অন্ধকারে ঢিল ছুড়েছেন কখনো?মনে করতে পারছেন না।আপনি ঢিল ছুড়ুন আর না ছুড়ুন আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি,বেঁচে থাকলে আপনি অন্ধকারে ঢিল ছুড়বেনই।নিজের জীবনের তাগিদে কখনো কখনো এর বিকল্প থাকে না।কিন্তু সত্যি বলতে কি,আপনি ঢিলটি কিন্তু নিজের জন্য ছুড়বেন না।ছুড়বেন অন্যের জন্য।
এই ব্যাপারে পরে আসছি।অলবার্ট আইনস্টাইন এর একটি উক্তি পরেছেন নিশ্চয়
"পৃথিবীতে সবাই জিনিয়াস,কিন্তু তা ক্ষেত্রবিশেষে।যেমন,আপনি একটা মাছকে উড়তে বললে তো আর তার প্রতিভা আপনি দেখতে পারবেন না"
আইনস্টাইন এর উক্তি কি কখনো ভাবায় নি?যে,তাহলে আমি কোন ক্ষেত্রে জিনিয়াস?কখনো এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন?
যদি আমার করা প্রশ্নের উত্তর হ্যা হয় তাহলে আপনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।কারণ আপনি এর উত্তর খুঁজতে যতটা সময় ব্যয় করেছেন ঠিক ততটা সময়ই বৃথা নষ্ট করেছেন।
যদি আমার প্রশ্নের উত্তর"না"হয়।আপনাকে সাধুবাদ জানাই।কারণ আপনি বোকা নন যে,আইনস্টাইন এর একটা খোঁড়া বক্তব্যের উত্তর খুঁজতে সময় ব্যয় করেন নি।
এবার আসি,যারা এর উত্তর খুঁজতে গিয়েছেন তারা কেন সময় নষ্ট করেছেন বললাম।মনে করুন,আপনার উত্তর:হ্যাঁ,আমি ক্রিকেট খেলা ভালো পারি।এটি আমার প্রতিভা।তো,এই প্রতিভা নিয়ে করবেন কি?আপনার বাবাকে গিয়ে বলতে পারবেন,আমি ক্রিকেট খেলায় ভালো,আমার পড়ালেখা অপশনাল রেখে ক্রিকেট খেলার কোচিং য়ে ভর্তি করিয়ে দাও।পারবেন?
অথবা,যেই মেয়েটা ভালো গান গায়,কখনো বাবাকে বলার মুখ থাকবে,আমি গায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাই?জেনে রাখুন,আপনি যত ভালো হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান হোন অথবা,যতই মিষ্টি গলার অধিকারী হোন এটা আপনার প্রতিভা না।
আপনি পড়ালেখায় ভালো!এটাই আপনার প্রতিভা।আপনি ক্লাশের ফার্স্ট বয়/গার্ল,সুতরাং আপনার সাত খুন মাফ।আমার কথা বিশ্বাস হয় না?মিলিয়ে নিন,চারপাশ থেকে।
যেই ছেলে ক্রিজে থাকলে বোলারের বুক কাঁপে,বাইশ গজে যার অসাধারণ আধিপত্য সেই ছেলেকেও দেখি,রোজ ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত পায়ে হেঁটে চলে স্কুল-কলেজের উদ্দেশ্যে।যেই মেয়েটার কণ্ঠে আগুন ঝরে সেই মেয়েটাকেও আমি দেখেছি,পরিক্ষায় খারাপ করার জন্য কান্না করতে।কিন্তু কখনো ক্লাশের ফার্স্ট বয়কে দেখিনি,খেলায় আন্ডা মারার কারণে মন খারাপ করে বসে থাকতে।কখনো,কোন ফার্স্ট গার্লের পরিবারকে বলতে শুনি নি তুমি কেনো কোনো,গানের কম্পিটিশন এ জেতে পারো না।সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকা ছেলে-মেয়ের বাবা,মা নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করে যে,তার মেয়ে পড়ালেখায় ভালো।আর সেই দুরন্ত ব্যাটসম্যান এর পিতা মনে করে,ছেলেটা গোল্লায় গেলো।আর মানুষ করতে পারলাম না।কণ্ঠে আগুন ঝরানো সেই মেয়েটির পরিবার মেয়েটিকে খোঁটা দিতে থাকে তুমি কেনো,জরিনা(ক্লাশের ফার্স্ট গার্ল)এর মত সারাদিন পড়ালেখা কর না?
আমি দেখি আর অবাক হই,ভাবি
সেই জরিনা কি কখনো আপনার সন্তানের মত ভালো গান গাইতে পারবে?সেই ফার্স্ট বয় কি কখনো আপনার ছেলের মত বোলারের বুকে কাঁপন ধরাতে পারবে?
কিছু কিছু পরিবার চোখে পড়ে,যারা তাদের মেয়েকে শখ করে গান শেখায়।কিছুদিন পর আবার বন্ধও করে দেয়,পাছে পড়ালেখার ক্ষতি হয়।
১৬-১৭বয়সের অবাধ্য মনের অধিকারী এক দুরন্ত কিশোর যখন স্বপ্ন দেখে একজন বড় ক্রিকেটার হবে,তখন তার স্বপ্ন চুরমার করে দেয়,গাইড নামের গুরুদত্ত্ব,আর স্কুল নামক কারাগার।আবার সেই মেয়েটি যখন মনে করে,লতা মুঙ্গেসকার হওয়ার,তখন তার আশা গুড়েবালি করে পরিবারের শত খোঁচা আর চোখরাঙানি।
যদিও বা কেউ সাহস করে বলেই ফেলে পড়ালেখা করবো না,ক্রিকেট খেলতে চাই।সাথে সাথেই সে বেয়াড়া ছেলে,অবাধ্য সন্তান।
একটা সময় যখন ছেলেটি পরিবারের সাথে মানিয়ে নেয় তখন তার ভেতর থেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন মরে যায়।যখন মেয়েটি বুঝতে পারে,গান গেয়ে পরিবারের মন জয় অসম্ভব,তখন তার গায়িকা হওয়ার স্বপ্নটাও দুমড়ে-মুছরে যায়।
হয়ত,একদিন ছেলেটি একদিন ভুলেই যায়,সে ভালো ক্রিকেট খেলত।হয়ত পরিবারের শত ব্যস্ততার মাঝে মেয়েটি ভূলেই যায়,সে কত ভালো গাইতো।
প্রথমেই বলেছিলাম যে,আপনি অন্ধকারে ঢিল ছুড়বেন।হুম,তা তো অবশ্যই।একদিন যখন আপনার সন্তান হবে তখন আপনিও আপনার সন্তানকে ডাক্তার বানানোর জন্য হন্যে হয়ে উঠবেন।তার মেধা যখন ভালো দেখবেন,আপনি তাকে বুয়েটে পড়ানোর জন্য পাগল হয়ে উঠবেন।আসলে সত্যি বলতে কি,আপনি নিজেই জানেন না,আপনার সন্তান ডাক্তার হওয়ার যোগ্যতা রাখে কিনা।কিন্তু আপনি,অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতই চিন্তা করে যাবেন আপনার সন্তানকে বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার অথবা এমবিবিএস ডাক্তার বানানোর জন্য উঠেপড়ে লাগবেন।অস্বীকার করবেন কি?বর্তমানে আপনার বাবা যেমন আপনার ভেতরের প্রতিভা টাকে মৃত ঘোষণা করে আপনাকে একটা মানব গিনিপিগে রুপান্তর করেছে।
কিন্তু কখনোও আপনার বাবা কি ভেবে দেখেছিল,আপনি কি হতে চান?সর্বোচ্চ জিগ্যেস করবে:ডাক্তারি লাইনে পড়বে নাকি ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে পড়বে।
কখনো কি জিগ্যেস করে,তুমি ক্রিকেটার হতে চাও নাকি গায়িকা?এটি আমাদের দেশে যেমন অবাস্তব তেমনি অসম্ভব ব্যাপারও বটে।
কিন্তু সত্যি বলতে কি,কোন এক সন্ধ্যায় যখন বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে সাকিব-তামিমের ঝড়ো ইনিংস দেখেন,অথবা বিখ্যাত কোন গায়িকার গান শুনেন,তখনো আপনার বাবা চিন্তা করে না,যে আজ সাকিব-তামিমের সাথে আমার ছেলেও খেলতে পারতো।কল্পনাও করে না,আজ আমার মেয়ের কনসার্ট হতে পারতো।
তাই বললাম,নিজের প্রতিভা কখনো খুঁজতে যাবেন না।সময়টাই নষ্ট করবেন।
বাংলাদেশের শতকরা ৯০টি পরিবারের অবস্থাই এরকম,খোঁজ নিয়ে দেখুন,বাংলার মুখ যারা উজ্জ্বল করেছে তারা বাকি ১০টি পরিবার হতে এসেছে।অথবা পরিবারের মতের অমিলে এসেছে।আর আমরা তাদের ইন্টার্ভিউ নেয়ার জন্য এত পড়ালেখা করি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:আপনার বাবা কাছে যদি লাইসেন্স করা বন্দুক থাকে তাহলে এই পোষ্ট দেখানোর সাহস করবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ৯:৪৩