somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারের বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা কী ভেস্তে গেছে?

১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ করে ৬ বছর পর বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার, ২০১০ সালের করা এই মহাপরিকল্পনা সম্প্রতি পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদা কয়েক গুন কমানো হয়েছে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, সরকার মনে করেছিলো কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে গ্রাহকরাও তা লুফে নিবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভিন্ন, কারণ বেশি দামে এখন বিদ্যুৎ কিনতে আগ্রহী নয় শিল্প মালিকারা। এর পেছনের আরো কারণ হলো, শিল্প খাতে একের পর এক লোকসান ও ধসের হার বৃদ্ধি।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উন্নতি ও প্রসারের জন্য সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকার ম্যাজিক কৌশল গ্রহণ করেছিল । ঘোষণা দেয়া হয়, ২০১২ সালের পর দেশে আর বিদ্যুৎ সমস্যা থাকবে না । এর অংশ হিসাবে একের পর এক ভাড়াভিত্তিক ও কুইস রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির সাথে চুক্তি করতে থাকে । এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন একটি ভাল ব্যাবসায় পরিনত হয় । ফলে সরকারের মন্ত্রী , এম পি , আমলারা , ফার্নিচার কোম্পানি , বড় বড় ব্যাবসায়ীরা বিদ্যুৎ ব্যাবসায় নেমে পড়েন । এই ব্যাবসায়ের সুবিধা হল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালানোর জন্য যে জ্বালানী লাগবে তথা ডিজেল , ফার্নেস অয়েল তা ভর্তুর্কি দামে সরবরাহ করবে সরকার । আবার এসবকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ অনেক বেশি দামে ক্রয় করবে সরকার ।
এই ক্ষেত্রে দুই ভাবে বিশাল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশ । জ্বালানী বিদেশ থেকে ভর্তুকি দিয়ে আমদানী করে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দিতে হচ্ছে । আবার পিডিপি নির্ধারিত রেট হতে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে । একই সাথে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানী সরবাহ করতে সরকার ব্যার্থ হলে আবার জরিমানাও প্রদান করতে হবে ।

বিভিন্ন সংবাদ সূত্র হতে জানা যায়, ২০১০ পাওয়ার সেক্টর মাস্টারপ্ল্যান করে সরকার। ২০ বছর মেয়াদী এই প্লানে ২০১৬ সালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয় ১১ হাজার ৪০৫ মেগাওয়াট। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, চলতি গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াতে পারে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট। এখানে বাস্তবতার মুখ দেখেনি সরকার। একইভাবে ২০২০ সালে বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১২ হাজার ৯৪৯ মেগাওয়াট। যদিও আগের মহাপরিকল্পনায় তা ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট, শিল্প খাতে চাহিদা না বৃদ্ধিই এর মূল কারণ বলে মনে করা হয়। নির্ধারিত মহাপরিকল্পনা ভেস্তে গেলো।

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিদ্যুতের চাহিদা না বাড়ায় ২০১০ সালে নেয়া মাস্টারপ্ল্যান সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ,এতে কমানো হচ্ছে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। এজন্য জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে কাজ করছে টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার সার্ভিস কোম্পানি। এপ্রিল মাসে পাওয়ার সেক্টর মাস্টারপ্ল্যান ২০১৫-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ও উৎপাদন বিশ্লেষণ করা হয়েছে, পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি চাহিদা ও সম্ভাব্য দামও তুলে আনা হয়েছে নতুন মহাপরিকল্পনায়।

শিল্প খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার না বাড়ার জন্য সরকারের ভুল নীতিকে দায়ী করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা । বিভিন্ন গণমাধ্যমকে স্বাক্ষাতকারে তারা বলেন, একসময় শিল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে ক্যাপটিভে উৎসাহ দেয়া হয়েছিল। সরকারের ভুল নীতির কারণে ক্যাপটিভ পাওয়ারের দিকে ঝুঁকেছেন শিল্প মালিকরা। ফলে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিল্প খাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়েনি, তবে সাধারণ গ্রাহককে বেশি সংযোগ দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয়বহুল বিদ্যুতের সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে না। বিদ্যুৎ খাতে ২০১০ সালে ২০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণীত হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তিতে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা নিরূপণ করা হয়। মহাপরিকল্পনায় সরকারের নীতি অনুযায়ী বিদ্যুৎ চাহিদা,৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তিতে চাহিদা ও ৬ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তিতে চাহিদা।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয় সরকারি নীতির ক্ষেত্রে। তবে তিনটি প্রেক্ষাপটের কোনোটির সঙ্গেই বর্তমান বিদ্যুৎ চাহিদার সামঞ্জস্য নেই।
আগের মহাপরিকল্পনায় ২০২০ সালের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট। নতুন মহাপরিকল্পনায় তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৯৪৯ মেগাওয়াট। আর ২০৩০ সালে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৪৩৪ মেগাওয়াট, যা আগের পরিকল্পনায় ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৭০৮ মেগাওয়াট। চাহিদার পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হচ্ছে নতুন মহাপরিকল্পনায়। এতে বলা হয়েছে, চাহিদা মেটাতে ২০২০ সালে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেই চলবে। আর ২০৩০ সালে উৎপাদন করতে হবে ৩০ হাজার ১৭৮ মেগাওয়াট। যদিও বর্তমান পরিকল্পনায় তা ধরা হয়েছে যথাক্রমে ২৩ হাজার ৮০৯ ও৩৮হাজার ৬৮৫মেগাওয়াট।

দেশে বিদ্যুতের চাহিদা না বাড়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম শিল্প খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার আশানুরূপ বাড়েনি। এজন্য শিল্প খাতে ক্যাপটিভ পাওয়ার বন্ধ করা হবে। পাশাপাশি আবাসিকে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য দেশব্যাপী জরিপ চালানো হচ্ছে। এতে আগামীতে পরিকল্পিতভাবেই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে।

বিদ্যুতের চাহিদা না বাড়ার কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হয় নতুন মহাপরিকল্পনায়। এতে বলা হয়, শিল্প খাতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের রফতানি খাত মূলত পোশাক শিল্পনির্ভর। এ শিল্পে বিদ্যুতের ব্যবহার তুলনামূলক কম। হালকা প্রকৌশল ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প কিছুটা বিকশিত হলেও রফতানিতে তেমন অবদান রাখতে পারছে না। আর ভারী শিল্পের বিকাশও খুব একটা হয়নি, তাই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শিল্প খাতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে না।
সরকারের বিদ্যুৎ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার গত কয়েক বছরে বেড়েছে, তবে আবাসিক গ্রাহকের বিদ্যুতের ব্যবহার আশানুরূপ বাড়েনি। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের ব্যবহার তুলনামূলক কম। এক্ষেত্রে সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে দায়ী করা হয়।
এদিকে আসছে বাজেটেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া কথা বলছে পিডিবি, এ খাতের পুরনো প্রকল্প চালু রাখা এবং বিদ্যুতের নতুন সঞ্চালন লাইনের ওপর। তবে, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের। উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রাহক পর্যায় সহজে বিদ্যুত পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি এবং দাম সাধারণ জনগণের মধ্যে সহনীয় রাখারও পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। তবেই সরকারের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ঘটবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×