somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বিধ্বংসী ও আত্নঘাতী

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুৎ নির্মান দেশ,পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য হবে খুবই বিধ্বংসী এবং আত্নঘাতী। দেশের সচেতন ও দেশপ্রেমিক নগরিক চানা নিজের জলাঞ্জলী দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হোক,পরিবেশবাদী ও ভূতত্ত্ববিদগণ বন্যপশুদের নিয়ে বেশ চিন্তিত।তাদের মতে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন হলে দেশে জীববৈচিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। তারা সংশয় প্রকাশ করে বলেন, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। পরিবেশবাদী ও কিছু বামদল এ নিয়ে সরকারের ঘোর বিরোধীতা করেন।তারা এ আন্দোলনর জন্য বেশ ভূয়ষী প্রশংসা পান দেশবাসী পক্ষ থেকে। তারা রামপালের বিদ্যুৎ কন্দ্র নির্মানের বিপক্ষে লংমার্চ করেন তবে এতে তারা ব্যাপক সাড়া পান। পত্রপত্রিকা,ব্লগ,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক,টুইটার সহ বিভিন্ন গণমাধ্যম সরকারের বিরোধীতা আসছেন। অনেক ফেসবুক ইউজার প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে “বাঁচাও সুন্দরবন”নামে আপলোড করেছে।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে পরিবেশ হয়ে ওঠবে খুবই ভয়াবহ,প্রাণী ও বাতাসের জন্য মহাহুমকি। বনজ দামী বৃক্ষগুলো মারা পড়বে। সুন্দরবনের জগৎ বিখ্যাত প্রাণীগুলো ধ্বংস হবে নতুবা ভারতের সীমান্তে চলে যাবে। বনজ মূল্যবান সম্পদ খোয়াবে বাংলাদেশ। বাতাসে সীসার পরিমানও বাড়বে ব্যাপকহারে। সরকার শুরু হতেই গলা চেঁচিয়ে বলছে এতে দেশের কোন ক্ষতি হবেনা বরং বড় লাভ হবে,কিন্তু বিদেশী পরিবেশবাদীরা বলছে এতে ক্ষতির সম্ভাবনা শতভাগ। তাহলে কী সরকার জণগণে সাথে ধাপ্পাবাজী করছে? প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জোটদল সমূহ শুরু থেকেই ঘর বিরোধীতা করে আসছে। যদিও আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপি জোট দেশের ভাল চায়না ও উন্নতি চায়না,তারা চায় দেশ গরীব থাকুক শুধু আওয়ামী লীগ মানুষের কথা চিন্তা করে। মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টি ও রামপালের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন,তিনি মন্তব্য করেন রামপাল দেশ ও পরিবেশের জন্য ভয়ানক হবে।
পৃথিবীর সপ্তআশ্চার্যের মধ্যে সুন্দরবন তালিকায় স্থান পেয়েছিল,যদিও তা অর্জন করতে পারেনি শেষ পর্যন্ত। কিন্তু প্রকৃতির অপূর্ব নৈসর্গিক ও পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এখানে আছে পৃথিবীর বিখ্যাত পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যা অন্য দেশে নেই। আরো আছে বনজ সম্পদের বিভিন্ন বিখ্যাত গাছ সুন্দরী ও গরাণ গাছ। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে বিষাক্ত কালো ধোয়া ও সীসার কারনে তা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই অনেক বেশি।
বাগেরহাট জেলায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা একটি আত্নঘাতি প্রকল্প। গোটা দেশ এই প্রকল্পের বিরোধীতা করছে, দেশবাসীর দাবির মূল্যায়ন সরকার কানেই নিচ্ছেনা। সবার অমতে নিজের ক্ষমতার জোরে এটা করা মারাত্বক ভুল। সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর হতে শুধু ভুল আর অন্যায্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। কিন্তু এই ভুলের মাশুল কে দিবে? পরবর্তী সরকারকে নিশ্চই। কিন্তু কেন? একজনের ভুলের জন্য অন্যজন কেন দায়ভার মাথায় নিবে।
মানুষের দাবি সুন্দরবনে নয় দেশের অন্য যে কোন জেলায় তা নির্মান হউক। এখন প্রশ্ন কেন এই সিদ্ধান্ত? কার স্বর্থে এই প্রকল্প? নেপথ্যে কী উদ্দেশ্য নিহিত আছে। এমন প্রশ্ন অনেকেরই আছে। রামপালের বিদ্যুৎ প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার মাধ্যেই সরকার ১ হাজার ৫০০ থকে ২ হাজার ৫০০ পর্যন্ত (মেগাওয়াট) উৎপাদন ক্ষমতা আরো ৫টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি। ঢাক,বরিশাল,চটগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন হবে এই কেন্দ্র। সরকার নিজের দেশের কথা ভাবেনি একটিবারও, নিজ দেশের স্বার্থের কথা মন দিয়ে ভাবেনা। শেখ হাসিনা ভারতকে নিকট আত্বীয় ভাবে সর্বদাই। তিস্তা পানি চুক্তি,সীমান্তে উত্তেজনা,টিপাইমুখী বাঁধ প্রকল্প,ছিটমহল সমস্যা,ট্রানজিট সমস্যা সব কিছুই ভারতের স্বার্থ আছে কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থ সেখানে ঠাঁই পায়না। ২০১০ সালে জানুয়ারীতে জামায়াতের এক প্রবীন সংসদ সদস্য জণসভায় বলেন-পত্রিকায় এসেছে যে, শেখ হাসিনা ভারতকে আঁচল খুলে দিয়ে এসেছেন। কিন্তু আমি বলি তিনি কাঁছা খুলে দিয়ে এসেছেন। যদিও তিনি কৌতুক করে একথাটি বলেছিলেন।
আজ সত্য তিনি আসলেই কাঁছা খুলে দিয়ে এসেছেন,বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রামপাল নিয়ে ইতিবাচক কলাম ও প্রবন্ধ লিখে চলেছে। কিন্তু নেতীবাচক দিক ভাবছেনা। পরিবেশবাদীরা বলছেন যে,যেকোন মূল্যে এই প্রকল্প বাদ দিতে হবে। তা না হলে দেশ বনজ সম্পদে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানবসভ্যতার একটি প্রাকৃতিক নিদর্শন বিলীন হয় যাবে নিমেসেই।
ভারত বিবৃতি দিয়েছেন যে,প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য হুমকি এমন কিছু তারা করবেনা,কিন্তু এর কোন নিশ্চয়তা নেই। তিস্তা চুক্তি ও ঐতিহাসিক গঙ্গাপানি চুক্তির মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। ছিটমহল সমস্যার সঠিক সমাধান এখনো পুরোপুরি সমাধার মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। আওয়ামী সরকার সর্বদাই ভারতপ্রেমী,গত ৯ জুন এ নিয়ে একটি কলাম আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ হয়।ভারতের প্রতি আওয়ামী লীগের প্রেম বহু আগে থেকেই। তারা ভারতকে বন্ধু দেশ বলে মন উজাড় করে ভালোবাসে। আর এই অন্তরঙ্গ বন্ধুকে নিজের দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে উপকারে খুবই ব্যতিব্যস্ত আওয়ামী লীগ। ভারত একতরফাভাবে একের পর এক বাংলাদেশের নিকট থেকে সুবিধা আদায় করছে। আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্র নীতি ভারতের কাছে এতই নতজানু যে এ ব্যাপারে দিল্লি তো দূরের কথা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও অনেক সংস্থা এই সরকারকে পাত্তা দিচ্ছে না। মহাজোট সরকার ভারতকে বন্ধু ভাবলেও ভারত কিন্তু তা ভাবে না। এ ভালোবাসা একতরফা।

টাঙ্গাইলে অবস্থিত কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান। নাম থেকেই বোঝা যায় যে এটি একটি কল্যাণধর্মী প্রতিষ্ঠান। লাভজনক কোনো কর্মকাণ্ড বা ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত হওয়া এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের নীতি-নৈতিকতা এবং চার্টার বিরোধী। তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কমিটিও কুমুদিনী সম্পর্কে একই ধরনের মন্তব্য করেছে। সেই কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টও সরকারকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না। শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে তাদের ৪৬ বিঘা জমি রয়েছে। এই জমি এতদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। হতে পারে তারা সেখানে কোনো একদিন কোনো এক রকম কল্যাণধর্মী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে। কিন্তু সেই কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টও সরকারের দুর্বলতা বুঝে গেছে। তাই তারাও এবার সরকারের দুর্বলতম স্থানে আঘাত করেছে।

এখনো ভারতের সঙ্গে আগের চারটি সমস্যার একটিও কোনো সুরাহা হয়নি। মুখ দেখেনি আলোর। এই চারটি সমস্যা হলো ১. ছিটমহল সমস্যা ২. ভারতকে ট্রানজিট বা করিডোর প্রদান ৩. তিস্তানদীসহ ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর পানিবণ্টন সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান এবং ৪. টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করা বা না করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এছাড়া অন্যান্য সমস্যাতো রয়েছেই। ভারতীয় পণ্যে বাংলাদেশী বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের পণ্য ভারতে অবাধে প্রবেশ করতে পারছে না। ভারতীয় স্যাটেলাইট, পর্নোছবি, মাদকদ্রব্য বিশেষ করে ফেন্সেডিল বাংলাদেশে বন্যার পানির মতো প্রবেশ করছে। এসব জ্বলন্ত সমস্যা তো রয়েছেই। কোথায় এগুলোর সমাধান হবে, তা না হয়ে বরং নিত্য নতুন সমস্যা পয়দা হচ্ছে। সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলি বর্ষণের হার বেড়ে গেছে। ফেলানীর কথা এখনো মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। ভারতীয় বিএসএফ-এর গুলিতে বাংলাদেশীরা বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে। এই নিয়ে কত দেনদরবার হলো। দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিটিং করলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও বৈঠক করলেন। সমস্যা সমাধানের জন্য কত রকম আশ্বাস আর ওয়াদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা যে সমাধানের পথ খুঁজে পাচ্ছে না!



সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:২০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×