চট্টগ্রাম হইতে বাড়ি যাইবার উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠিলাম।পাঁচটা বাজে ট্রেন ছাড়িবার কথা হইলেও পাঁচটা সাত মিনিটেও ট্রেন ছাড়ে নাই দেখিয়া রেল কর্তৃপক্ষকে গালি পাড়িতে লাগিলাম। কিন্তু সেই গালি মধুবাক্যে রুপান্তরিত হইল যখন দেখিলাম এক সুন্দরী বালিকা তড়িঘড়ি করিয়া ট্রেনে উঠিয়াই আমার সামনের সিটে ধপ করিয়া বসিল।রেল কর্তৃপক্ষকে হাজার ধন্যবাদ দিলাম এই ভাবিয়া যে,উহারা দেরী না করিলে এই সুন্দরী বালিকা ট্রেন মিস হইত।আর তাহা হইত আমার মত পাবলিকের ব্যাপক চিন্তার বিষয়।কিন্তু সেই খুশি বেশিক্ষণ রইল না,যখন দেখিলাম,বালিকার সহিত একখানা পুঁচকে বাচ্চা আছে ।বাংলাদেশ সরকারের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করিলাম কেনো তাহারা বাল্য বৈবাহ লইয়া আরো কঠোর আইন প্রয়োগ করিল না ।কিন্তু আশার আলো দেখিলাম যখন বাচ্চাখানা কহিল:খালামণি,আম্মু-আব্বু কোথায়???বুঝিলাম ইহা বালিকার বাচ্চা নহে,এবং কিছুক্ষণের মাঝেই দেখিলাম,একজোড়া মানুষ হাত ধরাধরি করিয়া ট্রেনে উঠিল এবং আমার পিছনের সিটে গিয়া বসিল।ভাগ্য সুপ্রশন্ন মনে হইল ।ট্রেন ছাড়িল পাঁচটা পনেরো তে।আরো দেরিতে ছাড়িলে কি হইত???তাহা লুল পাবলিকেরা জানিতে চায়।
বালিকার সহিত কথা বলিতে যাইবো তখনই দেখিলাম বালিকার মোবাইল বাজিয়ে উঠিল।দুই মিনিট গত হইবার পরে বুঝিলাম সিংগেল মেয়ে বলিয়া দেশে কোন শব্দ নাই ।দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়া বসিয়া রইয়াছি তখনই বালিকার কথাবার্তা শুনিয়া বুঝিলাম বালিকার তাহার কোন সখির সহিত তুই-তুকারি করিয়া কথা বলিতেছে।
জীবনখানা তো দেখা যায় নেহাৎ মন্দ নহে।
কথা শেষে, বালিকা কর্নে হেডফোন লাগাইয়া গান শুনিতে লাগিল।
আমি আমার পকেট হইতে নোকিয়া ১১০০মডেলের মোবাইল খানা বাহির করিয়া টেপাটেপি করিয়ে লাগিলাম।ভাবখানা এমন যে,আমার হাতে আইফোন ৮শোভা পাইতেছে।
বালিকার গান শুনা বন্ধ হইবে না ভাবিয়া কিছুক্ষণ ঘুমাইয়া নিলাম।উঠিয়া দেখি ১ঘণ্টা গত হইয়া গিয়াছে।
কিছুক্ষণ পর দেখি,বালিকা এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে।সুযোগ হাতছাড়া না করিয়াই,শুধাইলাম কিছু লাগিবে কিনা।সলজ্জিত দৃষ্টি লইয়া আমায় কহিল,"জানালাখানা বন্ধ করিয়া দিতে"।আমি বন্ধ করিতে করিতেই শুধাইলাম কোথায় নামিবে???বালিকা তৎক্ষণাৎ উত্তরে কহিল:ফেনী।
আরো কিছু শুধাইতে উদ্যত হইলাম,তখনই বুঝিলাম,ট্রেন খানা দাড়াইয়া পরিয়াছে।এর হেতু জানিবার উদ্দেশ্যে জানালা খুলিয়া বাহিরে তাকাইতেই চক্ষু চড়কগাছ।
বিশাল সাইনবোর্ড এ লেখা"ফেনী জংশন "।
কিভাবে সময় পার হইয়া গেলো বিন্দুমাত্র টের পাইলাম নাহ।
আইনস্টাইন এর আপেক্ষিক তত্ত্বের মর্ম আজ বুঝিলাম।বেটা এমনি এমনি বিজ্ঞানী হয় নাই বুঝিতে পারিলাম।বালিকার দিকে তাকাইতেই দেখি ব্যাগ লইয়া নামিবার উদ্দেশ্যে রওনা হইতেছে।ট্রেন হইতে নামিয়াই একখানা হাসি দিল।বড়ই আনন্দিত হইলাম ।কিন্তু পরক্ষণেই বুঝিলাম হাসিখানা আমাকে উদ্দেশ্য করিয়া নহে তাহার বোন আর দুলাভাইকে উদ্দেশ্য করিয়া দিয়াছে ।তার মানে যাহারে আমি আমার কিছুক্ষণের ভায়রা ভাই ভাবিয়াছিলাম তিনি ফেনী থাকেন না।
ট্রেন ছাড়িয়া দিলেই বালিকা হাত নাড়িয়া বিদায় নিল।আমি আহত দৃষ্টিতে বাহিরে তাকাইয়া রইলাম।
হঠাৎ দেখি আমার দুই সিট সামনে এক সুন্দরী ললনা বসিয়া রহিয়াছে ।এতক্ষণ ফেনীওয়ালীর জন্য হয়ত চক্ষুগোচর হয় নাই।আমার মনে বাজিতেছে :
তেরে লিয়ে হি তো সিগনাল তোরতার কে,
আয়া ফেনীওয়ালী গার্লফ্রেন্ড ছোড় ছাড় কে
ভাবিতেছি আর ভাবিতেছি'জীবনখানা একজন অতি উৎসাহীত লুলে লুলায়িত পাবলিকের জন্য নেহাৎ মন্দ নহে'।
বিঃদ্র:গুরুচণ্ডালী দোষ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখিবেন।
প্রায় বছরখানেক আগে একবার চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম।সেখান থেকে ফেরার পথে লিখেছি।সব চরিত্র এবং কাহিনী কাল্পনিক।আমি ভ্লা পুলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩১