-হ্যালো।
-বাবুনি কি করো?
-এইতো কিছু না,শুয়ে আছি।
-ওহহ!!তাইলে আমি চলে আসি,দুইজন এক সাথে.....
-সবসময় দুষ্টুমি না?আচ্ছা কি বলবা?
-থার্টি ফার্স্ট নাইট এখনো আসছে না কেন?আমার তো আর তর সইছে না।
-ওমা!এতো অধৈর্য হওযার কি আছে?আর কয়েকটাদিন পরই তো।
-তোমার কাছে কয়েকটা দিন তবে আমার কাছ ঢেঋ দেরী মনে হচ্ছে।তোমাকে যে কবে প্রাণ ভরে দেখবো।
-আজব!আমাকে কি দেখো নাই?
-দেখছি,তবে এই দেখা সেই দেখা না।এইটা
অন্যভাবে দেখা।তোমার দেহের প্রতিটা ভাজের ঘ্রান নিতে দেখা.....
-এই দুষ্টু,একদম পঁচা কথা বলবা না।আমি কিন্তু ফোন রেখে দিবো।
-তুমি আমার,আমি তোমার এইখানে দুষ্টুমির কি আছে?আচ্ছা তুমি মানসিকভাবে প্রস্তুত তো?
-হ্যা,তবে কেন যেন ভয় লাগছে।
-ধূররর বোকা,ভয়ের কিচ্ছু নাই,আমি আছি তো।তুমি লাল শাড়িটা পরবা।বাকি গুলো মিল করে পরবা আর ওইগুলা...
-এই এই আমি কিন্তু এখনই ফোন রাখবো।
-আচ্ছা বায়।ভাল থেকো।
.
.
দীর্ঘ রসালাপের কিঞ্চিত অংশতে বিরতি পড়ল।
থার্টি ফার্স্ট নামক পৈশাচিকতার কয়েকদিন আগেই এইভাবেই ফোনালাপে ব্যস্ত মোখলেছ আর জরিনা।
মোখলেছ তার বন্ধুর মাধ্যমে কক্সবাজারের অভিজাত হোটেলে রুম বুকিং দিয়ে রেখেছে।দম্পতি ছাড়া নাকি কাউকে রুম ভাড়া দেওয়া হয় না,তবে মোখলেছের বন্ধুর গুজে দেওয়া কচকচে কয়েকটা নোটে তাও হয়ে গেছে।
এতোদিন ধরে জরিনার সাথে মোখলেছের প্রেম।কত টাকা উড়িয়েছে মোখলেছ এই জরিনার মন পেতে।সব টাকার বৈধতা দিতে তাদের প্রেমের স্বীকৃতি দিতে মোখলেছ এখন উঠে পড়ে লেগেছে।সেই মাহেন্দ্রক্ষণ বোধহয় থার্ট ফার্স্ট নামক বিভীষিকাময় রাতের চেয়ে ভাল হয় না।জরিনা যে প্রথম প্রথম একটু আধটু ভাব নিতো তার হিসাবও নেওয়ার সময়ও বুঝি চলে এসেছে।
.
.
পহেলা জানুয়ারি।
পত্রিকার শিরোনাম:
"নারীর শ্লীলতাহানি"
"নারী লাঞ্ছিত"
"তরুনীর বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার"
"যুবতী ধর্ষিত"
.
আর অনলাইন পত্রিকায় খবর আসবে:
"থার্ট ফার্স্ট নাইটের নামে এই কি করলো তরুন-তরুনী (ভিটিও সহ)"
ব্লা ব্লা ব্লা।
.
.
হয়তো পত্রিকার শিরোনামের নিচে জরিনার বিবস্ত্র শরীরটার ছবি থাকবে কিংবা ওই ভিটিওর ভেতরে দেখা যাবে মোখলেছ-জরিনার উদ্দাম আদিম খেলা।
আর আমরা?
.
সেই থেকেই যে আম জনতার ভূমিকায় ছিলাম তাই থাকবো।
হয়তো ক্ষোভ,দুঃখ,হতাশা মিলিয়ে কলম কিংবা কি-বোর্ড চেপে কয়েক ছত্র লিখবো।
ভাগ্যদোষে ওই জরিনা আমাদের বোন কিংবা মেয়ে হয়ে গেলে ফুপিয়ে কেদে বলবো"অভাগিনী,এই তুই কি করলি?আমাদের ছেড়েই চলে যেতে পারলি?"চোখের জল মুছে হয়তো কবর গড়ে দিবো।
.
আহত বিবেক,অসহায় জাতি।
কে থামাবে এই বর্বরতা???
কে রুখবে এই অশ্লীলতা???
কে তাড়াবে এই পৈশাচিকতা???
.
প্রশ্ন কার কাছে ছুড়ে দিচ্ছি??
জরিনাতো আমার বোন,আমার মেয়ে,আপনারও কি মেয়ে কিংবা বোন নন??
মোখলেছ আমারও ভাই,আপনার ভাই হিসেবেও একটু কল্পনা করুন।
মনে কি একটু খারাপ লাগার তৈরী হল?
আসুন রুখে দাড়াই,প্রতিরোধ গড়ি!
নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিরোধ গড়ি,প্রতিরোধ গড়ুন।
যদি তাই না পারি,তাই না পারুন
.
তাহলে জানুয়ারিতে রাস্তাঘাটে,নালা-নর্দমা কিংবা কুকুরের মুখে অপরিপক্ক,অপুষ্ট মানব ভ্রুণ দেখার অপেক্ষায় থাকি,অপেক্ষায় থাকুন।
দেখে হয়তো চোখের কোণে দু-ফোটা অশ্রুও জমতে পারে।
মুছার জন্য এক টুকরা টিস্যূ হাতের কাছেই রাখি,রাখুন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৬