ভেলোর যাওয়ার আগে ঠিক এই শিরোনামে আমি গুগল করেছিলাম, কিছু না পেয়ে সেদিনই ঠিক করেছিলাম এসে লিখব। অনেকদিন ধরে লিখবো বলে ভাবছি, কিন্তু সময় করে লেখা হয়ে ওঠে না। আমি ভেলোর গেছিলাম ২০১৬ সালের শেষ দিকে মায়ের চিকিৎসার জন্য। যেহেতু ভারতে যাওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে, সেজন্য বেশ সুবিধা হয়েছিল।
ভিসা পাওয়ার আগেই আমরা কলকাতা টু চেন্নাই বিমান টিকেট করেছিলাম। একমাস আগে টিকেট কাটার কারণে ভাড়াটা খুব বেশি পড়নি। দুজনে ১১০০০ বাংলাদেশি টাকা। আপনার চাইলে ট্রেনেও যেতে পারেন। ১০-১৫ দিন আগে টিকেট কাটলে চেন্নাই এক্সপ্রেস বা করমন্ডল এক্সপ্রেস এ দুজনে নন এসি ২০০০ টাকার মতো আর এসি ৫০০০ টাকার মতো পড়বে তবে হ্যা, টিকেট কিন্তু অবশ্যই কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে কাটতে হবে।
তো যাই হোক ফ্লাইটের নিদিষ্ট তারিখের আগের দিন বেনাপোল দিয়ে ভারত ঢুকে পেট্রাপোল থেকে অটোতে ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে চলে গেলাম বনগা স্টেশন। সম্ভবত ৩০ রুপি করে টিকেট করলাম। ঘন্টা তিনেক পর দমদম স্টেশনে নেমে পড়লাম। যারা ট্রেনে টিকেট করবেন তারা হাওড়া বা শিয়ালদাহ স্টেশনে নামবেন। পাশে একটা হোটেলে থেকে সময়মতো ট্রেন ধরবেন। আমরা দমদমে হোটেল টাইটানে ছিলাম, একরাত ১০০০ রুপি।
বিকাল ৫ টায় ফ্লাইট ছিলো আমরা ১২ টায় হোটেলে চেক আউট করে দুপুরে খেয়ে হেটেই এয়ারপোটে গেছিলাম, ওখান থেকে এয়ারপোট ১ কিলোমিটার মত হবে। ঘন্টা দুয়েকের মত সময় লাগে আকাশপথে। সাতটার দিকে আমরা চেন্নাই এয়ারপেোটে নামি। কেউ কেউ চেন্নাইয়েই যায় চিকিৎসা করাতে যেমন অ্যাপোলো হাসপাতাল, শংকর নেত্রালয় এম মত বিখ্যাত হাসপাতাল চেন্নাই শহরেই, একটা অটো ধরে এয়ারপোট থেকে খুব সহজে এসব হাসপাতালে যাওয়া যায়, চেন্নাইয়ে সাধারনত তামিল ভাষা চলে, এজন্য একটু বিড়ম্বনা পোহাগে হতে পারে।
আমরা যেহেতু ভেলোর যাব, নতুন জায়গা আবার অল্প খরচে যেতে হবে তাই আমরা ট্রেনে গেছিলাম, এয়ারপোট থেকে অটোতে চেন্নাই সেন্ট্রাল জংশন, সেখান থেকে কাডপাটি স্টেশনের টিকেট কাটতে হবে। কাডপাটি স্টেশনে পৌছায়তে সময় লাগবে ঘন্টা তিনেক। সেখান খেকে বাসে করে ভেলোর, ৩০ মিনিটের পথ।
আবার চেন্নাই কয়েমবেডু বাসস্টপ থেকে সরাসরি ভেলোর যাওয়া যায়। এতে খরচ ও সময় দুটোই বেশি লাগে।
আমরা রাত ১২ টার দিকে ভেলোর ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজে পৌছায়। হাসপাতালের আশে পাশে শুধু আবাসিক হোটেল আর হোটেল। সামর্থ অনুযায়ী যে কোনো দামের হোটেলে থাকতে পারবেন। তিন বছর আগের কথা, আমরা যে হোটেলে উঠেছিলাম, ভাড়া ছিল একদিন ২০০ রুপি।
পরদিন খুব ভোরে আমরা ভারতের বাইরের রোগীদের জন্য আন্তর্জাতিক একটা ডেস্ক আছে, সেখানে গেলাম। ছোট ডাক্তাররা প্রাথমিক সমস্যাগুলো শুনে কোন ডিপার্টমেন্টে যেতে হবে তা ঠিক করে দেয় সাথে একজন ডাক্তারের এপোয়েনমেন্ট, কপাল ভালো থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে পেয়ে যাবেন। আমাদের আগেই এপোয়েনমেন্ট করা ছিল। তাই সমস্যা হয়নি। ও আরেকটা কাজ করা লাগে, হোটেল থেকে একটা ফরম পুরন করে ভেলোর পুলিশ স্টেশনে রিপোর্ট করা বাধ্যতামূলক, নইলে বাইরের রোগী ডাক্তাররা দেখে না।
পরেরদিন আমাদের দুইটা ডিপার্টমেন্টে অ্যাপয়নমেন্ট ছিল, খুব ভোরে গিয়ে প্রথমটা কাভার করলেও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২য়টিতে ডাক্তার দেখাতে রাত ৮টা বেজে গিয়েছিল। ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ এর ডাক্তাররা যত রাতই হোক ঐ দিনের সব রোগী দেখে তবেই চেম্বার ছাড়েন, এটা একটা সুবিধা, তবে রোগীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এখানে যাওয়া মানে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত হাসপাতালে থাকা লাগে।
আমরা ছিলাম ১৫ দিন এর মধ্যে এক রবিবারে আমি ভেলোর ফোর্ট, নারায়নের স্বর্ণমন্দির দেখতে গেছিলাম, আরেকদিন পাহাড়ে উঠেছিলাম। কাজ শেষ হলে আমরা ট্রেনে করে ফিরেছিলাম। টিকেট তাৎক্ষনিক পাওয়া যায় না, পরে তৎকাল নামে একটা সিস্টেম আছে ট্রেনের টিকেট কাটার জন্য, যে টিকেটগুলো অন্যান্য যাত্রী ক্যানসিল করে প্রতিদিন সকালে সেগুলো ইন্ডিয়ান রেলওয়ে অনলাইন নিলামে তোলে একেই বলে তৎকাল, আমারা চেন্নাই এক্সপ্রেসে তৎকাল (টিকেট নিলাম) টিকেট কাটলাম। ৭৮৫ রুপির টিকেট কাটলাম ২২০০ রুপি দিয়ে।
ভোর ৫টায় ট্রেন ছিলো চেন্নাই সেন্ট্রাল জংশন থেকে। রাত ৩ টায় ভেলোর থেকে সিএনজিতে করে চলে এলাম চেন্নাই সেন্ট্রালে। যথাসময়ে ট্রেন ছাড়লো, সম্ভবত ৩৬ ঘন্টা পর হাওড়া স্টেশনে নামলাম আমরা মা-ছেলে।
চেন্নাইয়ে চিকিৎসার পর মা বেশ ভাল আছে, এর মধ্যে আমি বেশ অসুস্থ হয়ে এবছরের প্রথমদিকে গেছিলাম এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, হায়দ্রাবাদ এ। সেটা নিয়ে লিখবো আরেকদিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২১