বাংলাদেশের ইতিহাসের এরকম নির্মম সত্যের পাশাপাশি গৌরবময় ইহিহাসগুলো জীবন্ত হয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর সংগ্রহশালায় ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের তৎকালীন ছাত্র তুহিন মালিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ মার্চ, ১৯৯১ সালে ‘ডাকসু সংগ্রহশালা’র আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয় । ডাকসুর ইতিহাস সংগ্রহের দায়িত্বভার দেয়া হয় সিনিয়র অ্যাটেনডেন্ট গোপাল চন্দ্র দাসকে ।
‘ডাকসু সংগ্রহশালা’কে অনেকে ‘গোপালের সংগ্রহশালা’ নামেও চিনেন । প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মাত্র নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও ষাটের দশক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে অসামান্য কীর্তির মূল্য তাঁর নিকট প্রতিভাত হয় । একজন সাধারণ পিয়ন হয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বড় সংগ্রহ গড়ে তোলেন । নিজের বাসায় ঠাঁই হচ্ছিল না দেখে পরবর্তীতে তুহিন মালিকের আবেদন এবং অনেকের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে আজকের এই ‘ডাকসু সংগ্রহশালা’ ।
সংগ্রহশালার পশ্চিম গেট দিয়ে ঢোকার পথেই একজন দর্শনার্থী থমকে দাঁড়াবে গেটের ডানপাশে একটি ফলকে খচিত মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শহীদবৃন্দের তালিকা দেখে। প্রবেশের পর একটু এগোলেই চোখে পড়বে সেই ১৯৫২ সালের স্মৃতিবিজড়িত আমগাছের গুড়ি, যে আমতলা থেকে সর্বপ্রথম ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের হয়।
এভাবে এই সংগ্রহশালার প্রতিটি পড়তে পড়তে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য। দুর্লভ সব আলোকচিত্র, ঐতিহাসিক মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী, পোস্টার, দলিল প্রভৃতির পাশাপাশি তৈলচিত্র, ম্যুরাল, টেরাকোটায় পরিপূর্ণ এই সংগ্রহশালা ।
‘৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর সামরিক আইন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কথা বললেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা ডাকসুর কথা চলে আসে। এই ইহিহাসকে কাছ থেকে জানার ও দেখার তৃষ্ণা মেটাতে পারে দুর্লভ সংগ্রহগুলো ।
প্রথমেই বেশ বড় বড় আকারের কয়েকটি কোলাজ ছবি দৃষ্টি আটকাবেই । দুর্লভ সংগ্রহগুলোর মধ্যে রয়েছে ডাকসুর আজীবন সদস্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের ছবি, ভাস্কর্য, ম্যুরাল প্রিন্ট, পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের ভিত্তি প্রস্তর ফলক, ১৯৪৮ সালের বাংলাভাষার প্রচারপত্র, ১৯৬৯ দলিলাদি, ৭০ জ¦লোচ্ছাসের দলিলাদি, ৭১-এর ২৫ মার্চের ঘটনাবলীর সংগ্রহকরণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুজিব আগমনের দাওয়াত পত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্যাড, ৯০-এর অসংখ্য দলিল, জনতার উপর নিক্ষিপ্ত গুলির খোসা প্রভৃতি ।
মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই প্রতিদিন ভীড় করে এই সীমিত পরিসরের স্থানটিতে । সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত এ সংগ্রহশালা উন্মুক্ত থাকে দর্শনার্থীদের জন্য। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারও খোলা থাকে। ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল থেকেও ছাত্র-ছাত্রীরা প্রায়ই দেখতে আসেন এই সংগ্রহশালা। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি লিখেও যোগাযোগ করেন। এছাড়া বিদেশী পর্যটকও আসেন মাঝে মধ্যে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৩৪