ভূমিকা
প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠ এখন রেডিওতে। তার চাওয়া-পাওয়া তার ইচ্ছা সে নিজেই প্রকাশ করছে। জমির আলে বসে সমাধান আনছেন চাষের। ঘরে বসে সোচ্চার হচ্ছেন প্রতিবাদে। প্রকাশ করছেন নিজের সাংস্কৃতিক প্রতিভা। সব মিলিয়ে প্রান্তিক মানুষ তার কণ্ঠস্বর তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রান্তিক মানুষের এই কণ্ঠস্বর কমিউনিটি রেডিও। কৃষিজীবী, শ্রমজীবী, চরের মানুষ কিংবা পল্লীর স্বভাবকবি, দুর্যোগে লড়াই করা উপকূলবাসী। অথবা সুবিধাবঞ্চিত নারী।, সকলে তার অবস্থান থেকে সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন এই কমিউনিটি রেডিও থেকে। নিজেরা অংশ নিচ্ছেন আবার উপভোগ করছেন।
বাংলাদেশের জনসাধারণ যেসব সমস্যা প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রধান সমস্যা হচ্ছে দারিদ্র। এছাড়া রয়েছে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা, অর্থনৈতিক সংগ্রাম, সমাজ ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণ ও এর ফলে সৃস্ট সমস্যা, ব্যক্তি মালিকানা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অসমতা, সরকারী সম্পদের জবর দখল, দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত আয়, মানবাধিকার লংঘন ও নারী অধিকার লংঘন ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে কমিউনিটি রেডিও উন্নয়ন কর্মকান্ডে জনগণের অংশগ্রহণকে সম্ভব করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ কাঠামো বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে।
কমিউনিটি রেডিওর বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য
প্রতিটি সৃষ্টিরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যারযার নির্ধারিত বৈশিষ্ট্যের কারনে অন্যদের থেকে তা স্বতন্ত্র রূপ ধারণ করে। কমিউনিটি রেওি’র ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। এফ এম বা বেতার কেন্দ্রের হতে পৃথক করার জন্য কমিউনিটি রেডিও’র ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যা জানা থাকলে কমিউনিটি রেডিও সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকার পাশাপাশি সব ধরণের বিভ্রান্ত এড়ানো সম্ভব। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।
১. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করা।
২. প্রান্তিক মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো।
৩. স্থানীয় জনগণের লোকজ জ্ঞান, সম্পদ ও সংস্কৃতি, আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো।
৪. প্রান্তিক জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা ও তাদের মালিকানায় পরিচালিত।
৫. এটি লোকালয় জনগোষ্ঠীর কল্যাণকে প্রাধান্য দেয়-বাণিজ্যিক স্বার্থকে নয়।
৬. কমিউনিটি রেডিও এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ঠ্য হলো সেই লোকালয়ের মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণ। এখানে সেই লোকালয়ের কৃষক তার কৃষির কথা বলতে পারছে, কবি তার লেখা কবিতা পাঠ করতে পারছে।
বিশ্বে কমিউনিটি রেডিও’র সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট:
বিশ্বে কমিউনিটি রেডিও এর বয়স প্রায় ৬৫ বছর। ল্যাটিন আমেরিকায় এর উৎত্তি। দারিদ্র্য ও সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই রেডিও যাত্রা শুরু করে ১৯৪৮ সালে। ১৯৪৮ সালে বলিভিয়ায় ‘মাইনার্স রেডিও’ এবং কলম্বিয়ায় ‘রেডিও সুতাতেনজা’ কমিউনিটি রেডিওর প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে অগ্রদূত। সেই প্রেরণায় এখনো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই রেডিও স্থাপন হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় কমিউনিটি রেডিও
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম কমিউনিটি রেডিও নীতিমালা করে ভারত, ২০০৬ সালে। ভারতে বর্তমানে কমিউনিটি রেডিও এবং ক্যাম্পাস রেডিও আছে। ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী ভারতে প্রায় ছয় হাজার এবং থাইল্যান্ডে প্রায় তিন হাজার কমিউনিটি রেডিও সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে চলেছে। ইউনেসকোর সহযোগিতায় ২০০১ সাল থেকে দারিদ্র্যপীড়ীত আফ্রিকার মালি, মোজাম্বিক, সেনেগাল, এশিয়ার কিছু অঞ্চল ও ক্যারিবিয়ায় কমিউনিটি রেডিও সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিও’র সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট:
বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিও চালু করার জন্য ১৯৯৮ সাল হতে বাংরাদেশ এনজিও’স নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন, অপরাপর সংগঠন ও একদল নিবেদিত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সরকারের সাথে অধিপরামর্শ শুরু হয়। ২০০৬ সালে সম্প্রচার বিষয়ক আইনবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, এনজিও প্রতিনিধি, দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী এবং নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে তিনদিন ব্যাপী কমিউনিটি রেডিওর বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনা শেষে কমিউনিটি রেডিও বিষয়ক ঢাকা ঘোষণা-২০০৬ গৃহিত হয়। এ ঘোষণায় কমিউনিটি রেডিও প্রতিষ্ঠায় সরকারকে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
অব্যাহত এডভোকেসি’র ফলে কমিউনিটি রেডিও স্থাপন, সম্প্রচার ও পরিচালনা নীতিমালার আলোকে তথ্য মন্ত্রণালয় প্রথম বারের মতো মোট ১৪টি কমিউনিটি রেডিও চালু করার জন্য ২২ এপ্রিল ২০১০ তথ্য বিবরণীর মাধ্যমে ঘোষণা করে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ১৪টি কমিউনিটি রেডিও রয়েছে। নিম্নের তালিকায় তা প্রকাশ করা হলো -
ক্রমিক নং নাম ক্রমিক নং নাম
১ রেডিও পদ্মা (৯৯.২) ৮ রেডিও পল্লীকণ্ঠ (৯৯.২)
২ রেডিও নলতা(৯৯.২) ৯ রেডিও সাগরগিরি (৯৯.২)
৩ লোক বেতার (৯৯.২) ১০ রেডিও মহানন্দা (৯৮.২)
৪ রেডিও মুক্তি (৯৯.২) ১১ রেডিও ঝিনুক (৯৯.২)
৫ রেডিও চিলমারী (৯৯.২) ১২ কৃষি রেডিও (৯৯.২)
৬ রেডিও সুন্দরবন (৯৮.২) ১৩ রেডিও নাফ (৯৯.২)
৭ রেডিও বিক্রমপুর (৯৯.২) ১৪ বরেন্দ্র রেডিও (৯৯.২)
রেডিও পদ্মা
সেন্টার ফর কমিউনিকেশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিসিডি বাংলাদেশ) সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে রেডিও পদ্মা।
রেডিও নলতা
দুর্যোগÑদুর্বিপাকে কমিউনিটির বন্ধু
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা হাসপাতাল এ্যান্ড কমিউনিটি হেলথ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে রেডিও নলতা।
লোকবেতার
উপকূলবাসীর ভরসা স্লোগানে পরিচালিত হচ্ছে বরগুনার লোকবেতার কমিউনিটি রেডিও। আবহাওয়াসহ বিভিন্ন দুর্যোগের এখন উপকূলবাসীর একমাত্র ভরসা। ২০১০ সালের ২৭ মে সম্প্রচার শুরু কওে অবিরাম প্রতিদিন বিকেল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ পর্যন্ত মোট ৪ ঘন্টা এই স্টেশনটি সম্প্রচারিত হচ্ছে।
রেডিও পল্লীকন্ঠ
ব্রাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির আওতায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নে চালু করা হয়েছে রেডিও পল্লীকন্ঠ। শিশুদের ইংরেজি শেখার মাধ্যম স্লোগানে এটি পরিচালিত হচ্চে। এই স্টেশনের কার্যক্রম চলে ১৮ টি ইউনিয়নের প্রায় চার লাখ মানুষের মধ্যে। প্রতিদিন মোট ৪ ঘন্টা অনুষ্ঠান সম্প্রচার হচ্ছে।
রেডিও সাগরগিরি
সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ইয়ং পাওয়ার ইন সোম্যাল অ্যাকশন (ইপসা) এর উদ্যোগে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে চালু করা হয় রেডিও সাগরগিরি। প্রতিদিন ৫ ঘন্টা করে সম্প্রচার কার্যক্রম চালানো হয়। এর শ্রোতা বর্তশানে প্রায় দেড় লাখ। কৃষকদের সমস্যা সমাধানের মাধ্যম হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।
রেডিও মহানন্দা
চলার পথে অনেক চ্যালেঞ্জ
প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির উদ্যোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থাপন করা হয় রেডিও মহানন্দা। অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও এই স্টেশনটি প্রতিদিন ৭ ঘন্টা সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রায় ১ লাখ মানুষ রেডিও মহানন্দা শোনেন। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন ২০ জন।
রেডিও মুক্তি
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ল্যান্ডলেস ডিসট্রেসড রিহ্যাবিলিটেশন অর্গানাইজেশনের (এলডিআর) অর্থায়নে বগুড়ার সুত্রাপুরে স্থাপিত হয়েছে রেডিও মুক্তি। এই স্টেশনটি প্রতিদিন ৮ ঘন্টা সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রায় ৬ লাখ মানুষ রেডিও মুক্তি শোনেন। সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
রেডিও চিলমারী
চর এলাকার মানুষের বিনোদনের মাধ্যম হল রেডিও চিলমারী। উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস কুড়িগ্রামের চিলমারীতে স্থাপন করে রেডিও চিলমারী। অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও এই স্টেশনটি প্রতিদিন ২ ঘন্টা সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
রেডিও ঝিনুক
বেসরকাররি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সৃজনী বাংলাদেশ’ ঝিনাইদহের পবহাটিতে স্থাপন করেছে রেডিও ঝিনুক। সপ্তাহে ৬ দিনে প্রায় ১২ ঘন্টা সম্প্রচার কার্যক্রম চালানো হয় রেডিও ঝিনুকে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন ৩০ জন।
কৃষি রেডিও
কৃষি তথ্য সার্ভিসের উদ্যোগে কৃষি নির্ভর তথ্য প্রদান করতে বরগুনার আমতলীতে দেশের প্রথম সরকারি কৃষি রেডিও স্থাপন করা হয়েছে। এই স্টেশনটি প্রতিদিন ৪ ঘন্টা সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রায় ৫ লাখ মানুষ কৃষি রেডিও শোনেন।
বরেন্দ্র রেডিও
স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মানবাধিকার উন্নয়ন সমিতির উদ্যোগে নওগাঁতে স্থাপন করা হয় বরেন্দ্র রেডিও। এই স্টেশনটি প্রতিদিন ১১ ঘন্টা সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রায় ৫ লাখ মানুষ বরেন্দ্র রেডিও শোনেন। ৯৬ জনের একটি দল স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।
রেডিও নাফ
উপকূলীয় এলাকার মানুষের পরম বন্ধু হিসেবে কাজ করছে রেডিও নাফ। দেশের সর্বদক্ষিণে কক্সবাজারের টেকনাফে বেসরকারি সংস্থা একলাবের উদ্যোগে স্থাপন করা হয় রেডিও নাফ। প্রতিদিন ৪ ঘন্টা সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রায় ২৫ হজার মানুষ রেডিও নাফ শোনেন।
রেডিও সুন্দরবন
খুলনার কয়রা উপজেরার আমাদী বাজারে রেডিও সুন্দরবন স্থাপন করা হয়েছে। ব্রডকাস্টিং এশিয়া অব বাংলাদেশ এর উদ্যোগে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই স্টেশনটি প্রতিদিন ৫ ঘন্টা সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রায় তিন লাখ মানুষ রেডিও সুন্দরবন শোনেন।
রেডিও বিক্রমপুর
এনভায়রেনমেন্ট কাউন্সিল বাংলাদেশ এর উদ্যোগে মুন্সিগঞ্জের দেওভোগে স্থাপন করা হয় রেডিও বিক্রমপুর। স্টেশনটি প্রতিদিন ৬ ঘন্টা সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রায় ৪ লাখ মানুষ রেডিও সুন্দরবন শোনেন।
কমিউনিটি রেডিও’র নীতিমালা:
কোনো নির্দিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠী তা শহরতলী, গ্রাম, পাহাড়ি অঞ্চল, দ্বীপ, উপজেলার জন্য হবে কমিউনিটি রেডিও। সেই অঞ্চলের মানুষের বোধগম্যের জন্য আঞ্চলিক ভাষায় এর অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। অনুষ্ঠানসমূহ এমনভাবে পরিকল্পিত হবে যাতে তাদের আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান খুঁজে পায়, এমনকি তারা যে সব বিষয়ে বিনোদন পেতে অভ্যস্ত যেমন পল্লীসঙ্গীত, যাত্রা, পুঁথিপাঠ, গল্প, কাহিনীর আসর ইত্যাদিই প্রাচ্যের প্রাধান্য হবে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার কমিউনিটি রেডিওর সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন। নিম্নে তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
১. কমিউনিটি রেডিও পরিচালনা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে অবশ্যই অলাভজনক হতে হবে।
২. কমিউনিটি রেডিও’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কমপক্ষে পাঁচ বছর কমিউনিটি পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা অবশ্যই থাকতে হবে।
৩. কমিউনিটি রেডিও স্টেশনকে অবশ্যই নিশ্চিত ও সুনির্দিষ্টভাবে কমিউনিটির লোকজনকে সেবা প্রদান করতে হবে।
৪. সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ধ্যান-ধারনার প্রতিফলন সমৃদ্ধ একটি পরিচালনা পরিষদ থাকবে।
৫. সম্প্রচার অনুষ্ঠানসূচীতে কমিউনিটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজ, নারীর অধিকার, গ্রামীণ ও এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন, পরিবেশ, আবহাওয়া ও সাংস্কৃতিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এবং এতে অবশ্যই জনগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা থাকতে হবে।
৬. সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের আইনগত ভৈধতা থাকতে হবে এবং
৭. সম্প্রচারের পরীক্ষামূলক সম্প্রচার পর্বে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মূলধারার গণমাধ্যমের সুযোগ এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী কমিউনিটি রেডিও স্থাপনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার লাভ করবে।
কমিউনিটি রেডিও এর সমস্যা
দেশে পরিচালিত কমিউনিটি রেডিওগুলো নানা দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই করতে কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে। সেগুলো দূর করা সম্ভব হলে কমিউনিটি রেডিও আরো বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নিচে কিছু সমস্যা উল্লেখ করা হলো-
১. অনেকটা বিদেশি অনুদাননির্ভর পরিচালনা বলে এর স্থায়িত্ব নিয়ে শংকিত অনেকে।
২. সময়সত বিদ্যুৎ না থাকা
৩. এসব রেডিওর জন্য উন্নয়ন বিজ্ঞাপন নীতিমালা না থাকা
৪. উন্নয়ন তহবিল গঠনের উদ্যোগ না নেয়া
উন্নয়নে কমিউনিটি রেডিও এর ভূমিকা
উন্নয়ন বলতে আমরা শুধু অবকাঠামো উন্নয়নকে বুঝি না, উন্নয়ন বলতে কোন একটি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নকেও বুঝি। আমরা যদি কোন একটি জেলার উন্নয়ন বলতে সেখানকার রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজের উন্নয়ন বুঝি তাহলে সেই এলাকার মানুষের শিক্ষার হার, তাদের জীবনযাত্রার মান, দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি সম্পর্কে তাদের কেমন ধারণা আমাকে তাকেও উন্নয়ন বলতে পারি। কমিউনিটি রেডিও কোন একটি এলাকার উন্নয়কে অবদান রাখছে এবং ভবিষ্যতে এর অবদান আরো বাড়ছে।
নিচে কমিউনিটি রেডিও কিভাবে উন্নয়নে অবদান রাখছে তার একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি-
দারিদ্র্য দূরীকরণে
কমিউনিটি রেডিওগুলো স্থানীয় জনগণের দারিদ্র দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি স্থানীয় জনগণের মৎস্য,কৃষিসহ সব ধরনের পণ্য বাজারজাতকরণে সামষ্টিকভাবে ভূমিকা রাখে। কমিউনিটি রেডিওগুলো স্থানীয় পর্যায়ে দারিদ্র বিমোচন এবং স্থানীয় উন্নয়নে দারুণ ভূমিকা রাখছে। কমিউনিটির মানুষ এই গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে তাদের নিজেদের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরছেন। শুধু তাই নয়, সামাজিক নানা ইস্যুতে স্থানীয় পর্যাযয়ে স্থাপিত এই কমিউনিটি রেডিওগুলো ক্রমেই হযয়ে উঠছে সংলাপ আযয়োজনের চমৎকার ক্ষেত্র।
সুশাসন নিশ্চিত করতে কমিউনিটি রেডিও
কমিউনিটি রেডিওতে সবক্ষেত্রে সবস্তরের জনগণের সর্বোচ্চ অংশ নেয়াকে গুরুত্ব দেয়া হয়। তাছাড়া জনগোষ্ঠীতে বসবাসরত সদস্য এবং প্রতিষ্ঠানগুলোই এ ধরনের রেডিও প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় প্রধান চালিকাশক্তি। কমিউনিটি রেডিও জনগোষ্ঠীকে তথ্যে প্রবেশাধিকার দেয়। কেননা, এ ধরনের রেডিও যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে। কমিউনিটি রেডিও একটি জনগোষ্ঠীর সবাইকে তাদের নিজস্ব আগ্রহ ও ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে থাকে। এতে সুশাসন নিশ্চিত হয়।
আইনী সহায়তার ক্ষেত্রে ভূমিকা
আমাদের দেশের লোকালয়ে নারীদের নির্যাতিত হওয়ার সংখ্যা বেশি। এজন্য নারীর সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন আইনী সহায়তা। নির্যাতিত নারীর আইনী সহায়তার জন্য অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। কমিউনিটি রেডিও ওই নারীর কাছে এ সংবাদটি পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। তাচাড়া গৃহনির্যাতনের ক্ষেত্রে কী করণীয়, এসিড আক্রান্ত হবার ক্ষেত্রে কী করণীয়, ধর্ষণ বা অন্যান্য যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে কী করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে কমিউনিটি রেডিও বিস্তারিত আলোচনা অনুষ্ঠান করতে পারে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন
উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা উন্নয়নের আলোচনায় তা দেখতে পাই। কোন একটি এলাকায় যখন কমিউনিটি রেডিও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে একত্রিত করছে তখন তাদের মধ্যে এক ধরণের যোগাযোগের উন্নয়ন হচ্ছে। তারা তাদের মধ্যে বিবিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে।
মেধার বিকাশ
কোন একটি এলাকার মেধার বিকাশে এই কমিউনিটি রেডিও অবদার রাখতে পারে। যেমন তারা তাদের এলাকার মানুষের লেখা কবিতা সেখানে শোনানোর ব্যবস্থা করছে। এতে করে অন্যরা তাদের মনের ভাব এই কবিতার মাধ্যমে প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে।
আবহাওয়া বার্তা প্রদান
কমিউনিটি রেডিও আবহাওয়ার বার্তা প্রদানের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করছে। এতে তারা কখন মাছ শিকারে যাবে, তারা কোন বিপদের সম্মুখীন হলে কি ধরণের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করে। এতে জেলেরা তাদের বিপদ থেকে মুক্তি পাচ্ছে। বিশেষ করে আইলা, মহাসেনের সময় কমিউনিটি রেডিও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কেস স্টাডি:
কমিউনিটি রেডিও কিভাবে উন্নয়নে অবদান রাখছে তার একটি মডেল হিসেবে আমি মুন্সীগঞ্জের রেডিও বিক্রমপুরকে বিবেচনা করেছি। যেহেতু দেশের ১৪টি কমিউনিটি রেডিও এর মধ্যে সেটি একটি সেহেতু তার উন্নয়নের মাধ্যমে অন্যান্য কমিউনিটি রেডিও এর উন্নয়নে অবদানের বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। এখানে আমি আলোচনা করার চেষ্টা করেছি তারা কিভাবে তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে, তারা কি ধরণের অনুষ্ঠান প্রচার করে, তাদের প্রতিষ্ঠানের খরচের উৎস কি? তারা এলাকার মানুষের কাছে তাদের অনুষ্ঠান কিভাবে তুলে ধরে। তারা প্রচারিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কি কি ভূমিকা এলাকায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে।
নাম: রোডিও বিক্রমপুর
সম্প্রচার তরঙ্গ : ৯৯.২ঋগ
সম্প্রচার শুরু : ২০১২ সালের ১ লা সেপ্টেম্বর
সম্প্রচারের সময়: প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০ টা, মোট ৬ ঘন্টা
মোট সময়: প্রতি সপ্তাহে ৪৫ ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়
সম্প্রচারের সীমানা: চতুর্দিকে ১৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রেডিওতে শোনা সম্ভব।
কর্মকর্তা : স্থায়ী ৩ জন, স্বেচ্ছাসেবী ১৮ জন। যার মধ্যে ১০ জন নারী এবং ৮ জন পুরুষ এবং স্থায়ী তিনজনই পুরুষ।
কর্মকর্তাদের পটভূমি: কমিউনিটি রেডিও স্থানীয়দের দ্বারা পরিচালিত হবার কথা থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানের স্টেশন ম্যানেজার স্থানীয় নয়।
টার্গেট অডিয়েন্স: কৃষক, জেলে, বেদে, নারী, শিশুসহ মোট ৫০ টি দল
অনুষ্ঠানের সংখ্যা: ২৫ ()
বার/সময় ৪:০০-৬:০০ ৬:০০-৮:০০ ৮:০০-১০:০০
রবি বার হিট গান সোনালী দিনের গান মুখ ও মুখোশ
সোম বার আমার স্বাস্থ্য গান ও আড্ডা ফ্রেন্ডস সার্কেল
মঙ্গল বার কৃষকের হাসি গান ও আড্ডা কবিতার খাতা
বুধ বার খেলার মাঠ হাট্টি মাটিম টিম ইচ্ছে পূরণ
বৃহ:বার জাগো গো ভগিনী আমার ক্যাম্পাস ইচ্ছে পূরণ
শুক্র বার আমার বিক্রমপুর প্রযুক্তির ছোঁয়া রসের হাড়ি
শনিবার পড়ালেখা আন প্লাগড শো ভালবাসার সাতকাহন
রেডিও বিক্রমপুর এর অনুষ্ঠানের বিস্তারিত আলোচনা
আমার স্বাস্থ্য
এই অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। এখানে জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক টিপস, জনসচেতনতা বিষয়ক পরামর্শ দেয়া হয়। এর মাধ্যমে ওই এলাকার মানুষ তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা সরাসরি ফোনে বা এসএমএস এর মাধ্যমে জানতে পারে।
কৃষকের হাসি
এই অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় বুধবার বিকেল চারটা খেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। এখানে কৃষকদের কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য দেয়া হয়। যেমন বিভিন্ন সারের প্রয়োগ, ফসলের বিভিন্ন রোগ, কোন রোগের সময় কি ধরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক সময় ওই এলাকায় কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রচার করা হয়। এখানে কৃষকরা তাদের বিভ্ন্নি পণ্যের দামের বাজার জানতে পারে। কোন কোন কোন পণ্য বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে এটা তারা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জানতে পারে।
জাগো গো ভগিনী
এই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন আরজে স্বপ্নিল। এখানে নারীদের অগ্রগতি, উন্নতি, দেশ ও জাতির উন্নয়নে তাদের ভূমিকা, খ্যাতিমান নারীদের পরিচিতি, প্রতিষ্ঠিত নারীদের কথা এখানে বলা হয়। এর মাধ্যমে সেই এলাকার নারীদের উজ্জীবিত করা হয়। এখানে নির্যাতিত নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়।এই অনুষ্ঠানটি বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত প্রচারিত হয়।
পড়ালেখা
এখানে সেই এলাকার ভালো ফলাফলকারীদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। তাদের স্টুডিওতে ডেকে এনে তাদের ভবিষ্যত চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তারা ভবিষ্যতে কি হতে চায় তা নিয়ে কথা বলতে দেয়া হয়। এখানে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। এখানে শিক্ষার্থীদের এসএমএস এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়। এলাকার নামকরা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে আসা হয়।
হাট্টি মাটিম টিম
শিশুরা জাতির ভবিষ্যত। এই অনুষ্ঠানটি মূলত শিশুদের নিয়ে করা হয়। এখানে শিশুদের বিকাশে কি কি করা প্রয়োজন, তাদের বিকাশে মায়েদের কি করণীয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।এতে করে সেই এলাকার নারীরা তাদের সন্তানের বিকাশে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে।
আমার ক্যাম্পাস
এখানে জেলার নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যদান কর্মসূচি, কোন বাৎসরিক অনুষ্ঠান, শিক্ষকদের মতামত ইত্যাদি প্রচার করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হয়।
প্রযুক্তির ছোয়া
এই অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা। এখানে নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, এর উপকার-অপকারের কথা বলা হয়। কি প্রযুক্তির কি ধরণের ব্যবহার হয় তা নিয়ে কথা বলা হয়।
আন-প্লাগড শো
এই অনুষ্ঠানটি করা হয় এলাকার সংস্কৃতি প্রচারের জন্য এলাকার শিল্পীদের গান নিয়ে। এখানে এলাকার শিল্পীদের গান গাওয়ার একট সুযোগ দেয়া হয়। তারা তাদের আঞ্চলিক ভাষায় গ্নাও গাওয়ার সুযোগ পায়। এখাসে দেখা যায়, যারা কোনদিন গান গায় না তারাও সেখানে যাওয়ার একটা আগ্রহ প্রকাশ করে।
ফ্রেন্ডস সার্কেল
এই অনুষ্ঠানে মূলত এই কোন ব্যাচের কয়েকজনকে বন্ধুকে ডাকা হয়। এখানে তাদের আশা, তারা কি করতে চায় এসব নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাদের মাধ্যমে অন্যদের জন্য পরামর্শ দেয়ারও একটি বিষয় এখানে থাকে।
কবিতার খাতা
এখানে সেই এলাকার কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠ করানো হয়। কখনো কখনো কবিদের সরাসরি এই কবিতা পাঠে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়।
আমার বিক্রমপুর
এই অনুষ্ঠানটি শুক্রবার বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত প্রচারিত হয়। মুন্সীগঞ্জের সার্বিক দিক নিয়ে এ অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছে। এখানে ওই এলাকার ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। নতুন প্রজন্ম কি ধরণের আশা করে তা এই অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়।
জনপ্রিয় অনুষ্ঠান : গান ও আড্ডা এবং ইচ্ছেঘুড়ি ও জাগো গো ভগিনী (নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান)
পর্যবেক্ষণ:
এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা মূলত কমিউনিটি রেডিওকে নিজেদের কথা বলার কোন জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেনি, সিরাজ নামে এক দোকানী জানান, ‘ এতো টিভি চ্যানেল থাকতে কে রেডিও শুনবে?’। রেডিওটির প্রযোজকও জানান তারা ৩০০টি বেশী রেডিওকে ৯৯.২ এফএম এ ঞঁহব করতে দেখেন নি।
কমিউনিটি রোডিও স্থানীয় মানুষের কথা বলে, স্থানীয়ভাবেই তাদের বিনোদনের আয়োজনও করা হয় রেডিও বিক্রমপুরের ইচ্ছেঘুড়ি বা অনুরোধের আমার ধরনের অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা তাই প্রমাণ করে। এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীরা কিংবা জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা গান শুনিয়ে থাকবেন।
কিছু অনুষ্ঠান জনপ্রিয় হলেও রেডিওটি যে জনপ্যিয় নয় তা স্থানীয়দের বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়। কমিউনিটি রেডিও এর মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নের বলা হলেও উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের অংশগ্রহণ ছিলো সবচেয়ে কম। যা প্রমাণ করে কমিউনিটি রেডিও যা আসলে স্থানীয় মানুষের ভাষাতেই তা অনেক সময় তাদের উন্নয়নে সহায়ক না হতে পারে। অর্থাৎ স্থানীয় ভাষা বা আচার আচরণের মধ্য দিয়ে বার্তা দেয়া হলেও তা প্রাপক গ্রহণ নাও করতে পারে।
সমালোচনা:
যাদের অর্থায়নে কমিউনিটি রেডিও তৈরী হয় তাদের প্রভাব থেকে যেতে পারে।
শুধুমাত্র ভাষার পরিবর্তন হলেই প্রাপক তা গ্রহণ করবে এমন নিশ্চয়তা নেই।
কমিউনিটি রেডিওগুলোতে ফোন-ইন বা ভক্সপপের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের কথা উঠে আসলেও তা অনেক সময় প্রভাবিত হয়ে পরে।
রেডিওগুলোকে অলাভজনক বলা হলেও রেডিওগুলোতে টাকার বিনিময়ে বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়। অনেক সময় তা বিজ্ঞানের আদলে না হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে প্রচারিত হয়।
সুপারিশমালা:
স্থানীয় জনসাধারণ কিভাবে আর্থিক দিক দিযে সাবলম্বী হতে পারে সে ব্যাপারে পরামর্শমূলক অনুষ্ঠান প্রচার গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান আলোচকবৃন্দ।
দিনের সকল স্থানীয় ঘটনা সংবাদ আকারে দিবসের শেষের দিকে প্রচার করলে ভাল হবে।
স্থানীয় এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা অনেকেই জানেন না। তাই সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুবিধা ও তাদের অংশগ্রহণের উপায় নিয়ে যদি অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় তবে জনগণ উপকৃত হবে।
যেসব অঞ্চলের অনেক স্থানেই বিদ্যুৎ সুবিধা নেই। তাই ব্যাটারী চালিত রেডিও এ অঞ্চলে অনেক জনপ্রিয় হবে।
কৃষি ও মৎস্যসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা।
রেডিওতে আলোচনা অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিকে মুখোমুখি করতে হবে।
উপসংহার
কমিউনিটি রেডিও জনগোষ্ঠীকে তথ্যে প্রবেশাধিকার দেয়। কেননা, এ ধরনের রেডিও যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশনেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে। শিক্ষা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রধান চালিকাশক্তি তথ্য বিনিময় ও প্রচারকে কমিউনিটি রেডিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকে। এছাড়া কমিউনিটি রেডিও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং ইস্যুগুলোর সম্প্রচার করে থাকে। পাশাপাশি জনগোষ্ঠীর সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজস্ব অভিমত নিঃসঙ্কোচে প্রকাশ করার সুযোগ করে দেয়। সর্বোপরি কমিউনিটি রেডিও একটি জনগোষ্ঠীর সবাইকে তাদের নিজস্ব আগ্রহ ও ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে থাকে।
কমিউনিটি রেডিও উন্নয়ন কর্মকান্ডে জনগণের অংশ নেয়াকে সম্ভব করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ কাঠামো বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে। কমিউনিটি রেডিও সরকার, বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য খাত এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মধ্যে একটি অর্থবহ ও কার্যকর অংশীদারিত্ব উন্নয়নে জাদুকরী সাফল্য আনতে পারে।
তথ্যসূত্র:
১. িি.িরিশরঢ়বফরধ.পড়স
২. ডরসসবৎ.জড়মবৎ ্ উড়সরহরপশ, ঔড়ংবঢ়য (১৯৮৭), গধংং গবফরধ জবংবধৎপয: অহ ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ, ঈধষরভড়ৎহরধ: ডধফংড়িৎঃয, চ. ৩৮১
৩. রহমান, আতিকুর, শওকতুজ্জামান, সমাজ গবেষণা পদ্ধতি (৩য় সংস্করণ) নিউ এজ পাবলিকেশন্স, ঢাকা-২০০০।
৪. ঔড়যহ ডরষবু ্ ঝড়হং, গধংং ঈড়সসঁহরপধঃরড়হ ঞযবড়ৎরবং ধহফ জবংবধৎপয (২হফ বফরঃরড়হ), ঈধহধফধ (১৯৮৫), চ.৪২.
৫. িি.িঃধসসবফরধবংবধৎপয.পড়স